
মাঠটা খালি পড়ে আছে। ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয়। ও এখানকার না হলেও আসা-যাওয়া করে কাজের সুত্রে। মাঠে লোকজন বিশেষ করে বাচ্চাদের ব্যস্ততা দেখবার মতন। এখন অবশ্য ফাঁকা। কেউ কোথাও নেই। সেটাই অদ্ভুত। স্কুল চলার সময়ও যে মাঠে হৈহৈ হয় সে মাঠে এমন শ্মশানের নিস্তব্ধতা! বেশ গভীরে ওর এতটা জানবার কথা নয়। মাঠের পূর্ব দিকে যে পুকুর সেই পুকুরেই বাচ্চাদের খেলার বল তা সে ক্রিকেটের হোক কিম্বা ফুটবলের গিয়ে পড়ে। পড়লে তারা সাঁতরে নিয়েও আসে। পুকুরের মালিকের বাড়ি আর একটু দূরে। সারা দিনে একবার সে ঘুরে যায় দেখতে যে মাছগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা। সেই পুকুরের মাছই গেছে চুরি। চুরি করেছে কিছু বহিরাগতরা। একটু দুরে কোনো একটা মিল তৈরিতে লেবার লাগছে অনেক। সেই লেবারদেরই একটা দল করেছে চুরি। অনেকের মতন মালিকও এটা জানে। ইচ্ছে করে মানতে চাইছে না। কেননা এই ছেলেগুলোরই একটা তার এক মেয়েকে নিয়ে পালানোর তালে ছিল। মেয়েকে তো সে মামার বাড়ি চালান করেছে কিন্তু খেলাটা বন্ধ করতে পারছিল না বলে ওর রাগ। খুঁজছিল কোনো ছুতো। এটা পাওয়াতে যে কী খুশি! পুকুরের মালিক কি সে এমনি এমনি হয়েছে? ক্ষমতাবলেই না হয়েছে। ক্ষমতা শুধু টাকার নয়, দলবলেরও। ভয় দেখিয়ে খেলা বন্ধ করে দিয়েছে। সেটা কি এত সহজে মেনে নেবে ছেলেগুলো? অপেক্ষায় ছিল। চোর বদনাম যখন একবার হয়েই গিয়েছে আর একবার পুকুরের সাথে জড়াতে ক্ষতি কি? এমন বিষ মিশিয়েছে… একটাও মাছ বাঁচেনি। টপটপ করে সবকটা উঠেছে ভেসে। তারপর থেকে দু’দিন শুধুই মারপিট। এতকিছু অবশ্য ওর জানার নয়। তবে মাঠের এই থমথমে পরিবেশটা যে স্বাভাবিক নয় সেটা ও বুঝতে পেরেছে। জিজ্ঞেস করে যে জানবে সেই উদ্যম বা সাহস কোনোটাই ওর যথেষ্ট নেই। সাইকেল করে সকালবেলা তড়িঘড়ি করে মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একবার শেষ বিকেলে ফেরার সময় আর একবার। মাঠটা খালিই পড়েছিল। একটা কুকুর মাঠে ঘুরপাক করছে দেখে ও থেমেছিল। সাইকেল থেকে নেমেছিল। কুকুরটার মুখে বল দেখে ও ঢুকেছিল। মাঠে ঘাসের নিচে তখনও ভাঙা কাচ, ছেঁড়া জামাকাপড়ের টুকরো, চাপা রক্তের দুর্গন্ধ… থাকুক মাঠ খালিই পড়ে থাকুক।
প্রতীক মিত্র
পেশায় শিক্ষক। গল্প, কবিতা দুই-ই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত। দুটি কবিতার ও একটি অণুগল্পের ই-বুকের লেখক প্রতীক অবসরে দাবা খেলতে, বই পড়তে আর সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন।