অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুমার অরবিন্দ -
দাঁড়ানো

বউ গরম পানির সেঁক দিতে দিতে বলে, কেন যে যাও তা বুঝি না। কতবার তোমাকে নিষেধ করেছি! তুমি কি অত ধাক্কাধাক্কি সহ্য করতে পারো? আমার কথা শুনবে কেন? এখন হাত ভেঙে আসছ, কোনদিন যেন মাথা ফাটায়ে আসবা। আমার হয়েছে যত জ্বালা!

ডানহাতের কনুইয়ের কাছে ছিলে গিয়েছে বেশ খানিকটা। পেটমোটা পটলের মতো ফুলে আছে। পড়ার আগমুহূর্তে হাত দিয়ে না ঠেকালে মাথাটাই হয়তো যেত। সময় যত যাচ্ছে ব্যথা তত বাড়ছে।

শাশুড়ি পাশে বসে বউকে সেঁক দিতে সাহায্য করছেন। মেয়ের কথাকে তিনি সমর্থন করে বলেন, তা বাপু, তোমারও তো বয়স কম হলো না। এসব ঝুটঝামেলার মধ্যে না গেলেই তো হয়। এখন হাড়গোড় ভাঙলে কি আর জোড়া লাগবে? দেখলে না শেষ বয়সে তোমার মামাশ্বশুরের কী হালটাই না হলো!

বাড়ি থেকে ছোটভাই ফোন করেছিল। কিছুটা ক্ষোভ আর খানিকটা রাগ মিশিয়ে বলল, তোমার আর কোনোদিন কাণ্ডজ্ঞান হবে না। এই বয়সে তোমার যদি কিছু হয়ে যায় মেয়েটার কি হবে? শুধু নিজের কথা চিন্তা করলে তো আর হয় না, সবার কথাই চিন্তা করতে হয়। কয়টা টাকা বাঁচানোর জন্য…।

কলিগরা কেউ কেউ ফোন করে সমবেদনা জানালেন। তাঁরা জানতে চাইলেন আমি রাস্তায় পড়ে গেলাম কেমন করে? পরিবারের কাছে মিথ্যে না বললেও তাঁদের কাছে সত্য গোপন করলাম— লজ্জায়।

আমার দশ বছরের মেয়েটা মাথার কাছে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। মেয়েটা ভারি গলায় বলল— বাবা, তুমি তো কাউকে ধাক্কা দিতে পারো না, সবাই কেন তোমাকেই ধাক্কা দেয়? তুমি ওই ভিড়ের মধ্যে কেন যাও? লাইনে কেন দাঁড়াও?

মেয়ের হাতটা আমার মুখের ওপর চেপে ধরি। আমি কোনো জবাব দিতে পারি না; কেন টিবিসি-র লাইন দেখলেই আমি কাঙালের মতো দাঁড়িয়ে পড়ি।

 

Read Previous

মিথস্ক্রিয়ার বন্দনা

Read Next

‘প্যারাডাইস এক্সপ্রেস’ বাংলা কবিতায় সহিংসতার উসকানি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *