অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
জুলাই ১৭, ২০২৫
২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জুলাই ১৭, ২০২৫
২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইলিয়াস ফারুকী -
আসমা সুলতানা শাপলার “সম্পর্কটা শুধুই জৈবিক – ২” এবং আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া।

আসমা সুলতানা শাপলার “সম্পর্কটা শুধুই জৈবিক – ২” এবং আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া।

আসমা সুলতানা শাপলার “সম্পর্কটা শুধুই জৈবিক – ২” পড়ে শেষ করলাম। এর আগে প্রথম খণ্ডটাও পড়েছিলাম এবং তা নিয়ে আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলাম। প্রথম খণ্ডের চাইতে দ্বিতীয় খণ্ডে উপন্যাসের মূল স্বাদটুকু পেলাম। এই খণ্ডে উপন্যাসের চিত্ররূপ চমৎকার ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। একটি উপন্যাসে প্রেম, ভালোবাসা, দ্বন্দ্ব, মনস্তাত্ত্বিক দিক, দার্শনিক দিক যে ভাবে ফুটিয়ে তোলা প্রয়োজন লেখক তার মেধা ও মনন দিয়ে তার পুরো চেষ্টা করেছেন। স্বামীর শত অত্যাচারেও বাঙ্গালী নারীর সংসারকে ধরে রাখার স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে তিনি সার্থক ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিজের সংসারের অস্থিরতাকে কোন নারী তার পিত্রালয় প্রকাশ করতে চায়না। আবার একবার যদি কোন নারী কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে তখন তাকে যে ফেরানো অসম্ভব মনস্বিতার এই কঠিন চরিত্র অঙ্কনেও লেখক তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। প্রথম সন্তানের জন্য নাস্তিক তমালকৃষ্ণের মাঝে সনাতন ধর্মের বহু জন্মকে বিশ্বাস হিসেবে দেখিয়েছেন আবার তেমনি তমালকৃষ্ণের সান্নিধ্যে থাকায় মুসলমান হওয়া সত্বেও মনস্বিতার মাঝেও একই বিশ্বাসকে উঁকি দেয়ার ধারণা জন্মিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ যখন নিজের কোন পাওয়াকে একান্ত করে পেতে চায় তখন তার আদর্শও তাকে তার জায়গায় স্থীর রাখতে পারেনা। পুরো উপন্যাসে লেখক চারিত্রিক দিক দিয়ে যেমন পুরুষকে এককভাবে দোষারোপ করেননি তেমনি নারীকেও তা করেননি।

সম্পত্তি যে আপন রক্তের আত্মীয় হয়েও রক্তের নেশায় বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে তা টুলটুল ও শৈলের দ্বন্দ্বে ফুটে উঠেছে। মনস্বিতার মৃত সন্তানের শোক, তার অস্তিত্বের উপস্থিতি রচনা করে তিনি মা আর সন্তানের অদ্ভুত বিক্রিয়াকে তুলে এনেছেন। জাতপাতের উর্ধ্বে উঠে মানুষের প্রতি নাস্তিক তমালকৃষ্ণের ভালোবাসা আবার তারই স্ত্রীর জাতপাত ঘৃণাকে চমৎকার ভাবে তুল্যমূল্য করেছেন। আবার আদর্শিক তমালকৃষ্ণের সন্তান টুলটুলের হিংস্র এবং লোভী রুপটাও প্রকাশ করেছেন। উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ডে একশত এক থেকে একশত চার নাম্বার অধ্যায় তিনি নকশাল রাজনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের বিস্তর চিত্র খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নকশাল আন্দোলনকে তার উপন্যাসের উপজীব্য করতে তিনি যে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন তা যারা তার উপন্যাস পড়বে তারা সহজই ধরতে পারবে। একটি উপন্যাসে দুই বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সামাজিক দিক, ধর্মীয় দিক প্রায় সবটুকুই নিয়ে আসতে পারা লেখকের বিজ্ঞতারই স্বাক্ষর রাখে। তমালকৃষ্ণ রাজ চক্রবর্তী যদিও লেখকের একটা কাল্পনিক চরিত্র, কিন্তু পাঠক উপন্যাসটি পড়তে পড়তে এই চরিত্রকে সত্যিকারের ভেবে বসতে পারেন।

তমালকৃষ্ণের মৃত্যূর পর উপন্যাসের শেষদিকে লেখক চমক সৃষ্টি করে পাহাড়, মিরা মা এবং লোভাতুর টুলটুলকে উম্মোচন করেছেন। আবার মনস্বিতার সন্তান আকাঙ্ক্ষারও চমৎকার নির্মাণ করেছেন।

প্রচ্ছদ চমৎকার কিন্তু বইটির সবচেয়ে দৃষ্টিকটু দিক হলো এর বানান। বানান বিভ্রাট অনেক চমৎকার সৃষ্টিকেও অস্বস্তিকর করে তুলতে পারে। আমি মনে করি বইটির ব্যপক প্রচার হওয়া উচিৎ তাহলে উপন্যাস পড়ার বাহানায় এ প্রজন্মের অনেকেই আমাদের দেশ গড়ে উঠার অনেক ইতিহাস সম্পর্কেও জানতে পারবেন। যথারিতী দ্বিতীয় খণ্ডের প্রকাশকও অনুপ্রাণন প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৬০০.০০ টাকা।

ইলিয়াস ফারুকী

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

শনিবার বিকেল চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবনাঃ প্রতিচ্ছবি না প্রতারণা

Read Next

পাঁচ তরুণের পাঁচ গল্পগ্রন্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *