অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলী ইব্রাহিম -
কাকতাড়ুয়া

 

সেই বারো’তে একবার কাকতাড়ুয়া এই উঠোনে এসেছিল।

একা পেয়ে ভীষণ মেতেছিল। ভীষণ মেতেছিল!

ভয় দেখিয়ে ছবিও তুলেছিল। ভয় দেখিয়ে খুব মেরেছিল।

সেই আতঙ্কে আমিও সব সহ্য করেছি। গুটিয়ে গেছি।

নিদারুণ ভোর তখন হয়ে উঠেছিল নীরব হন্তারক।

সেই একবার ছুঁয়ে তার মন ভরেনি। মন ভরেনি!

সেই ছুঁয়ে দেয়ার লোভে বারবার এসেছে সেই কাকতাড়ুয়া।

সেই বারুণী মেলা থেকে ফেরার পথে

হাত ধরে আসতে আসতে বুঝেছি কৈশোরের সংশয়।

এতদিন পর এই কুড়ি’তে আজও সেই কাকতাড়ুয়ার ভয়।

মাকে ইঙ্গিতে একদিন বলেছিলাম সেই কাকতাড়ুয়ার গল্প।

মা সেসব কানেই নেয়নি। মা তখনো ছিল পরজীবী পরী।

শুধু বলেছে, এসব নাকি মেয়েদের নিয়তি।

মা আজ নেই। মা এখন আকাশে তারা হয়েছে।

কত রাত আমিও আকাশে শুভ্রতারা হতে চেয়েছি!

বাবার বয়সী সেই কাকতাড়ুয়া এক সময়

মায়ের কাছেও ভীষণ ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিল।

আমার বাবাকে আমি কোনোদিন দেখিনি।

আমি যখন মায়ের গর্ভে তখন নাকি

আমার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

এরপর আমাকে সঙ্গে নিয়ে মায়ের আরেকটা মনিব।

তারপর আরেকটা। তারপর সব শেষ! সব শেষ!

সেই বিস্মৃতি আজও তাড়িয়ে ফেরে।

স্বপ্নে আজও সেই ক্যাঙ্গারুর ভয়ার্ত পলায়ন।

ভয় এতটা ভয়ঙ্কর হয়!

আকাশে পাখির দিকে তাকিয়ে

আমি কখনো তার ডানার স্বপ্ন খুঁজিনি।

পাহাড় ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষা তো ছিলই!

কিন্তু আমি কোনোদিন সেই মহাগিরির মহাস্পর্শ পাইনি।

অথচ অথচ কত রাত নিদ্রাহীন কেটেছে!

কত সন্ধ্যায় চুলার পাড়ে

মার কাপড়ের নিচে আমাকে লুকিয়ে রেখেছি!

এরপর আরও কত দিন কত রাত দুঃস্বপ্নে দুর্বিষহ ছোটাছুটি!

মাঝে মধ্যে পাশের জোবেদা খালার বাসায় গিয়ে স্নেহ নিয়ে এসেছি!

মাঝে মাঝে স্কুল পালিয়ে মায়ের কবরে আশ্রয় চেয়ে বলেছি,

শুধু আমার নদীরই কেন এত পাড় ভাঙে?

শুধু আমার ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়! কেন?

ঘরবাড়ি বলে কিছু নেই। কেন? কেন? কেন?

অঘ্রানের মাঠ। শীতের রাত। বসন্তের কুহু কুহু।

কিছুই তো দেখা হলো না মা!

আর কতটা পথ এগিয়ে গেলে ফুরাবে কাকতাড়ুয়ার ভয়?

 

Read Previous

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন – ৫ম সংখ্যা

Read Next

মেঘ পাহাড়ের ডাকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *