অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈয়দ নূরুল আলম -
প্রথম ঘাসফুল

রাতইল গ্রামে, মধুমতি নদীর পাড়ে, আম বাগানের পাশে, পাশাপাশি দু’টো স্কুল। একটা বয়েজ। একটা গার্লস। দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে একটা দেয়াল। গার্লস স্কুল পাঁচ ফুট দেয়াল দিয়ে ঘেড়া। গার্লস স্কুল ক্লাস এইট পর্যন্ত। এইট পাস করা মেয়েরা ক্লাস নাইনে বয়েজ স্কুলে এসে ভর্তি হয়। এ-বিল্ডিং থেকে ও-বিল্ডিংয়ে উড়ে আসে।

এ-বছর গার্লস স্কুল থেকে তিনটা মেয়ে তিন্নি-মিতু-রানু বয়েজ স্কুলে এসে নাইনে ভর্তি হয়েছে। গার্লস স্কুলে ক্লাস এইটে মেয়ের সংখ্যাছিল সাত। তার থেকে চারজন ঝরে পড়েছে। সাইত্রিশজন ছেলে আর তিনজন মেয়ে। ছেলেদের চুয়াত্তরটা চোখ এখন তিনটি মেয়ের ওপর। স্বাভাবিকভাবে, মেয়ে তিনটির অবস্থা ইঁদুরের মতো। মেয়ে তিনটি টিচার্চরুমের পাশে কমনরুমে থাকে। ক্লাস শুরুতে স্যারদের সাথে ক্লাসে যায়, এবং ক্লাস শেষে আবার স্যারদের সাথে কমনরুমে ফিরে আসে। নাইন-টেন দু’বছর এভাবেই তাদের কাটে। এদের মধ্যে তিন্নি, এ স্কুলের আকরাম স্যারের মেয়ে। অন্য দু’জনের তুলনায় তিন্নি সুন্দর, উঁচু-লম্বা, স্বাস্থ্যবতী, চোখ দু’টো মায়াময়।

রবিউল কামরুলের খুব ভালো বন্ধু। আবার শত্রুও। ক্লাসে একবার কামরুল ফার্স্ট হয়, রবিউল সেকেন্ড হয়। পরের বছর হয়ত রবিউল ফার্স্ট হয়, কামরুল হয় সেকেন্ড। তাই পড়াশোনার ব্যাপারে ওরা দু’জন, একে অপরের শত্রু। বাকি সময়— খেলতে, বেড়াতে, গাছের আম পেড়ে খেতে, রাতে খেজুরগাছের রস নামাতে, গলায় গলায় ভাব।

ক্লাসে প্রথমদিন ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন করার কথা উঠলে, সবাই ধারণা করে— বরাবরের মতো এবারও কামরুল ক্যাপ্টেন হবে। ক্লাস টিচার হাসান স্যার কিছু বলার আগেই রবিউল বলে, ‘স্যার, ভোটাভুটি হোক। কে কাকে চায়, একটা কাগজে তার নাম লিখে আপনার কাছে জমা দেবে।’

রবিউলের একথা শুনে ক্লাসের সবাই হতবাক। এতদিন তো রবিউল এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। এবার হঠাৎ!

বিষয়টা যারা বুঝতে পারে, তারা মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে মুচকি হাসে। কামরুল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। হাসান স্যার গণতন্ত্রের পথে হাঁটেন। গোপন ব্যালটে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ক্যান্ডিডেট দু’জন। কামরুল আর রবিউল। ভোট গণনার পর দেখা যায় রবিউল পায় চৌত্রিশ ভোট। আর কামরুল পায় মাত্র তিন ভোট। এখানে বলে রাখা ভালো, কামরুল নিজের ভোটটা দিতে ভুলে গিয়েছিল।

ভোটের রেজাল্ট দেখে ছাত্ররা একে অন্যের দিকে তাকায়। এমন হলো কী করে!

কামরুল হেরে গিয়েও দুঃখ পায় না। বরং খুশি হয়। ছুটির আগ দিয়ে কমন রুমের জানালা দিয়ে একটা চিরকুট ফেলে আসে।

পরের দিন তিন্নি কামরুলকে কমনরুমে ডেকে বলে, ‘তোমাকে ক্লাসের কেউ পছন্দ করে না? তুমি তিনটে ভোট পেলে কী করে?’

‘ছেলেরা পলিটিক্স করেছে। প্রতি ক্লাসে আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন হই তো। তাই এবার ওরা সুযোগটা নিয়েছে। ছেলেরা ভোট দেয়নি, তাতে কী হয়েছে, তোমাদের তিনটা ভোট পেয়েছি, তাতেই আমি খুশি।’

কামরুলের একথা শুনে তিন্নি যেন আকাশ থেকে পড়ে। বলে, ‘আমরা তো কাউকে ভোট দিইনি। তোমাকে দিয়েছি, কে বলল? আমরা এ-ক্লাসে নতুন এসেছি। তোমাদের দু’জনের কাউকে সেভাবে চিনি না। তাই আমরা তিনজন পরামর্শ করে ঠিক করেছিলাম। দু’জনের কাউকে ভোট দেব না। ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকব। এই নাও তোমার চিরকুট।’

‘তুমি কি আমাকে এ-কথা বলতে ডেকেছ?’

তিন্নিকে এ প্রশ্নটা করে, প্রশ্নের উত্তরের জন্য কামরুল আর দেরি করে না। কমনরুম থেকে বের হয়ে ভনভন করে, উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে।

পরের দিন কামরুলকে আর ক্লাসে দেখা যায় না। তারপরের দিনও ক্লাসে আসে না। বিষয়টা তিন্নি বুঝতে পারে। কিন্তু কারও সাথে শেয়ার করতে পারে না।

 

Read Previous

সম্পাদকীয়, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল অনুপ্রাণন ৬ষ্ঠ সংখ্যা

Read Next

আবু আফজাল সালেহ – যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *