অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মার্চ ১৩, ২০২৫
২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মার্চ ১৩, ২০২৫
২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিঃশব্দ আহমেদ -
নিঃশব্দ আহমেদ – গুচ্ছকবিতা

শপথে এই সন্ধ্যা

শপথে এই সন্ধ্যা৷ তবুও-শান্ত স্রোতে ভেসে যাবে নদী৷ ফল্গুধারা বইবে সর্বত্র৷ শুধু থিরথির হয়ে রবে দু চোখ—জলহীন অথচ ফোয়ারা হয়ে যাবে চোখ অলক্ষে
না তুমি, না আমি— আলতো হাতে ছুঁয়ে যাব দুঃখ পরস্পর৷

হুইসেল শুনে শুনে যেতে যেতে কোনো যানে
দৃষ্টির কাছাকাছি হবার আগেই মিলিয়ে যাচ্ছে কিছু দৃশ্য— হয়তো মিলবে না তেমন ফুরসত আমাদের আর
মুখোমুখি কোনো সন্ধ্যার-আলো আঁধারির এমনো আভিজাত্যে— মিলবে না আর তার পরিসংখ্যান কতশত
পাখি, বৃক্ষরাজি হারিয়ে গেছে— অচেনায় কিংবা অজানায়৷ জানব না কত কত রাত ভেতরে আমার
মৃত্যুর সাথে করেছে আঁতাত৷

এমন করে হারিয়ে যাবে অগুনতি ভোর, সান্ধ্য পাখিদের শিসে বসবে না কূজন আকাশসভায়
মেঘদল ভেসে যাবে, সতেজ হবে কিছু ফাঁপা মাটি
উর্বরা গুণে আর হবে না সমৃদ্ধ-প্রান্তর
বিদেয় হবে সবুজ, খরকর রোদ—
বিগত দিনে আর জাগছে না উদ্ভাসি প্রবোধ৷

তারপর এমনও আসে দিন, নেই আর কিছু করার
ঝিম ধরা দুপুর এক আটকে রবে জানলার গারদে
মেঘবাড়ি হবে মুখর মাদলে
ফেরার হুইসেল বেজে উঠবে শেষবার মরণের পাড়ে
না বসন্ত, না কোনো উচ্ছল ভোর
এমন করে অনন্তকালের তরে রুদ্ধ হবে জাগানিয়া দোর


এসেছি ফেলে যে আমায়

বছর তিনেক হলো, বিকিয়ে দিলাম আমায়— আস্তিনে ছড়িয়ে আফিমের ঘ্রাণ, আমি করি প্রেমের চাষাবাদ
কখনো হয়ে উঠি গাছ, ঝড়কবলে প্রাণপণ যুদ্ধ আমার ধরে রাখার— অতঃপর বদ্ধমূল গেড়ে বসে আমার ভেতর সে এক অযাচিত পরগাছা৷

বছর তিনেক হলো, উপযাচক হয়ে— অচল মুদ্রায় নিজেকে দিলাম বেচে—
প্রতিভূ রেখে ঘাম, কায়ক্লেশে দিন গুজরান
দিনের শেষে, রাতের শেষে চাওর হয়ে উঠে বুকে
পাপে-তাপে, আজন্মের গোলাম৷

বছর তিনেক হলো, রপ্ত করেছি ঘৃণার ভাষা
ভালোবেসে ভিজিয়েছি কনুই, কবজি যত কাদাজলে
সান্ধ্যহাওয়ায় ফিরে যাই, আমি আঁধারে
অবশেষে মেখে কাদা গায়—

বছর তিনেক হলো, ফেলে এসেছি হৃদয়
শৈশবের মেঠোপথে, নাচতে নাচতে বৃষ্টির নাচন
শ্রাবণে যেন রৌদ্র আনন—
অথচ— বছর তিনেক বাদে, মরিতে চাই সাধে৷


আস্ফালন

তোমাদের উল্লাসের সভায়, বয়ে চলে মৃত্যুনদী— ভেসে উঠে খলবলে হৃদয় এক প্রাণহীন, আমি তাকে খুঁজে পাই
মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা যেন কোনো মীন, নেই জলের সারাৎসার
অতল ছুঁয়ে আছে গভীর অন্ধকার—

তোমাদের শান্ত সম্মেলনে, আমার সে বিগ্রহ
কথাসব ফেলে আসি হেলেঞ্চার বিলে, টাকি খোঁজা কাদাজলে— সারল্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে নির্মাণ করি সে শরতের সকাল, শান্তস্রোতে ভেসে যেতে যেতে খেই হারাই জলের পাথার, প্রকৃতির মতো থাকি নির্বিকার৷

দ্যাখে তোমাদের গোপন আঁতাত, অলক্ষ্যে উঁচিয়ে উঠে হাত
নবান্নের কাস্ত হাতে খণ্ডিত করি কল্পিত মস্তক
আবার আমি যেন ফিরে আসি ক্লিষ্ট শিশুর মতোন
বনছায়ায়, একটি দুটি খচ্চরের আস্ফালনে এই অরণ্যের হয় না সাবাড়৷

তোমাদের সুরম্যঘরে, দেখে আলোর ঝলকানি
ক্রন্দনে ফেটে পড়ে দেয়াল, অশ্রাব্য কতেক কথনের যে ধূম্রজাল, আমি তাতে সংযোগ রাখি— কর্ণের
আর কুহরে ছড়িয়ে পড়ে দ্রোহের ধ্বনি
পোশাকি মানুষের পোশাক খসে পড়ে
শুনে বাক্যবাগীশ যত মিথ্যাচার৷


স্বপ্নের ফ্রেমে বাঁধা এ কোন ছবি

যা দেখি পুরোনো, কেবল সময়ের আবর্তন
একটা সময় আরেকটা সময়ে যাবার কালে আমার আক্ষেপ হয়, দুঃখ হয় এমনি
একদিন এমন করে ক্ষয়ে যেতে যেতে সময়
কোনো অপরাহ্নে, শালিখ ডানায় আঁধার হয়ে আসে
ঘন আঁধারের কাছে ক্লান্ত হয়ে আসে চোখ৷

হয়তো প্রতিশ্রুতি সব জড়ো করি আরও,
একটা একটা করে ছেড়ে দিই ইচ্ছেরাজির পরিক্রমা
সে আর হয় না বাস্তবায়ন, শেষ কোনো ইচ্ছের কাছে প্রলুব্ধ হতে হতে

আমি মুখস্থ করি স্তুতি, যদি আরও সময় কিংবা বছরখানি— আমারে থাকিতে দাও৷

ঘুণে ধরা কাষ্ঠের রূপ, জর্জরিত বহুকাল
একটা সূর্য থেকে রাতের শশীর দিকে আয়তলোচন
রাতভর দেখে যেতে যেতে অনিদ্রার বিবরণ
দূরে কোথাও তারাদের আকস্মিক স্থলন
না দেখিলাম কখন ছড়িয়ে গেল ঘরময় শোকের মাতম৷

এসব ভাবনা, সময়ের বিয়োগাত্মক বিরহে
পুড়ে যাতে থাকি— পুড়ছে আগামী
নিছক কোনো শান্তনা আমাকে আর আশ্বস্ত করে না
তাই ভাবি, মিছে সব জীবনে স্বপ্নের ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবি৷

Print Friendly, PDF & Email
নিঃশব্দ আহমেদ

Read Previous

কৃষ্ণচূড়া

Read Next

ড. জসীমউদ্দিন আহমেদ : ‘৫২-র ভাষা আন্দোলনের অনন্য পথিকৃৎ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *