অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ১৪, ২০২৪
৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ১৪, ২০২৪
৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলী রেজা -
কেবলা হাকিম

E:\Anupranon Antorjal\Anupranon Antorjal_5th Issue\Illustration_Antorjal 5\Part_2\Antorjal 5th Issue - Alonkoron, Part- 2\Antorjal 5th Issue - Alonkoron, Part- 2\Anugolpo- 4\guccho kolpo 2.jpg

জেমস ফিনলে হাউস আর সিজিএস বিল্ডিংয়ের মাঝ দিয়ে রাস্তাটা সোজা চলে গেছে আগ্রাবাদ কলোনি বরাবর। আগ্রাবাদ কলোনি স্কুলের গেট ফেলে কিছুদুর গেলেই মসজিদের মাঠ। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ছোট-খাটো একটা জটলা। প্রথম দেখাতেই মনে হবে কোনো ক্যানভাসারের জমায়েত। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে দর্শক সব শিশু-কিশোর, এরা একজনকে ঘিরে রেখেছে। যাকে ঘিরে এই আকর্ষণ তিনি ঋজু দেহের অধিকারী সাদা-কালো শ্মশ্রুমণ্ডিত কৃশকায় এক মাঝবয়সী লোক। তার অবিন্যস্ত পোশাক, মাথার উস্কুখুস্কু চুল, কয়েক দিনের না কামানো দাড়ি ও পান খাওয়া লাল ঠোঁট তাকে সহজেই আর দশজনের থেকে আলাদা করে রেখেছে। তার এই বৈশিষ্ট্য তাকে শিশু-কিশোরদের নিকট বিশেষ কৌতূহলোদ্দীপক করে তুলেছে। লোকটি সুর করে গাইছিল, আর বাচ্চারাও তার সাথে তাল দিয়ে মাথা দোলাচ্ছিল।

রেহেনা রেহেনা এলাচি

রেহানার জামাই করাচি

রেহানা যদি জাইনত

পাটি বিছাই কাইনত

পাটির তলে ছেউঙ্গার ছা

আয়রে রেহানা দেইখ্যা যা….

ছড়াটা শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন কিশোর একসঙ্গে গেয়ে উঠল,

পাটির তলে ছেউঙ্গার ছা

কেবলারে দে কয়েক ঘা

কেবলা হাকিম দোলে

রেহানা বিবির কোলে

কেবলা হাকিম রেগে কাঁই। রাগে ফুঁসে উঠে পাল্টা ওই কিশোরদের বলে উঠল, তোর মা কেবলা, তোর বাবা কেবলা।

এটা শুনে বাচ্চারা সবাই হেসে উঠল। কেবলা হাকিমের আর ছাড়া পাঠ হলো না। কারণ, এর মধ্যে একজন তাকে ঢিল ছুড়ে মারল। কেবলা হাকিমও সেই ঢিলটা কুড়িয়ে নিয়ে পাল্টা ছুড়ে দিল। কিন্তু এমনভাবে যেন কারও গায়ে না লাগে। এভাবে চলতে লাগল। ছোট বাচ্চারা এতে অংশগ্রহণ না করলেও সদ্য কৈশোর ছোঁয়া পুচকেরা বেশ মজা পায় তাকে কেবলা হাকিম বলে খেপিয়ে। খেপানোটা এ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে না। কিছু দুরন্ত বালক কেবলা হাকিম ডাকতে ডাকতে তাকে পাথর ছুড়ে মারে, যতক্ষণ না তার গায়ে পাথর লেগে রক্তাক্ত না হয়। কেবলা হাকিম পাথরের ঘায়ে রক্তাক্ত হলে তারা থামে। ক্ষতের গভীরতো দেখে, আঘাতের তীব্রতা বোঝার চেষ্টা করে। এই নির্মম নিষ্ঠুর খেলা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। দুরন্ত কিশোরের দল এক সময় ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যায়।
শুধু পাথরের ঘায়ে রক্তাক্ত কেবলা মসজিদের মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে রাতের আকাশ দেখে। কেবলা ভাবে শিশুরা কি আকাশের তারা নয়? তার চোখে মিটমিট করে জ্বলে উঠে সন্ধ্যাতারা, ক্যাসিওপিয়া, এনড্রোমিডা, আর জ্বলে ওঠে রেহানার উড়নির চুমকির ঝিকিমিকি। রাত গভীর হয়। কুয়াশা গাঢ় হয়। কেবলা উড়ে যায় বক সাদা চাকতিতে চড়ে। নিয়মিত এই গ্রহে ফিরে এলেও মাঝে মাঝে ফিরে আসে না। হয়তো রেহানাই আসতে দেয় না। রেহানা বলে পৃথিবীতে গেলে আমার এই পীন-পয়োধর তুমি ছুঁতে পারবে না। পারবে না আমার অম্লস্বাধ শঙ্খিনী যোনির সুরেলা নির্যাস পান করতে। ওখানে যেও না, নষ্ট কার্বন শোভিত উষ্ণ পৃথিবীতে। তোমার শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। রক্তাক্ত হবে তোমার মুখমণ্ডল, শীর্ণ বক্ষ, সারসের মতো পদযুগল। তুমি যেওনাকো অই গ্রহে, ক্ষুদে শয়তানদের চাঁদমারিতে।

প্রতিদিন শিশুরা মাঠে আসে। নীরবে খুঁজতে থাকে। দিন যায় মাস যায়। কেবলা হাকিমকে আর দেখা যায় না। অনেকেই ক্রিকেট খেলে, কেউ কেউ ফুটবল। কিন্তু এই ক্রিকেট আর ফুটবল থেকে তারা কেবলা হাকিমকে বেশি ভালোবাসে, ভালোবাসে তাকে পাথর ছুড়ে মারতে। এখন সবাই কেবলা হাকিমকে ভীষণ মিস করে। তাদের কানে আর বাজেনা কেবলা হাকিমের সুললিত কণ্ঠের ছড়া। তারা ভুলতে বসে কোনো এক রেহানার নাম। তবুও তাদের কারও কারও মনে হয় কেবলা হাকিম এবার এলেই রেহানার পুরো ছড়াটি শোনা হবে। শোনা হবে এলাচিসদৃশ নিতম্বপ্রধান রেহানার গল্পটি।

 

Read Previous

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন – ৫ম সংখ্যা

Read Next

মেঘ পাহাড়ের ডাকে