অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
জুন ২১, ২০২৫
৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জুন ২১, ২০২৫
৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুরঞ্জন রায় -
অজয় রায়ের কবিতায় লোকজ অনুষঙ্গ ও রঙের ব্যবহার

অজয় রায় আধুনিক একজন কবির নাম। নবীন হলেও শাণিত, বুদ্ধিদীপ্ত, বাণীবিন্যাসের সৌকর্যে ঈর্ষা জাগায়। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার হাজিবুনিয়া গ্রামে ১৯৬৮ সালের ১০ ডিসেম্বর তার জন্ম। ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত বটিয়াঘাটা উপজেলার খগেন্দ্রনাথ মহিলা কলেজে। প্রবন্ধ রচনা করলেও কবি হিসেবে একজন নির্মাণকারী। পূর্বসূরির প্রভাব আছে, তবে সে প্রভাবকে ছাড়িয়ে তিনি কবিতায় জীবন ও প্রকৃতির ঘটিয়েছেন এক অসাধারণ মেলবন্ধন। তার প্রকাশিত সে এক বিদায়ী নদী (২০০৭), মঙ্গার জল ছুঁয়ে (২০০৮), আলোর পাখি (২০০৯), মৃত্তিকার দাগ (২০১৭), নতুন জন্মের দিকে (২০১৭), নদীটির নাম অশ্রু (জুলাই ২০১৭), ভুঁই পথের জুঁই (২০১৮) ও অটো ফিজিক্স (২০১৯), লাবণ্য সিরিজ (২০২০) কাব্যগুলো বিশ্বস্তভাবে অন্য কথার প্রতিশ্রুতি, সুন্দরের অসামান্য বয়ান। তিনি গ্রামীণ জীবন সম্পৃক্ত শব্দের এমন পাকা জহুরী আনার পরিচয় দিয়েছেন যে, তার কবিতা দেশজ শব্দানুষঙ্গে হয়ে উঠেছে এক একটি মোহনীয় চিত্রকল্প⸺একজন পাকা চিত্রশিল্পীর শব্দরঙের কারুকাজ। বাংলা সাহিত্যে এই ধারার কাজের, অর্থাৎ রঙতুলিধারিণী কাব্যসরস্বতীর আগমন হতে দেখি একজন জীবনানন্দ দাশের (১৮৯৯-১৯৫৪) হাতে। তিনি এর প্রতিনিধিত্ব করলেও রবীন্দ্রনাথকে (১৮৬১-১৯৪১) অস্বীকার করার উপায় নেই। কেননা, কবিতায় চিত্রকল্পের অনুপ্রবেশ হয়েছিল কাহিনি, সংগীত, নাটক, নৃত্য, মঞ্চ ও চিত্র-ভাস্কর্য-মুর‌্যাল-ফটোগ্রাফ ইত্যাদির বহুমাত্রিক সন্নিবেশ থেকে। রবীন্দ্রনাথ যে চিত্রের ব্যবহারটা পাকা করতে চেয়েছিলেন তা ‘ছেলে ভুলানো ছড়া’ থেকে একটি উদ্ধৃতি দিলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন⸺

যেমন মিষ্ট ছন্দ শুনিলেই তাহাকে গানে বাঁধিয়া গাহিতে ইচ্ছা করে, তেমনই এই-সকল ভাষার চিত্র দেখিলেই ইহাদিগকে রেখার চিত্রে, অনুবাদ করিয়া, আঁকিয়া ফেলিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু হায়, এ-সকল চিত্রের রস নষ্ট না করিয়া ইহাদের বাল্য সরলতা, উজ্জ্বল নবীনতা, অসংশয়তা, অসম্ভবের সহজ সম্ভবতা রক্ষা করিয়া আঁকিতে পারে এমন চিত্রকর আমাদের দেশে কোথায় এবং বোধ করি সর্বত্রই দুর্লভ।

সে চিত্রকর, এবং সফল চিত্রকর যে জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) তাতে সন্দেহ নেই। তিনি নিত্যদিনে যা উপাদেয় অথচ সাহিত্যে অচল, এমন উপেক্ষিত শব্দকে, যা লোকজ, তাদের হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে মুক্ত করেননি শুধু; আশ্চর্য দক্ষতায় কবিতায় ব্যবহার করেছেন। অনুষঙ্গ হিসেবে জীবনানন্দসহ কয়েকজন কবির কবিতার উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে। জীবনানন্দের ‘মেঠো চাঁদ রয়েছে তাকায়ে/ আমার মুখের দিকে, ডাইনে আর বাঁয়ে/ পোড়ো জমি⸺খড়⸺নাড়া⸺মাঠের ফাটল,/ শিশিরের জল।’ আল মাহমুদের (১৯৩৬-২০১৯) ‘কুয়াশায় ঢাকা পথ, ভোরের আজান আর নাড়ার দহন/ পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ,/ মাছের আঁশটে গন্ধ, উঠোনে ছড়ানো জাল আর/ বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা দাদার কবর।’ শামসুর রাহমানের (১৯২৯-২০০৬) ‘কাঁঠাল গাছের ডালে হলদে পাখি লেজটি নাচায়/ ঘন ঘন, বেলা বাড়ে…/ অনেক পেছনে রইল পড়ে/ লাউয়ের সবুজ মাচা, নদী, মাঠ,/ কলাইয়ের খেত আর পুকুরের ঘাট।’ হাসান হাফিজুর রহমানের (১৯৩২-৮৩) সেই পঙক্তিমালা⸺‘যাবে নদী দূরে দূরে সমন্বিত/ ভাঙা মাস্তুলের নৌকা ঠোঁটে নিয়ে।’ সৈয়দ আলী আহসানের (১৯২২-২০০২) ‘আমার পৃথিবীর বৃষ্টি⸺মাটির/ গন্ধ, ধানখেতে ভেসে যাওয়া/ আমগাছের ডাল ভেঙে পড়া/ হঠাৎ গরুর ডাক, ভিজে যাওয়া/ পাখির ডানা ঝাপটানো/ আবার পুকুরে নদীতে/ ডোবায় লাবণ্যের সাড়া/ আমার পূর্ব-বাংলা অনেক রাত্রে/ গাছের পাতায় বৃষ্টির শব্দের মতো।’ এ চিত্রাবলি বাংলাদেশের লতায়-পাতায় জড়ানো অভিনব ছবি হলেও এর মধ্যে দেশজ শব্দের সমাহারে চিত্রিত হয়েছে বাংলার আটপৌরে একটি মুখচ্ছবি। এ দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হতে পারে, জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, সৈয়দ আলী আহসানের হাত ধরেই, এবং বিশেষভাবে জীবনানন্দের হাত ধরে বাংলা কবিতায় লোকজ বা গ্রামীণ শব্দের ব্যবহার শুরু হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্যে একটু পিছিয়ে গেলে দেখা যাবে উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা কবিতার উদ্ভবের সময় থেকে লোকজ বা দেশি শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। সেটি মাইকেলের (১৮২৪-৭৩) হাতে যেমন, তেমনি ভারতচন্দ্র-ঈশ্বরগুপ্ত-রঙ্গলাল-হেমচন্দ্র ও নবীনচন্দ্র সেনের হাতেও কম নয়। এছাড়া, এ জাতীয় শব্দ রবীন্দ্রনাথের হাত ঘুরে ত্রিশোত্তর কবিদের মধ্যে কম-বেশি প্রযুক্ত হলেও, পরবর্তীকালে সার্থক প্রয়োগ হয়েছে কবি আল মাহমুদের কবিতায়। তার প্রয়োগ এমনই বিস্ময়কর ও নান্দনিক যে, তিনি হয়ে ওঠেন এর নিপুণ কারিগর। তার সমসাময়িককালে বাংলা কবিতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে লোকজ শব্দের ব্যবহার হয়েছে, তবে লোকজ শব্দের অনুষঙ্গে যে চমৎকার চিত্রকল্প হতে পারে তার দৃষ্টান্ত অজয় রায়ের কবিতা। এ কবিতা সুখপাঠ্য এবং অন্তর্ভেদি। গ্রামীণ পরিবেশ এবং লোকজ অনুষঙ্গে চিত্রকল্পের যে ব্যবহার হয়েছে তা অসাধারণ। এই লোকজ শব্দই তো তার ছবির উপাদান, বা রঙ। অবশ্যি অজয় রায়ের কবিতায় রঙের ব্যবহার অন্য রকম, যার শিল্পীত প্রয়োগ শব্দানুষঙ্গে অন্য মাত্রা পেয়েছে। কবিতায় রঙের ব্যবহার শুরুর আগেই পৃথিবীর বিভিন্ন চিত্র আন্দোলনে রঙের ব্যবহারের সূত্র ধরে বিভিন্ন ism-এর পত্তন হয়। এবং এগুলো যে বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন মানসিকতার উৎসারণ, বা এক একটি আন্দোলন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিশ্বের বিখ্যাত শিল্পী ও সাহিত্যিকবৃন্দ, যাদের অসাধারণ চিত্রকর্ম ও সাহিত্যকর্ম আজও আমাদের আকৃষ্ট করে। সেই আন্দোলনগুলোর মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও বিশ শতকে আর্ট মুভমেন্টকে কেন্দ্র করে প্রচলিত ঐতিহ্য থেকে মুক্ত হয়ে শুরু হয় Dadaism-কে। উনিশ শতকে ১৮৭০ থেকে ১৮৮০-র মধ্যে সূচিত হয় Impressionism-এর। এরপর Cubism, Expressionism, Existantialism, Surrealism, Escaptism, Realism, Modernism, Nihilism, Idealism, Sufism, Marxism, Classism, Romanticism, Naturalism, Transcendentalism প্রভৃতি মতবাদের সৃষ্টি হয়। কবি অজয় রায়ের কবিতায় একক কোনো ism-এর ব্যবহার না হলেও কখনো Surrealism, কখনো Cubism, কখনো Magic Realism-এর ব্যবহার লক্ষিত হলেও, কিন্তু বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে Modernism-এর। এ সকল সৃষ্টিকর্মের মধ্যে আবেগ ও চিন্তার পারস্পারিক সম্পর্ক থাকলেও তা প্রায়শ অস্থির ও বিষম। শুরুতে আবেগ থাকলেও শেষে ছন্দ-অলঙ্কারের বিশেষ প্রাধান্য বিচার্য হয়ে ওঠে। কবিতার শরীরে নন্দনতত্ত্বের বিষয়কে কেন্দ্র করে কল্পনার ইন্দ্রজাল, মানবিক সৌন্দর্য সৃষ্টির বিশেষ ক্ষমতা লক্ষিত হলেও, চিন্তার মধ্যে জৈবিক-প্রাকৃতিক-সামাজিক বিষয় বিশেষ জায়গা করে নেয়। অজয় রায়ের কবিতায়ও অন্যান্য ism-এর পাশাপাশি Modernism ও postmodernism-এর প্রভাব থাকলেও Magic Realism-এর আধিক্য কম নয়। বিভিন্ন শিল্পান্দোলনের সূত্র ধরে অজয় রায়ের কবিতায় যে রঙের ব্যবহার হয়েছে তা দেখা যেতে পারে।

মৃত্তিকার দাগ কাব্যে প্রযুক্ত রঙের ব্যবহার : কাঁচা আগুন, কৃষ্ণ-পালক, নীলাম্বরী শাড়ি, সবুজ ইচ্ছে, কালোরঙ শাড়ি, কাঁচা মরিচ, সবুজ গেঞ্জি, শ্বেত কাঁকন, অনামী নীল, শ্যামল জল, রুপালি চুল, কালো দুঃখ, কালো রাত, হলুদ কলার খা’ন, সিঁদুর জড়ানো, রক্ত-বরণ, জলপাই রঙ ইত্যাদি। নতুন জন্মের দিকে কাব্যে ব্যবহৃত রঙ খুব বেশি নান্দনিক ও ছবি প্রধান। যেমন, হলুদ ফসলের বন, সবুজ আ’ল, গোলাপি নদী, বড়শি রঙ, রাধারঙ কাজল, নীলজলে নিশিবাঁকা নদী, ভূঁইরঙা ধুলো, ছায়ারঙে কাজল পথ, স্নিগ্ধ ধবল কেশ, শিশিরের জলরঙ, গোলাপি নকশী কাঁথায়, কৃষ্ণ-ভ্রমর, ষোড়শীর লাজ-রাঙা গায়ে, চুলজুড়ে কাজল লাউলতা বেনী, বুকের গেরুয়া জলে, কৃষ্ণ-তিলক, আকাশী মেঘ, কৃষ্ণচূড়াগুলো লালঝুটি মোরগের মতো, হলুদ রোদ্দুর, ইলিশ রুপালি জল, গোধূলির লাল, পাতার সবুজ, চোখের কাজল, শাদা চূড়ির শব্দের মতো, শিশির রঙের শালিধান, মেঘবর্ণা পাখির মতো, কৃষ্ণ-পালক, নদীর চরের ধলা ইলিশ, মেঘবর্ণা নারী, বর্ষা-কাজল মেঘ, দুধসাদা, ডালিম রঙ, সবুজ ফসল, রঙহীন হালভাঙা মাঝি, সন্ধ্যার সুবর্ণ আঁচল, হলুদ দুটি পা, কলাপাতার সবুজ হাসি, স্বচ্ছনীল দিঘি, সোনালি ইচ্ছের ঠোঁটে, ঢেঁড়সের হলুদ ফুল, দুধরঙ প্রজাপতি, শ্বেত-পায়রা কুয়াশাটুকু ইত্যাদি। তবে লোকজ শব্দানুষঙ্গে তার কবিতা কতখানি মুগ্ধকর হয়ে উঠেছে তা এবার দেখতে চেষ্টা করব।

 

দুই.
বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দে পূর্ণ। দেশি শব্দের মধ্যে আছে অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, কোল বা মুণ্ডা ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, পদক্রম ও শব্দকোষগত মিল। দেশি ভাষা লোকসংস্কৃতি ও জনজীবন সম্পৃক্ত বলে অঞ্চল ও সম্প্রদায় বিশেষের লোক ছাড়া এ ভাষায় শিক্ষিত লোক কদাচিৎ কথা বলেন। তবে শিক্ষিত লোকেরা পরিবারের মধ্যে লোকজ বা আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করলেও কর্মস্থলে ও সুধীমহলে এ ভাষায় কথা বলেন না। আর কবিতায় ব্যবহার, সে তো ভাবাই যায় না। তাই যখন একজন জীবনানন্দ দাশ, একজন আল মাহমুদ ও একজন অজয় রায় সাধারণ মানুষের জীবনসম্পৃক্ত শব্দে আধুনিক প্রকরণে কবিতা লেখেন তখন আলোচনার দাবি রাখে। বৃহত্তর অর্থে এই দেশজ শব্দ বা ভাষা হতে পারে কোনো গোষ্ঠীর ভাষা; স্থানভেদে উপভাষা, সমাজভাষা, আইন-আদালতের ভাষা কিংবা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ভাষা, যাকে বলা হয় নিভাষা বা ইডিয়োলেক্ট (Idiolect)। কবিরা যেহেতু লেখা-পড়া জানা মানুষ এবং বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন, তাই তাদের ভাষা ইডিয়োলেক্ট হবে তাতে সন্দেহ কী। কিন্তু সেখানেও পার্থক্য আছে, তবে তা যতখানি কাব্যানুযায়ী, ততখানি বিষয়ানুযায়ী নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রবীন্দ্রনাথের ক্ষণিকা (১৯০০) ও নৈবেদ্য (১৯০১) কাব্যের কথা। এক বছরের ব্যবধানে রচিত দুটি কাব্যের ভাষাশৈলীগত ভিন্নতার ‘মাত্রা’ অনেকখানি। সে মাত্রা হতে পারে ব্যক্তিমাত্রিক, সময়মাত্রিক, বিষয়মাত্রিক বা উপলক্ষমাত্রিক, পাঠকমাত্রিক, যুগমাত্রিক, অনুকরণমাত্রিক, রসমাত্রিক প্রভৃতি। তাই শুধু ভাষাশৈলীর বিচার করে ফরাসি শারীরবিদ্যাবিদ বুঁকো style is the man himself বললেও কথাটি বোধহয় যথেষ্ট নয়। কেননা, ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রিত হয় আরও অনেক প্রতিবেশ থেকে⸺তা যেমন জীবনে ঘটে, তেমনি ঘটে কবিতার ভাষাসর্জনেও। সে পার্থক্য বা ভিন্নতা নিয়ে নানা বিষয়ের অবতারণা করা হলেও, এ কথা বোধ হয় অস্বীকার করা যাবে না যে⸺

Poetry alone can tell her dreams;
With the fine spell of words alone can save
Imagination from the sable chain
And dumb enchantment.

অর্থাৎ সাহিত্যিকের বড় দান হলো ভাষা বা শব্দ। কারণ ভাষার সাহায্যেই তো মূক অর্থাৎ বোবা বিষয়কে মুখর করে তোলা হয়। শব্দের যে জাদুকরী প্রয়োগ দক্ষতা তাকেই বলা হয় প্রতিভা।

এই শব্দের দ্বারা সৃষ্টি সুন্দর করার দায় কবির হলেও কাব্য-প্রেরণার অনুষঙ্গে কবি ‘কল্পনা’র যে বাতাবরণ সৃষ্টি করেন তাও তার কবিত্বের বিষয়। এ প্রসঙ্গে শেক্সপীয়ারের অনুভব⸺ কবির কাব্যদৃষ্টি একবার স্বর্গ থেকে মর্তে, আবার মর্ত থেকে স্বর্গে ঘুরে বেড়ায়, তখন কবির ‘কল্পনা’য় যে অজ্ঞাতপূর্ব ভাবসমূহ বারবার দৃষ্টি গোচর হয়, সেগুলো লেখনিতে একটি দেহ ধারণ করে⸺যা ‘বায়ুভূত শূন্যময়’, সেই বিষয়টি ‘নামে’ চিহ্নিত হয়ে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এভাবে সৃষ্ট কবিতার শরীরে কল্পনা, যাকে কবি শেলী ‘ঐশ্বরিক’ বলে উল্লেখ করেছেন, তার অনুষঙ্গে যে ‘শব্দার্থৌ সহিতৌ কাব্যং’ হয়ে ওঠে, দেহাত্মবাদীরা তাকেই বলেছেন কাব্যের আত্মা। বাক্যের শব্দ আর অর্থকে আটপৌরে না রেখে সাজসজ্জায় সাজিয়ে দিলেই কাব্য হয়ে ওঠবে। বিদ্যানাথেরও সেই মত। এই বাণী বা শব্দ হতে পারে সাধারণ, অসাধারণ, গ্রামীণ, পারিভাষিক, ভৌগোলিক, দার্শনিক, ঐতিহাসিক, পৌরাণিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, গাণিতিক, আধ্যাত্মিক, লোকজ ছাড়াও জ্ঞাত-অজ্ঞাত নানা বিষয়ের। কবির ব্যবহৃত সব শব্দের অর্থ পাঠক নাও বুঝে উঠতে পারেন। তাই কবিতা হয়ে ওঠে ‘দুর্বোধ্য’। এই দায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পাঠকের ওপর চাপিয়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত। আবার, এমন কবিও আছেন যাঁরা সচেতনভাবে বুদ্ধিভিত্তিক শব্দের কারুকৃৎ। টি. এস. এলিয়ট তো এ বিষয়ে জানিয়েই দিয়েছেন : Poetry is the most highly organaised form of intellectual activity। আর, মাইকেল সে রকম উদ্দেশ্য থেকে আভিধানিক শব্দ বসিয়ে কাব্যভাষাকে যদি সাধারণের অনধিগম্য করে তোলেন, সে কথা বলতে গিয়ে ২১ বছরের রবীন্দ্রনাথ বলতে দ্বিধান্বিত হবেন কেন? তাই কবিতা বুঝতে গেলে কবিতার ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, গণিত জানার আগ্রহের পাশাপাশি জানতে হবে কেমিস্ট্রি⸺কবিতার কেমিস্ট্র। এই শাব্দিক মিশ্রণটিই যেন কখনও সখনও অলৌকিক মনে হয়। তবে, তা কখনও reason ছাড়া নয়। reason মাঝে মাঝে অঘটনঘটনপটিয়সী হয়ে ওঠে বলে প্লেটো কবিদের মিথ্যেবাদী আখ্যা দিয়ে নির্বাসনের কথা বলেন। কিন্তু কবিতার reason বিজ্ঞানসম্মত করে তোলার প্রশ্নে একজন আলফ্রেড টেনিসন মঙ্গল গ্রহের দুটি উপগ্রহ আবিষ্কৃত হলে কবিতাটি বিশ্বাসযোগ্য ও বিজ্ঞানভিত্তিক করে তোলার প্রশ্নে নতুন করে লেখেন She saw the snowy poles and the Moons of Mars. এর আগে লিখেছিলেন⸺She saw the snowy poles of Moonless Mars। বিজ্ঞানভিত্তিক এ বোধও কিন্তু কবিত্বমুক্ত নয়। কিন্তু যাঁরা কবিতায় লোকজ শব্দের অনুষঙ্গে নির্মাণ করেন ‘চিত্রকল্প’ তা যেমন জীবনানন্দ দাশসহ অসংখ্য কবির কবিতায় উপস্থাপিত হয়েছে, তেমনি আমাদের অন্বিষ্ট অজয় রায়ের কবিতায়ও পেয়েছে অন্যরকম মাত্রা। সে মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত, নাকি চেনা জগতের মাঝখানে বসে অচেনা কারুকাজের সন্নিবেশ, তা বোঝা যাবে অজয় রায়ের কবিতায় দেশজ শব্দ ব্যবহারের নৈপুণ্যগুণে। এবং অনুধাবন করা যাবে বাংলা কবিতার মোহন চত্বরে কত সাবলীল তার গতায়াত। নতুন জন্মের দিকে কাব্যের প্রথম কবিতা।

আমাকে কবি করে পাঠিও না
পাঠিও কৃষক করে⸺এ মাটি, এ ভূঁই চষে কেটে যাবে কাল,
আমি হব বাংলার শ্রেষ্ঠ রাখাল।

বই শ্লেটে নয়⸺রেখে যাব স্বাক্ষর
বটের পাতায়। পরবো কলার পাতা
তার মতো খদ্দর কিছু আছে দুনিয়ায়!

কিবা প্রয়োজন আমার কাগজের খাতা⸺
দেখব⸺আকাশের দেয়াল ধ’রে উড়ে যাওয়া হাঁস,
চন্দনার ডানা। দেখব⸺গোলাপ-গোধূলি শেষে নেমে আসা সাঁঝ।
হব⸺দখিনার ডানায় শিশির-ভেজা কোনো পাতা।
কিংবা শালুক কুড়াতে গিয়ে
ডুবাবো হাত স্বচ্ছ ঝিলের জলে।
সন্দেশের মতো জড়াবে প্যাড়া কাদা আঙুলের খোপে। (রাখাল)

এ কাব্য থেকে আরও একটি কবিতা।

মেঘদূত লিখে দেব⸺
আঁচলটা ফেরাও।
জেনো⸺হাজারটা রাত ভোর হলেও
আজও পাখিরা কাঁদে।
হৃদয় ভেজানো উঠোন কই! ডেকে আনো।
বুকের বা’পাশ থেকে কতদূরে বৃষ্টির বাড়ি⸺দেখে যাও।
ভালোবাসার কোমল যতিচিহ্নও
আজ দুঃখের জলকরাতে কেটে যাবে।
দোতারা উঁচিয়ে ধ’রে দ্যাখো
বাতাসে কৃষ্ণের বাঁশি নেই।
মলিন সুতোয় রাধার নিঃশ্বাস শুধু ওড়ে দিকে দিকে। (কবি)

তার মৃত্তিকার দাগ কাব্যের প্রত্যেকটি কবিতাই অসাধারণ। এ অসাধারণত্ব কবিতার বাণীবিন্যাসে, চিত্রকল্পে ও লোকজ শব্দের ব্যবহারেও। তার ‘শিউলি অক্ষরে’ শিরোনামের কবিতার অংশ বিশেষ।

শুধু মাটি নয়⸺বুকের খোড়লে আমৃত্যু ফুটে আছে
পাথরকুচি; কালমেঘী পাতা।
রাঙা টুকটুকে ঝালবউ⸺আনাজের দুয়ার খুলে আজীবন
দাঁড়িয়ে আছে আমার হৃদয়ের ভিটেয়।
কাঁচা ঘুমের মতো ঘন মন নিয়ে হেঁটে গেছে যে লক্ষ্মীনারী⸺
তার অলস আঁচল থুয়ে গেছে⸺এ দূর্বা পরানের পরে।
আনমনা! দেখিনি তাই⸺হলুদ আতরের শিশি খুলে
এ শরীরেও চেয়ে আছে সরষের সারি সারি চোখ।
কোন শিউলি অক্ষরে আজ তাই লিখি কবিতা। বেগুন
পোড়ার মতো সোয়াদ ঢেলে কোন রঙে গ্রামগুলি আঁকি!

তিন.
অজয় রায়ের কবিতায় লোকজ অনুষঙ্গের বিষয়-আশয় জানার আগে আমরা ‘লোকজ’ বলতে কী বুঝি তা জানার চেষ্টা করব। লোকজ শব্দের অর্থ লোক থেকে জাত। অর্থাৎ গ্রাম বাংলার অতি সাধারণ মানুষ কথা-বার্তায় যে শব্দ ব্যবহার করে, লোকজ বলতে সাধারণত তাকেই বুঝিয়ে থাকে। আর, ‘অনুষঙ্গ’ কথাটির আভিধানিক অর্থ হলো : প্রসঙ্গ, সম্বন্ধ, আসক্তি, টান, স্নেহ ইত্যাদি। এ প্রবন্ধে অনুষঙ্গ শব্দটি প্রথম দুটি অর্থে ব্যবহৃত। লোকজ বলতে শুধু ভাষা নয়, লোক সাধারণের নৃতাত্ত্বিক ও মানস সংস্কৃতিকেও বোঝায়। আর লোকজ সংস্কৃতি বলতে বোঝায় লোক সাধারণের নিত্য দিনের পূজা-পার্বণ, উৎসব-অনুষ্ঠান, বিবাহ, আচার-আচরণ, বিভিন্ন লোকাচারে অনুসৃত নিয়ম-নীতিকে। ইংরেজি কবিতার শেকড় যেমন ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে, তেমনি বাংলা কবিতার মূলও পোঁতা আছে ভারতীয় সংস্কৃতির মধ্যে। সংস্কৃতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি আধ্যাত্মিকতা। তাই বলা যায়, বাংলা কবিতার একটি উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে আছে আধ্যাত্মিকতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব। রবীন্দ্রনাথ এর সিদ্ধিদাতা গণেশ হলেও এ কথা জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে শুধু স্বীকার করেননি, তাদের কবিতায় উপস্থাপনও করেছেন। অজয় রায়ের কবিতায় বিষয়টি কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্ত হয়েছে, এবং সেটি যে অধিক মাত্রায় ‘নতুন জন্মের দিকে’ কবিতায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার কবিতায় লোকজ শব্দের সন্ধান করতে গিয়ে দেখা যেতে পারে অনন্যা মণ্ডলের কবিতা ও প্রফুল্লরঞ্জন বিশ্বাসের (১৯০০-৭২) গানে প্রযুক্ত শব্দাবলি। এ কবিতায় ও গানে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা কখনও অজয় রায়ের অন্বিষ্ট নয়। অনন্যার কবিতা⸺

ও শোনা ভাই যাবা? যাবা আমার বাপের দ্যাশে? এহানেত্তে দূর বেশি না। ব্যান্নে খায়ে রওনা
দিলি সন্ধে নাগাত পৌঁছানি যায়। শুনছি বাপের শরীল খারাপ, কাশতি কাশতি জান বুঝি
যায়। …হাটবারের দিন খালের পাড়ে ঐ যে বাঁশের চারখানা না? ওর উপরেই থাকতাম
চা’য়ে⸺চারের থেয়ে দিব্যি খালের তল দেহা যায়। জলের মধ্যি শোল পুনাগে দল দেহা যায়।
এহোনো য্যান চোখ মেললিই দেখতি পারি বাপে আমার গজার ঠুংয়া হাত উঁচোয়ে চানের
মতো হাসতি হাসতি বৈঠা নাচায়।

এ কবিতায় যে শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা একটি মিশ্র রীতি। আধুনিক শিক্ষার অভিঘাতে সম্প্রদায় বিশেষের ভাষার অবিমিশ্র রূপটি হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো লিখিত রূপের সন্ধান মেলে না। ভাগ্যক্রমে কিছু কিছু লিখিত রূপ রক্ষিত হয়েছে কালিয়ার কবি প্রফুল্লরঞ্জন বিশ্বাসের রচিত ১৩৪টি গানের মধ্যে। গানের কথা হাসির উদ্রেক করলেও বাস্তব বিষয়ের প্রতি কবির তীক্ষ্ন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কত গভীর তা গান শুনলে স্পষ্ট হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রীর ভাত পরিবেশনের ধরন প্রসঙ্গে বলছে⸺

ভাতের থাল খান দিলি দ্যাখদিন কি হেলা ছেদ্দায়
কতকটা মাটিতে প’লো কতক প’লো আমার গায়।
ভাত দিলি তার জল তো দিলি নে
তোরে যে কি অরবো তাতো দিশে পাচ্ছিনে
দর পচিশন ঠিক রাখলিনে
মরে গেলাম তোর জ্বালায়।

উদ্ধৃত এ কবিতা ও গানের সঙ্গে অজয় রায়ের কবিতায় লোকজ শব্দের অনুষঙ্গ বিচার্য নয়। এদের ধারা আর অজয় রায়ের ধারা ভিন্ন। তাদের রচনায় যুগপৎ ছবি ও চিত্র অনুপস্থিত নয়, অনুপস্থিত নয় ভাষা ও লোকজ শব্দও। সেখানে গ্রামের মানুষের জীবনচর্যার বিষয় উঠে এসেছে। অজয় রায় এঁদের মতো আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা লেখেননি; তিনি মান চলিত রীতিতে কবিতা লিখেছেন এবং সেই কবিতায় দক্ষ শিল্পীর মতো প্রয়োগ করেছেন লোকজ শব্দ। তবে তার ব্যবহার রীতি অনেক সংহত ও চিত্রকল্পাশ্রয়ী। এই প্রয়োগ এমনই নান্দনিক এবং সুখকর যে, শব্দানুষঙ্গে বাক্যের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। কেননা, বাক্যবন্ধের মধ্যে লোকজ শব্দযোজনা সামূহিক আবেগ ও চেতনাকে আবিষ্ট করে দেয়। সৃষ্টির এ পর্যায়ে কবিতার ঔজ্জ্বল্যের জন্যে নির্মিতির পরিবর্তন ঘটলেও, বৌদ্ধিক প্রলেপ যে আধিভৌতিক, আধিদৈবিক কিংবা আধ্যাত্মিক বিষয়নিষ্ঠ নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর, চিত্রকল্প তো কবিতার নান্দনিক কৌশল ও গভীরতা সঞ্চারী বিষয়, যার মধ্যে আছে একাধিক ইন্দ্রিয়ের সম্মিলন, যা পাঠক হৃদয়ে সংবেদ্য হয়ে ওঠে ইন্দ্রিয়াতীত বোধের অভিনব প্রকাশের মাধ্যমে। অজয় রায়ের কবিতায় লোকজ শব্দের অনুষঙ্গে যে চিত্রকল্প সৃষ্টি হয়েছে তা ইন্দ্রিয় থেকে ইন্দ্রিয়াতীত দ্যোতনা সঞ্চারকারী। কবিতায় অঙ্কিত সব ছবি চিত্রকল্প নয়। ‘চিত্রকল্প চিত্রাতীত বাস্তবতা ও নান্দনিকতাকে ধারণ করে’ আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সোনার তরী কাব্যের ‘সোনার তরী’ কবিতা ও পুনশ্চ কাব্যের ‘শিশুতীর্থ’ কবিতার কথা। ‘সোনার তরী’ কবিতায় আছে পরিস্থিতির বর্ণনা, অপরপক্ষে, ‘শিশুতীর্থ’ কবিতায় ঘটেছে ‘সতেজ ইন্দ্রিয়বেদী সৌন্দর্যানুভূতি’। এ নিরিখে অজয় রায়ের কবিতার নিম্নোদ্ধৃত সব পঙক্তি চিত্রাতীত কিনা তা পরখ যেতে পারে।

১. আমার স্বদেশ ভিজে ভিজে তখন একখানি পাতানো দই। (মৃত্তিকার দাগ)
২. এ মাটিতে কৃষাণির নরম গাল শাদা বৃষ্টির মতো দয়ালু। (ওই)
৩. শাপলা বোনেরা ঘোমটায় ঢেকে দেছে শরতের জল। (দলছুট কবিতারা)
৪. আন্ধারে প’ড়ে থাকা গাঁয়ের সুস্বাস্থ্য কাদা। (বাঙালি)
৫. ভালো হতো আমারও যদি ঘর হতো ঐ বিল আর পৌষের নাড়া। (শ্যামার পালক)

এবার নতুন জন্মের দিকে কাব্যগ্রন্থ থেকে কয়েকটি⸺

১. মল বাজিয়ে ধানখেত ক্রমাগত কৃষকের বাড়িতে বেড়াতে যায়। (জাহ্নবী)
২. আর ওড়না জড়িয়ে নেয় বৈকালি কাঁঠাল পাতা। (সর্বনাম)
৩. নীলজলে চারদিকে নিশিবাঁকা নদী। (কবি)
৪. অন্য এক বেণি-দোলা বিকালের মতো/ উড়ে আসে ধানলতা। (পিঠা জন্ম)
৫. শ্যাম রঙে আঁকা রাধার জলচোখ। (ডাকবাক্সে ফেরেনি চিঠি)

এত সব চিত্রকল্পের সাহায্যে সৃষ্ট এ পঙক্তিগুলোকে কবিতা বলা যাবে, নাকি ছবিতা? এজরা পাউন্ড চিত্রকল্পকেই কবিতা বললেও, সৎ কবিতায় চিত্রকল্প ও কবিতা হয়ে উঠে একে অপরের পরিপূরক। এ সুবাদে বলা যায়⸺কবিতায় কী থাকবে আর কী থাকবে না, তা তালিকা দিয়ে বলা সহজ নয়। এ জন্যে কবিতার কোনো সংজ্ঞায়ণ নিষ্প্রয়োজন। শুধু সাহস করে, এবং বোধহয়, একজন ইংরেজ সমালোচকের বরাত দিয়ে বলা যায়, ‘যা জীবনে নেই, তা সাহিত্যেও নেই।’ এ রকম ভাবনা নিয়ে কাব্যবোধের অনুষঙ্গে চিত্রকল্প, চিত্রকল্পের অনুষঙ্গে বিষয়, বিষয়ের অনুষঙ্গে জীবন, জীবনের অনুষঙ্গে শব্দ, ⸺যাকে বলা হয় লোকজ শব্দ⸺সবই থাকবে⸺তবেই হবে কবিতা। এই চিত্রকল্পের সঙ্গে কবিতার যখন অভিন্নতা কল্পিত হয়, তখন তাকে কেবল ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব হয় না, ইন্দ্রিয়াতীত দ্যোতনাই ক্রিয়াশীল হয়। এভাবেই কবিতা হয়ে ওঠাকে ম্যাকলিশ বলেছেন, Poetry is nothing but be।

কবিতায় অজয় রায়ের শব্দ প্রয়োগের কৌশল নিজস্ব শৈলীতে ঋদ্ধ। আর, লোকজ শব্দ গ্রামীণ জীবনজাত বলে, নির্বিরোধভাবে তার কবিতায় ধারণ করেছেন⸺সেটি লোকজ প্রেম থেকে, নাকি স্বভাববশত, বলা মুশকিল। তবে, মজার বিষয় এ শব্দ বোঝার জন্যে আলাদা পাদটীকার দরকার হয় না। যেমন হয় না কবি জসীম উদ্‌দীনের (১৯০৩-৭৬) কবিতার বেলায়, তেমনি চিত্রশিল্পী এস. এম. সুলতানের (১৯২৩-৯৪) ছবির ক্ষেত্রে। কেননা, জসীম উদ্‌দীন কবিতার প্রকরণে আধুনিক ও সুলতান আঁকন রীতিতে ইউরোপীয়, কিন্তু উপাদানের দিক থেকে গ্রামীণ। অজয় রায়ও এ থেকে মুক্ত নন। বরং তিনি কবিতায় অঞ্চল বিশেষের লোকজ শব্দ বসিয়ে মানুষের ভুলে যাওয়ার হাত থেকে যেমন রক্ষা করেছেন, তেমনি পুষ্ট করেছেন বাংলা ভাষার শব্দ-ভাণ্ডারকে। লোক ভাষার প্রায়োগিক দিক বিশ্লেষণ করে যা করা উচিত ছিল কোনো ভাষাতাত্ত্বিকের, বা শব্দ সংগ্রাহকের; অজয় রায় বহুমাত্রিক প্রয়োগের সাহায্যে সে শব্দকে করে তুলেছেন তার কাব্যভাষা, ⸺নির্মাণ শৈলীর উপকরণ। কবিতায় তার লোকজ শব্দের ব্যবহার এমনই এক দ্যোতনার সৃষ্টি করেছে যে, যেন তা হয়ে উঠেছে হৃতসম্পদের পুনরুদ্ধার। তার মৃত্তিকার দাগ কাব্যগ্রন্থ থেকে কিছু উদ্ধৃতি।

জমির আ’ল, তালপাতার চুড়ি, পান্তাভাত, লাউলতা, জলের সর, আলতা, বটপাতা, থানকুনি, হেলাঞ্চিলতা, পাথরকুচি, কালমেঘী, আনাজ, ঝালবউ, গোবোর, কাদাখোঁচা, ডগরা, খলসে, ফাগাল, সাঁজাল, নলেন গুড়, মাজামোটা, কাদাটে, বালাম ধান, খুদ, গুটে (ঘুটে), আমনগন্ধ, নাড়া, ছিমলতা, বাসকপাতা, পাটপচন, আখের গুড়, বোয়াল, ট্যাংরা, সরপুঁটি, খারোই, লাউ, মানকচু, চুঁই, সারান্ত, মাদার, জিয়োল, ঢেঁকি, কুলো, নলছাটে, কুলোর টুক্কি, তুষ, ভাঁড়, এঁদো, বা’ন মাছ, কুয়োতলা, কোষ্টার সুতো, ফুটো, ঝোলাগুড়, জাউ, মাজা ব্যাঁকা, কাঠো, ছিলুম, পোলো, কলার খা’ন, সান্ধি, উগরে আনা, থকথকে, মাটির ড্যাগ, খোড়লে, বলার ফুল, মালসা, বোগ্না কাঁকে, কোলের বাছুর, শ্যাড়াবন, হুড়ুম, কচুপাতা, গোবক ইত্যাদি।

নতুন জন্মের দিকে কাব্য থেকে⸺

বড়শি, মোকাম, ধানফুল, বাটখারা, জায়ফল, নারকেল মুচি, থামি, দলা, শাদা জাউ, খোরাকী, ঠেলে গুড়, পুটলি, বাটাং পাখি, বাবুই, পান-মশ্লা, খিলি, নথ, বেনে-বৌ, পুঁইমাচা, না’ল, কলমিলতা, দুলহান বিবি, গাভীন গরু, চ্যালা, বাদুরের ছা, খোপ, গুলে, ডাগর, ছেনে, পুঁটিমাছ, বক, শ্যালা, চেগা, আটলে, সজনে ফুল, কোচড়, এক ছড়া, সানকি, লালশাকের টক, টাকি মাছের মাথা, কুমড়োর বড়ি, তিলেমুগ ডাল, কাঁঠালের বীচি, হত্তেলে, একদলা গুড়, চালতে, কাচরার ভাত প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগ অসাধারণ নান্দনিক।

কবিতায় কিছু শব্দের প্রায়োগিক দৃষ্টান্ত⸺
বারান্দায় কাঁঠালের বীচির মতো হত্তেলে রোদ⸺
চালতের বোঁটায় লাগা টলটলে শিশির,
কাচরার ভাতে ফুলকপির টোলপড়া হাসি
আর টাঙ্গাইলের লালসুতোর একখান গামছা ছাড়া
আমার আর কী চাই!
সানকিতে লালশাকের টকে ঠাকির মাথা,
নরম আলুভর্তার সাথে তিলেমুগ ডা’ল,
পাতের পাশে কুমড়োর বড়ি, খেজুরের একদলা গুড়,
আর যখন দূরের দৃষ্টি ছুঁয়ে উড়ে যায় ঈগলের ডানা
তখন মহাদেশ পিছনে ফেলে আমি ফিরি স্বদেশে।

এছাড়া, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শব্দের প্রয়োগ দেখা যেতে পারে⸺

১. রতনদার পোলো ছোপা সুদৃঢ় হাত। (বাঙালি)
২. ছিলুম হাতে মাজা ব্যাঁকা গফুর মাঝি। (ওই)
৩. ঝোলাগুড়ে রেঁধে রাখা জাউ। (ওই)
৪. আমার বুকে পাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
ঢেঁকি, কুলো, দূর্বা ও ধান⸺
আর নলছাটে বুনে রাখা ডোলে
কুলোর টুক্কি পেয়ে উড়ে ওঠা তুষ।
(বাবুইয়ের বাসা, মৃত্তিকার দাগ)
৫. মনে পড়ে⸺
উত্তর ঘরের কোণে রাখা কালো মাটির ড্যাগ,
যার সান্ধিতে রেখে দেয়া হলুদ কলার খা’ন
তপসেকে সাথে নিয়ে কলা আর লিচু চুরি⸺
জলঘোলা পুকুরের কাদা-লেপা হাসি
আজো আমায় নিয়মিত হাত বাড়িয়ে জানালায় ডাকে।
নতুন জন্মের দিকে কাব্য থেকে আরও কিছু লোকজ অনুষঙ্গে কবিভাষার ব্যবহার⸺
গ্রামভর্তি পৌষ
আর তোমার চোখের কাজলের মতো
বাংলার একদলা মাটি
আমায় দেবে!
জীবনভর চেয়েছি তো মাত্র⸺
বালাম ধানের এক বস্তা খোরাকী চা’ল;
হাতে নিয়ে ফিরেছি এক মুঠো রূপশালী ধানের মুড়কি
গঞ্জের হাটের শুধুমাত্র রসের এক ঠেলে গুড়
তোমরা আমায় দেবে!
(‘তোমরা আমায় দেবে!,’ নতুন জন্মের দিকে)

‘একটি অসমাপ্ত ফটোগ্রাফ’ কবিতায় লোকজ শব্দের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।

আমার নম্র প্রার্থনায় রঙিন প্রজাপতির মতো বসে আছে
সে একজন।
যেন নতুন নথপরা বউ। কি করে আঁকি তার ছবি! মাছরাঙা হাওয়ায়
তার সরা-পিঠা ঘ্রাণ আর আতপ চা’লের মতো হাসি। তার চোখে ডালিম
রঙের এক উজ্জ্বল সকাল। পা জুড়ে বিকালের নদী। …
সে আমার হল্‌দে-কুটুম আর বেনে-বৌ ডেকে ওঠা গ্রাম,
সে আমার বাবুই পাখির পালকে খোঁপাবাঁধা গাঁ,
গ্রামের অলকলতায় সে আমার পুঁইপাতা লতিয়ে ওঠা মাচা,
সে আমার পালকিতে ঘোমটা টানা সলাজ এক বধূ,
সে আমার কিষাণির পুট্লিতে বাঁধা আ’লপথের ডালভাত,
আলুভর্তা। বীজতলার বাঁকে দাঁড়ানো কৃষক।
সে আমার না’ল আর কলমিলতায় ফিরে আসা দুল্‌হান বিবি।

এবার অজয় রায়ের অন্যান্য কবিতা প্রসঙ্গে আলোকপাত করা যেতে পারে⸺

মেরুন রঙের পাখিরা উঠোনে জ্যোৎস্না খুলে
চলে গেছে করতোয়া বাড়ি।
এ ভূঁইপথে শব্দের নোলক তবু খুঁজে ফিরি
হাত বাড়ালেই তোমার মেথির ঘ্রাণ তবু জড়ায় ঠোঁটে। …
ওইতো আতপ চাল আমার নাম ধরে ডাকে
ঝুড়ি ভরে কেটে তুলি ভোর। …
কোঁচড় ভরে তোলা পুঁই-পাতা-ডগা। …
মলিন রুমাল নেড়ে চলে যাওয়া চৈত্র এলে⸺
এবারো পিঁড়ি পেতে বসতে দিও।
জেনো⸺সারা পাঠশালা জুড়ে তুলোর মতো খোপকাটা
নামতার একটি বাড়ি।

এ কবিতার শরীরে আছে বেশকিছু লোকজ শব্দের ঝাঁপি। খুলতেই পেয়ে যাই : ভূঁইপথ, নোলক, মেথি, নেড়ে, আতপ চাল, ঝুড়ি, কেটে তুলি, কোঁচড়, পুঁই-পাতা-ডগা, পিঁড়ি, খোপকাটা ইত্যাদি শব্দ। কবিতার সঙ্গে শব্দগুলো এমনভাবে মিশে আছে যা শুধু অনুভব করা যায়, এবং মনে হবে এ তো সাধারণ মানুষেরই কথা। ‘কবি-বরণ’ কবিতায় ‘আঁচলে পাথরকুচির ঘাড়নাড়া হাওয়া;/ মাচায় লতিয়ে ওঠা একা একটি পুঁই-ডগা⸺তুমি এসো,’ ‘খালের পথে দাঁড়িয়ে থাকা এক পায়ের কুচিবক;/ আল পথে মায়ের মতো এক অবোলা গাভী,/ আর একটি শ্যামা পাখি কাজল কনে হয়ে টোঙে বসে আছে,’ ‘পাকা কলার কাঁধি এ পথে জ্যৈষ্ঠের ঘোমটা খুলে/ তাকাবে ধীরে। … পাবে ও পাড়ার বৌদির সরাপিঠে মন। চৈত্রের হাওয়া নিয়ে বেড়ে ওঠা গাবগাছ; বাবলার আঠা/ কিংবা গাঁয়ের হাটে বুধবারে বিকোনো কোনো/ সর-বটা দই⸺তুমি পাবে।’ ‘কিংবা বুনো তালগাছ; নটেশাক …শিশির ধুইয়ে দেবে পা; ঘাসফুল পায়ে দেবে সন্ধ্যা-প্রণাম।’ এ কবিতায় আঁচল, পাথরকুচি, ঘাড়, মাচা, কুচিবক, টোঙ, সরাপিঠে, গাবগাছ, বাবলার আঠা, সর-বটা দই, নটেশাক, ঘাসফুল পায়ে দেবে সন্ধ্যা-প্রণাম প্রভৃতি শব্দপ্রয়োগ চিত্রকল্পানুষঙ্গে বোধিত করে।

‘ও কিষাণি!’ কবিতায় লুকায়ে আয়না খুলে দিছি, ধামা, গামছার রোদ-জলে লিখে নিছি বাওড়ের নাম, ফিঙের ডানা; ‘দেবাঞ্জনা’ কবিতায় বাঙির পাতার পরে জল, কলমির ডগা, বটপাতার ছায়া; ‘সেই দুটি চোখ’ কবিতায় গাঁয়ে ফেরা কৃষ্ণ-কাতর নদী, বটপাতার বাটি, হাটখোলার বাঁকে দাঁড়ানো সেই রঙিন শাড়ি, আল ভেজা পথ, কাগজের ঠোঙায় ভরে শুধু কান্না লিখি; ‘বাদলের চিঠি’ কবিতায় পাওয়া যায় : গায়ে শালুকভেজা রাত, পাখির পালক থেকে জল-গন্ধ তুলেছি হাতে, কলমির খোঁপায় জড়িয়ে যাওয়া মেঘ-মাস; ‘আয় লো পাখি’তে আঁজলায় নিয়ে যাও, বট-পাকুড়ের বনে, ধানফুল, রাখালবেলা, আলতা ইত্যাদি। রাখালবেলা, বাঙির পাতা, শালুকভেজা রাত, আল ভেজা, কলমির খোঁপায় জড়িয়ে যাওয়া মেঘ-মাস অসম্ভব নান্দনিক প্রয়োগ। ‘রূপাই’-এ মাঙোনের চাল, মাফলার, বোগলে ছেঁড়া কাঁথা; ‘এসো⸺বৈশাখ’ কবিতায় বুকের খোপে একদানা বৈশাখী বাতাস, ঠোঁটে পান্তার বাতাস, ও মাঝি একটা ইলিশ ডেকে আনো, চটিতে বেত বুনে দাও ইত্যাদি লোকজ শব্দের বিনুনিতে বন্দি হয়ে কবিতার ছবি হয়ে উঠেছে। ‘শ্যামা’ কবিতায় খোরাকী, বিল; ‘কথা দাও’ কবিতায় মাটি ছেনে, গোয়ালের কাবিলা, খুঁড়ে; ‘কোমল গান্ধার’ কবিতায় ছড়াকাটা পাঁচটি আঙুল ছাড়া ‘প্রেয়সীর প্রথম প্রহর’ অনুপ্রাসের ব্যবহার অন্য রকম। একটু কান পেতে শুনলে একই লোকজ শব্দের দ্বিরাবৃত্তি কানে লাগে। এ বিষয়ে কবির সচেতনতা অপ্রত্যাশিত নয়।

লোকজ অনুষঙ্গ শুধু শব্দ সন্ধান নয়, গ্রামীণ সংস্কৃতিরও ঠিকঠাক জানান দেয়া। ‘কবি-বরণ’ কবিতায় শ্যামা পাখির কাজল কনে সাজা মানেই তো বিবাহ প্রসঙ্গ; পাকা কলা শুধু কার্বহাইড্রেট নয়, পুজারও উপকরণ; হাট-বাজার নিত্যদিনের দ্রব্যাদি সংগ্রহের দিন হলেও মানুষের দেখা সাক্ষাতের একটি লোভনীয় সংস্কৃতি; ‘রূপাই’ কবিতায় মাঙোনের চাল প্রাচীন কৌম সমাজের একটি রীতি। সেই আদিকাল থেকে আজও গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন পূজা সম্পৃক্ত হয়ে প্রথাটি প্রচলিত। ‘এসো-বৈশাখ’ তো শুধু রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ’-এ থিতু হয়নি; মূর্ত হয়েছে চিরায়ত বাঙালির সংস্কৃতিতে।

অজয় রায়ের কবিতার লোকজ অনুষঙ্গ খুঁজতে গিয়ে বারবার মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, বাণী বিন্যাসে তিনি আটপৌরে নন; বাংলাদেশ ও ভারতের কবিদের থেকে একটু আধটুও ভিন্ন নন, ⸺অনেকখানি ভিন্ন। যেমন, একজন শক্তিশালী কবির কবিতার প্রত্যেকটি পঙক্তিই কবিতা বলার দুঃসাহস দেখানো এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়নি, কিন্তু অজয় রায়ের বেলায় একটু নিচু এবং নমিত কণ্ঠে হলেও কথাটি বলা যায়। তবে অনুসরণের ক্ষেত্রে তিনি জীবনানন্দকে চেতন, অচেতন কিংবা অবচেতন অবস্থায় ছুঁয়ে গেছেন। তাই জীবনানন্দীয় ঘরানার উত্তরসূরি হয়েও তিনি উত্তর আধুনিক⸺এবং তার বুনন কৌশলে।

সহায়ক গ্রন্থাবলি

১. অজয় রায়, নতুন জন্মের দিকে (২০১৭)
২. অজয় রায়, মৃত্তিকার দাগ (২০১৭)
৩. সৌভিক রেজা, ত্রিশোত্তর বাংলা কবিতায় অধ্যাত্মচেতনা (২০০৭)
৪. শেখর বসু রায় সম্পাদিত, বৈদগ্ধ্য, জীবনানন্দ দাশ সংখ্যা-১৯৯৯
৫. মোহিতলাল মজুমদার, সাহিত্য বিচার, বিদ্যোদয় লাইব্রেরী প্রাইভেট লিমিটেড, ১৩৭৩
৬. শ্রীঅতুলচন্দ্র গুপ্ত, কাব্যজিজ্ঞাসা, (১৩৮০)
৭. আব্দুল মান্নান সৈয়দ, শুদ্ধতম কবি (১৯৭৭)
৮. উজ্জ্বলকুমার দাস সম্পা. জীবনানন্দ স্মৃতি (২০০০)
৯. দীপালি রায়, মধুসূদনের কবিভাষা (১৯৯৯)
১০. সফিউদ্দিন আহমদ, বৃত্তাবদ্ধ রবীন্দ্রনাথ।
১১. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত, ঢাকা, মাওলা ব্রাদার্স, ১৯৯৮
১২. নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, কবিতার দিকে ও অন্যান্য রচনা, কলকাতা, পুনশ্চ, ১৯৯২

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

অনুপ্রাণন অন্তর্জাল- সম্পাদকীয় (৭ম সংখ্যা)

Read Next

শর্মী দে – যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *