অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মার্চ ৮, ২০২৫
২৩শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মার্চ ৮, ২০২৫
২৩শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশ চন্দ্র রায় -
প্রকাশ চন্দ্র রায় – গুচ্ছকবিতা

নত হও যদি 

চাঁদের কলঙ্কের মতো আমিও তোমার কলঙ্ক হব,

অযুত প্রণয়চিহ্ন এঁকে দেব ওষ্ঠ-অধরে;

দয়া পরবশে একটুখানি নত হও যদি।

আমি তো পারিনি এখনও অতটা লম্বা হতে,

কীভাবে ছোঁব তোমার উজ্জ্বল অবয়ব!

বাসনা’র বাহু যুগল বাড়িয়েছি কেবল তোমার দিকে;

নেমে এসে ভালোবেসে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হও যদি…

আশা করি উভয়ের জীবনের জের

কেটে যাবে সুখে-মহাসুখে।

২. একটিবারও ভেবে দেখে না

খুব বেশি ভালো বুঝি না কবিতাকে,

ভাল্লাগে না হেঁয়ালিপনা তার;

ধরা দিতে চায় দেয় না ধরা সে!

জানি না সঠিকভাবে কতটুকু ভালোবাসে।

ছুটে এসে ছুঁয়ে দেয় আবার ছুটে পালায়

ঠিক পুবালি বাতাসের মতো,

অপরূপ ভঙ্গিমায় সামনে দাঁড়ায়;

পলকেই হারায় মনে হয় আলেয়া যেন।

কখনও স্রোতস্বিনী— কখনও মন্দাকিনী,

অপার মহিমার রহস্যময়ী কবিতা সুন্দরী!

হাসায়-কাঁদায়-আবেগের তরঙ্গে নাচায়;

কল্পলোকের অধিবাসিনী নাকি মর্ত্যলোকের

মানস প্রেয়সী!

বুঝি না সঠিক বুঝি না মনোভাব তার।

কবিতা আমার নিগূঢ় প্রেমের মর্ম বোঝে না,

কবির কথা একটিবারও ভেবে দেখে না।

৩. ফেলছি আশার জাল

তুমি চলে যাও ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে সম্মুখ পথে আমার,

শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘখন্ড যেমন ভেসে যায় মন্থর মলয়ে।

আমি চেয়ে চেয়ে দেখি উৎসুক নেত্রে,

যদি আসো কাছে হয় পরিচয় বিনিময়;

এই আশায় অব্যক্ত কামনায়।

এভাবেই যাচ্ছে দিন-মাস-বছর,

একটিবারও দেখলে না আমাকে মরাল গ্রীবা ফিরিয়ে

নিত্যগামিনী অনিন্দ্য সুন্দরী।

তবুও ফেলেছি আশার জাল,

বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বেই একদিন,

তুমি আসবেই কবির কুটিরে,

দুরু দুরু বুকে-লাজরাঙা ভঙ্গিতে,

ইতস্তত পায়ে এক-দুই-তিন;

কাঙ্ক্ষিত কামিনী— অধরা হরিণী।

চকিত আলোয় উজ্জ্বল হবে পর্ণ কুটির আমার,

দুধসাদা বিদ্যুৎবাল্ব জ্বাললে যেমন হয়,

স্নিগ্ধ আলোয় ভরে ঘর— লোডশেডিং এর পর।

আনন্দে উদ্বেলিত হবে কবিমন প্রার্থিত প্রাপ্তিতে,

লিখে ফেলব কবিতা একটি তখনিই হয়তো

তোমাকে নিয়ে— তৃতীয় কাব্যের আমার;

হয়ে যেতে পারে আরও কিছু আশাতীত

হৃদয়ঘটিত ব্যাপারস্যাপার।

৪. অপূর্ব হতে পারিনি এখনও

আমি তো অপূর্ব হতে পারিনি এখনও,

যেমন ছিলাম তেমনটিই আছি,

আগামীতেও থাকব হয়তো অতি সাধারণ একজন হয়ে;

তোমাকে ভালোবাসি— ভালোবেসেই যাব আজীবন।

তুমি তো আবার ভালোবাসো অপূর্বকেই বেশি!

সহস্র সাধনায়ও আমি অপূর্ব হতে পারিনি এখনও,

সকল চেষ্টা আমার বিফলে গেছে;

ব্যর্থতার গ্লানি গায়ে মেখে এখনও আমি

সাধারণের সারিতেই দাঁড়িয়ে আছি।

আমাকে ক্ষমা করো প্রিয় পৃথিবী,

যেহেতু আমি অপূর্ব হতে পারিনি;

তবে জেনে রেখো আমার ধ্রুবসত্য বাক্যটি

হে অপরূপা পৃথিবী,

অতি সাধারণ একজন আমি তোমাকে ভালোবাসি;

কায়মনোবাক্যেই ভালোবাসি।

৫. সোনামুখি পাখি

বিশ্বাসের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে দাও,

অহেতুক কেন সন্দেহের দোলাচলে দোলাও,

যাও পাখি সোনামুখি যেদিকে খুশি সেদিকেই উড়াও;

মিথ্যে ভালবাসায় কেন অধম এ কবিকে জড়াও!

এ প্রাণে যত গান বাজে— যত সুর তার উথলে উঠে,

সে গানের কথায়— সে সুরের মুর্ছনায়,

সোনামুখি পাখি তোমাকে পাওয়ার বাসনা ফোটে।

পাশে তো ছিলাম— কাছেই তো আছি,

থাকবই সাথে সাথে সেই শেষাবধি;

বিশ্বাসের বাতাসে কেন অবিশ্বাসের অন্ধকার জাগাও,

যখন তখন— যেখানে সেখানে— যতনে লুকাও!

মানো না কেন সোনামুখি পাখি,

জানো না কেন এখনও কতটা ভালোবাসি,

বিশ্বাসের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চেয়ে

বলো তো দেখি আর কতদিন বিশ্বাসকে বেঁধে রাখি।

প্রকাশ চন্দ্র রায়

একজন হোমিওপ্যাথ। পেশাগত ব্যস্ততার পাশাপাশি শখের বশে তিনি সাহিত্যচর্চা করেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘তামাটে হৃদয়ভূমি’।

নিবাস : থানা মোড়, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

সম্পাদকীয়, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল অনুপ্রাণন ৬ষ্ঠ সংখ্যা

Read Next

আবু আফজাল সালেহ – যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *