
দৈব
মানিনি দৈব বলে কিছু
তবু আমাকেই আবার কেন দিয়েছি সঁপে
দৈবর হাতে
সে ভাসে আমাকে নিয়ে আগুনবিলাসী
ফিরে আসব কি আসব না— না জেনেই
প্রপাতের খাড়া গা বেয়ে তুমুল নেমে যাচ্ছে
আমার নিয়তি
হারিয়ে যাবার আদুল খুশিতে…
অসন্তাপ
যে আমাকে নিয়ে এল এতদূর তোমার সমীপে
সে-ই ফিরিয়ে দেবে এক ঝটকায়
অকস্মাৎ কোনো একদিন
পথের দুঃখগুলি আমি তবু পালক করে রাখি
জানি তোমামুখী অভিগমনের এই পথ
এক গভীর নিঃস্বতার নাম
এরও এক অপার আলো আছে
যা লেগে রয় সমূহ প্রার্থনার গায়ে
শুধু ভাবি, ঘোর ছিল অসম্পূর্ণ নিদ্রার
এই জাগরণটুকুর আগে যেমন
ঘুমিয়ে পড়ব ফের তার নিপুণ প্রত্যাখ্যানে
মাঝখানে এই সুকোমল ধৈবতে
বেজে যায় আমাদের যাপিত সময়
বিরহ লুকিয়ে রেখেছি সুপ্রাচীন
এক বৃক্ষের গোপন খোঁড়লে
তোমার কাছ থেকে ফিরে আসতে আসতে
তারই সঙ্গে আমার সমস্ত আলাপচারী
সবকিছু দৈব দান ভেবে সযত্নে কুড়াই
আর ভরে নিই শূন্য হাতের ঝাঁপি
তবু তোমাকে না ভোলার প্রত্যয়
আমার জীবনজুড়ে থাক
আমার তাবৎ কষ্টগানে
আমার ছায়া কুড়াবার ঘোরে
ক্লান্তিহীন নিরুপদ্রুত কোনো ঘুমের ভেতর…
কাজলভৈরবী
স্পর্শের অধীন নয়
এখন দৃশ্যমানতার আড়ালে দেখি
লুকিয়ে-পড়া সব পাখি, যাদের ক্রন্দন
মিশেছে হৃত নদীর ছলছলে
যেভাবে অরণ্যে কাজল মিশেছিল
গূঢ় আলোহৃদয়ের সাথে পেতেছিল
নিঝুম সংসার
কুঠারসীমানা থেকে দূর
আমার আঙুলে আজ ওদের গেরস্থালি
স্মৃতির অমোচ্য আশ্লেষ ছিঁড়ে কে কাকে
ভোলাতে পারে নাড়ি!
আলগা মুঠির থেকে কেবল খসে যায়
ধাতব মুদ্রাসকল
যশ, নাম পরিচয়
যে জানে সে জানে
আলোর ওপারে আলো
স্মৃতির অরণ্যে জমা কাজলভৈরবী।
মানুষের মানচিত্র
ভাগের গল্প-হাতে হেঁটে যায় তুষ্ট বণিক
বিভাজনরেখা এঁকে সেয়ানা ঈশ্বরও
তুলে নেয় অন্যায্য হিস্যা তার
গোষ্ঠীঘৃণার কাছে বন্ধকি হয়েছে কবে
আমাদের জন্ম-ইতিহাস, শেকড়বাকড়!
পাখিবিদ্যার পাঠে গিয়ে দেখি
ভাজ্য কি ভাজক ব’লে আদৌ নেই কিছু
অবিভক্ত আকাশের পথে ডানার পংক্তিমালা
অনাহত আজও পথ আঁকে
সমূল বৃক্ষের দিকে, অরণ্য অভিমুখী
শেকড় রয়েছে, তাই
সকল বৃক্ষ জানে এই উড়ানকাহিনী
উড়ন্ত ডানার রূপকথা
বৃক্ষ ও পাখিদের প্রেম আজও তাই
এক অখণ্ড পতাকার কথা বলে
অপেক্ষা
ভিড়ের লোকে হারিয়ে যাবে ভিড়ে
শুধু একটি মানুষ ত্রস্ত ব্যাকুল পায়ে
কাজের শেষে আসবে কাছে ফিরে
তারই জন্য খুলবে দুয়ার, নারী!
খুলবে ব’লে পরাণ তোমার প্রণয়মুগ্ধাবেশে
একটি তারা হৃদয়তারা স্তব্ধ সুরের মীড়ে
সন্ধ্যাপথের আকাশ দেবে পাড়ি—
কে সেই পুরুষ, কার কপালে অমন ভাগ্যলেখা?
ছায়াপথের প্রান্তসীমায় তার কি পেলে দেখা?
আগুনবিষয়ক পদাবলি
বঁইচিতলায় শীত বিকেলের রোদে
আঙুলে হঠাৎ এঁকেছ আগুনরেখা
শোণিত তরলের ঢেউ ভাঙে সম্বোধে
অনলে হরিৎ আমার এ মৃত্যুলেখা।
সেই থেকে দু’য়ে মাড়িয়েছি ভিনপথ
জেনেছি মরমে আগুনের রঙ কত
ইতিহাসজোড়া বীরগাথা, জয়রথ
লেখেনি পেছনে আগুনের ক্ষতি-ক্ষত।
সময় তো জানে বেশি আরও তার চেয়ে
তোমার কাহিনী আগুনের সূচিকাজ
ও-আগুনকথা বাতাসের পথ বেয়ে
ভেসে এসে লাগে আমার আগুনে আজ।
বাঁধো তুমি গান নিপুণ সুরের তারে
দহন সহিত নিশিদিন সহবাসে
এমন ফসল ফলে কি গো বিনা চাষে?
জমা রাখি বুকে অমেয় অহংকারে।
দু’জনের পথ আবার গিয়েছে মিলে
বঁইচিতলায় রোদ বিকেলের শীতে
দেখা হবে ফের, তুমি কি তা জেনেছিলে?
মিলনই সত্য মানি এই পৃথিবীতে।