অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
ডিসেম্বর ৫, ২০২৫
২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ডিসেম্বর ৫, ২০২৫
২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুশান্ত হালদার -
সুশান্ত হালদার – গুচ্ছকবিতা

১. আল আকসার রজনী 

নদীতে হাঁটি নদীতেই শুয়ে থাকি
জল জীবন
জলে ভেসে ভেসেই জলের অখণ্ডতায় নিজেকে যাচি

আউশ আমনের খেতে হেঁটে হেঁটে পথ চলি
জড়িয়ে ধরে আমারই দেহ কর্দমাক্ত মাটি
ওগো নারী! ভালোবাসি
ভালোবাসি
খাঁখাঁ বুকে চৈত্রে পোড়া আমারই পতাকাবাহী জননী

এমনই জীবন
জলে নেমেই বুঝেছি
বিদ্রোহিনী হরগঙ্গা ভাগীরথী পদ্মা যমুনা কপোতাক্ষ নদী
রক্তের ঢলে বয়ে যাচ্ছে আমার তিস্তা বুড়িগঙ্গা
নাফ থেকে নিজেরই সাড়ে তিন হাত ভূমি,
ওগো সর্বংসহা জননী
স্থলে ফোটা পদ্ম আমার মনে হচ্ছে আজ আল আকসার রজনী!

‌‌

২. কুরুবংশীয় দুর্যোধন

বলা তো যায় না
দৈবাৎ শাস্ত্রীয় আজ্ঞায়
আপনারই কেটে নেয়া হলো ক্ষমতার প্রজাপতি ডানা
দুর্যোধনের সেই ঊরু ভাঙা দৃশ্যে
সমবেত প্রজাগণ সমস্বরে হেসে উঠল
শুধু সূর্য-পুত্র কর্ণই রাজা ধৃতরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে বলল—
এই পরাজয়ে মহামান্য সম্রাট কি বিচলিত
নাকি পুত্রশোকে যুদ্ধ আজ্ঞায় আমিও অগ্রবর্তী হব?
অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র কণ্ঠস্বর অপরিবর্তিত রেখেই বললেন
এ অন্যায়! যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী পুত্র,
তারপর… এই চর্যাপদে
কবিতার মতো ভেসে ওঠে আমারই দেশ ‘বাংলাদেশ’

সমবেত অতিথি এবং কবি-মনা বন্ধুগণ
আজ যারা পারদর্শী চৌর্যবৃত্তিতে, ধর্ষণে কিম্বা
লুটতরাজ জ্বালাও পোড়াও আগুনে
অথবা ভাষার বিকৃত অপপ্রচারে রোধ করতে চায় আমারই কবিতার কণ্ঠস্বর,
আজ তাদেরই আশ্রয় প্রশ্রয়ে
আমরাই কি হয়ে উঠেছি এক একজন কুরুবংশীয় দুর্যোধন?

 

৩. স্মৃতি

তোমাকে ভালোবাসার পর
ভূমিকম্পে নড়েচড়ে বসেছে পৃথিবী সাড়ে সাতবার
এমনই কপাল আমার
সূর্য সংঘর্ষে হারিয়ে ফেলেছি নিজেরই প্রজ্জ্বলিত অধিকার

তোমাকে ভালোবাসার পর
তুষার ঝড়ে দুমড়েমুচড়ে গেছে ইউক্যালিপটাস
এমনই কপাল আমার
চাঁদপোড়া আগুনেই হারিয়ে ফেলেছি বসন্ত আবার

তোমাকে ভালোবাসার পর
নদীর জলে সাধু সন্ততি ডুবে মরেছে শতশতবার
এমনই কপাল আমার
কান পাতলেই বুদ্ধ ধ্যানে চিৎকার শুনি মরুময় সাহারার

তোমাকে ভালোবাসার পর
ড্রোন হামলায় শুধু আমারই ভেঙেছে দক্ষিণ দুয়ারি ঘর
এমনই কপাল আমার
কুরুক্ষেত্রের স্মৃতি নিয়ে হেঁটে চলছি এখন অযোধ্যা থেকে লাদাখ বরাবর!

 

৪. যদি ভালো বাসতেই হয়

যদি ভালো বাসতেই হয়
ভালোবাসব মেঘ, নেহাত বকুলের গন্ধ
রৌদ্র তপ্ত দুপুরে ছুটে চলা অনিরুদ্ধ

যদি ভালো বাসতেই হয়
ভালোবাসব নদী, উঁচু নিচু পাহাড়
ভাটফুল আর
নদীর মতো নারীর বয়ে চলা সাঁতার

যদি ভালো বাসতেই হয়
ভালোবাসব পরিশ্রান্ত বিকাল
প্রেমিক চোখে হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নামার সকাল

যদি ভালো বাসতেই হয়
ভালোবাসব ফুল, লতাপাতা ঘাস
মাঘের শেষে তুমুল বৃষ্টিপাত
জননী-মূলে উদিত সূর্যের আলোকোজ্জ্বল প্রভাত!

 

৫. শরাব চুমুকে তন্দুরি সন্ধ্যা

মাথার ভেতরে টার্বাইন
আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না
শরাব চুমুকে যদি ভেবে থাকো
স্যান্ডউইচ জীবনে মাটন হবে তন্দুরি সন্ধ্যা
তাহলে ঘুমন্ত সিংহের বুকে সুড়সুড়ি দিও না
যেভাবে ধরে আছ মধু-কুপি পেয়ালা
চুমুকে অথবা দন্ত পেষণে
আরও প্রশস্ত করো তোমাদের হা করা মুখের শীৎকার মহড়া,
তাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দেউলিয়া হলো কি হলো না
শেয়ারবাজার ফুলে-ফেঁপে উঠল কি উঠল না
বেইলি রোডে ফায়ার সার্ভিস ঢুকল কি ঢুকল না
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকের আনাগোনা হলো কি হলো না
অশান্ত বার্মার গোলা সীমান্ত পার হলো কি হলো না
নিলামী বাসনার খোঁজ পাওয়া গেল কি গেল না
তাতে আমার কিছুই যায় আসে না
শুধু
মাথাভর্তি বজ্র নিনাদে
তোমাদের ফেরাউনের নাটক মঞ্চস্থ করো না!

 

Read Previous

এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি

Read Next

শিল্পপথের দুর্ভাগা যাত্রী তারেক মাহমুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *