অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫
২১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫
২১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিলি রায় -
মিলি রায়ের যুগল কবিতা

ত্রয়ী
ব্যাকরণের বিশুদ্ধ নিয়ম মানা আদর্শ বাক্যের মতো প্রস্তরীভূত এক নারী সিঁথিতে রাঙানো সিঁদুরের লাল অভিবাসন, খাজুরাহ্ মুর্তির মতো অনন্ত আদিম পদক্ষেপে হেঁটে এসে, সেমিকোলনের মতো জটিল ভ্রুভঙ্গি করে আমায় প্রশ্ন করেছিল, স্বপ্ন পুড়িয়ে বেঁচে থাকা যায় কি, অলংকারহীন স্লোগানে? অসীমের উৎসবে শোনা যায় কি বোধিবৃক্ষের ডাক?
আমি তখন বল্কল জড়ানো অরণ্য বৃক্ষ হয়ে যাই, বর্ণমালা শেখার আগেই পুরুষের ভোগের মেনুতে উপস্থিত হওয়া এক নারী, চোখে পাথর চাপা দহন, রাংতায় মোড়া জীবনের শ্লোক নিয়ে জ্যা মুক্ত ধনুকের মতো ছিটকে এসে, অভিমানের কুচি ঝরিয়ে আমায় অভিযোগ করেছিল, আমি তার জীবন থেকে স্বপ্ন নিংড়ে নিয়ে কবিতা লিখি। আমার বুকের প্রদীপ ঘরে যুগান্তরের গ্লানি এসে ভর করে তখন।
চোখের জল চিবিয়ে খাওয়া, টিনের বাক্সের মতো দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া এক নারী চোখে যৌবনের রঙ ধোয়া ছবি, দিনান্তের হলুদ আলো পান্ডুর মুখে নিয়ে মাতৃত্বের বিহ্বলতা মাখানো আকুলতায়, মায়ের দুধের বিকল্প একটা কবিতা লিখতে বলেছিল আমায়।
আমি তখন বিগত বছরের ধুলো জমা বর্ষপঞ্জির মতো চুড়ান্ত উপেক্ষিত হয়ে পড়ি। জলের ছোঁয়া বাঁচিয়ে তুলে রাখি, কান্নার অবশিষ্ট কান্না।
উত্তর খুঁজে পেতে পেতে জীবনের প্রশ্নটাই যায় বদলে।

কবিতার ক্যানভাসে
তুমি আজ ক্যানভাস
মাছরাঙার মসৃণ পালকের মতো
আঁকবো আজ আমি তোমায়।
মেহেদির সবুজ নিংড়ানো কমলা ভালোবাসায়
ভিজবে সময় নন্দিত ব্যঞ্জনায়।
শোধ করবো বাউল জন্মের ঋণ
নিজস্ব চারুতায়।
অ্যাক্রিলিক,প্যাস্টেল আর জলরঙের ছোঁয়ায়
ত্রিমাত্রিক কথা বলবে প্রণয়ের প্রহর।
উপেক্ষিত অবয়বহীন রঙগুলোকে বাঙ্ময় করে তুলবো
দেবো নিশ্চিত আকার, মৃদু উষ্ণতায়।
প্রথাগত নিঁখুত রেখার ছাপ নয়
প্রতিকৃতি আর প্রকৃতির মিশেলে
মূর্ত-বিমূর্ত ক্যানভাস রাঙাবো আজ।
সাগরের ঢেউ লঙ্ঘন করে যাবে বিপদসীমা
মুঠো মুঠো রঙের ছোপে
মিশিয়ে দেবো নক্ষত্রের গুড়ো,
ধ্রুপদী ছন্দে ভেঙে দেবো অনিশ্চিত অস্তিত্বের
অন্তহীন ঘুম।
শব্দহীন মৌনতায় ছুঁয়ে যাবো কল্পনার শীর্ষ চূড়ো।
পরকীয়া ওই দেহখানিতে
স্বতোৎসারণের মতো বেজে উঠবে
বিটোফেনের নাইনথ সিম্ফনি
হেসে উঠবে লিওনার্দোর মোনালিসা
অধর রুধির পানে, হবে শোনিত স্নাতা
রঙ,রেখার রসায়নে পালটে যাবে অবয়ব
যেভাবে পালটে যায় পাথর চাপা সফেদ ঘাস
নিজেকে ফাঁকি দিয়েই নাহয় পান করবো
খানিকটা মহুয়ার নির্যাস!
কারণ
সব কবিতাই ভীষণ একাগ্রতা প্রার্থনা করে।

পরিচিতি-
মিলি রায়। জন্ম- ফেনী জেলা শহরে।
এস এস সি ফেনী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
এইচএসসি ফেনী সরকারি কলেজ।
অনার্স, মাস্টার্স – ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

Print Friendly, PDF & Email
মিলি রায়

মিলি রায়। জন্ম- ফেনী জেলা শহরে। এস এস সি ফেনী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। এইচএসসি ফেনী সরকারি কলেজ। অনার্স, মাস্টার্স – ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

Read Previous

রাহমান ওয়াহিদ-এর যুগল কবিতা

Read Next

ঝুটন দত্তের যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *