
বালিকা
হেলে পড়া সূর্যকে শেখায় প্রণয়ের পাঠ, কুয়াশাচ্ছন্ন নদী ঢেকে রাখে জলের ঢেউ
বুনো ঘোড়ার দৌড়— লাগামহীন, পাহাড়ের দুরন্তপনা এই যে এই দুর্গম অচেনা ফুল বাতাসের আলিঙ্গন দু-হাতে বিকেলের প্রান্ত ছোঁয়া সাধ্য কি আছে বালিকা! বালিকা রোদের তরঙ্গে তুমুল বাতাসে তোমার ছায়া বুনো ঘোড়ার পিছু সেও দৌড়ায়!
বাতাস ও ছায়া ছুঁয়ে যায় কুয়াশাচ্ছন্ন নদী জলের ঢেউ— এমনকি হেলে পড়া সূর্য দীঘল, দুরন্তপনা এই বুনো ঘোড়ার খুরের লাল খুলে রাখতে কি পারবে বালিকা!
লাল সোয়েটার
সন্তানের শবদেহ হাসি মুখে আজ কাঁধে করে বহন করছে যে মা চিরবিদায়ের পথে, সে পথ তাঁর কাছে কখনোই দীর্ঘ মনে হয়নি।
তাঁর চোখে কেবলই ভেসে ওঠে একখণ্ড জমিনের স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। ওপথে শুধুই লাশের মিছিল ছিল। পায়ের নিচে রক্তে রঞ্জিত ও জমিন কখনো শুকিয়ে যায়নি;
মিসাইলের আঘাতে আঘাতে কংক্রিটের দেয়াল ভেঙে গেলেও ভাঙেনি তাদের হৃদয়ের দেয়াল।
জেরুজালেমের ভূখণ্ডে হয়তো কোনো ঋতু নেই— না গ্রীষ্ম না বর্ষা না শীত। তবুও ওই সন্তানের জন্য শীতের আগমন ঘটেছিল মা যত্ন করে হাতে বুনেছিল লাল টকটকে একখানা পশমি সোয়েটার।
সমুদ্র শরীর
বিকেলটা আজ খুব দ্রুত ছুটছে
সন্ধ্যার পিছু পিছু—
ভায়োলিনের করুণ সুরের মতোন নিস্তব্ধ হয়ে আছে আলো-আঁধারির ব্যালকনি,
আমার বর্ণ সমূহ ছুটে চলছে শুক্রাণু তরঙ্গে
কবিতাকে ভালোবাসি— ভীষণ রকম
যেখানেই যাই, সেও
ছুটতে থাকে পিছু পিছু
এই যে, এই শৈশব মাঠে সন্ধ্যা নামবে একটু পরেই
রোদের ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে কখন যেন দুপুর গেছে ভেসে—
বিকেলের আয়ু ছুটছে এখন তুমুল বেগে
সমুদ্র শরীরের পিছে।
জনপদ
এই বর্তমানও হারিয়ে যাবে অতীতের গহ্বরে
শ্বেত-শেয়ালের অরণ্য হবে মানুষের বসবাস,
মানুষ যে সকল পথ-ঘাট মাঠ হারিয়েছে জলের দামে
সে সকল চেনা জনপদ
এখন মহাজনদের দখলে—
ওরা ইজারাদারের মতোন বিনিময় করে শিশুদের চিত্ত বিনোদন,
মুক্ত নেই পথ-ঘাট মাঠ, অরণ্যবাসী
প্রপিতামহের কবরে এখন বাস করছে কতক লাশ,
চেনা জনপদ এখন মহাজনদের দখলে
পথ-ঘাট, মাঠ, যা হারিয়ে গেছে জলের দামে
সেই শহরজুড়ে মানুষের এখন একাকিত্বে বসবাস।