
বিষাদ মেঘ
ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বসন্ত
উঁকি দেয় বুক বরাবর
আলোর বন্যায় ভাসে চাঁদ রাতের ফুলশয্যায়
দুহাতে কুড়িয়ে রাখি জোনাক
কুড়িয়ে রাখি মায়া
অবেলার গানে ভাসাই স্মৃতির নিঃস্ব বিড়ম্বনা
তুমি এলে
বুকের ভেতর ফিরে আসে রাত
বন্ধু হয়ে হাত পাতি প্রিয় বান্ধবীর কোমল সোহাগ
ঈশ্বর ঈশ্বর!
ভুলে যাই কেন
শ্রাবণের বৃষ্টিতে খুঁটে খাই যাবতীয় সুখ
পরিচয়
জলে ভাসে জলের বসত
তবু জলকষ্ট তুলে রাখি বুকের ভেতর
তুমি আমি আজও নাম না জানা কষ্টের প্রতীক
মাংসাশী পথ এদিকে নয়
ওদিকে বয়ে যায় বুক ভাঙা স্রোত। নদী ভাঙন
আমরা পতিত জমিন ভাঙি
ফসলের খেত থেকে ঘ্রাণ উবে যায়
শূন্য হাত
মৃত্যু ছুঁয়ে দেখে আমাদের ঝলসানো সংসার
বিষ আর বিষাক্ত ধুলো আমাদের পায়ের উপর
লাশ
ভয়ে ভয়ে জমিয়ে রাখি ক্ষোভ
পাথর ভাসে জলে
দুহাতে জল থেকে তুলি লাশ
তুমি আমি মৃত্যু। আমরা দুজন দুজনের লাশ
ক’দিন আগে মানুষ ছিলাম
আজ লাশ
আমরা কাব্য মানুষ। আমরা লাশ কাব্য
আজও আমরা লাশ হয়ে গন্ধ ছড়াই
মুছে ফেলি দুঃখ অভিমান
আমাদের দেখে লাশ হয় অগণিত জনগণ
আগুন
এখানে নির্বিঘ্নে ফিরে আসি বারবার
হাত পেতে চেয়ে নিই অন্ধকার। বুকভরা নির্জনতা
তুমি বাতি হাতে ফিরে আসো
খোঁজো পরশ পাথর
জমানো আঁধার আমার হাত থেকে পড়ে যায়
কথার সমুদ্র সেঁচি
সব কথা হয়ে ওঠে বিষ। সব কথা আগুন
আগুনে পুড়ি
পুড়ে পুড়ে খাক হয় মন
তবু আঁকি আধ শোয়া রোদ। আগুনের উঠোন
আলোক কথন
হাতের পাশে হাত রাখতে গিয়ে
ফিরে আসে বিচ্ছেদ
জমানো ক্ষিধে পাথর হয়ে ওঠে বুকের ভেতর
ভাবনার মই বেয়ে উঠি আকাশে
শুনি আলোক কথন
যারা জীবন খুলে রেখেছিল
তারা হেঁটে হেঁটে নদী পেরিয়ে গেছে নির্দ্বিধায়
মনের গভীরে বাসা বাঁধে পরিযায়ী মন
দূরে নীল সমুদ্র
তবু একবার পুলসেরাত পাড়ি দিই অকারণ
আজও ভাসে তিরতিরে নদী
রঙধনু রঙে সাজাই সোহাগ
অতল জলে নোঙর করি জীবনের শেষ সম্বল
হামিদুল ইসলাম
হামিদুল ইসলামের জন্ম পঞ্চাশের দশকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গস্থ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জে। শৈশব থেকেই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস। পড়াশোনায় এর প্রভাব পড়েছে। সে অবস্থায় লেখালেখি। খুব কষ্ট করে এখন পর্যন্ত ১২টি একক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তিনি। সংকলন গ্রন্থ ৬৩টি। লেখালেখি চলছে, চলবেও মৃত্যু পর্যন্ত এমন মনোভাবই পোষণ করেন কবি।