অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
জুন ৩, ২০২৫
২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জুন ৩, ২০২৫
২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেবাশীষ ধর -
দেবাশীষ ধরের গুচ্ছ কবিতা

বুকজমি

পায়ের ছাপ ঘাসবনে
গোধূলিবেলার প্রতিচ্ছবি মাটিমুখ
দেখছে আসন্ধ্যা ফেলে আসা মধুবন,
যেখানে থেমে যায় বুক জমি।
আমি অপরাধী হয়ে নুয়েছি
কপাল ঠুকেছি মাটিমুখে
বেঁধেছি লতার দড়ি নিজেকে
এঁকেছি কালো কাদার বর্ণমালা
বানালাম দেহমূর্তি
গত দশার নদীকূল এসে ভিড়েছে
কতবার দৃষ্টিতে মায়ের মমতায় বেঁধেছি!
দেহমূর্তি ভাসাতে
বিস্মৃতির ছায়ারেখায় মিশেছে পূর্বপুরুষের যবনিকা
এখানে এসে জমেছে আধুলিমাখা দেহ
সেই দেহ দিক পরিবর্তন করে,
মুহূর্তেই কলতান শব্দে পাখিদের ভিড়
পায়ের ছাপ পার বেয়ে উঠছে পাহাড়ে
যেখানে একদিন বুকজমি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে……

 

বস্তু

ওরা বলে তুমি একটা বস্তু, ত্রিমাত্রিক বস্তু
তোমার তল বহুতলের বিন্যাস
তোমার বাস্তবিক বিশারদ অপরিণাম
তুমি কারো কাছে কেবল তার একান্ত নিজের বস্তু,
তোমার দিকবিদিক
ঘূর্ণন চারদিক
তুমি নিজেও ঘুরে ঘুরে তৈরি করছো জীবনলীলা
আদিম বস্তুর অংশ নিয়ে ছুটে চলেছো সারাবেলা।
কখনো তোমার অবিরত কণা ঝরতে থাকলে
মাটির সাথে মিশে তুমি হয়ে উঠো মাটিবস্তু
অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন মিলে
তৈরি হচ্ছো এক অস্তিত্বশীল কলাকার
সমগ্র জীবনব্যাপী বহু স্নায়ুর গতিকার,
কতগুলো উপসর্গ
বিবিধ ব্যাকরণ,
শব্দমালার রাগান্বিত গতিতে অজানা প্রতিবন্ধক
কেটে দেয় বিশেষণ
-সবই বস্তু!
-তুমিও নাকি বস্তু
-দিন শেষে আমিও একক বস্তু।
যখন হয়ে উঠো নির্জীব বস্তু
তোমার আত্মার পরিশুদ্ধ কর্মযজ্ঞে
একখণ্ড বস্তুসহ পাত্র ভাসিয়ে দিয়ে
সমুদ্রপেটে কলঙ্কিনী।

 

কিচিরমিচির

এ বেলাতে কিচিরমিচির
ও বেলাতে কিচিরমিচির
রৌদ্রদুপুর ভাতঘুমেতেও কখনো শুনি
সারারাত্র ধরে তারাময় আকাশ দেখি
কথায় ডুবে কথাতেই হারায় মন প্রাণ
রিক্ত সুরে সব বেহুদা আলাপ সুর মেলে গান
পাড়ার ফেরিওয়ালা শুনে
রাতের প্রহরীরা চোখ রাঙে
ও বেলায় হাঁটতে গেলে
জুটি হয়ে পাদুকা ফেলে,
জানালার ভাঙা কাঁচের রেখাতে দেখি আলোর বিভাজন
সুদর্শনী বৃষ্টি ভেজা ছাতার ডাঁটে শুনি চুড়ির ঝনঝন।
রোদ বেলায় মাছ বাজারে দামাদামি,
লুঙ্গি তুলে বরফ পিটায় মাছের দাপদাপানি
সম্বুর দোকানে মহিলাদের যখন খিটখিটানি
আমার ঘরে শাড়ির আঁচলে নাক ডুবে হয় সিন্নি
এ বেলাতে কিচিরমিচির
ও বেলাতে কিচিরমিচির
হালকা আঁধার ছাপিলে ধুপের কুয়াশা ঘর
দেখিতে দেখিতে বয়ে যায় সুরের মিষ্ট সর।

 

মেশিনঘর

দরজাটি খুললো
ধোঁয়া ঢুকলো
নিঃশ্বাস আটকালো
বারান্দা ঘোলাটে হলো
শঙ্খকুটির পাঁপড়ি মেললো
আকাশের দিকে চাইলো
অফুরন্ত বাতাস এলো
পাঁপড়ির বুকে একটি সুন্দর বিকেল গজালো
দরজা বন্ধ হলো
স্মৃতিপট জাগলো
করুণ সংকট মনে পড়লো
বিষাদমাখা ঘোর দেখা দিলো
ঢালাই মেশিনের প্রচন্ড গজগজ
চোখ খুলে স্মৃতিনেশা ভাঙার গরজ
বিকেলের রঙ দেখে
সবুজ সাজির খেলা
রোগাটে মন ঝেড়ে
শীতল মেজাজের বেলা
এমনটায় যদি হতো সারাবেলা!
দরজা খুলে দিন সমস্ত পাখিদের সবুজঘর
তালা লাগিয়ে দিন সেইসব গাছকাটা মেশিনঘর।

 

অবিভাজ্য

বিপরীত স্রোতে সাঁতরিয়ে ফিরে গেলাম
জীবনের পূর্বেকার অধ্যায়ে
নিজের ভুলগুলো চিহ্নিত করি,
আমার তোমার তাদের ওদের
একটা ডায়েরি করলাম
চেতনারহিত বিষয়গুলো নাড়া দেয় বেশি,
ভুলের শিকড়গুলো উপড়ে ফেলি
আমি আবার এই ভূপৃষ্ঠে পুরাতন মাধ্যাকর্ষণে ফিরে আসতে চাই,
চেতনার বৈচিত্র্য এক অবিরাম গতিবর্ষণ
সময়ের পেন্ডুলামে স্মৃতিপট যদি বদলানো যেতো,
নতুন বিশারদ সাজিয়ে গোলাপের চাষ করতাম।
আমি তো এখন ব্রক্ষ্মাণ্ডর ক্ষুদ্রতম কণা
প্রতিবার গ্রহণ করতে করতে ধ্বংসের দিকে যেতে থাকি,
আমার একটা অংশও আছে ব্রক্ষাণ্ডের বুকে
যেরকম প্রাক্তন প্রেমিকাকে বুকে রেখেছিলাম নিজের একটা অংশ, যেদিন পৃথিবী পুনরায় কেঁপে উঠবে এক মহাবিস্ফোরণে, ক্ষুদ্র কণা আমিও উঠবো কেঁপে
ঝুরঝুরে ঝরে পড়ে পরমাণু হয়ে মিশবো….
তুমি আমি তোমরা আমরা সবাই অবিভাজ্য!
চেতনায় থেকে যাবে সব আগামির বাস্তুকলা
নিদ্রাহীন প্রহরীর মতো পাহারা দিয়ে যায় গ্রন্থাবলি
ইতিহাস লিপিবদ্ধ বিবর্তিত হবে অক্ষরখেলা
তবুও একদিন পৃথিবী বৈজ্ঞানিক চাষে খাদ্য বানাবে।
পুনরায় বিপরীতের স্রোতে ফিরে আসবো অবিভাজ্য হয়ে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

আসমা চৌধুরীর গুচ্ছ কবিতা

Read Next

দালান জাহানের একগুচ্ছ কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *