অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
অক্টোবর ২৩, ২০২৪
৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অক্টোবর ২৩, ২০২৪
৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোহেল রানা -
সোহেল রানা – গুচ্ছকবিতা

১. প্রজাপতি 

বাসন্তী রঙে মনে
আমাকেও টেনে নিয়েছে তাহাতে
আর হলুদ প্রজাপতি উড়ছে উড়ছে
রৌদ্র চিকচিক দুপুরে, শিমুল-পলাশের মনে
মুগ্ধতা লুকাতে পারিনি, —প্রজাপতিটি
উড়ে এসে তার সমস্ত রং ঢেলে দিয়েছে
আমার হৃদমাঝারে!

২. বনলতা

এই তো ঘুরে এলাম বনলতা হয়েই
বনলতা এখনো জীবনানন্দময়ী—
চিরায়ত চিরকাল জীবনের কথা কয়!
কিন্তু ‘জীবনানন্দ দাশ’-এর কবিতার মতোই
বিরহবিধুর বাঁশি বাজাচ্ছে এ-হৃদয়!
আমিও একদিন ঝরে যাব বনলতা-আক্ষেপ বুকে নিয়ে—
হৃদয়ে জমাকৃত শিশিরজল রাঙাবে ঘাস, পথ—
আমি ধুলো হয়ে মিশে রব এ-ই বাংলায়!
আহা মিটিবে না মিটিবে না আর
বনলতা— তোমাকে দেখার সাধ!

৩. রোড এক্সিডেন্ট

(উৎসর্গ : কলেজ-বন্ধু সামু স্মরণে)

রবীন্দ্রসংগীতে গলা সাধছে সুমনা
সামু-ও আমার সাথে আছে
একটু পরেই যাব চাচার ক্যান্টিনে
তারপর পা বাড়াব চন্দনা নদীর পাড়ে
হয়তো এখনই আজমল, রনি, বনি— ওরাও সবাই যোগ হবে

চায়ের পেয়ালায় ধূমায়িত সকাল—
পাখিরা ডাকাডাকি বন্ধ করে দিয়েছে
হয়তো তারা পোড়ানোর সংবাদটা আগেই পেয়েছে,
তখনও খোলেনি আমার মনের দুয়োর—
সেলফোনে বেজে উঠলো মৃত্যু-কলধ্বনি!
দূরাগত যানটা যেন আমারও বুকের ওপর চেপে বসল!
সহসাই রৌদ্র চিকচিক সকাল বিবর্ণ!
জুঁই-শাপলা-টগর-বেলি— ওদেরও সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেল!

 

৪. অভিপ্রায়

এ পৃথিবীর আলো-বাতাস কী আশ্চর্য রকমের ভালো
কারই ভালো না লাগে দু’চোখ ভরে সবুজ
আর জীবনের হরেক স্বাদ আস্বাদন

আমিও এর ব্যতিক্রম নই নিশ্চয়ই

তো, তুমি এক্ষুনি বরণ করে নেও মৃত্যু
হ্যাঁ, অবলীলায় মেনে নেব সন্তুষ্টচিত্তে
আর একটিবারের জন্যও ভাবব না আমি
চাই না স্ত্রী-সন্তানসন্ততির মুখ দেখে সুখস্বপ্নবিভোর
কিংবা পৃথিবীর রঙধনু সাত রঙে রাঙাতে জীবন

হ্যাঁ, যদি হয় তা ফলন্ত

আর যদি বলা হয়, আপাতত তোমার মৃত্যু নাই
পৃথিবীর কোনো স্বাদ আস্বাদনও
এবং ঠিকানা অগ্নির আধার
সেখানেও আমি নিরুপায়

৫. প্রেমস্কেচ

আমার মতো উদাস-আকাশ আর হাত-পা ছড়িয়ে
আকাশবন্দি জীবনে আকাশই লিপিবদ্ধ
মনের ডায়েরিতে
এবং প্রেমিকার ঠোঁটে চিত্রকল্প আঁকা;
তার শরীর ছুঁয়ে রোমিও-জুলিয়েটের না পাওয়ার
আক্ষেপ ঘোচানো—

তাদের মতোই প্রেমোপখ্যানের রচয়িতা।

বাংলার বাউল সুর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মিশে আছে
পাললিক ভূমিতে, ভূমির শরীর চিরে
এখনো সবুজ-শ্যামল হয় পৃথিবী
সোনালি হাসি হাসে সকলে
ওই বন্দি প্রেমিকের শরীরজুড়ে!

৬. মৃতজীবন

জীবনের কাছে বারবার পরাজয়

গ্লাসভর্তি জল, তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ…
পাতাঝরা দিনের মতো ঝরে
পড়ে রাত্রিদিন, সারাক্ষণ। শুকিয়ে যাচ্ছে
নদীনালা, খালবিল
দীর্ণবিদীর্ণ আকাশ—
সকাল বেলার পাখি সন্ধ্যেয়
আত্মহননের পথ বেছে নেয়,
জীবন-বেহালার সকণ্টক প্রতিধ্বনিত মূর্ছায়
জেগে থাকা
রাতের পর রাত— ঘুমহীন প্রাণ :
নিষ্প্রভ মলিন

একটা গাছ দাঁড়িয়ে আছে
কাণ্ড, পাতা, মূল ও
ফুলফলহীন
মৃত।

সোহেল রানা

সোহেল রানার জন্ম ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮০। রাজবাড়ি জেলার হড়াই নদীর অববাহিকায় আটদাপুনিয়া গ্রামের সবুজে ঘেরা ছায়াসুনিবিড় পরিবেশে। পিতা খলিলুর রহমান (বীর মুক্তিযোদ্ধা), মাতা মিনুকা পারভীন। ২০১৮ সালে তার মধ্যে হঠাৎ কবিতার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালে সচিত্র বাংলাদেশ পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তার সাহিত্যজগতে পদচারণা শুরু। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২ সালে দৈনিক খোলা কাগজ, ২০২৩ সালে ইত্তেফাক ও দৈনিক জনকণ্ঠ ঈদসংখ্যায় যথাক্রমে অণুগল্প ও কবিতা ছাপা হয়।

সোহেল রানা

 

Print Friendly, PDF & Email
সোহেল রানা

Read Previous

এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি

Read Next

শিল্পপথের দুর্ভাগা যাত্রী তারেক মাহমুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *