
গাছের পাতারা
গাছ জানে না পাতার উৎসব, কখন তার বিশ্রাম
রাত্রিবেলা শরীর ধুতে এলে চাঁদ কিছু আলো রাখে তাতে,
পাখিরাও বসে যায় যেন কোনো একাকী ঠিকানা তার।
নিশ্চুপ ঈশ্বর দেখে, খেলাগুলি দম ফেলে সোরগোল তুলে
বিশ্রামে বসে যায় যারা তারাও জানে, এই তো উঠে যেতে হবে।
সব সবুজের ঢেউ কাছে ডাকে, খেয়া বায় আকাশের নাও
এক বর্ষার ছবি অন্য বর্ষায় ডুবে যায়,
গাছ জানে না তার বুক থেকে পাতারা অবেলায় ঝরে যায়।
আমি অথবা আমরা
নিচু হতে হতে আর উচুঁ করতে পারি না পৃথিবীর মুখ
সে আজ অন্ধ হয়েছে, ডিমের কুসুম ভাঙা কষ
নৃতত্ত্ব পড়ে এখন যে কেউ মানুষের মতো থাকে
মেঘ থেকে জামা তৈরি করে নদী যায় পথের বাড়ি
একদিন তাদের খাঁচায় মাংস ছুঁড়ে দেবে সময়
কে আর খাঁচা খুলবে!
সকাল হলেই পাখি ডাকে
এখন অন্ধকার, কেউ ডাকে না
চুলের মতো ঢেকে থাকে জীবনের ফাঁদ।
সবাই অন্ধ হলে জ্যোৎস্নাও ম্লান ছবি আঁকে
কখনো দেখতেই পাইনি পেছনে আলো ফেলে
কাঁদে কিনা জোনাকি মেয়ে
রাত্রির কালো শাড়ি ঝুলে থাকে
ঝিঁ ঝিঁ মেয়েরা দুপুরের রোদে পুড়ে কেঁদে যায়
কার জন্যে?
ঈশ্বর
ঈশ্বর আমাকে ভুলুন, রাত্রি নেমেছে
ওই বনে বাঘ এসেছে, ডাক শুনছি তার
ঈশ্বর আমাকে ভুলে যান
যদি পথ হারাই, যদি অন্ধ হয় চোখ,
যদি খেতে না পেয়ে কাঁদি সারাদিন
তবু জানবো কেউ নেই,
যদি অপেক্ষায় থাকি আপনার
ডাক শোনার পরেও
আপনি চুপ করে রইলেন।
ঈশ্বর এখন নতুন সমস্যা লিখবো
আপনি চুপ করে থাকুন।
মৃত এক জোনাকির গল্প
রাত ভেঙে মায়ার অঞ্জন দুহাতে নিয়েছি
চাঁদকে বলেছি, যা না কতদূর যাবি
এখন পাহাড়, মাঠ, বনভূমি পেছনে রেখে
পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে ফেলে দিচ্ছি প্রাচীন দিনলিপি
একটা প্রচণ্ড ধাক্কায় ছুটতে ছুটতে এই যে এখানে
এই চোখে ফাঁকা মাঠ, মাঠের ওপরে মাঠ…
কেউ আর এসো না এখানে
মানুষ জেনেছে আজ নতুন হয়ে ওঠা
মানুষ জেনেছে মুগ্ধতা, পাহাড়ের চূড়া
আয়োজন করে পরস্পর থেকে অন্যরকম অবিশ্বাস
মানুষ জেনেছে ক্ষুধা, ব্যক্তিগত দহন
মানুষ হারিয়ে ফেলেছে মানুষ
বাড়িগুলির মধ্যে নিন্দার ডামি রেখে গুনে যাই অনর্থ
নিয়তির পুতুলগুলো যতই হাসুক
আমাদের এই খেলা বহুদূর যাবে…
কেউ কি দেখেছে আমাদের রাত্রিগুলি?
অন্ধকারে নিজের মুখ কেউ কি দেখেছে?
আমার পথের পাশে নৈঃশব্দের গানে
ঘুঙুর নিয়েছে মন
মনের পাশে কেউ কি ছিল?
আকাশে তারার পাশে আঁধার, আঁধার…
মৃত এক জোনাকির গল্প লিখেছি।
মা মানে
মা মানে সুপারি কাটার মগ্নতা
পান খাওয়া মুখ
উঠোনের তারে শুকাতে দেয়া শাড়ি
আচারের রোদ,
মা মানে ঘর
বারান্দায় জ্যোৎস্না
জেগে উঠে সন্তানের মুখ
কতদূর ওপারে বিদেশ, তার হিসেব
তসবির দানায় সংসার
বিকেলের ছায়ায় চুল বাঁধার ফিতে
মা মানে অনেক না জানা বিস্ময়
সবজির গন্ধ ভরা স্নিগ্ধতা
একটা পাহাড়ের ওপার থেকে নেমে আসা
আশ্চর্য সকালের চোখ
মা মানে, মা হতে না পারার দুঃখ
সব নারীর কোলের সন্তান
মা হলো সন্তানের না পাওয়ার অভিযোগ
মা মানে, রাত্রি জাগরণ
মা মানে মাছের সাঁতার
ক্ষমার বাসন
মা মানে মা
হাঁটা পথের ছায়া
সব খুশির উপচানো সুর
খুব একা…