অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
অক্টোবর ২৩, ২০২৪
৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অক্টোবর ২৩, ২০২৪
৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুসলেহা সুলতানা -
মুসলেহা সুলতানা – গুচ্ছকবিতা

১. শব্দবিলাস

তোমায় আমি একগুচ্ছ শব্দ দিলাম
লিখে ফেলো
শীতের কবলে কুয়াশাতুর পৃথিবীর মৃন্ময়ী ভালোবাসা,
লিখে ফেলো
হায়নাদের দখলে স্মৃতির মহিমান্বিত রজনী।
ব্যক্ত করো মনের অভিলাষ।

শব্দবিন্যাসের অজস্র বর্ণমালা অপেক্ষায় থাকে আক্ষরিক ভালোবাসার,
লিখে ফেলো চন্দ্রবিলাসী মনের কাহিনী।

চারিদিকে ঘোর অমাবস্যা গ্ৰাস করেছে নিয়ন আলো,
শুক্লপক্ষের অপেক্ষায় অন্তিম প্রহর পার করে কৃষ্ণপক্ষ।
মুক্তির অপেক্ষায় অজস্র বর্ণমালা
ক্ষণে ক্ষণে মহামানবী।

চাওয়া পাওয়ার শূন্যতায়
পূর্ণতাগুলো পাড়ি জমায় মেঘের দেশে,
শুনেছি মেঘেরাও নাকি শব্দের প্রেমে পড়ে!

ঠুনকো কাচের দেয়াল ভেঙে যায়
শব্দের মাতোয়ারায় ব্যাকুল হয় প্রকৃতি।
নাইবা জানল কেউ নাইবা রাখল মনের খবর!

ক্ষতি কী!
নিজস্ব অন্তরঙ্গে মেলে ধরো শব্দের নিশ্চায়ন
সুর তোলো টুংটাং সেতারে মেঘেদের সপ্তর্ষি  শ্রী-রাগ।

বিস্মৃত ক্যানভাস

স্মৃতির চমৎকৃত মনমোহনে ডাকবাক্সের আনাগোনা
চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকা মন
হঠাৎ চমকে ওঠে ক্রিং ক্রিং বেলের শব্দে!

ফেলে আসা দিনের স্মৃতিবিজড়িত মন্থনে
ডুকরে ওঠে মনের অবগাহন,
কত অব্যক্ত কথা লিখে ফেলা মন আজ নিরুপায়।

কৃষ্ণপক্ষের কবলে শিশিরভেজা ধরণী,
হৃদপিণ্ডের জমে থাকা বরফ
বিধ্বংসী রাতের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত।

কত ছবি কতো মুহূর্ত জড়িয়ে আছে
মায়াবী নিকুঞ্জের অলিতে-গলিতে;
স্মৃতিবিজড়িত মায়াফুল উপলব্ধির কেতন ওড়ায়
বর্ণিল সমারোহে পার হয়ে যায় পৌষের মৃদু উল্লাস।

রঙিন কাচের চুড়ি, ঘুঙুরে পেখম তোলা মন
আজও বেসামাল,
কল্পনায় নিছক স্বপ্ন বোনে!

ফিরে আসবে বলে শব্দের পরিভাষায় রোমিও-জুলিয়েট
নিরেট উপাখ্যানে গচ্ছিত মহাকাব্য
ক্যানভাসের আমন্ত্রণে রঙিন চিত্রকল্প সাজায়।

 

সোনামোড়ানো নুড়ি পাথর

নতুন প্রভাতে ঘুম ভাঙে আলেয়ার
সগৌরবে আত্মতৃপ্তির অঙ্গীকার নিয়ে,
ফিরে দেখা একটি বছর পার হয়ে যায়
শূন্যতার আঁধারের খাতায় লিপিবদ্ধ সমীকরণে।

ইচ্ছের পরিধিতে অঙ্কুরিত ছায়াবৃন্তে
হাঁটুজলে নিমগ্ন থাকে বসন্তের এস্রাজ,
বাধ্যবাধকতা কি শুধু
নারীরই অঙ্গভূষণ?

তুমি নারী!
ভেতর থেকে মোচড় দিয়ে ওঠে
বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গের মতো ক্ষণজন্মা ভালোবাসাগুলো।
মুহূর্তেই স্তম্ভিত হয় প্রতিকৃতি
কাঁটার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত নারীত্বের অধিকার।
তবে কেন এই নারী দিবস!

নারী একনিষ্ঠ নারীই সর্বশ্রেষ্ঠ
নারীই সর্বশক্তির উদাহরণ,
প্রাপ্যতা কি তবে কেবল গুটিকয়েক ভাষণে?

বছর ঘুরে ফিরে আসে ৮-ই মার্চ
চকচকে নুড়ি পাথরে সোনা মোড়ানোর আর্তনাদে
মহিমান্বিত নারী দিবস
তবুও শূন্যতা!
শাড়ির আঁচলে টিকে থাকার মমত্ববোধের।

 

ক্যাকটাসের ফুল

গন্তব্যের খোঁজে অন্তহীন নির্ভেজাল প্রতীক্ষা
চারিদিকে ব্যস্ত নগরী ছুটছে অনবরত,
কিংকর্তব্যবিমূঢ় এক নীরব অভিমান,
দাওয়াতের কাঠগড়ায় একগুচ্ছ ক্যাকটাসের ফুল।

জানি পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘপথ
ডিঙ্গাতে হবে বহু কাঁটাতারের বেড়া,
শক্তি সঞ্চালনায় মাঝে মাঝে
নির্বোধের মতো চেয়ে থাকি।

নিরপেক্ষ সময় কঞ্চির আঘাতে জর্জরিত।
বাহুল্যতা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উপহাসের অপেক্ষায়
নীরবে আর কত ঝরবে উল্কাবৃষ্টি!

অক্ষিগোলকের অক্ষিবলয় ক্লান্ত;
ভীষণ ক্লান্ত!
দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে নক্ষত্রের আলোকচ্ছটা
ভস্মীভূত হয় দৃশ্যায়িত কল্পনা!

 

অনির্ধারিত বর্ণমালা

ফিরে যেতে সবাই চায়
না বলা কথার অন্তহীন প্রতীক্ষায়
পরীক্ষার খাতার অন্তরীক্ষে নিঝুম প্রকৃতি।

বসন্ত সাজায় পসরা
মেঘেদের পালঙ্কে নৃত্য করে বাসন্তী
বহুদূর থেকে ফিরে আসে ফাল্গুনী হাওয়া,

হারিকেনে তেল নাই জ্বলছে আগুন
একী বটবৃক্ষ সমতুল্য প্রজাতন্ত্র!

মৌটুসী পাখি সুর তোলে ক্যানভাসের গিটারে
রক্ত মিছিলে ধেয়ে আসে পলাশের প্রমোবন্যা
শুরু হয় কাব্যিক আয়োজন অনির্ধারিত বর্ণমালায়।

ঘোর অন্ধকারে ধ্রুপদির রণ সঙ্গীত
শান্ত করে মন
রক্তিম আলোকবিন্দু ফিরে আসে
জোনাকির আলোকচ্ছটায়,

চেয়ে দেখো প্রিয় হয়তো তুমিও ফিরে আসবে
ক্ষান্ত হবে পরবাসের যাপিত জীবন।

 

ছেঁড়া গোলাপ

আলমিরার তাকে সাজানো অন্তঃপুরের মৃদু উল্লাস
নৈসর্গিক মায়াজালে বিভাজিত বেঁধে রাখা স্বপ্ন,
কেন খোঁজো নয়নাভিরাম সৌন্দর্য!

রেশমি চুড়ির মায়াকাননে ঘেরা উদারতা
মিলনের অনস্বীকার্যে রচিত বিশদ সম্ভার,
বিলিয়ে দিতে পারলেই সার্থক রমণী।

জীবনের গল্পগুলো অপরিসীম নির্বাক
যেন মনে হয় বিতাড়িত এক টুকরো ছেঁড়া গোলাপ,
পিরিতের চিলেকোঠায় অদ্ভুত বাসর সাজায়।

দিনশেষে শূন্য রিক্ত হৃদয় অনুকল্পে রচিত
কল্পনার দীর্ঘায়িত মায়াবী প্রহরে নিদারুণ ব্যর্থতা,
তবু কেন সংকল্পহীন জীবন?

গভীর রাতে হারানোর পথগুলো হয়তো কঠিন
তবুও তো সুনিশ্চিত,
কেন এত অহংকার হে ক্ষণিকের অতিথি?

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি

Read Next

শিল্পপথের দুর্ভাগা যাত্রী তারেক মাহমুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *