অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ১১, ২০২৫
২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মে ১১, ২০২৫
২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাবিবুল্লাহ রাসেল -
হাবিবুল্লাহ রাসেল-এর গুচ্ছকবিতা

নামফলক

অপুষ্টি নিয়ে ভূমিষ্ট হয় এক একটি সড়ক। শৈশবেই মরে যায় অনেক সেতু। বৃদ্ধের শরীরের শীত নিয়ে কেঁপে কেঁপে ভেঙে পড়ে ভবন। আহা! কতো জিহ্বার আদর লেপ্টে থাকে নির্মাণের শরীরে- তার সুখহাসি ধরে রাখে ভিত্তির প্রস্তর।

ভালো বিজ্ঞাপন হতে পারে; তৈরি আছে নানান টুথপেস্ট। ওপর-নিচ ঘষে শুধু একবার মুখ ধুয়ে নাও- দেখো কঙ্কালের দাঁতের মতো নামফলক হাসে…

পিটি

বাম-ডান-বাম। বাম-ডান-বাম।

নেতা কমান্ড করলেন- সমাবেশ সোজা হবে ,সোজা হও।

মূর্খ জনতা দাঁড়ালো, কিন্তু লাইন সোজা হলো না। নেতা লাইন সোজা করতে বারবার চেষ্টা করতে লাগলেন। একদিক সোজা করেন তো অন্য দিক বাঁকা হয়ে যায়।

দারুণ বিরক্তি ফুটে ওঠে নেতার কপালে।

এবার লাইন সোজা করতে নেতা রশি টানালেন। কিন্তু কোনোই কাজ হলো না। নেতা কাছে গিয়ে দেখলে- জনতা রশি টুকরো টুকরো করে পকেটে ঢুকিয়েছে।

নেতা পকেটে হাত দিয়ে দেখেন, তার পকেটেও কখন যেন ঢুকে গেছে রশির ভাগ।

নেতা এবার আরও উচ্চস্বরে কমান্ড করতে লাগলেন- সমাবেশ সোজা হবে, সোজা হও।

দৈনিক সার্কাস

গভীর রাতে সংবাদ দেখতে টিভিতে চোখ রাখি। সংবাদ নয়- ক্রিকেট চলছে। পরবর্তী চ্যানেলে ফুটবল। তারপর বেসবল।

চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরাই- কোথাও টেনিস,  কোথাও হকি, কোথাও ভলিবল, কোথাও রেসলিং।

চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরাই- হাডুডু হয়ে গোল্লাছুট, পাঁচঘুঁটি হয়ে এক্কা-দোক্কা, ছি-বুড়ি হয়ে মাছ-ফুল…

ক্লান্ত আমি। চ্যানেল ঘুরাই। চোখ পড়ে বিজ্ঞাপনে- প্রিয় দর্শক, আপনাদের আরও আনন্দ দিতে শীঘ্রই আসছে নতুন পত্রিকা ‘দৈনিক সার্কাস’।

পশুদের হৃদয় আছে- তুমি বোকা জানোয়ার

তোমার দৌড় রেস্টুরেন্ট। প্রাণির দৌড় সবুজে। নদীর দৌড় মহাকাল। বৃক্ষ জানে সব কথা- বাকলের নিচে লেখা পিতার বুকের ক্যানভাস। পৃথিবীর সব স্মৃতি লেখা আছে নদীর হৃদয়ে- ঢেউয়ে ঢেউয়ে সুর তোলে বেহালা-সেতার…

তুমি বৃক্ষবিনাশী, সবুজনাশী। হৃদয় বাজে না গানে। জলে চোখ জ্বলে। বিষ-বর্জ্য ছোড়ো জলে। দখল উৎসব নাচে জিহ্বা শানে।

এবার পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন টাঙাও শরীরে- ফুসফুস হোক রেস্তোরাঁর মেনু- পানপাত্রে রক্ত করো পান ।

পশুদের হৃদয় আছে- তুমি বোকা জানোয়ার।

কে এইসব খেলা দেখে

কে পরিকল্পনা করে? কে ইন্ধন যোগায়? ঈশ্বর না শয়তান? আমাদের কিছুই জানা হয় না। শুধু দেখি বৃষ্টির মতো বোমা পড়ছে, ঝর্ণার মতো রক্ত ঝরছে। কেউ থামায় না; না শয়তান না ঈশ্বর।

যে শিশু মৃত্যুর আগে বলেছিল- ঈশ্বরকে আমি সব বলে দেবো- সে ঈশ্বরের দেখা পেয়েছে কিনা জানা হলো না।

ঈশ্বরের নাম নিতে নিতেই মানুষ বোমা ফেলে। ক্ষত-বিক্ষত মানুষ ঈশ্বরের নাম নিতে নিতে নিজেই নিজের রক্তে শেষ স্নান সেরে নেয়। ক্ষুধায় কাতর মানুষেরা এক টুকরো রুটির জন্য ঈশ্বরের নাম নিতে নিতে কতো সহজে নিজেরাই রুটি হয়ে যায়।

কে এইসব খেলা দেখে- ঈশ্বর না শয়তান?

 

 

যোগাযোগ :
হাবিবুল্লাহ রাসেল
ই-মেইলঃ raselanuvab@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

লতিফ জোয়ার্দার-এর গুচ্ছ কবিতা

Read Next

আসমা চৌধুরীর গুচ্ছ কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *