অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
জানুয়ারি ৭, ২০২৫
২৩শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জানুয়ারি ৭, ২০২৫
২৩শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাহুল চন্দ্র দাস – যুগল কবিতা

১.

রমজান নামে আমাদের কুকুর আছে এক

ভ্যান গগও তাকে বলা হয়।

নগরের মাদার তেরেসা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ভ্যালেরি টেইলরের শুশ্রূষার অক্লান্ত আগ্রহে

শিয়রের শিউর মৃত্য মল্লযুদ্ধে মুখ থুবড়ে পড়ে

খুলনার অতিকায় শাকিলের প্রযত্নের জোরে।

রাফিয়ার মতো যার তেজি জেদ

হেমিংওয়ের সেই বুড়ো জেলে যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে

পরাজয়ে বেমানান যে নারী সুবিধার ভিড়ে।

শরৎচন্দ্রের ‘দেওগড়ের স্মৃতি’র পরিত্যক্ত সেই

বিষাদ কুকুর, পথের কুকুর

মানিক ব্যানার্জির প্রাগৈতিহাসিকের দুখুর

প্রাণশক্তিতে ক্রমশ বেঁচে উঠে সে ধ্বসে পড়া প্লাজার শ্রমিকের

ঘাড়ের ভীতিকর বিগলিত ক্ষত সেরে কাটা পড়া এক কান নিয়ে।

পরিবেশে অন্যান্য কুকুরের স্বর শুনে খাদ্যের ঘ্রাণ জেনে

ক্রমশ ঘোষণা করে জনে জনে তার অধিকার

শীতের রাতের আগুনের গীতের পাশে এসে বসে

ঘোড়ার ঘাড়ের কেশরের লেজ নিয়ে আগুনের লাকড়ির পাশে।

২.

শরীর ছাড়াও ইয়ত্তারহিত কত কী যে চাই

কামনার দেহ পুড়ে বাসনার ডালপালার কয়লার উড়ে ছাই।

হৃদয়ের অন্তঃস্থ বিপ্লবের বাসনার অপরাধী ঘুম

নীল হয়ে লীন আছে তার মাঝে ‘আমি তবে যাই’।

পালাই পালাই করি কার থেকে কেনবা পালাই—

আমি তবে যাই?

নিজেরে হারিয়ে ফেলি মাঝেমাঝে খুঁজেসুজে মাঝেমাঝে পাই।

কোথাকার বেখেয়াল পাগলের গারদের ঠুলিভরা চোখ

বেফাঁস আমাকে দেখে নিলাজ সংসারপ্রতি ঝোঁক।

উপেক্ষার কাঠকয়লা, প্রেমিকার কাজল বলে— যাই।

‘যাই যাই’ মিশে আছে বাদামি শুকনো পাতা

মচমচে দুপুরের রোদে;

অভ্যাসের কানাগলিতে কোনোমতে মেলে ঠাঁই।

তবু কেন বসে থাকি এলোমেলো? আমি এখন বরং যাই।

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নাই

যাই আমি তাই। তোমরা যারা থেকো রেখো মনে

ধারে চলা বাকিখোর কবি ছিল এক ঔপন্যাসিক

সুলভ গদ্যের চেষ্টায় মাঝেমধ্যে ছিঁড়ে-খুঁড়ে হৃদয়ের রোজেটা করে ক্ষয়

বুকে তার একাকিত্বের তিরতিরে বেদনার ভয়।

যার ছিল যাই যাই স্বভাব যাওয়ার জায়গা ছিল না

খিটখিটে, খেপে উঠত অবহেলায় ‘আমি এখন যাই’

দাঁড়াবার কোথাও না পেয়ে ঠাঁই।

রাহুল চন্দ্র দাস : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা ১৩৪২।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

এই নিষিদ্ধ নগরী ছেড়ে

Read Next

একটি ফনিক্স সাইকেল আর একজন পরিযায়ী ফ্লেমিংগোর উপাখ্যান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *