
বাড়ির বড় মেয়ে অনিমা। পড়াশোনাতে অনেক ভালো, এবার এসএসসি পরীক্ষায় লেটার মার্ক নিয়ে পাস করেছে। তাই বাবা-মার অতি স্নেহ ও আদরের সন্তান। আবার অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বিয়ের ছ’বছর পর তার জন্ম হয়েছে। যদিও আরও তিনটি ছোট ভাই আছে যারা বাস্তবতার সাথে চড়াই-উৎরাই কিছুই বোঝে না। বাবা একটা ব্যাংকে চাকরি করেন। ছোট পদের কর্মচারী হলেও যা বেতন পান তাতে সংসার মোটামুটিভাবে চলে যায়।
বাবা সিকদার কোনো ঘোরপ্যাঁচের লোক ছিলেন না। সংসারের সব দায়-দায়িত্ব মা জাহানারার হাতে ন্যাস্ত। তিনি শুধু মাসের বেতন মা’র হাতে তুলে দিয়েই দায়িত্বের পরিসীমা। কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণ ঝড় ঝামেলা সহ্য করতে হয় মাকে। ছেলে-মেয়েদের কোনো কিছুর দরকার হলে সরাসরি তার কাছেই আবদার। তিনি একটু গম্ভীর ও কড়া মেজাজের ছিলেন কাউকে প্রশ্রয় দিতেন না। ছেলে-মেয়েরা সবাই ভয় করে চলত মাকে। তবে বাবা তাদের খুব ভালোবাসত এবং খেলার সাথীও ছিলেন। কিন্তু এগুলো মোটেই পছন্দ করতেন না মা তাই বাবাকে মাঝে-মধ্যে এর জন্য বকুনি খেতে হয়। সিকদার তার স্ত্রীর গায়ে কখনো হাত তুলেছে বলে শোনা যায়নি এমনকি উঁচু কণ্ঠে কথাও বলেনি বরং জাহানারাই স্বামীকে সুযোগ পেলেই বকুনি ও ধমক দিতেন। তিনি কিছু না মনে করে হেসে উড়িয়ে দিয়ে সন্তানদের সাক্ষী করতেন। তাদের পরিবারটা একটা সুন্দর ফুল বাগানের মতো গোছানো। কোনো বেদনা তাদের ছুঁতে পারেনি।
সিকদার হঠাৎ দুপুরের আগেই সবাইকে হতবাক করে অফিস হতে বাড়ি ফিরেছেন। এমনভাবে অফিস ফাঁকি দেওয়ার লোক তিনি নন; প্রচণ্ড অসুস্থতা ছাড়া। বিষণ্নতায় ভরা গোমড়া মুখে চুপ করে সোফায় বসে পড়লেন। বরাবর তিনি জানান দিয়ে বাসায় ঢুকতেন এবং ছেলে-মেয়েরা ছুটে যেতেন বাবার কাছে। কেননা বাসায় ফেরার পথে কিছু না কিছু নিয়ে এসে ছেলে-মেয়েদের হাতে ধরিয়ে দেবেন এবং সামনে বসেই তা খেতে হবে। আর কেউ একজন অনুপস্থিত থাকলে তার খোঁজ আগে করবেন। কিন্তু আজকে অনিমার জন্মদিন উপলক্ষে অফিস ছুটির পর কেক ও উপহার নিয়ে আসার কথা। কিন্তু কী হয়েছে বাবার ব্যাপারটি বেশ উদ্বিগ্ন করে তুলল তাকে। কারণ এ সংসারের বড় মেয়ে সে, বড় ছেলের মতো অনেক সমস্যার সামাল দেওয়ার কলাকৌশল শিক্ষা নিতে হয়েছে।
জাহানারা স্বামীকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর না পেয়ে চোখভরা ছলছল জল নিয়ে পাশের ডাইনিংয়ের চেয়ারটাই বসে পড়ল। অনেক চিন্তা ভাবনা করে মৃদু পদক্ষেপে গিয়ে বাবার গা ঘেঁষে বসল অনিমা। তিনি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মেয়ের মাথার চুলগুলো আঙ্গুল দিয়ে বিলি কাটছে। নিজে থেকে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন যেন বোবা হয়ে গেছেন। সে অবাক দৃষ্টিতে মা’র দিকে একনজরে লক্ষ ছিল। বুঝতে বাকি রইল না যে বাবার দিকে তাকালে হয়তো চোখে আপাতত লুকানো অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পড়তে পারে, তবুও কান্নার ঢেউ চাপাতে গিয়ে চোখ দু’টো লাল করে ফেলেছে আড়ভাবে দেখল। তিনি কিছু না বলে পকেট থেকে লম্বা একটা হলুদ ছেঁড়া খাম বের করে মেয়ের হাতে দিল। খাম থেকে চিঠি বের করতেই মা ইশারায় পড়ে শোনাতে বললেন। চিঠি খুলল, কালো অক্ষরে টাইপ করা। ঝটপট সমগ্র চিঠিটা আলগোছে দেখে নিল। ভাই তিনটিও কাছে গিয়ে বসল। চিঠিতে এমনকি রহস্য আছে যা দেখে মেয়েও ফ্যাকাসে হয়ে বাবার মতো রূপ ধারণ করল। মা জিজ্ঞেস করলেন, কী রে কী লেখা আছে চিঠিতে? ভাঙা ভাঙা গলাই বলল, চাকরি থেকে বাবাকে সাসপেন্স করা হয়েছে। মেয়ের কথা শুনে যেন মাথায় বাজ পড়ল তার। তবু অতি কষ্টে আগ্রহ নিয়ে বলল, কেন রে? মেয়েকে বাধা দিয়ে নিজেই বলতে লাগলেন, ছ’মাস আগে অফিস থেকে লোন নিয়ে বাড়ি করলাম। এ লোন নাকি নেওয়া বৈধ ছিল না, এমন আটশজনের মতো কর্মচারীদের চাকরি সাসপেন্স হয়েছে আর যে কর্মকর্তা এই লোন পাস করেছে তাকেই প্রথমে তার চাকরি গেছে নতুন পরিচালক এসে এ কাজ করেছে। অনিমা বলল— বাবা, তাহলে এখন উপায় কী?
তিনি লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, কী আর হবে রে মা! লোনের অর্ধেক টাকা অফিসে জমা দিলেই চাকরি আবার বহাল থাকবে। কথাগুলো বলতে বলতে তিনি কেমন জানি করতে শুরু করলেন। চিৎকার করে দৌড়ে গিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন জাহানারা। ছোট ভাইটাকে টেবিল ফ্যান আনতে বলে সিলিং ফ্যান অন করে দিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে শুরু করল অনিমা। তার জানা আছে বাবার এমনিতেই হাই প্রেসার। ছোট্ট দু’ভাই ফিসফিসিয়ে কাঁদছে কোন দিকে কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না মেয়েটা। তার পরও ওর মা’কে মাথায় পানি দিতে বলে ডাক্তার আনতে ছুটে গেল।
ডাক্তার সাহেব বলেছেন, ওনার এখন প্রচণ্ড বিশ্রামের প্রয়োজন। তাছাড়া কোনো রকম দুশ্চিন্তা যেন না করে সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু চিন্তা-ভাবনা না করলেও এমনই এসে যায়। যেহেতু চাকরি তাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল আর সেটাই যদি না থাকে তাহলে চলবে কী করে। আবার চাকরি ফিরে পেতে হলে অনেকগুলো টাকার প্রয়োজন সেটা কীভাবে! জোগাড় করা একেবারে অসম্ভব। সংসারের আয়-রোজগার করার মানুষ তো মাত্রই একজন। সুখী পরিবারটা যেন দারুণ বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হলো।
এরই মধ্যে সিকদার সাহেব প্রচণ্ড অসুখ বাঁধিয়ে বসলেন। কয়েকবার এমন সমস্যা হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সপ্তাহখানেক ধরে হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা চলছে। মা-মেয়ের হাতের পাতের যা ছিল এর মধ্যে প্রায় খরচ হয়ে গেছে। আজকে আবার ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছে এবং কয়েকটি টেস্ট করানোর জন্যে বলেছেন। তাই এগুলো করানো খুবই জরুরি কেননা রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন অপারেশনের ব্যাপারে।
কাছে যা কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে ওষুধপত্র কেনা ও সকল পরীক্ষা করানো সম্পন্ন হয়েছে। এখন কিছু টাকা বাকি আছে টেস্টের রিপোর্ট নেওয়ার সময় পরিশোধ করতে হবে। আপাতত হাজার দেড়েক টাকার প্রয়োজন। এ ব্যপারে মাকে কিছু বলেনি অনিমা। ইতিমধ্যেই বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা কর্জ নেওয়া হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনও তাদের এখানে কেউ থাকে না সবাই নওগাঁর গ্রামের বাসায়। যদিও তাদের এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। আর জানিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারণ সেখানে ওরকম কেউ নাই যে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করবে। সেখানে কিছু জমি ছিল সেটাও বিক্রি করায় চাচাদের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছে। মেয়েটা একা একা কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ প্রতিবেশী সম্পর্কের এক মামার কথা মনে পড়ল। তার কাছে নাকি হাত বাড়িয়ে খালি হাতে কেউ ফেরেনি। খুব অমায়িক ও পরোপকারি বলে আশপাশের এলাকায় সুনাম রটানো আছে। তৎক্ষণাৎ দেরি না করে তার সাথে দেখা করার জন্য রওনা দিল অনিমা।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল টিপতেই বিরক্তি মুখে দরজা খুললেন ভদ্রলোক। কোট-প্যান্ট পরনে। হয়তো কোথাও বের হচ্ছিলেন তিনি। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন— অনিমা, তুমি কী মনে করে? কখনো তো আসোনি আমাদের বাসায়, কী ব্যাপার?
মাথা নিচু করে জবাব দিল সে— মামা, কিছু দিন যাবত আমার আব্বার অবস্থা খুব খারাপ। এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে হাতে যা ছিল শেষ আমার হাজার দু’য়েক টাকার দরকার, পরে শোধ দিয়ে দেব। ওর বাবার অবস্থা জেনে কিছুটা মর্মাহত হয়ে বললেন, কিন্তু মা, আমি এক জায়গায় বেরুচ্ছি তো সন্ধ্যার পরে এসে নিয়ে যেও। মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে মেয়েটি চলে এল।
মনে অনেক প্রফুল্ল নিয়ে সন্ধ্যার পারে আবার ওনার বাসায় গেল অনিমা। চারদিকে লক্ষ করে দেখলো এত বড় বাড়িটা জনমানবশূন্য। বড্ডই ভয় করতে লাগল তার তবু ভয়কে দমিয়ে রেখে ঘরে ঢুকতেই চমকে উঠল ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বরে। তিনি বললেন, ভয় করছ নাকি? কীসের ভয়, বস! বলে মেয়েটার দু’কাঁধে হাত দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল। কেন জানি অহেতুক বুকের মধ্যে ধুকধুক করছে তার। হাজারো রকম অজানা ভাবনা ডানা বেঁধেছে মনের মধ্যে। ভেতর থেকে টাকা নিয়ে এসে ভদ্রলোক ওর গা ঘেঁষে বসে হাত দু’টো টেনে গুঁজে দিল পাঁচশ’ টাকার চারটি নোট। অনিমা এতটা খুশি হলো যে এর আগে কখনো হয়েছে কিনা মনে করতে পারছে না। সন্তুষ্ট চিত্তে তাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যাবে এমন সময় লোকটা হেঁচকা টানে তার বুকে টেনে নিয়ে শুকনো ঠোঁট দিয়ে নরম গালে চার পাঁচটা চুমু দিলেন। মুখ হতে একটি কথাও বের হলো না, ও তো রীতিমতো হতবাক! আবার ভাবছে যেহেতু মেয়ে বয়সী তাই হয়তো একটু আদর করে দিচ্ছে। কিন্তু এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো যখন তার নোংরা আচরণে। শত ইচ্ছে থাকা শর্তেও মেয়েটি আর নড়তে পাচ্ছে না যেন পা দু’টো অবশ হয়ে গেছে। লজ্জায় আর ক্ষোভে ফুলে-ফেঁপে যেন লালা হয়ে গেল। মুহূর্তেই বিশালদেহী লোকটার বাহুবন্ধনে আটকে আছে। হাডুডু খেলায় যেমন করে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে খপাৎ করে শক্তি খাটিয়ে জড়িয়ে রাখে ঠিক তেমনিভাবে ধরে রেখেছে। ঘৃণায় রি রি করে উঠল সারা শরীর, কিন্তু তখনো কিচ্ছু বলার শক্তি ছিল না। শুধু মনে হলো কে যেন গলা চেপে ধরে আছে। অতি কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল বটে কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারল না। সামনাসামনি লোকটার দিকে তাকিয়ে কোনো কথা বলার ইচ্ছা হলো না। সে অসম্ভব লজ্জায় গুটিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। মেয়েটার অবস্থা বুঝতে পেরে বদমায়েশটা সান্ত্বনার বাণী শোনাল— লজ্জা কোরো না, কেমন? যখন যা দরকার হবে নিয়ে যেও। অনিমা তখনো নির্বাক কিন্তু পা দু’টোতে সামান্য শক্তি ফিরে এসেছে তাই সরে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই জোর করে পাশের বিছানায় বসাল এবং তার সর্বাঙ্গে অমসৃণ হাতের পরশ বুলিয়ে দিলেন। তিনি হাই ব্লাড প্রেসার রোগীর মতো ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছিল যে তার উষ্ণ নিঃশ্বাসে মেয়েটার শরীরে কেমন যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। কী এক অজানা উন্মাদনায় মেয়েটি শিউরে উঠছিল যখন অমানুষটার হাত দু’টো তার বুকের উপরে ঘুরছিল আর ক্ষুধার্ত বাচ্চার ন্যায় ললিপপ খাওয়ার নেশায় খপ করে ঠোঁট মুখে পুরে নিয়ে পাগলের মতো চুষতে লাগল। আবার উঠতে চেষ্টা করেও পারল না কেননা শরীরটাকে যেন অবশ ও শক্তিহীন করে ফেলেছে। প্রতিবাদ করতে চেয়েও ব্যর্থ হলো যখন চকচকে নোটের কথা মনে পড়ল কারণ বর্তমানে টাকাটার বড়ই প্রয়োজন। ওদিকে বাবার করুণ চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল কী ভয়ানক মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর তিনি।
লোকটা আর কোনো রকম সুযোগ না দিয়ে বিছানায় শুইয়ে আস্তে আস্তে অনিমার যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখা নরম শরীরের সমস্ত রহস্যের দ্বার একে একে উন্মোচন করতে লাগল। এক হাত বুকের উপর খেলা করছে আর অন্যটি নিচের দিকে অমূল্য রত্ন আহরণে খনিজ শ্রমিকের ন্যায় ব্যস্ত। ইতোমধ্যে ওর চোখের সামনে নিজের সতীত্বের সবচেয়ে বড় সম্পদ লুণ্ঠন হয়ে যাচ্ছে আর মেয়েটি শুধু বোবা হয়ে চেয়ে দেখছে। মেয়েদের কতদিনের যত্ন করে সাজিয়ে রাখা সারা জীবনের লজ্জা ভাঙায় যে বাসর রাত, সে রাতেও নারী তার গোছানো সমস্ত শরীর উন্মোচন করতে কিছু সময় নেই কত রকম ভনিতাই না করে। অথচ, সে আজ কিছুই করতে পারছে না শুধু কাঠের পুতুল হয়ে দেখছে আর ভদ্রলোকের খাদ্য সামগ্রী হয়ে পড়ে রয়েছে। ওকি নারী নাকি নারী জাতের কলংক নিজেই প্রশ্ন করে বুঝতে তার অনেক কষ্ট হয়।
অনিমা এই প্রথম লাইটের উজ্জ্বল আলোর ঝলকানিতে তার সর্বাঙ্গের সৌন্দর্য দেখে তৃপ্ত হয়। নিজের যে একটা সুন্দর-সুশ্রী শরীর আছে এতদিন নজরে পড়েনি। বাস্তবে যে এই লোভী শরীরের প্রচণ্ড ক্ষুধা আছে এবং ডাকলে সাড়া দেয় এবার প্রথম জানল। তবে এভাবে না জানাই ভালো ছিল! লোকটা একটা কমবয়সী কন্যার সরলতার সুযোগ পেয়ে ধৈর্য হারিয়ে প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে যুদ্ধজয়ে লিপ্ত। এভাবে ক্রমশই তিনি নিচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছেন অবাধে। অভিজ্ঞ খনকের মতো নিপুণ হাতে নতুন কৌশলে খনন করে চলেছে ভেতরের শক্ত মাটি। সে প্রচণ্ড উত্তেজনায় চঞ্চল হয়ে পড়ে আর এক অজানা অমৃত পিপাসায় হারিয়ে ফেলে নিজেকে অথচ ভুলেই গেছে বাবা মৃত্য শয্যাশায়ী।
লোকটা একটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়লাভ করে ছটফট করা বন্দি খাঁচার পাখিকে যেন মুক্ত করে দিয়েছে। আর পরাজিত সৈনিকের মতো শান্তিচুক্তি মেনে অসম যুদ্ধে লড়তে গিয়ে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে মেয়েটি। সারা শরীরটাই এতো ব্যথা যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কেউ যখম করেছে। নিস্তেজ চোখে প্রচণ্ড ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে ইচ্ছে থাকলেও উঠতে পারছিল না মনে হচ্ছিল বিছানা পেছান দিক থেকে কে যেন টেনে ধরেছে। হঠাৎ বাবার কথা মনে পড়ায় চমকে উঠে দাঁড়াল। যখন চেতনা ফিরল বাথরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ পেয়ে।
কিছু ফলমূল ও টেস্টের সকল রিপোর্ট হাতে নিয়ে হাসপাতালে বাবার বেডের কাছে না যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায় অনিমা। সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়া বাবার শরীর, মা মুখে হাত বুলিয়ে ডুকরে কাঁদছে, ছোট তিন ভাই তারাও বাবার বুকে পড়ে আছে। এমন অবস্থায় সে একটুও কাঁদতে চাইল না বরং প্রচণ্ড উল্লাসে নিজেকে অনেক ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করল। এত কিছুর পরেও বাবার মৃত্যু বাধা দেওয়া গেল না? পচা, নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত শরীরটাকে ছিঁড়ে খামচে রক্তাক্ত করে কোনো ক্ষুধার্ত বাঘের খাঁচায় ফেলে দিলেই যেন স্বস্তি পেত। হঠাৎ সবচেয়ে ছোট্ট ভাইটার করুণ কান্না আর সহ্য হলো না। হাতর সব ফলমূল ও রিপোর্টগুলো পড়ে গেল। মেয়ের দিকে ফিরে তাকাল জাহানারা, ভাইগুলো ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল। অনিমা আর নিজেকে বোঝাতে পারল না— চোখ ফেঁটে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা অশ্রুর ফোঁটা গড়িয়ে পড়ল।