অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ৪, ২০২৫
২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মে ৪, ২০২৫
২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবুল কালাম আজাদ -
এপিটাফ

সে যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল তা বলতে পারবে না।

ভয়, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, ক্ষুধা এইসব সঙ্গে নিয়ে সে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘর ছেড়েছিল। ছুটতে ছুটতে এসেছিল কমলাপুর রেল স্টেশনে। কোথাকার ট্রেন, কোথায় যাবে এসব না ভেবে সামনে যেটা পেয়েছে উঠে পড়েছে। গার্ড তখন পতাকা ওড়াচ্ছিল। মন্থর গতির ট্রেন। সে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে এক কামরায়। সে উঠতে না উঠতেই ট্রেন গতি পায়।

কামরাটা ছিল লোকশূন্য— মূলত একটা পরিত্যক্ত কামরা। অন্ধকার। নোংরা। ট্রেন কর্তৃপক্ষের কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, এবং অপ্রয়োজনীয় এটা-সেটা রাখা।

সে প্রথমে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারে, দাঁড়িয়ে থাকা তার জন্য কঠিন। মাথা ঝিমঝিম করছে। পা কাঁপছে। পেট উগরে বমি আসতে চাচ্ছে। সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইল। কিছুতেই জ্ঞান হারানো যাবে না। জ্ঞান হারালে রেল কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে পারে। হাসপাতালে গেলে সব রহস্য ফাঁক হয়ে যাওয়া সহজ হবে।

সে একটা নোংরা বেঞ্চিতে বসে পড়ল। মাথাটা নামিয়ে রাখল বন্ধ জানালার পাশে। ঝেড়ে ফেলতে চাইল তার ভয়, ক্ষুধা, ক্লান্তি। চিন্তাটাকে অন্যদিকে ঘোরাতে চাইল। ক্ষুধা, ক্লান্তির অনুভব কিছুটা কমলেও চিন্তা অন্যদিকে গেল না।

মেয়েটা যে এরকম ঝামেলা করবে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি। এটা তার বারো নম্বর ধর্ষণ। তেরো নম্বর হলেও বোঝা যেত দুর্ভাগ্যের তেরো।

তার দশ নম্বর ধর্ষণ অপকর্মের পর সে ঢাকায় পালিয়ে আসে। ঢাকায় এসে এটা-ওটা কাজ খুঁজতে থাকে।

গ্রামে থাকতে সে নসিমন, করিমন, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, হোন্ডা যা পেয়েছে তাই চালিয়েছে। গাড়ির কলকব্জা তার সবই চেনা। তাই গাড়ি চালানোর কাজ পেলে তার জন্য বেশি সুবিধা হয়।

ঢাকা শহরে গাড়ি চালাতে হলে শুধু গাড়ি চালনো জানলেই হবে না, ড্রাইভিং লাইসেন্সও থাকতে হবে। সে চিন্তা করে দেখল, গাড়ি চালানোর ট্রেনিং নিয়েছে এরকম সার্টিফিকেট থাকলে লাইসেন্স বের করা সহজ হবে। সে একটা বেসরকারি ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টারে তিন মাসের কোর্সে ভর্তি হলো।

ড্রাইভিং ক্লাসের প্রথম দিনই সে স্টিয়ারিং ধরে সেভাবে গাড়ি চালাতে লাগল, তাতে তার প্রশিক্ষকের চোখ কপালে উঠে গেল। মনে মনে বলল, এই ব্যাটাকে আমি কী প্রশিক্ষণ দেব? এই ব্যাটা দেখছি প্রশিক্ষকের বাপ।

হঠাৎ সেই প্রশিক্ষণ কাজে ব্যবহৃত গাড়িটি বিগড়ে গেল। স্টার্ট দিলে ভোঁ করে একটা শব্দ হয়, তারপর ভটভট করতে করতে বন্ধ হয়ে যায়। প্রশিক্ষক কিছু বুঝতে পারছিল না। সে খুব সহজেই সমস্যাটা ধরে ফেলল। সমাধানও করে দিল।

সেই প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে যে সব গাড়ি ব্যবহৃত হতো, তার সবগুলোই ছিল পুরোনো। প্রতিটায়-ই কিছু না কিছু সমস্যা ছিল। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অটো-মেকানিক ছিল না বলে সেভাবে মেরামত করা হতো না। সে নির্দিষ্ট করে বলে দিল, কোনটার কী সমস্যা। কোনটার কী পার্টস লাগবে। মালিক সব এনে দিল। সে বিনা ফি-তে সব গাড়ি একেবারে নতুন বানিয়ে দিল।

এরই মাঝে মালিকের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে চলে গেল। আর সেখানে নিয়োগ পেল সে। অবশ্য তার আগে সে সফলভাবে ট্রেনিং সম্পন্ন করেছে, মালিক এরকম একটা সনদ দিল তাকে, এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সও বের করে দিল।

তার বেতন ধরা হলো চার হাজার টাকা। বেতন আরও বেশি হতো। কিন্তু তার থাকা খাওয়া ফ্রি করে দিল বিধায় বেতন কম হলো। গ্যারেজের পাশেই ছোট একটা ঘর তুলে দিল তার থাকার জন্য। আর তিন বেলার খাবার আসত মালিকের বাসা থেকে। সে খুব খুশি। গ্রাম থেকে ধর্ষণ করে পালিয়েছে। তার নামে মামলা আছে। পুলিশ খুঁজছে পিছে। এখানে থাকলে তাকে খুঁজে পাওয় সহজ হবে না।

গ্যারেজের পাশে সেই ঘরেই সে সফলভাবে সম্পন্ন করলো তার এগারো নম্বর ধর্ষণ অপকর্ম।

দিলরুবা। মালিকের গৃহকর্মী। তেরো/ চৌদ্দ বছর বয়সের কিশোরী। গায়ের রঙ কালো। আকারে একটু খাটো। মুখের গড়ন গোলগাল। স্বাস্থ্য ভালো। নাদুস-নুদুস দেখতে।

কাজের মেয়েদের যে সব স্বাভাবিক আচরণের কথা সব সময় বলা হয়, দিলরুবার মধ্যে সেরকম কিছু ছিল না। সে টিভি দেখতে পছন্দ করত না। ঘুমাত কম। খাবারের প্রতি বিশেষ লোভ ছিল না। কাজের মেয়েরা অনেক সময় গৃহসাংবাদিকের ভূমিকা পালন করে। এবাসায়-ওবাসায় কে কী বলল, কী ঘটল ইত্যাদি আপন আগ্রহে সংগ্রহ করে প্রচার করে। তার মধ্যে এই বদগুণটিও ছিল না। সে কথা বলত কম। নীরবে কাজ করে যেত। কাজের মধ্যেই তার সব সুখ-আনন্দ নিহিত ছিল।

সে মালিককে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছে দিয়ে মাত্রই ফিরেছে। দিলরুবা তখন গ্যারেজের আশপাশে ঝাড়ু দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছিল। সে ডাকল— বোইন, আমরে একটু পানি খাওয়াইবা?

কন্ঠে স্নেহ ও দরদ। দিলরুবা তার ঘর থেকে জগ নিয়ে উপরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এল এক জগ ফুটানো পানি নিয়ে। তার ঘরের ছোট টেবিলটায় দিলরুবা যখন জগ নামাচ্ছিল, তখন সে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। জগ নামাতে নামাতে দিলরুবা ধমক দিয়ে উঠে— আপনে দরজা বন্ধ করেন ক্যান?

ঐ পর্যন্তই। দিলরুবা আর কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না। সে দিলরুবার মুখ চেপে ধরে নোংরা চৌকির ওপর ফেলে দেয়। তার অসুর শক্তির কাছে দিলরুবা ছোট্ট এক চড়ুই ছানা।

প্রায় ত্রিশ/ পঁয়ত্রিশ মিনিট পর ছাড়া পেয়ে দিলরুবা উপরে উঠে যায়। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে পা ফেলার সময় তার মনে হচ্ছিল, সে পড়ে যাবে। পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে। আর কখনোই তার জ্ঞান ফিরে আসবে না। সে মারা যাবে। যদি সত্যিই তা হয়— সত্যিই যদি এখন তার মৃত্যু হয়, তো সেটা হবে খুব ভালো একটা ব্যাপার। কিন্তু এই ভাল ব্যাপারটা ঘটে না। সে টলতে টলতে ঠিক ঠিক উপরে উঠে যায়।

দিলরুবা তার ঘর থেকে চলে যাওয়ার পর সে ঢকঢক করে তিন গ্লাস পানি পান করে। পাখার গতি বাড়িয়ে দেওয়া আছে কি না তা পরখ করে নিয়ে চৌকির উপর হাত-পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। অল্প সময় পরই তার নাক ডাকতে থাকে ঘররর, ঘররর।

ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে দুপুরের আগেই জেগে উঠে সে। ঘর থেকে বের হয়ে এদিক-ওদিক তাকায়। দারোয়ানের সাথে চোখাচোখি হয়। দারোয়ান বিশেষ কিছু বলে না। তার মনে হয়, সব ঠিক আছে। তারপর সে উঠে যেতে থাকে উপরে। সে জানতে চায় ঘটনাটা ফাঁস হয়েছে কিনা।

সে বেল চাপে। দরজা খোলে দিলরুবা। জ্যান্ত দানব দেখার ভয়ে আঁতকে উঠে। ছুটে চলে যায় রান্নাঘরে।

সে দেখে পরিবেশ শান্ত। সে উপরে উঠে আসার অজুহাত হিসেবে মালিকের স্ত্রীকে বলে— আম্মা, বিকালে যখন স্যারকে আনতে যাব তখন স্যারকে কিছু বলতে হবে?

বলতে হলে তো আমিই তোকে ডেকে পাঠাতাম। তোর উপরে আসার দরকার আছে?

ঠিক আছে আম্মা, যাই।

সে ফিরে আসার আগে উঁকি দিয়ে দেখে, দিলরুবা রান্না ঘরে মাথা নিচু করে বসে আছে। নিশ্চয় কাঁদছে।

এই পৃথিবীতে যার কেউ নেই— কিছু নেই, তার থাকে শুধু বুকভরা কান্না।

দিলরুবা তারপর থেকে একেবারেই অন্যরকম। ভীষণ চুপসে থাকে, যেন নেকড়ের থাবার আঘাত খাওয়া ভীতু খরগোশ। কাজ না থাকলে বারান্দা বা রান্না ঘরের কোনো এক কোণে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে চুপচাপ। সামান্য শব্দে চমকে উঠে। ঘুমের মধ্যে ডুকরে কেঁদে উঠে। মানুষের মুখে তাকায় ভয়ার্ত দৃষ্টিতে।

মাসখানেক পর দিলরুবা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

দিলরুবা কেন পালিয়ে গেল কেউ তা বুঝতে পারে না। বুঝতে পারে শুধু সে একা। সে ঠিক জানে— তার উপস্থিতি দিলরুবার কাছে অসহ্য হয়ে গিয়েছিল।

তবে ধর্ষকের সাথে আর দেখা না হলেই যে কোনো মেয়ে এই দুঃসহ স্মৃতি থেকে মুক্তি পায় তা নয়। ধর্ষণের স্মৃতি কুৎসিত কিলবিলে সাপের মতোই যে কোনো মেয়ের সাথে লেপ্টে থাকে।

দিলরুবা চলে যাবার পর গৃহকর্তী যেমন তার অভাব বোধ করতে থাকে, তেমন তার সুন্দর আচরণ ও কাজ-কর্মের প্রশংসা করতে থাকে। দিলরুবার জন্য তার মনে কষ্ট বাজতে থাকে— আহা রে! মেয়েটার কী যে হলো হঠাৎ! মাসের বেতনটাও নিয়ে গেল না।

একদিন সে গৃহর্কীকে বলে— আম্মা, দিলরুবার খোঁজ পাইছি। সে এখন গার্মেন্টে চাকরি করে। গার্মেন্টে ঢুকতে পারলে কুনু মাইয়াই বাসা-বাড়িতে কাম করতে চায় না।

যদি সে ভালো থাকে তো ভালো।

আম্মা, আপনে যদি দিলরুবার বেতন দিতে চান তো আমার কাছে দিতে পারেন। আমি তারে পৌছায়া দিব।

গৃহকর্তী সরল বিশ্বাসে দিলরুবার এক মাসের বেতনের টাকা তার হাতে তুলে দেয়। সে নিজের ঘরে এসে বেনসন সিগারেট টানতে টানতে নিজের মতো বলে, ব্যাটা ইবলিশ! তুমি কি সত্যিই আছ? যদি থাকোও আমার সাথে পারবা না।

সে সব ধর্ষণই যে আচানক ঘটিয়েছে তা নয়। কোনো কোনো ধর্ষণেচ্ছা চরিতার্থ করার জন্য তাকে টোপ ফেলে অপেক্ষা করতে হয়ে দীর্ঘদিন। তেমনই একটি ধর্ষণ হল তার বারো নম্বর ধর্ষণ।

ভরদুপুর। সে তার মালিককে অফিস থেকে এনে, গাড়ি গ্যারেজে রেখে বাড়ির সামনে চায়ের দোকানে গিয়ে সিগারেট ফুঁকছিল। মুখ ছিল রাস্তার দিকে।

পোশাক কারখানার মেয়েরা দুপুরে খাবারের জন্য আধঘন্টা ছুটি পায়। দৌড়ের মতো করে তারা হাঁটছিল। তার চোখ সেই সব মেয়েদের দিকে। সেই মেয়েদের একজন রূপা।

রূপা। নামটা যেমন, মেয়েটাও তেমন স্নিগ্ধ-কোমল। শীত সকালে ফুটে থাকা বেলী ফুলের মতো। রূপার দিকে চোখ পড়তেই তার চোখ সাগর পাড়ের তপ্ত রোদে বালি যেমন চকচক করে, তেমন চকচক করে উঠল। তার ভেতর লকলক করে উঠল লালসার জিহ্বা।

সে আর চায়ের দোকান থেকে সরে না। দুপুরের খাবার শেষে রূপা তো আবার এ পথ দিয়েই কর্মক্ষেত্রে ফিরবে। তাকে দ্বিতীয়বার না দেখে সে উঠবে না।

তারপর থেকে সে প্রতদিন রূপাকে দেখতে থাকে। তার মুখস্থ হয়ে যায় রূপার চলাচলের সময়গুলো।

রূপার সাথে তার প্রথম কথা হয় এক বৃষ্টির দিনে। ঠিক সেটা বৃষ্টির দিন ছিল না। আচানক হুড়মুড় করে বৃষ্টি এসে যায়।

সে বসে ছিল চায়ের দোকানে। রূপা দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যাচ্ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি এসে গেলে রূপা ছুটে গিয়ে আশ্রয় নেয় সেই চায়ের দোকানের ঝাঁপের নিচে।

হঠাৎ বৃষ্টি সাধারণত বেশিক্ষণ থাকে না। কিন্তু সেদিন যেন হঠাৎ বৃষ্টি তার সাধারণ নিয়ম ভুলে গেল। আর থামে না। রূপার চোখে-মুখে উদ্বিগ্নতা-চিন্তার ছাপ। দুপুরের খাবার খেয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফিরতে হবে। দেরি হলে হাজিরা কাটা যাবে। হাজিরা কাটা মানে এক দিনের বেতন কাটা যাওয়া। এই যে আধা বেলা কাজ করল এর কোনো দামই থাকবে না তাদের কাছে। বড়লোক মালিকেরা খুব সহজ ছুঁতোয় গরিবের টাকা কেটে নেয়।

সে বুঝতে পারে রূপবতী রূপার সাথে কথা বলার এই চূড়ান্ত সুযোগ। সে বলে, দেরি হইয়া যাইতেছে আফা?

হু। চিন্তাক্লিষ্ট কন্ঠে সংক্ষিপ্ত উত্তর।

এই বৃষ্টি মনে হয় সহসা থামব না। একটা রিকশা ডাইকা চইলা যান।

রূপা চুপ। তার কাছে রিকশা ভাড়ার টাকা নাই, সে তা বলতে পারে না।

সে বলে, সবার কাছে সবসুম ট্যাকা থাকে না। আমার মালিকের তো কোটি কোটি ট্যাকা। তারপরও গাড়ির তেল নিতে গিয়া অনেকসুম কয়— হায়! মানি ব্যাগ আনি নাই। তখন আমি ট্যাকা দিয়া দেই।

সে রূপার হ্যাঁ-না-এর কোনো ধার না ধেরে একটা রিকশা ডেকে আনে। রিকশাওয়ালার হাতে বিশ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে বলে, তারে নিয়া যাও।

রূপা হতভম্বের মতো তাকাচ্ছিল তার মুখে। কোনো ভাষাই পাচ্ছিল না বলার মতো। সে বলল, আফা, আপনে তো এই পথ দিয়াই চলাচল করেন। আমি এই চায়ের দোকানে প্রায়সুম বইসা থাকি। একসুম ট্যাকাটা আমারে ফিরায়া দিয়েন। আমি ধার দিলাম। যান, দেরি হইয়া যাইতেছে।

রূপার সাথে সে কথা বলে। টাকা ধার দেয়ার মাধ্যমে আরও একদিন কথা বলার সুযোগ রাখে। বাড়তি পাওনা— দোকানে উপস্থিত এতগুলো মানুষের সামনে নিজেকে পরোপকারি বলে পরিচিতি দেওয়া। সব মিলিয়ে সে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। দোকানিকে বলে, আরেক কাপ চা দেন তো গাফফার ভাই।

পরদিনই রূপা টাকাটা ফেরত দিতে চায়। কিন্তু সে ফেরত নেয় না। টাকা ফেরত নেওয়া মনে সবকিছু শোধ করে দেওয়া। এরপর রূপার সাথে কথা বলতে গেলে রূপা যদি বলে, একদিন উপকার করছিলেন, আমি তো টাকাটা ফেরত দিছি। এখন প্রতিদিন এমুন কথা বলতে আসেন ক্যান?

টাকাটা না নিলে রূপা এত সহজে এরকম কথা বলতে পারবে না। সে বলে, আফা, বিশটা ট্যাকাই তো। এইটা আবার ফেরত দিতে হয়? এই দুনিয়ায় সব নারী-পুরুষ ভাইবোন সম্পর্ক। ধরেন, আপনের এক ভাই আপনেরে রিকশা ভাড়া দিছে।

তারপর থেকে সে মাঝে মাঝে রূপার সাথে কথা বলে। ভাইয়ের অধিকার নিয়ে একদিন রূপার ঘরে গিয়ে চা-বিস্কুট খেয়ে আসে। আর তখন থেকেই সে ভাবতে থাকে কীভাবে তার লালসা চরিতার্থ করবে সে কথা।

রূপার ঘরে গিয়ে কিছু করা কঠিন। বড় একটা টিনের ঘরে অনেকগুলো কক্ষ। একেক কক্ষে পাঁচ/ ছয়টা মেয়ে থাকে। সবাই যে পোশাক কারখানায় চাকরি করে তা নয়। কেউ বিউটি পার্লারে, কেউ দোকানের শো-রুমে, কেউবা করে নিজের মতো কিছু। ঘর ফাঁকা পাওয়া কঠিন। রূপা তো সকাল আর রাত ছাড়া ঘরে থাকে না। আর থাকে ছুটির দিনে। সকাল, রাত এবং ছুটির দিনে তো অন্য মেয়েরাও ঘরে থাকে। আর কখনো রূপাকে একা পাওয়া গেলেও সমস্যা হলো ঘরটা টিনের। জানালা-দরজার পাশে, এবং ভেনটিলেটরে ব্যাপক ফাঁক। চিৎকার বাইরে চলে যাবে। ধরা পড়ে গেলে মেয়েদের হাতের মার খেয়ে মরতে হবে। বেঁচে থাকলেও যেতে হবে পুলিশের কাছে। দালানের সুবিধা হলো, অসহায়ের চিৎকার বাইরে বের হয় না।

সে নিশ্চিত হলো, নিজের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য নিজের কক্ষটাই সবচেয়ে উপযুক্ত। বেশি ঝামেলা হলে রূপাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে ঝামেলা থেকে বাঁচা যাবে। বিয়ে তো একদিন না একদিন করতেই হবে। রূপা রূপবতী, চাকরি করে, লেখাপড়াও জানে কিছুটা। এর চেয়ে ভালো মেয়ে তো তার কপালে এমনিতেই জুটবে না।

বিয়ের কথা ভাবতেই তার পশু স্বভাবের ফাঁক দিয়ে মনুষ্য স্বভাব উঁকি দিল। মনুষ্য স্বভাব বলে, তাহলে তাকে বিয়েই করো। এরকম ঘৃণ্য অপরাধ করার দরকার কী?

তার শক্তিশালী পশু স্বভাবের কাছে সহজেই পরাস্ত হলো মনুষ্য স্বভাব। পশু স্বভাব বলল, দই ভালো। মদ খারাপ। দই খেয়ে কি মদের নেশা পাওয়া সম্ভব?

মূলত ধর্ষণটা তার নেশায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল।

রূপার সেদিন বাড়তি কাজ ছিল, মানে ওভার টাইম। সে যখন পোশাক কারখানা থেকে বের হলো, তখন রাত সাড়ে আটটা। টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছিল। অন্ধকার। আকাশ দেখা যাচ্ছিল না। তাই বৃষ্টিটা কমবে, না এরকমই থাকবে, না বাড়বে তা বোঝা যাচ্ছিল না। সে ধরে নিল— হয়তো বৃষ্টিটা এরকমই থাকবে, অথবা একটু পর থেমে যাবে। পা চালিয়ে হেঁটে যাওয়াই ভালো।

কিছুটা পথ এগোতেই বৃষ্টি বেড়ে গেল ভীষণ। ঝুম বৃষ্টি।

সে পাঁচটার পর রূপাকে ফিরতে দেখেনি। নিশ্চিত হয়ে ছিল যে, রূপার আজ অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে।

রাত সাড়ে আটটা। সে দেখে জবুথবু হয়ে মন্থর পদক্ষেপে রূপা এগিয়ে আসছে। সে পাশে রাখা ছাতাটা মেলে ধরে এসে দাঁড়ায় পথের পাশে। রূপা নিকটবর্তী হতেই সে বলে, কে, আফা না? এই বৃষ্টির মধ্যে…!

রূপা চমকে উঠে থমকে দাঁড়ায়। ভেজা ওড়নাটা টেনে শরীর ঢাকার চেষ্টা করে। সে বলে, আফা, দয়া করে আমার এখানে আসেন। বৃষ্টিটা একটু কমুক, তারপর একটা রিকশা ডাইকা…।

না না, আমি চইলা যাইতে পারব।

যাইতে তো পারবেনই। ঠাণ্ডায় অবস্থা…! আফা, ভাইয়ের ঘর সামনে রাইখা…। আফা, আপনে কি আমারে ভাই মনে করতে পারেন না? রক্তের সম্পর্কই কি সব?

আসলে এই ভেজা কাপড়ে…।

ভেজা কাপড় কোনো সমস্যা না। ফ্যানের নিচে দশ মিনিট বসলেই শুকায়া যাইব। তারপর এক কাপ গরম চা খাইয়া…।

ভীষণ অনিচ্ছা নিয়ে রূপা তার ঘরে যায়। সে চা-নাস্তার জন্য ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। এই ফাঁকে রূপা তার গায়ের ওড়নাটা ভালো করে চিপড়ে নেয়।

একটু পর সে গরম চা, কেক আর বিস্কুট নিয়ে আসে। রূপা এমনিতেই কেক-বিস্কুট তেমন খায় না। শুধু চা খেল। গরম চা-টা খাবার পর শরীরটা একটু চাঙ্গা হলো। পাখার বাতাসে গায়ের জামাটাও অনেকটা শুকিয়ে গেছে।

বৃষ্টি থামেনি। রূপা বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করতেও চায় না। বলে, একটা রিকশা ডাইকা দেন।

আফা, আর একটু সবুর করেন। জীবনের প্রথম ভাইয়ের ঘরে আসছেন। ভাত না খাইয়া…।

না না, এখন ভাত খাব না।

বসেন, আমি হোটেল থিকা খাবার নিয়া আসতেছি।

আরে না।

যাব আর আসব।

সে বের হয়ে যায়। রূপা হতভম্ব হয়ে বসে থাকে। দশ মিনিটের মধ্যেই সে ভাত, রুই মাছ, গরুর গোশত, সবজি তরকারি এইসব নিয়ে ফিরে আসে।

এসে বলল, আফা, বৃষ্টি অনেকটা কমছে। আপনে খান। খাইয়াই চইলা যাইতে পারবেন।

রূপার তখন বিরক্তির শেষ নেই। মানুষের সুন্দর ব্যবহারে এরকম বিরক্ত সে আর কখনো হয়নি। বিরক্তি ও অনিচ্ছা নিয়ে সে দ্রুত কয়েকটা খাবার মুখে দিল।

খাওয়া শেষ করে রূপা বলল, তাড়াতাড়ি আমারে একটা রিকশা ডাইকা দেন।

সে রিকশা ডেকে দেওয়ার বদলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। রূপা শুরুতে ধ্বস্তাধ্বস্তি করেছিল। চিৎকারও করেছিল। বৃষ্টির কারণে আশপাশে মানুষ ছিল না। দারোয়ানও ছিল তার ঘরে দরজা বন্ধ করে। রূপার চিৎকার বা দরজা ধাক্কাধাক্কির কোনো শব্দ কারও কানে পৌঁছায়নি।

শেষ রাতের দিকে চতুর্থ বারের মতো ধর্ষিতা হওয়ার পর রূপার শরীর একেবারেই নেতিয়ে পড়ে। হয়তো জ্ঞান হারাল। মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। চুড়ি ভেঙে হাত রক্তাক্ত। ধস্তাধস্তির সময় টেবিলের কোনার সাথে কপালে বাড়ি খেয়েছিল। কপাল থেকেও রক্ত ঝরছে।

তার পশুশক্তিও অনেকটা ঝিমিয়ে এসেছে। আগের দিন দুপুরের পর সে আর কিছু খায়নি।

তার মাথায় ভিড় করে নানা চিন্তা। ঘটনা যা ঘটার ঘটেছে। এখন সবকিছু সামাল দিতে হবে। দিলরুবার ব্যাপারটা যেভাবে চাপা পড়ে গিয়েছিল, এটা সেভাবে চাপা পড়বে না।

যে হোটেল থেকে সে রাতে খাবার এনেছিল, সে হোটেলে খুব ভোরে ভুনা খিচুরি আর গরুর গোশত রান্না হয়। সে সিদ্ধান্ত নিল, ভুনা খিচুরি আর গরুর গোশত আনবে। নিজে খাবে। জ্ঞান ফেরার পর রূপাকে খাওয়াবে। তারপর হাতে-পায়ে ধরে, মাফ চেয়ে যেভাবে সম্ভব রূপাকে মানাতে চেষ্টা করবে। না মানলে চূড়ান্ত হাতিয়ার বিয়ের প্রস্তাব তো আছেই।

তার ভেতরের পশুটা বলল, নাকি এখনই গলা চেপে ধরে সব শেষ করে দিব?

তবে সে সেটা করতে পারে না। পশুটা নিজের ব্যাপারে খুব সচেতন। এখানে লাশ গায়েব করা অসম্ভব হবে। পালিয়ে যাওয়াটাও ঠিক হবে না। কারণ, এখানে সে চাকরি আর আশ্রয় দু’টোই পেয়েছে। এমনিতেই তার পেছনে পুলিশ লেগে আছে।

গেটের একটা চাবি তার কাছে থাকে। গেট খুলতেই দারোয়ান তার ঘর থেকে বলল, কই যাও এই ভোর রাইতে?

এইখানেই।

রাইতে যে তুমার বোন আসছিল সে কখন গেছে?

সে তো তহনই চইলা গেছে। একটু কিছু মুখেও দিল না।

খাবারের প্যাকেটটা যাতে দারোয়ান না দেখে তাই গেটের কাছে এসে সে প্যাকেটটা লুঙ্গির কোঁচড়ে লুকিয়ে ফেলল। তবে দারোয়ানের আর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।

ঘরে ঢুকে সে প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিল। আতঙ্কে খিচুড়ির প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলে দেয়। খিচুড়ি ও গোশত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। যে রূপাকে সে অজ্ঞান দেখে গেছে, সে এখন সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। জিহ্বা আধ হাত বের হয়ে আছে। চোখের মণি দু’টিও যেন বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। নাকের ছিদ্র পথ দিয়ে বের হচ্ছে রক্ত। ফাঁসের মরা মানুষের চেহারা বীভৎস হয় তা সে জানত। কিন্তু এতটা বীভৎস হয় তা সে কল্পনা করতে পারেনি।

সে আর মুহূর্তকাল দেরি না করে ঘরের দরজা টেনে দিয়ে বের হয়ে গেল। গেট খোলার সময় দারোয়ান বলল, তুমি আবার কই যাও? এত সকালে বারবার বাইরে যাওয়া-আসা করতেছ ক্যান?

যাই না। এইহানেই সিগারেট খামু।

তুমার গলার স্বর অমন লাগতাছে ক্যান? ভয় পাইছ মনে হয়?

আরে কী কও? ভয় পামু কীসে?

যখন তার ঘুম ভাঙে তখন সে দেখে ট্রেনটা থেমে আছে। অনুমানে সে বুঝে নেয়, বেলা বারোটার মতো বাজে। এত অল্প সময়ে ট্রেনের চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা নয়। হয়তো এটা ট্রেনের বিরতি। কোথাকার ট্রেন এবং কেথায় বিরতি নিচ্ছে তা ভাবার আগে সে আতঙ্কগ্রস্ত পড়ে নিজের শরীর নিয়ে। তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি-গোঁফ ছিল, এখন তা নেই। মুখটা অসম্ভব মসৃণ এবং কোমল। তার বুকে সুঢৌল দু’টি স্তন। রূপার স্তনের কথা তার মনে আছে। রূপার স্তন ছিল মাঝারির চেয়ে একটু বড়। তার স্তন জোড়া তার চেয়েও বড়। এবং দু’টো খুব ঘন। তার গায়ে ঢিলেঢালা ফতুয়া। স্তন দু’টি ফতুয়া ঠেলে বের হতে চাচ্ছে। সে ভয়ে ভয়ে শরীরের নিম্নাংশে হাত দিল। তার সেই তুলনামূলক বড় ও মোটা পুরুষাঙ্গটা নেই। সেখানে বসে আছে নারীর যৌনাঙ্গ। তার মানে সে নারী হয়ে গেছে !

বিস্ময় ও ভয় তাকে কামড়ে ধরল। বিস্ময়টা হলো, সংক্ষিপ্ত ঘুমের মধ্যে জলজ্যান্ত এক পুরুষ কেমন করে নারী হয়ে যায়? আর ভয়টা হলো, এই নির্জন স্থানে যদি কেউ তার শরীরে উপর হামলে পড়ে। সে গুনে গুনে বারোটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণ মুহূর্তে সেই মেয়েদের কষ্ট ও ভয় তার মনে আছে। বারোটা মেয়ের ভয় একসাথে তাকে জেঁকে ধরল।

আর এরকম ভয়ের মুহূর্তেই তিনজন যুবক এল সেখানে। মনে হলো, যুবকেরা কিছুটা মাতাল। দাঁত বের করে তারা হাসল। একজন বলে, এরকম মাল তো কখনো দেখি নাই। দ্যাখ, লুঙ্গি পরা।

সে বলে, আমি পুরুষ, আমি নারী না।

পুরুষ! কেমন পুরুষ তুমি।

একজন টান দিয়ে তার লুঙ্গি খুলে ফেলে। কুৎসিত হাসি হেসে বলে, তুমি পুরুষ? পুরুষের কি এইসব থাকে?

তারপর তিনজন মিলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যায় ট্রেন থেকে। নিয়ে যায় স্টেশনের এক পতিত ভূমিতে। তিনজন পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করতে থাকে। বারোটা মেয়ের যন্ত্রণা সে নিজের একটামাত্র শরীর দিয়ে উপলব্ধি করতে থাকে। ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত, এবং নির্ঘুম শরীর তার। মনে হতে থাকে যৌনাঙ্গটা একটা থকথকে ঘা। সেই ঘায়ের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে কামারের চুল্লি থেকে তুলে আনা লৌহদণ্ড। তারা কতবার এবং কতক্ষণ তাকে ধর্ষণ করেছিল তা সে বলতে পারবে না। কারণ, অল্প সময় পরই সে জ্ঞান হারিয়েছিল।

জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর সে নিজেকে আবিস্কার করে হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন বিছানায়। সে আগের মতোই পুরুষ। তার সেই রুক্ষ-শুষ্ক ত্বক। মুখে খোঁচা খোঁচা আধা-পাকা দাড়ি। লুঙ্গির ভেতর সেই শিশ্ন।

তাকে যে তিনজন যুবক ধর্ষণ করেছে সে স্মৃতি তার মাথায় আছে। শরীরে অসহনীয় যন্ত্রণাও। কানে বাজে তিন যুবকের সেই হাসি। আবার নিজের করা বারোটা ধর্ষণের কথাও তার মনে আছে।

কিন্ত এ কী করে সম্ভব? একই মানুষের ধর্ষণ করার ও ধর্ষিতা হওয়ার স্মৃতি থাকে কেমন করে?

অলৌকিক ঘটনার কথা সে জানে। মহামানবদের জীবনে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। খারাপ মানুষের জীবনে যে অলৌকিক ঘটনা ঘটতে পারে না তা কী করে হয়? মহামানবদের জীবনে ঘটে মহান সব ঘটনা। আর তার মতো খারাপ মানুষের জীবনে ঘটেছে খারাপ এক অলৌকিক ঘটনা। হ্যাঁ, যার চিন্তা-ভাবনার সবটা জুড়েই প্রতি মুহূর্তে ছিল ধর্ষণ, তার জীবনে এরকম অলৌকিক ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়।

এরকম মুহূর্তে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। বলে— ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট।

আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সে। বাদী পক্ষের উকিল তাকে জেরা করতে উঠে দাঁড়াল। প্রশ্ন করল, আপনার নাম কী?

সে বলল, আমি একজন ধর্ষক। বারোটা নারীরে ধর্ষণ করেছি।

আমি আপনার নাম জানতে চেয়েছি।

ধর্ষকের কোনো নাম থাকে না। কারণ, ধর্ষক কোনো মানুষ না। ধর্ষক হইলো পশু। হিংস্র পশু। ধরেন হায়েনা। এইগুলার কি আলাদা আলাদা কোনো নাম থাকে? সবই তো এক।

তারপর সে তাকায় বিচারকমণ্ডলি দিকে। বলে, মহামান্য আদালত, আমি কিছু কওয়ার অনুমতি চাই।

আদালত তার অনুমতি মঞ্জুর করে। সে বলে, আমি যে বারোটা নারীরে ধর্ষণ করছি, তার তিনজন মারা গেছে। তিনজনের দুইজন আত্মহত্যা করছে। আর একজনরে আমি নিজে মারছি। সেই হিসাবে আমার প্রাণদণ্ড হওয়ার কথা।

কী দণ্ড হবে বিচারের আগে সেটা বলা সম্ভব নয়।

যদি আমার প্রাণদণ্ড হয় তো আমার শ্যাষ ইচ্ছার কথা মহামান্য আদালতকে জানায়া যাইতে চাই।

কী আপনার শেষ ইচ্ছা?

আমার ইচ্ছাটা হইলো, মরণের পর আমার কব্বরে য্যান খোদাই কইরা লেখা হয়— ধর্ষক।

আপনার এরকম ধ্রুপদি একটা উপলব্ধির পেছনে কারণ?

এর পেছনে অবশ্যই কারণ আছে। সেইটা আমি এইখানে কইতে চাই না। কইলে হয়তো উপস্থিত লোকজনদের কেউ বিশ্বাসও করব না। খালি এই কথাটাই কইতে চাই যে, ধর্ষিতা হওয়ার সময়ে একজন নারী কী পরিমাণ ভয় ও যাতনা পায় আমি তা জানছি।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন : ৭ম সংখ্যা (মার্চ-২০২৫ : বিশেষ ঈদ সংখ্যা)

Read Next

রোকে ডালটন-এর দুটি কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *