অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হানিফ ওয়াহিদ -
বিয়ে

চাইনিজ রেস্টুরেন্ট।

শ্রাবণী আর রিফাত মুখোমুখি বসে আছে। তারা পরস্পরের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। দুই পরিবারে তাদের বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা চলছে।

আত্মীয় হলেও ইতিপূর্বে শ্রাবণী আর রিফাতের মধ্যে তেমন পরিচয় ছিল না। স্রেফ আত্মীয়দের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুই একবার দেখা হয়েছে।

রিফাতকে শ্রাবণী এখানে ডেকে এনেছে। উদ্দেশ্য হবু জামাইকে চেক করে নেওয়া। সে শুনেছে রিফাত নাকি কিছুটা সহজ-সরল টাইপ ছেলে। তবে চেহারা-ছবি মাশাল্লাহ। যেকোনো মেয়ের ক্রাশ খাওয়ার মতোই চেহারা।

চশমাপরা রিফাতকে অসাধারণ লাগছে।  সে ভালো করেই জানে, অতিরিক্ত সুন্দর চেহারার লোকজন মাকাল ফল হয়।

শ্রাবণী বাসা থেকে পণ করে এসেছে, তাকে রিজেক্ট করে দেবে। গাধা নিয়ে সংসার করার মানে না। শুধু দুই পরিবারকে খুশি করতেই সে এখানে এসেছে। এমনভাবে প্রশ্ন করতে হবে, যাতে তার দোষ খুঁজে পেয়ে রিজেক্ট করা যায়।

কফিতে চুমুক দিতে দিতে শ্রাবণী বলল— তা রিফাত সাহেব, আছেন-টাছেন কেমন?

রিফাত কফি খাওয়া  থামিয়ে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে রইল। যেন সে কথা বুঝতে পারে নাই।

শ্রাবণী শুনেছে, এই ভদ্রলোক কম কথার মানুষ। যে করেই হোক তার পেট থেকে কথা বের করে আনতেই হবে।  অনেক সময় কম কথার মানুষও ভয়াবহ ডেঞ্জারাস হয়। অনেক শয়তান আছে, এমন ভাব নিবে যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না। ভেতরে ভেতরে এরা শয়তানের জ্যাঠামশাই।

শ্রাবণী আবার বলল, কী রিফাত সাহেব, কিছু একটা বলেন।

যেন সে খুবই লজ্জা পেয়েছে এমন করে বলল, কী বলব?

আপনার চেহারা ছবি তো মারহাবা!  স্কুল কলেজ জীবনে আপনার বুকে কয়টা আসন ছিল, কোন কোন মেয়ে সেখানে নমিনেশন পাইছে, সেইটা আমাকে খোলাসা করে বলেন।

রিফাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, এমনভাবে কোনো হবু বউ কথা বলতে পারে এটা তার জানা ছিল না। শ্রাবণী হাসতে হাসতে বলল, তাকিয়ে থেকে লাভ নাই।  আমার বাড়ি ইউনাইটেড স্টেটস অব নোয়াখালী, পেট থেকে কথা বের করায়  ওস্তাদ।  আমার সাথে ভুজুংভাজুং করে লাভ নাই, সত্যি কথাটা বলেন।

সে চশমা ঠিক করতে করতে বলল, কী বলব?

এই পর্যন্ত কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করেছেন সেইটা বলেন।  এই পর্যন্ত কয়জনরে ছ্যাঁকা দিছেন। খাইছেন কয়টা?

আরে ধুর! কী যে বলেন!

শ্রাবণী রিফাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল— শোনেন মিয়া, প্রেম মহব্বত খারাপ কিছু না, সব বিষয়েই অভিজ্ঞতা থাকা ভালো। অভিজ্ঞতা না থাকলে বউকে ভালোবাসবেন কীভাবে? আমি কলেজ জীবনে কয়টা ছেলেকে নাচাইছি শুনবেন?  কম করেও হলেও দশটারে। আমি এমন ছেলে বিয়ে করব না, প্রেম ভালোবাসায় যার ইন্টারেস্ট নাই।

রিফাত অবাক হয়ে গেল, বলেন কী!

জি জনাব, এবার ঝেড়ে কাশুন তো।  আপনার কথা বলেন। আজকাল এসব তো পানিভাত।

না না, আমি মেয়েদের কাছে গোপন কথা বলি না, তাদের পেটে কথা থাকে না।

রিফাতের কথা শুনে  শ্রাবণী  উচ্চস্বরে হেসে উঠল, তারপর বলল, মেয়েদের পেটে কথা থাকে না, এটা একেবারেই মিথ্যা কথা ভাই সাহেব। কখনো শুনেছেন,  সাবেক প্রেমিকদের কথা মেয়েরা তার হাসবেন্ডকে বলে?

তবুও সে মিনমিনে গলায় বলল,  আসলে মেয়েরা আমাকে পছন্দ করত না তো, এজন্যই তো প্রেম করা হয় নাই।

শ্রাবণী হেসে ফেলল, কীভাবে বুঝলেন, মেয়েরা আপনাকে পছন্দ করত না?

সে লজ্জিত গলায় বলল,  স্কুলজীবনে  একটা মেয়েরে ভালো লাগছিল,  কিন্তু সে আমারে পাত্তা দেয় নাই।

কেন, কেন? পাত্তা দিল না কেন?

একদিন মেয়েটাকে রাস্তায় একা পেয়ে বললাম— আপু, আপনার সাথে একটু কথা ছিল।  এই কথা শুনেই মেয়েটা রেগে গেল!

বলেন কী!  কেন?

মেয়েটা রেগে গিয়ে বলল— মিয়া, গার্লফ্রেন্ডের বয়সী একটা মেয়েকে আপু ডাকতেছেন, ঘটনা কী? কোন  আক্কেলে আপু ডাকতেছেন? এই কথা শুনেই লজ্জায় পালিয়ে এসেছিলাম।

এতেই বুঝে গেছেন, মেয়েরা আপনাকে পছন্দ করে না?

রিফাত আবারও লজ্জিত মুখে বলল, আরও কারণ আছে।  আমি আসলে কলেজজীবনে সিগারেট খাইতাম তো সেজন্য মেয়েরা আমাকে পছন্দ করত না।

শ্রাবণী কৌতূহলী  হয়— কী করে বুঝলেন মেয়েরা আপনাকে পছন্দ করত না?

রিফাত একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল—  একবার আমাদের কলেজের সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে আমার ভাব হইছিল, কিন্তু সে সিগারেট পছন্দ করত না।

তারপর?

মেয়েটা ছিল বহু ছেলের ক্রাশ। বড়লোক মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। একদিন সেই মেয়েটা আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল— রিফাত ভাইয়া, প্রয়োজনে আমাকে খাও, তবুও সিগারেট খাইয়ো না।

বাহ! তারপর আপনি কী করলেন?  মেয়েটাকে খাওয়া চালিয়ে গেলেন!

রিফাত শরম পাওয়া গলায় বলল, না, সিগারেট খাওয়া চালিয়ে গেলাম। মেয়েটাকে ছেড়ে দিলাম।

এরপরে আর কিছু করেন নাই?

জি না, অবশ্য একবার পাশের বাসার এক সুন্দরী ভাবি আমার প্রেমে পড়েছিল। অবশ্য আমিও একটু একটু… ওটা ছিল প্রথম প্রেম।

বলেন কী!  একেবারে বিবাহিত মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলেন? তারপর?

তখন আমি সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হইছি। সে সময় পাশের বাড়ির এক ভাই বিয়ে করল। মেয়েটা ছিল সুন্দরী।  সে ভাইকে তেমন পছন্দ করত না, পরিবারের চাপে বিয়ে করেছিল।

তারপর কী হলো?

একদিন ভাবি আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল, রিফাত, তোমার ভাই আজকে শহরে যাবে, ফিরতে অনেক রাত হবে। তুমি দশটার পর চুপি চুপি এসো, কাজ আছে।

ও মাই গড! তারপর আপনি কী করলেন?

আমি রাত দশটার পর চুপিচুপি ভাবির ঘরে গেলাম, দেখি ভাবি জেগে আছে।  আমাকে দেখেই ফিসফিস করে বলল— রিফাত, তুমি কি চুপিচুপি কিছু করতে চাও?

শ্রাবণী চোখ বড় বড় করে বলল, তারপর?

আমি বললাম— ভাবি,  চুপিচুপি কীভাবে করব, আপনি তো জেগে আছেন!  আপনি ঘুমিয়ে যান, পরে এসে  চুপিচুপি কিছু করে যাব। এই কথা বলেই চলে এলাম।

শ্রাবণী হতাশ গলায় বলল,  চলে এলেন?

রিফাত ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ভাবি তো জেগে ছিলেন,  তিনি চাইছিলেন চুপিচুপি!

আপনার এই গল্প আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?

জি। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না।

ভাই রে! বিশ্বাস জিনিসটা আমার সেদিনই উঠে গেছে, স্কুলজীবনে যেদিন বান্ধবীর কাছ থেকে নকল করেও পরীক্ষায় ডাব্বা মেরেছিলাম। তবে আপনাকে আমি বিশ্বাস করি।

রিফাত চশমা ঠিক করতে করতে বলল, ধন্যবাদ।

আচ্ছা, রিফাত সাহেব, এরপর আর কারও প্রেমে পড়েন নাই?  কারও জন্য বুক ধকধক করে না?

রিফাত শ্রাবণীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার বুক ধকধক করে না তো, তবে মাঝে-মধ্যে ব্যথা করে। আমার গ্যাস্ট্রিক আছে তো।

শ্রাবণী আবারও ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।  মনে মনে ডিসিশন নিল, এই গাধাটাকেই সে বিয়ে করবে। এই লোক দশ বছর আগে বোকা ছিল, এখনো তাই আছে। হয়তো অভিজ্ঞতা বেড়ে এখন সিনিয়র বোকা হয়েছে।

এই খিচুড়ির মতো পাবলিককে পোলাওয়ের মতো ভাও দিয়ে বিরানি বানানো কঠিন কিছু হবে না।

জাজিরা, কোন্ডা, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা থেকে

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

বোধনের আগেই নিরঞ্জন

Read Next

হিন্দি চলচ্চিত্র ও অবিবাহিতা মায়েদের মাতৃত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *