প্রকাশিত হলো শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণনের ৫ম সংখ্যা। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্জালে অনুপ্রাণনের যাত্রা শুরু হয়। ইতিপূর্বে আমরা ৪টি সংখ্যা প্রকাশ করেছি। অনুপ্রাণন অন্তর্জাল ৫ম সংখ্যায় ১৭টি বিভাগে মোট ৮০টি লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই লেখাগুলো মূলত আমাদের দেশের সাহিত্যজগতের তরুণদের। বিগত প্রায় ১২ বছর যাবত অনুপ্রাণন তরুণদের সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তাদের লেখাগুলো শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, শিল্প-সাহত্যের অন্তর্জাল ও অনুপ্রাণন প্রকাশনের মাধ্যমে প্রকাশের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সম্প্রতি আমরা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের কয়েকজন গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি। অনুপ্রাণন তাঁদের সবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করে অন্তর্জাল ৫ম সংখ্যার শ্রদ্ধা-স্মরণ বিভাগে কয়েকটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য যে, এবারের সংখ্যায় শ্রদ্ধা-স্মরণ বিভাগে বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট কবি ও লেখক সৈয়দ হাসমত জালাল।
সঙ্গীতমণি বুলবুল মহলানবীশ যুক্ত বাঙলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধারণ করে নিজের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে আজীবন একজন বাতিঘরের ভূমিকা পালন করেছেন। তাই তার সংস্পর্শে যারা এসেছেন তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগত আলোকিত করতে আন্তরিকভাবে নিজেকে নিবেদন করতে এগিয়ে এসেছেন। জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায়ে বিশ্বে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের ঐক্যবদ্ধ করা এবং ঐক্যবদ্ধ বাঙালিকে নিয়ে বিশ্বজনমত গঠনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বুলবুল মহলানবীশ আজীবন সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় থেকেছেন। অনুপ্রাণন বুলবুল মহলানবীশকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানায়। তিনি বেঁচে থাকুন বাঙলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা প্রত্যেক মানুষের স্মৃতিতে।
বাংলাদেশে বাংলা সাহিত্যের চর্চা নিয়ে ইদানীং বেশ কিছু নেতিবাচক মূল্যায়নের কথা শোনা যায়। সাম্প্রতিক শতকে দেশজুড়ে যে শিল্প-সাহিত্যের চর্চা চলছে সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনো শিল্পী বা সাহিত্যিক যিনি কিনা কালোত্তীর্ণ শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না বলে সভা-সমিতিতে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। সেদিকে না গিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি অনুধাবন করা যেতে পারে। অর্থাৎ একথা বলা যেতে পারে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে অন্তর্নিহিত অর্থে সমাজ বদলের জন্য যে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অঙ্গীকার করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পর জাতীয়ভাবে সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুদুরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কোনো কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়নি। যার ফলে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য বৈশ্বিক শিল্প-সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠতে পারেনি। কালের পটে অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠার জন্য যে মাত্রায় শৈল্পিক উৎকর্ষ অর্জন করা প্রয়োজন ছিল সেটা করা যায়নি। বস্তুত তরুণদের শৈল্পিক সৃজনশীলতা স্ফূরিত হওয়ার পেছনে যে পর্যায়ের মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার প্রয়োজন ছিল সেটা না করতে দিয়ে উল্টো সেসব উদ্যোগ সামাজিকভাবে অবদমিত করা হয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশে যেসকল শিল্পী ও সাহিত্যিকের সংগঠন আছে তাদের কার্যকলাপ নিয়ে নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়ন হওয়া খুব জরুরি। কিন্তু, তার জন্য যে খুব অনুকূল পরিবেশ আছে সেটাও নিশ্চিত হওয়া কঠিন। ভোগবাদী অর্জন বিসর্জন দিয়ে এই কাজগুলো করতে পারেন এরকম ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের সঙ্কটে যে আমরা আছি সেটা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে।
সমাজে বহুত্ববাদী মানবিক বোধ জাগিয়ে তোলার জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা প্রয়োজন। কথাটি অনুপ্রাণন সম্পাদনা পর্ষদ অনুধাবন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করতে চায়। সেজন্য অনুপ্রাণন দেশের শিল্প-সাহিত্যজগতের তরুণ ও প্রবীণ লেখক-পাঠকদের নিরন্তর সহযোগিতা কামনা করে।
One Comment
[…] […]