অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
জানুয়ারি ৩, ২০২৫
১৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জানুয়ারি ৩, ২০২৫
১৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাহানারা ঝরনা -
শাহানারা ঝরনা – গুচ্ছকবিতা

হয় না কোনোদিন 

বিষাদের জ্যামিতিক ভাঁজে সাজানো
ননস্টপ কথার ফুলঝুরি
দিনে দিনে বড় বেশি বাড়ন্ত হয়
কালজয়ী ঋণের আতিথেয়তা
অক্ষরের প্রজাপতিদল পর্যটনে যায়
পরদেশি মেঘেরা হয় ভ্রমণচারী বাউল,
বাউলের একতারা সুর ভীষণ অচেনা এখন
ব্যথারা মুমূর্ষু রোগীর মতোন কাতরায় বুকে
পুঁজিবাদের পেন্সিল স্কেচে দেখি আপন প্রতিচ্ছবি।
মায়া হরিণীর মায়াবী চোখ
সে কী আদর্শের প্রতীক?
বারংবার চেয়ে দেখি অপয়া উচ্ছ্বাসে
বিস্ময়ে বিমূঢ় হলেও শুদ্ধতা বাড়ে না
রাষ্ট্রীয় মর্যাদার আশায় কাটে মানবজনম।
কবিতার জলজ বাতাস
বিশুদ্ধ দ্যোতনা ছড়ায়—
ঘুমন্ত মনের আঙিনায়
হৃদ্যতা হারিয়ে করি আঁধারের উপাসনা
আমিত্বের প্রতিধ্বনি নিয়ে ইথারীয় সন্ধ্যা নামে
অমৃত দিনগুলি হয় স্মৃতির অতীত
ঘুণেধরা ঐতিহ্যের ভেতর মানবতা থমকে দাঁড়ায়,
বিলাসী মুহূর্ত হারায় আকুল বিষাদে,
মেডিটেশন অনুভূতির মায়াজালে জড়িয়ে
পরিশুদ্ধ হওয়া হয় না কোনোদিন!

 

পোড়ে হৃদয়ঘর

রাতদুপুরে বৃষ্টি নামে শূন্যে ওড়ে মন
মেঘের ভেতর পাখির খাঁচা ভাসে অনুক্ষণ
কোন সে পথিক সাঁতার কাটে একলা অসময়
মনের ইথার তৃষ্ণাকাতর সুরের বিপর্যয়
একাকিত্বের বাঁশি বাজে পোড়ে হৃদয়ঘর
বিষ দহনে জ্বালায় আহা কোন সে মালাকর!

 

বিষাদে হই লীন

কুসুম কুসুম দিন
তোমার কাছে থাকুক জমা
অনেক অনেক ঋণ
মধ্য রাতের ইচ্ছে ফোটা ফুল
অমর কোন দুঃখেতে মশগুল
খারাপ সময় অপেক্ষাময়
শব্দেরা সঙ্গীন
স্মৃতির ঘরে আগুন জ্বেলে
বিষাদে হই লীন।

 

ইচ্ছে সুখের বাঁশি

জীবনজুড়ে দুঃসময়ের ছায়া
ইচ্ছে তবু স্রোতের টানে ভাসে
নানামুখী অসঙ্গতির চাপে
অস্থিরতার কৌড়িগুলো হাসে
সুখবড়িতে দুখের টানাপোড়েন
বাজে শুধু আয়ুর্বেদিক বাঁশি
ইঙ্গিতে ঐ দোলে নবীন পাতা
ফুলকুঁড়িদল ঝরে রাশি রাশি।
বুকের ভেতর মুক্তো মানিক রতন
আড়াল করে আয়ুষ্মতী আশা
কাল মহাকাল যায় নিমেষে চলে
জেগে থাকে অমর ভালোবাসা।

 

যাপনচিত্র

প্রাণময়ী প্রার্থনা বেদিতে দ্বিধাবিভক্ত হয় অনুভূতি,
পরিব্রাজক চেতনায় লিখি অহংবোধের স্ট্যাটাস,
এ কেমন সভ্যতা বিলাস?
কাগুজে বিজ্ঞাপনের আড়ালে অসুখী মানুষ কাঁদে
দ্বিধার আগুনে পোড়ে বিপন্ন বিবেক।
বারংবার রং বদলায় বিরহের জলরঙে আঁকা
বিমূর্ত অনুভূতি
যখন প্রাত্যহিকীর সূচিক্রমে যোগ হয় নতুন আবেশ—
যাপন চিত্র হয়ে যায় ভেরিফাই আইডির মতো।
নকশি বিভেদ নিয়ে মহাকাশ ছুঁতে চাই
দেখি না আশপাশের মৌলিক অসঙ্গতি
শৃঙ্খলিত নৈপুণ্যের কাটাচেরা করে
নিজেকে সাজাই প্রতিবন্ধী আবহে।
কোথাও বন্ধনের মখমলি আকাশ নেই
ক্রমাগত ভেসে চলি নোংরা স্রোত
যেন
উৎকণ্ঠার রৌদ্রবিলাস নিত্য সহচর আমাদের।

মানবতা

ইচ্ছেমাখা৷ স্বপ্নগুলো হায় কেন নিশ্চুপ
ঘুমের ভেতর নীরব পোড়ে বিধূর মায়া-ধূপ
মন বিলাসী আদিখ্যেতায় রক্ত জমে হিম
কার হৃদয়ের নূপুর বাজে অলক্ষ্যে রিমঝিম?
মধ্যরাতের আবেগ থাকে কীসের প্রতীক্ষায়
লোভের চিতায় আগুন জ্বলে আস্থা অনাস্থায়
বিদ্যাবোধের জটিল হিসেব ভীষণ যে গড়মিল
চারপাশে খুব জটলা করে উড়ন্ত গাংচিল।
কে উড়াবে বিজয়কেতন ফুলেল আঙিনায়
মুখের কথায় রংবাহারি মানুষ চেনা যায়
সুযোগ পেলেই ছোবল৷ মারে দেয় ছড়িয়ে বিষ
মোড়ক ঢাকা মানবতা পুড়ছে অহর্নিশ৷

উত্তরা, ঢাকা থেকে

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি

Read Next

শিল্পপথের দুর্ভাগা যাত্রী তারেক মাহমুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *