অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
৩রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
৩রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আতিকুর রহমান হিমু -
আতিকুর রহমান হিমু – গুচ্ছকবিতা

হাসপাতালের বারান্দা

সমান্তরালে হাঁটছি আমি আর আমার মৃত্যু—

রোদ গ্লাসে আড়াল আলোর ঝিলমিল

থেমে থেমে মুমূর্ষু চাঁদের

সন্ধ্যা নামে ধীর মর্সিয়া সংগীতে;

আজান উড়ে যায় অজানা প্রার্থনায়।

মিনারটা গেঁথে আছে চাঁদে

একটি তারার গল্প একতারায়

আমাকে বাজাও বাউল

শূন্যতার রাগে।

হাসপাতালের বারান্দা

হাসপাতালের কার্নিশে আকাশটা ঝুঁকে আছে—

ঈশ্বর আর নিজস্ব শূন্যতা গল্প করে

আমি চুপ শুনি ওষুধের ঘ্রাণ;

বৃষ্টি হচ্ছে দূরের কোনো অরণ্যে

চেনা নদী চেনা ঢেউ ভেঙে

স্টিমার ফিরছে অচেনা শহরে—

সন্ধ্যা আজান কেঁপে ওঠে

পুঁই ফুল রঙ মখমল মেঘে;

তুমিই কি ছিলে আমার প্রার্থনা?

পৌরাণিক পিয়নোর মোহনায়

পথ ভোলা নদী এসে থামে।

হাসপাতালের বারান্দা

সন্ধ্যার মুখোমুখি তোমার মুখ আঁকি

মায়া আঁধারে ঝাউবনের ঘ্রাণ—

মুঠো মুঠো জোনাকির গানে

চাঁদ গলে পড়ে; পাতাঝরা পথ

লিখে রাখো আমাকে—

মুখরিত মৃত্যুনাচ ঘর

শাদা মেঘের কফিনে বেলফুল

বেহালাটা জ্বলে নেভে অস্তরাগে।

হাসপাতালের বারান্দা

দুধ শাদা চাদুরে ক’ফোঁটা রক্ত

কার, কবেকার! পচে যাওয়া গোলাপ

কিংবা কালশিটে দাগে জখমের

দগ্ধ উজ্জ্বলতায় ফুটে আছে—

ডান দিকে অসুখ বাম পাশের জানালায়

শহরের বনসাই হাঁটছে পরিযায়ী পায়ে—

পায়ের কোনো গন্তব্য হয় না জেনেই

মৃত্যুর কাছে ডানা গচ্ছিত রাখে মানুষ।

হাসপাতালের বারান্দা

সবটুকু গল্প ফুরিয়ে গেলে

গানের ওপারে দাঁড়ায় চুপ করে

আমার হারিয়ে যাওয়া গ্রাম—

রবীন্দ্রসংগীতের মতো সাঁকোটা

পেরিয়ে আলপথ;

সিদ্ধধানের ধানের গন্ধে বিভোর ভোরের মক্তব

‘ফাবি আইয়ে আলা ই রাব্বি কু মা তু কাজ্জিবান’

লালচে গরম ভাতে পাবদার ঝোল মাখানো দুপুর

বিকেল হাটের ইলিশ ঘ্রাণ যৌথ বাতাসে—

নদী ভাঙা রূপকথার স্মৃতি ছিকা থেকে

যেন স্যালাইন ঝরে টুপটুপ

মুমূর্ষু গানের মধ্যরাতে।

হাসপাতালের বারান্দা

ভোরের মখমল মেঘ ইতস্তত বালিশে

পাশ ফিরে শুতে মনে হয় হেমন্তের ঠাণ্ডা নদী

ছুঁয়ে আছে আমাকে। জ্বর ঘোরে জানালা—

নার্স, আকাশে মেঘ না ময়ূর? জলে জলে

দুরের শব্দ, নির্জন দ্বীপের নিস্তব্ধতা

যেন তলিয়ে যাই জীবনের গহিনে।

গান কড়া নাড়ে; দরজায় ওপারে ঈশ্বরের উঠান—

মৃত্যু কি তবে নিজের ভেতর ডুবে যাওয়া!

হাসপাতালের বারান্দা

সমুদ্র কতটা গভীর এবং তার ঢেউ

আমি পাঠ করছি

তোমার জলভেজা চোখে;

হাসপাতালের মধ্যাহ্ন ভিজিট শেষে

একাকাশ উৎকণ্ঠা গচ্ছিত রেখে

ডাক্তার চলে যান—

বাইরে বৃষ্টি, নার্স ব্যস্ত ভীষণ

বারান্দার জলে অসুখের গন্ধ;

একটা নীলচে ওষুধ

পাখির ডিমের মতো আমার ভেতর ডুবে যায়

আর তুমি তিমিরে ওড়াও জ্যোৎস্নার ডানা।

হাসপাতালের বারান্দা

হাত বাড়লেই ছোঁয়া যায় মৃত্যু

তবু জন্মচিহ্নে ঘুরপাক করি;

শৈশবের উঠানে সন্ধ্যা নামে

মায়ের আঁচলের ঘ্রাণ মেঘে—

কোন নাম না জানা নদীর নামে

আমি ভাসতে থাকি জ্বর ঘোরে।

একটা তারা জ্বলে দূরে

একতারার একটি তার

এই বুঝি ছিঁড়ে গেল

অস্তরাগে; গান নিভে গেল

কবর এসে দাঁড়ায় পায়ের কাছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ি 

Read Next

লর্ড ডানসানি’র সাতটি উপকথা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *