
তুমি আকাশ দেখেছ? আজ আকাশের পুব কোণে একটা তারা এখোনো জ্বলজ্বল করছে, দেখেছ?
বাদামের খোসা ফেলে দিতে দিতে তিতির মৃদুস্বরে বলল, এখনো?
হাঁ, এখনো!
তবে সে তারা নয়; স্যাটেলাইট আলো!
কী হলো তাতে, ধরেই নাও না সে তারা, সে আজ তোমার আমার জন্যই জ্বলছে! জেগে আছে এই মধ্যদুপুরেও।
খুব ভালো কথা বলতে শিখেছ তুমি আজকাল। বেশ একটা কাব্যিকতা এসেছে তোমার মধ্যে দেখছি। হা হা হা হা…। প্রথমত এই অসহ্য ঝলসানো দুপুরে আকাশ পানে মুখ করা যায় না। চোখ পুড়ে যায় যেন রোদের ঝলকের অনুভবে। দ্বিতীয়ত আমাদের জন্য আজ আর কোনো তারা জেগে নেই। আছে শুধু মন ঝলসানো তপ্ত রোদ্দুর।
তবে কি আর কোনো আশা বেঁচে নেই?
আশা বেঁচে থাকে বিশ্বাসে, আর বিশ্বাসই যেখানে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে খেয়ে ঘুমোচ্ছে; সেখানে আর আশা থাকে কীভাবে?
একটা সুযোগ… একটা সুযোগ দিয়ে দেখো, ঠিক বদলে দেব নিজেকে। তোমার জন্য… শুধু তোমার জন্য গড়ে নেব আবার নিজেকে। আমরা আবার মধ্য রাতের নির্জনতায় খালি একটা রিকশা খুঁজব ঘুমন্ত শহর দেখার জন্য। পথের পাশে ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের দোকান দেখে থামিয়ে দেব রিকশা। তুমি একটা সুযোগ দিয়ে দেখো…। তোমার এই তপ্ত ঝলসানো রোদ্দুর সাক্ষী। আমি ঠিক তোমার আগের আমি হয়ে যাব ঠিকঠিক।
তিতির ধীমানের হাতের উপরে হাতটা রাখতে গিয়েও সরিয়ে নিল। আবেগটা সামলে নিয়ে বলল, তুমি যেমন আছ তেমনি থেকো, শুধু অতি প্রগতিশীলতার নামে মধুমিতাদের সঙ্গে গা ঘেঁষে ঘেঁষে বসে নষ্টামিটা কোরো না। আমি চুলোয় ভাত চাপানোর অভাব মেনে নিতে পারি কিন্তু তোমাকে ভাগ করতে পারি না। যদি কোনোদিন দেখি একা বসে আছ পরিতাপে শুধু আমার জন্য, সেদিন না হয় আকাশের পুব কোণে তারাটা খুঁজে দেখব।
ধীমান তিতিরের চিবুক ছুঁয়ে বলল, কিন্তু তিতির, আজও তো আমি ক্ষমা চাইছি।
ক্ষমা চাইছ কিন্তু মুখের অবয়বে কোনো পরিতাপের রেখাচিহ্ন নেই তোমার। আজ তোমাকে ক্ষমা করে থেকে গেলে, তুমি কাল থেকে আবার সেই তুমিই হয়ে যাবে। প্রগতিশীলতার নামে অতিবুলি কপচানো অতি আধুনিক পুরুষ। যার ঘরে এক জীবনসঙ্গী থাকতে বাইরে বসার জন্য দশ নারীসঙ্গীর দরকার হয়। আসলে কি জানো, তোমাদের মতো কিছু তাত্ত্বিক বুলি কপচানো মানুষের জন্য আজ প্রগতিশীলতা, আধুনিকতা বিতর্কিত! তোমরা বিষয়টিকে খুব বেশি একপেশে করে ফেলেছ। শুধু নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার মধ্যেই চায়ে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছ প্রগতিশীলতা আর আধুনিকতাকে!
তুমি জানো.. .আমি আসলে, আসলে আমি তোমার একটা অভ্যেস, তাই তুমি আমার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছ না। পরে ঠিক হয়ে যাবে। ভেবো না।
আমি উঠি, অনেকটা পথ। দিনের আলোয় বাস ধরব।
ধীমান আর কিছুই বলল না। তিতিরের হেঁটে যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকল শুধু…।