
ফুল ও প্রেম
পৃথিবীর সব ফুলেই সুন্দর!
যে ফুল জিউয়ে থাকে বিষে
যেই বিষ ব্যথায় নিভে যায় দেহ
সেই ফুলেরও থাকে মনোমুগ্ধকর রূপ।
আমি দেখিনি কখনো কোনো ফুলের রূপ নেই !
আমি দেখিনি কখনো কোনো ফুল
তার রূপ সৌন্দর্য না ছড়িয়ে
জীবিত আছে এই পৃথিবীতে।
আমি শুধু জানি
মানুষের প্রেমের যেমন থাকে সতা মিথ্যা
তেমনি ফুলেরও থাকে সুঘ্রাণ ও দুর্গন্ধ
থাকে বিষ ও নিরাময়,
আমি আরও জানি ফুলের রূপের মতোই
পৃথিবীর সব প্রেমেই থাকে আবেগ ও হৃদয়ের টান
থাকে ধোঁকা ও ভালোবাসা।
ভয়
বিকেলের গম্ভীর নিবিড় অন্ধকার খুব ভয় লাগে
স্বজনের মৃত্যুতে যে ব্যথায় ব্যথিত হয় মন
তেমনি ব্যথায় মুষড়ে উঠে বুক।
বিকেলের এই গম্ভীর অন্ধকারে মনে হয়
সামনে অথবা সবখানেই
মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছে আমার
পৃথিবীতে যেন আর কিছুই নেই
নেই উচ্ছ্বাস
নেই কলরব
নেই স্বজন
সবেই বেদনায় ভারি।
নিশি কালো সন্ধ্যায় গাছের কালো ছায়াগুলো
বড় ভয় জাগায়,
মনে হয় মৃত্যুতে যারা চলে গেছে
বহু বহু দিন হলো এই পৃথিবী থেকে
তারা বুঝি গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে,
সামনে এসে আমার
কী যেন কেড়ে নেবে কখন।
বিকেলে নীরব ছায়া আর
সন্ধ্যার গম্ভীর স্তব্ধ হয়ে থাকা অন্ধকার
ভয়জাগানিয়া মৃত্যু নিয়ে আসে
আমার জীবনে।
নারীর ঘাম
নারীর শরীরে আকর্ষণ আছে
সেই আকর্ষণে কখনো কখনো প্রেম সৃষ্টি হয়
কখনো বা কাম তৃষ্ণা জাগে দেহে।
নারীর শরীরে রূপ আছে
মায়া আছে
মুগ্ধতা আছে
সেই রূপ মায়া ও মুগ্ধতা কখনো কখনো
নিজেকে দাস ও অনুসারী করে রাখে
নারীর প্রতি সারা জীবন।
নারীর রূপের সেই মুগ্ধতা
কখনো কখনো মানুষকে অমানুষ
ও উন্মাদও করে দেয়।
অথচ নারীর শরীরের সেই আকর্ষণ
সেই প্রেম, সেই মায়া, সেই মুগ্ধতার চেয়ে
বেশি সত্য হলো নারীর শরীরে ঘাম।
পৃথিবীতে সব নারীর ঘাম এক!
নারীর ঘামের তিক্ততা এক
যৌনতাও একই,
এই সব একই ব্যাপার আমরা নিজেরাই
আমাদের কল্পনায় ভিন্ন ভিন্নভাবে সাজাই
অনুভব করি,
নিজের মাঝে নারী হয়ে প্রকাশ করি।
স্মৃতি
চাঁদের আজ দুঃখ পাবার কিছু নেই !
সবুজ পৃথিবীতে আজকের এই বিকেলে
আকাশে উড়ে যায় আমাদের ভালোবাসাগুলো
পিপীলিকার ডানায় লেখে থাকে স্বপ্নরঙ
আর কিছু একা বসে থাকা পৃথিবীর মানুষ
তাকিয়ে দেখে হাওয়া ভেসে বেড়ায়
বেদনার ডানায়।
সন্ধ্যায় সব প্রাণী ঘরে ফিরে
পৃথিবীতে বেড়িয়ে আসে রূপকথা
আর পৌরাণিক সব প্রাণ
তখনো আমাদের সেই স্বপ্ন ও বেদনা
আকাশে উড়ে উড়ে ভেসে যায়
এদিক ওদিক।
আমরা দুঃখ নিয়ে একা একা
পরিতাপ ও আপসোসে বাড়ি ফিরি
জেগে থাকি আমাদের কান্নার পর
অথবা ঘুমিয়ে যাই বুক ভরা ব্যথা নিয়ে,
তখন জ্যোৎস্না মাথা নীরব রাতে
গলিত শুভ্র আলোর ভেলায়
ভেসে ভেসে পৃথিবীকে দেখে চাঁদ,
নীরর শান্ত চাঁদ আলো ছড়ায়
পৃথিবীর উপর,
সেই আলোতে রূপ থাকে, ছায়া থাকে,
থাকে আমাদের ভালোবাসা ও প্রেম
চাঁদের আলো আর রূপে আরও থাকে
হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো আমাদের
সেই দুঃখগুলো।
স্মৃতি ২
ঘুঘুর ডানায় সন্ধ্যা নেমে আসে
বৃক্ষের আড়ালে নিভে যায় রবি
ঠিক তখনো আমি তোমায় মনে করি
যেন আকাশের শেষ নীলটুকু
গোধূলির শেষ বেলাটুক,
নিভে যাওয়া আকাশের শেষ আলোটুকুতে
তোমার স্মৃতি ও তুমি মিশে আছ।
আমি কখনো কোনোদিন
তোমাকে ছাড়া ভাবিনি পৃথিবী,
ভাবিনি কী করে একটি রুদ্র রাঙা দুপুর হবে আমার
কী করে ব্যস্ততম একটি সকালে ঘুম ভাঙবে
কেমন করে আসবে দিনের পর দীর্ঘ নীরবতার রাত
তোমাকে ছাড়া।
আমি জেনেছিলাম
রাতের মাঝে তোমার চোখে চোখ রেখে
তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে কাটাব আমার জীবন,
সেই জীবন আমার আজ সন্ধ্যা ও রাতের আঁধারে
অশ্রুজলে মিশে গেছে,
হারিয়ে গেছে জীবনের সব আশা।
স্মৃতি ৩
রজনীর ভেতর রাত্রি জেগে থাকে।
রাত্রির যুগসন্ধি শরীরী তুমি এসে যাও,
শয্যা গাতা আছে আমার, শয্যাশায়িনী
শুভ্র শোকোচ্ছ্বাস দিনগুলোর চিহ্ন হয়ে তুমি
রজনীর আকাশে আজ ভেসে বেড়াও
বেদনা ও সুখে।
জানি আমার অস্তিত্বশূন্য আবেদনগুলো
প্রত্যাখ্যাত হয়ে জীবনের ফাঁকা ফাঁকা জায়গা
পূর্ণ করে শূন্য দৃষ্টি আর উদাস চাউনিতে
আকাশরূপ পথে তাকিয়ে থাকে একা একা।
সাঁঝের বেলায় সর্বাগ্রে উদিত তারায় তুমি
সন্ধ্যাবেলায় জ্বলিত দীপে তুমি
রাতের পশলা বৃষ্টিতে তুমি মৃত্তিকায় উর্বর হও
অতঃপর
একদিন আমার মাটির ঘরের বারান্দায়
সামুদ্রিক জাহাজ এসে দাঁড়ায়,
এ যেন এক সমুদ্রের বালুকাবিস্তৃত তীরভূমি হয়
অচেনা অজানা সব লোকসকল অন্ধকারময় রাতে
আমার আঁধার ঘরে বাতি জেলে
খোলা দরজা পাড়ি দিয়ে আমার নিকটে আসে
আমি তখন আঁখিজলে আমার অভিশপ্ত জীবনের
সমাধির কথা ভাবি, সমাধি শায়িত হয়ে
সূর্যের শেষ ম্লান আলোকচ্ছটায় কি হবে আমার?
আমি আরো ভাবি, যদি আমার সমাধি ভঙ্গ হয়ে যায়
তখন আমি সহায় শূন্য সারাদিন ও সারা রাত
কেঁদে যাবো একা একা, তখন সহজেই ভীত
সম্পূর্ণ সায়ংকালীন ঈশ্বর-বন্দনার প্রাতঃকালে
সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রক্তিম আলোকছটায়
স্বামীহারা প্রেমিকার মত আমি সারা রাত ধরে
কেঁদে যাব একা একা,
আমি আরো ভাবি, সেই যেন হবে
আমার এক অন্তিম সুখের জীবন।