অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গৌতম কুমার রায় -
কে-উ ভালোবাসেনি আমায়

কে-উ ভালোবাসেনি আমায়

বিধাতা কী ঈশ্বর

কে-উ ভালোবাসেনি।

বাড়ির পাশের সরকার বুড়ি

প্রতিদিন ভোরে জামরুল কুড়াতেন আমার জন্যে।

তার মৃত্যুর পর সেই গাছটাকে তপ্ত আগুনে দাহ করে

পাপের বিন্যাস ভেঙে পুণ্যকে গ্রহণ করেছেন তার স্বত্বের উত্তরসূরিরা।

মাস্টার বাড়ির ধীরেন জ্যাঠাও নেই, নেই জ্যাঠাইমা।

‘ও এসেছে আচারের তেলে হাতে তৈরি মুড়ি মাখাও’

কিংবা

‘দুপুরে চলে আসবি কিন্তু।’

এই কথাটা এখন কেউ বলে না আর।

মালতী নামের এক অষ্টাদশী

মধুমতি পাড়ি দিতে গিয়ে, তাকে

নদী সাক্ষী রেখে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম,

পর বছর সেও তিথি মিলিয়ে শরীরে শাখা সিঁদুর তুলেছিল

অন্যের হাত থেকে।

স্কুলের সুরৎ মৌলভী স্যার

পড়ার জন্য আমাকে চোখ রাঙাতেন,

তিনি না থাকায়, যিনি এসেছেন,

তিনি কিনা মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক, হৃদয় মণ্ডলকে ধর্মীয় কারণে,

বিদায় দিতে, কেন যেন

জেল-জরিমানা আর জোরালো সাজার পক্ষে।

অথচ কুষ্টিয়া চৌড়হাস মোড় মসজিদের ইমাম প্রয়াত কুদ্দুছ হুজুর

ঈদে মিলাদুন্নবীর রাতে গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন,

‘কে বলেছে মানুষের ধর্ম আলাদা হয়!’

যারা লালন সাঁই, শাহ আবদুল করিম, রাধারমণ, বিজয় সরকার

নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের সুর ও শব্দ সাধন করেন,

তাদের উপর মৌলবাদীদের হিংসার আগুন জ্বললে

আমার নিজের জন্ম মাটির উপর খুব ঘৃণা লাগে।

মনে হয় পৃথিবীতে সভ্যতা বলতে হিংসাকেই বুঝি বোঝায়।

এখন তারাপদ বা নারায়ণ ঘোষ স্যার নেই, নেই করীম মোল্লা স্যার

যাদের রাঙা চোখ বা বেতের বাড়ি

এখন পিঠে দাগ টানে না।

পাড়ার ফকির বেগ নেই। বহুদিন হলো তার হাঁকডাক বন্ধ।

পাড়ায় উঠতি বয়সী কোনো কোনো যুবক এখন রাজনীতিতে নে-তা।

তাদের হাতে কাঁচা টাকা সহজে আসায়,

তাদের স্ট্যাটাস বলতে তারা মাদকের নেশা ধরেছে।

মালেক চেয়ারম্যান পরলোকে গেলেও

তার মসজিদে ধ্বনিত হয় আজানের সুর।

বেচারার অনেকগুলো মেয়ে ছিল, শখ ছিল দারোগা জামাই পাবেন।

মসজিদে জলসা হবে, আব্দুল ফকির কাকা

চাঁদা তুলতে তুলকেই তিনি চলে গেছেন ওপাড়ে।

নাপিত বাড়ীর কেষ্ট জ্যাঠার দু’হাটুতে মাথা চেপে

বাটি ছাট ব্রান্ডের চুলের সৌন্দর্য আর চোখে পড়ে না।

ডাক্তার বাড়ির টলা দিদি, হাজির হলেই

কলার আপ্যায়ন অতীত হয়েছে সে-ই কবে।

সাহাদের বাড়ির নাট মন্দিরে সকাল-সন্ধ্যায় কীর্তনে

কেউ এখন গলা চড়াবার নেই।

মিস্ত্রিপাড়ার টিটিই সত্য কাকার নাম নিলে ট্রেনে টিকিট ফ্রি,

তিনিও গত হয়েছেন ওপার বাংলায় গিয়ে।

স্যালোর নৌকা আসায় মাঝি পাড়ার সুভাস মাঝি গত হলে

তার পর-পুরুষ কেউ এখন এই পেশায় নেই।

আবার

প্লাস্টিক এবং পলিথিনের দৌরাত্ম্যে পালপাড়ায় এখন আর

ভাঙা চাড়া-খাপড়ার টুকরো খুঁজে পাওয়া যায় না।

এসব একদা মনে করিয়ে দিত নওপাড়া গ্রামটায় বার জাতের বাস ছিল।

সেজন্য গ্রামটিতে ছিল স্বর্গের বসবাস।

সব হারিয়ে, এখন আমি একা

কে-উ ভালোবাসেনি আমায়

বিধাতা কি ঈশ্বর

কে-উ ভালোবাসে-নি।

 

Read Previous

নিঃশব্দ আহমেদ – গুচ্ছকবিতা

Read Next

অণুগল্পগুচ্ছ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *