অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নুসরাত সুলতানা -
মসলা চা

বিরক্ত হয়ে হাতঘড়ির দিকে তাকায় রাফিন। নটা চল্লিশ বাজে। নটায় বের হওয়ার কথা লুনার। নটা পনেরো মিনিটে রাফিন ফোন দিলে এসএমএস দিয়েছিল— টু মিনিট কিউট পাই! অথচ তারপর পঁচিশ মিনিট উধাও। কোনো খবর নেই। বিরক্তি ভুলতে গাড়িতে ছেড়ে দিয়েছে বব ডিলানের গান—

How many roads must a man walk down

Before you call him a man?

How many seas must a white dove sail

Before she sleeps in the sand?

Yes, and how many times must the cannonballs fly

Before they’re forever banned?

কিন্তু মেজাজ খিঁচড়ে যাচ্ছে আরও বেশি। আংটি বদলের পর বাগদত্তার সাথে সময় কাটাবে বলে রাফিন ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। হ্যারিয়ার গাড়ি নিজেই চালিয়ে হবু বউকে নিয়ে যাবে সাভার গোলাপ গ্রামে। তার বন্ধু নেহালের কাছে শুনেছে গোলাপ গ্রাম নাকি অদ্ভুত সুন্দর। প্রায় একটা গ্রামজুড়ে হরেক রঙের গোলাপের মহাসমাবেশ ঘটেছে সেখানে।

০২.

রাফিনের বাবা আর লুনার বাবা সেই কলেজ জীবন থেকে বন্ধু। লুনার দাদু ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। ছেলেকে পড়িয়েছেন গণিত। বারবার তিনি বলেছেন— দেশের ছেলেপেলেকে ভালো করে গণিত শিখাবা। কারণ গণিত যে ভালো পারে, সে ইতিহাস, সাহিত্য সব ভালো বোঝে। আর রাফিনের দাদু ছিলেন গুদাম ব্যবসায়ী। তিনি ছেলেকে পড়ালেন হিসাববিজ্ঞান। রাফিনের বাবা পরে সিএ পড়েন। কিছুদিন ব্যাংকে চাকরি করে বাবার পুঁজি ও ব্যাংক লোন নিয়ে শুরু করেন ব্যাবসা। এখন তিনি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক। যদিও অনেকে বলে— দেশের হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন আ. রাজ্জাক সাহেব। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়। ক্ষমতাসীন দলের বেশ ভালো পজিশনে আছেন তিনি। এর আগে ছিলেন এরশাদের দলে। যাক সে অন্য কথা। নিজের ভাইকেও বানিয়ে রেখেছেন ম্যানেজার নামের কর্মচারী। শ্বশুরের কাছ থেকে নিয়েছিলেন বেশকিছু পুঁজি তাই বউকে দিয়েছেন ব্যবসার দশ ভাগ অংশীদারিত্ব। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু লালনকে তিনি একদম ভোলেননি। তাই লালনের বড় মেয়ে লুনাকে তিনি পুত্রবধূ করে ঘরের লক্ষ্মী বানাতে চান। লুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করছে। চমৎকার রবীন্দ্র সঙ্গীত গায় মেয়েটি। এছাড়াও কথাসাহিত্যচর্চার ঝোঁক আছে লুনার। লিখেছে বেশকিছু গল্প।

০৩.

রাফিন ভেবেছিল একটাও কথা বলবে না লুনার সাথে। কিন্তু লুনাকে দেখেই ভেতরের বরফ গলতে শুরু করে। নিজের মনে মনে বলতে থাকে— মেয়েটার চোখ এত সুন্দর কেন বানালে ঈশ্বর! আমি তো ওর চোখের ভেতরে ডুবে যাব। কেমন করে উঠব আমি!

রাফিনের গাম্ভীর্য দেখে লুনা গান ধরে—

অলি বারবার ফিরে যায়, অলি বারবার ফিরে আসে—

তবে তো ফুল বিকাশে॥

কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না, মরে লাজে মরে ত্রাসে…।

রাফিন এবার বলে ওঠে— এ কী তোমার ঐ বুড়া প্রেমিক ঠাকুরের গান? অই বুড়া তো মনে হচ্ছে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে! আমি কি কোনোদিনই তাঁকে টপকাতে পারব না! লুনা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে— দিঘি আর সমুদ্রের বিরোধ কেন? সমুদ্র বহুদূরে, সেখানে মানুষ ডুব দেয় কালেভদ্রে। সব পঙ্কিলতা বিসর্জন করে আবার ঘরে ফেরে। কিন্তু দিঘি প্রতিদিনের স্নানের, পান করার। রাফিন বলে— অত জটিল কথা আমাকে বল না

সুইট ক্যাট!

লুনা রাফিনের চুলে নিবিড় আঙুল চালিয়ে বলে— বেশ, বলব না। তুমি এমন সহজ থেকো সবসময়। একটা রেস্তোরাঁয় নেমে দুজনে সকালের নাশতা খেতে নেয় তখন সাড়ে দশটা বাজে। লোকজন সবাই দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলছে। এক মুরব্বি চাচা বলছে— শেখ সাইবে দ্যাশ আনল মাইনসে সুখে থাহনের লাইগা। সুখে কয়জন আছে দ্যাশে? ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ আর পুলিশ আর মেজিস্টেট। এই কয়জনের লইগাই মনে কয় দ্যাশটা স্বাধীন অওনের দরকার ছেল।

রাফিন বলে— এই দেশের মানুষগুলো, এই চাষা-ভুষাগুলো এমন কেন?

লুনা বলে— রাফিন, তুমি কোটিপতির ছেলে। এদের কষ্ট তোমাদের অব্ধি পৌঁছাবে না কখনো। যেমন পৌঁছায় না আমলা ও রাজনীতিবিদদের কাছে।

রাফিন একটু বিরক্ত হয়ে বলে— তুমি অই ছোটলোকদের কথা ভেবো না। লুনা একটু অবাক হয়ে তাকায় রাফিনের দিকে। তারপর মুহূর্তে চোখ সরিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। দেখতে পায় তিনটা ভাঁটফুলের গাছ। লুনার চোখে জল চিকচিক করে আর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে হাসি।

০৪. 

লুনা আর রাফিন একই ক্লাসে পড়েছে নার্সারি, কেজি ও ক্লাস ওয়ান। তারপর লুনা চলে যায় গার্লস স্কুলে বাংলা ভার্সনে আর রাফিন চলে যায় ইংলিশ মিডিয়ামে। কিন্তু বিদেশে গ্রাজুয়েশন করতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বছরে চার-পাঁচবার দেখা হয়েছে। বিশেষ করে রাফিনের জন্মদিন এবং ঈদ পার্বণে দেখা হয়েছে সবসময়। কিন্তু এবার চার-পাঁচ বছর পর যখন রাফিন লুনাকে দেখেছে একেবারে অন্যরকম পরিণত নারী লেগেছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, বড় চোখ, লম্বা চুল আর ছোট নাকের লুনার ভেতরে কী যেন আছে রাফিন বুঝতে পারে না। কিন্তু সেই কী যেন-টা রাফিনকে অনেক টানে। লুনার পাশে বসে থাকলে মনে হয় সে সমুদ্র দেখছে অথবা পাহাড় দেখছে। আবার কখনো মনে হয় সে তার আকাঙ্ক্ষিত চিত্রকর্মটি আঁকতে শুরু করেছে।

এ যাবৎ রাফিনের জীবনে এসেছে আরও দুইজন নারী। একজন ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম মেয়ে, আরেকজন আইরিশ নারী। দুজনের সাথেই তার বেড শেয়ারিং হয়েছে। কিন্তু রাফিনের কেবলই মনে হয় তার মুক্তি আটকে আছে লুনার শরীরে। কারণ লুনাকে সে আজ অব্দি একটা চুমুও খেতে পারেনি। লুনার জীবনে সে কোনো অপূর্ণতা রাখবে না। কিন্তু তাই বলে সে এক নারীতে আটকে থাকবে এমনও নয়। লুনা নিশ্চয়ই জানে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পানীয়, এবং ভিন্ন ভিন্ন রমণীকে চেখে দেখার স্বভাব। তাছাড়া লুনার বাবারও ঢাকায় বাড়ি, এবং বারো-চৌদ্দ লাখ টাকার গাড়ি থাকলেও লুনা বড়জোর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। কোটিপতির স্ত্রী হওয়া তো তার সাত জন্মের ভাগ্য। যখন যে দেশে চাইবে যাবে। তাছাড়া রাফিন ইতোমধ্যে বাবাকে বলেছে— বিয়ের পর লুনাও যেন তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ বড় পদে করার সুযোগ পায়।

০৫. 

গাড়ি চালিয়ে রাফিন একঘণ্টার ভেতর পৌঁছে যায় সাভার বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গ্রামে। পুরোটা গ্রামটাই যেন গোলাপের বাগান। উঁচু জমিগুলো ছেয়ে আছে মিরান্ডি জাতের গোলাপে। লাল, হলুদ, সাদা— কত বর্ণের যে গোলাপ তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যতদূর চোখ যায় গোলাপে ঢাকা চারপাশ লুনাকে মুগ্ধ করে। সকালের শিশিরভেজা গোলাপে নরম আলোর ঝিকিমিকি লুনাকে এক অপার্থিব অনুভূতি এনে দেয়। গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। ফুটে আছে টকটকে লাল গোলাপ। গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গোলাপের সৌরভ।

লুনার শুধু মনে হতে থাকে এ যেন অন্য পৃথিবী। যে পৃথিবীর দেখা কেবল স্বপ্নেই মেলে। লুনা রাফিনকে অনেকবার ধন্যবাদ দেয়। রাফিন বলে, ধুউর! এত কিছুই না। আমি তোমাকে পুরো পৃথিবী দেখাব, নায়াগ্রা ফলস, আইফেল টাওয়ার, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি সব দেখাব।

লুনা বলে— আমার দেশ সবচেয়ে সুন্দর।

রাফিন লুনার দিকে তাকিয়ে হাসে আর বলে— বোকা মিডলক্লাস সেন্টিমেন্ট!

সাহদুল্লাহপুর পুরো গ্রামটাই নানা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ঘেরা। এটাকে গোলাপ গ্রাম বলা হলেও এখানে গোলাপ ছাড়াও অনেক ফুল আছে, যেমন— জারভারা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা ইত্যাদি। রাফিন লুনাকে একশ’ বিভিন্ন রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস ফুল কিনে দেয়। লুনা এত খুশি হয়ে যায় যে, ইংগেইজমেন্টের হীরের আংটিও তাকে এত খুশি করতে পারেনি। লুনা রাফিনকে বলে— চল না কোথাও বসে টংঘরে চা খাই।

রাফিন বলে, বেশ চল।

একজন পথচারীকে রাফিন জিজ্ঞেস করে— চা কোথায় পাওয়া যাবে এখানে?

পথচারী বলেন, এই তো কিছুদূর গিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছতলায় মধু মেয়ার বিখ্যাত মসলা চা আছে।

লুনা ও রাফিন দুজন একসাথে বলে ওঠে— মসলা চা!

০৬. 

সবুজ চিরল পাতা আর লাল ফুলে ভরে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছটি। তারই নীচে মধু মেয়ার মসলা চা দোকান। পাওয়া যায় গরুর খাঁটি দুধের মসলা চা এবং রঙ চাও।

প্রায় ছয় চার-পাঁচ রকমের মসলা দিয়ে বানানো এই চায়ের সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে বেশ। লুনা ও রাফিন গিয়ে বসে চায়ের দোকানে। লুনা বলে— মামা, একটা দুধ-মসলা চা দিন তো।

আর রাফিন বলে— আমাকে একটা রঙ চা দিয়েন।

মধু মিয়া বলেন— আপা, এই চায়ের দোকানে যারা আয়, সবাই হয় আমারে ভাই কইয়া ডাকে নাইলে মধু কয়। কেও মামা কয় না। আপনিও মধু ভাই কইলে ভালো হয় গো আপা।

লুনা বলে, বেশ তাই হবে মধু ভাই।

মধু বলে, আমার নাম সাগর হোসেন মধু। আপনে সাগর ভাইও ডাকতে পারেন। এই কথা বলেই মধু দু’কাপ চা এগিয়ে দেয় লুনা ও রাফিনের দিকে।

চা খেতে খেতে লুনা এই মসলা চায়ের রেসিপি নিচ্ছে। এমন সময় হঠাৎ রাফিন চেঁচিয়ে ওঠে।

বলে— যত্তসব ছোট লোকের আখড়া। দিল আমার বিশ হাজার টাকা দামের প্যান্টটা নষ্ট করে।

রাফিন চড় মারার জন্য হাত উঁচু করে। মধু মিয়া বলে— মিয়াভাই, হাতটা অই পর্যন্ত রাখেন। আর নামাইয়েন না। আপনার বিশ হাজার টাকার প্যান্টের জন্য বাপের বয়সী একজন লোকের গায়ে হাত তোলতে নেছেন! এই আপনের শিক্ষা?

রাফিন চিৎকার করে বলে— অই ব্যাটা চা-ওয়ালা! তোর মতো ফকির এর মর্ম কী বুঝবে! জীবনে চোখে দেখছছ এইসব!

মধু বলে— ভাইজান, আমি লালন ফকিরকে চিনি তাই মানুষ চিনি, আত্মার খোঁজ করি, টাকা চিনতে চাই না।

লুনা রাফিনকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

পুরো গাড়িতে লুনা মুড অফ থাকে। আর রাফিন বলে— অইসব ছোট লোকের টঙঘরে তোমার চা খেতে হয় কেন? চা খাবা আমাকে বলবা, আমি ফাইভ স্টার হোটেলে নিয়ে যাব।

লুনার ভেতরটা কষ্টে মনে হয় ফেটে যাবে। লুনা ভাবে, এইসব ঐশ্বর্যের উত্তাপে আমি কি সারাজীবন কেবলই পুড়ে যাব! আমি কি হারিয়ে ফেলব মাটির স্পর্শ আর উষ্ণতা!

০৭.

পুত্রের জন্মের আট মাসের মাথায় মারা গিয়েছিল মায়া বিবি। তারপর থেকে ছাগলের দুধ বোতলে ভরে খাইয়ে বড় করেছে আবুল বাশার হাওলাদার। বাশার হাওলাদার ছিলেন বিরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি। ইংরেজি স্যারদের দেখে দেখে ভাবতেন— আহ! আমার পোলা মধুরে এমন ইংরেজি মাস্টার সাইব বানামু। ফটর ফটর ইংরেজি কইব পোলায় আমার। স্বল্প আয়ে ছেলেকে দিয়েছিলেন গৃহশিক্ষক। খুব ভালো রেজাল্ট নিয়েই মধু এসএসসি উত্তীর্ণ হয়। ততদিনে মধুর আকাঙ্ক্ষা জন্মায় বাংলা সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করে বাংলার শিক্ষক হবে আর লিখবে কবিতা।

অষ্টম শ্রেণি থেকেই মধুর সাহিত্যের ঝোঁক সৃষ্টি হয়। পড়তে থাকে সুকান্ত, নজরুল, রফিক আজাদ, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ আর তার সাথে লালন ও রবীন্দ্রনাথের গান শুনত প্রচুর। বাংলা সাহিত্য পড়ার ইচ্ছে থাকলেও মধু বাবাকে কখনো বলেনি। কারণ বাবা যদি কষ্ট পায়! ভেবেছে— পরে যেকোনো কিছু বলে বাবাকে ম্যানেজ করে নেবে। কিন্তু বিধি বাম, মধু যখন কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে তখন রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায় বাশার হাওলাদার। তারপর এই অকূল পাথারে মধুর পরম আত্মীয় হয়ে ওঠে বাশারের পোষা কুকুর, গরুর বাছুরটি। কারণ গরুটি বিক্রি করে বাশার চায়ের দোকান দিয়ে বসে। আর আছে নিজের বই পড়ার অভ্যাস। শত প্রতিকূলতায়ও বাশার প্রতিমাসে একটা করে বই কেনে। হোক কবিতা, গল্প, উপন্যাস, জীবনী কিংবা ইতিহাসগ্রন্থ। আছে লেখালেখি করার অভ্যাস। একটা ডায়েরিতে লেখে মধু, ফেসবুকেও লেখে।

০৮.

সেদিন রাতে বাসায় ফিরে লুনা যখন ঘুমাতে যায়— সারাদিনের দৃশ্যচিত্রগুলো একে একে ভেসে উঠছিল মানসপটে। যখন ঘটনা ঘটেছিল তখন তেমন খেয়াল না করলেও লুনা স্মৃতিপটে দেখতে পায় মধুর চোখের ঝলক, শুনতে পায় সুদৃঢ় কণ্ঠস্বর। তখন লুনা আবারও অবাক হয়— একজন চা-দোকানদারের মুখে লালন! লুনার তীব্র কৌতূহল জমে।

পরেরদিন বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে সবচেয়ে কাছের বন্ধু রিনির সাথে পুরো ঘটনা শেয়ার করে লুনা। রিনি হেসে উড়িয়ে দেয়। বলে— যাহ, ওসব কারো কাছে একটু-আধটু শুনে বলছে অই চা-ওয়ালা। তুই আবার যার-তার মধ্যে ভগবান খোঁজা শুরু করিস না। তোর হ্যান্ডসাম, কোটিপতি ভগবানকে নিয়েই সুখে থাক।

লুনা নিজের উপলব্ধি ঠিক বোঝাতে পারে না রিনিকে। কিন্তু ধীরে ধীরে লুনার কৌতূহল আরও বাড়তেই থাকে। মধুকে তার শুধু দুই টাকার চা বিক্রেতা মনে হয় না। কারণ মধুর ভেতরে সে একটা আগ্নেয়গিরি দেখেছে।

রিনিকে লুনা বলে— চল, একদিন গোলাপ গ্রাম দেখিয়ে নিয়ে আসি তোকে।

রিনি বলে— গোলাপ গ্রাম যাবি নাকি তোর মধুদার কাছে যাবি?

লুনা বলে মজা করে বলে— রথ দেখাও হলো, কলা বেচাও হলো।

রিনি বলে, জারিফকে সাথে নিতে চাই।

লুনা হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জ্ঞাপন করে।

পরের দিন তিনজন সকাল আটটার বাসে চেপে বসে গোলাপ গ্রামের উদ্দেশে। সকাল দশটার ভেতর পৌঁছে যায় গোলাপ গ্রামে। সরু রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য গোলাপ গাছ। রিনি দৌড়ে দৌড়ে দেখতে থাকে গোলাপ বাগান।

বিভিন্ন রঙের গোলাপ। প্রচুর ছবি তোলে ওরা। জারিফ রিনিকে দুইশো গোলাপ কিনে দেয়।

লুনা বলে— চল মসলা চা খাই।

রিনি হি হি করে হেসে বলে— হ চল, তোর আসল মিশন।

সবাই মিলে হাঁটে চায়ের দোকানের দিকে।

লুনাকে দেখেই মধু মিয়া বলে— আপা আপনে!

হাসি দিয়ে লুনা বলে— ক্যান, আসতে মানা নাকি মধু ভাই?

চা-ওয়ালা বলে— মানা ক্যান হইব আপা? আপনাদের মতো মানুষ আইলে তো আমার দোকান ধন্য। সবাই দুধ চা আর বেলা বিস্কুট খায়। হঠাৎ করেই রিনি বলে— দেখ লুনা, উনার দোকানে সুকান্তের কবিতার বই, আবার রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ

মধু একটু হেসে লজ্জাবনত হয়ে বলে— জি আপা, জীবনের লক্ষ্য ছিল বাংলা সাহিত্য পড়ে, বাংলার শিক্ষক অওনের। বাবায় চাইত ইংরেজির মাস্টার সাইব অই। কিন্তু ভাগ্যে অই সব নাই। তাই নিজে নিজে শেখার চেষ্টা করি। আর মনের আনন্দে পড়ি।

সেদিন লুনা মধুর অন্তর্গত আলোর সন্ধান কিছুটা পায়। লুনা সেদিনই মধুর ফোন নাম্বার নিয়ে আসে। নিজের নাম্বার ও দিয়ে আসে মধুকে।

০৯.

দুই-তিনদিন পরপর কথা হয় মধু আর লুনার। কথায় কথায় লুনা জানতে পারে— মধু একটা পাঠাগার গড়ে তুলতে চায় এলাকায়। সেজন্য প্রতি মাসে একটা, দুইটা করে বই কেনে সাধ্যমতো। লুনা জিজ্ঞেস করে পাঠাগারের নাম কী দেবে, মধু?

ফোনের ওইপাশ থেকে উত্তর আসে— মিতালি পাঠাগার।

লুনা জিজ্ঞেস করে— মিতালি কে, মধু?

মধু বলে— আমার বুকের বা পাশের নদীতে সবসময় ফুটে থাকা পদ্ম, লুনা আপা।

একথা শোনার সাথে সাথে লুনার চোখ থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ে কয়েক ফোঁটা নোনাজল। লুনার মনে হয় এমন করে কোনো আলোকিত পুরুষ ভালো না বাসলে নারীজন্মের কী সার্থকতা আছে! হঠাৎ একদিন লুনা বলে— মধু, আমরা বন্ধু হতে পারি না?

মধু বলে— লুনা আপা জোর করে, ভান করে কেউ বন্ধু হতে পারে না। বন্ধু হয়ে যেতে হয়। মানুষের বন্ধু কুকুরও হতে পারে কিন্তু কোনো অমানুষ পারে না। আর আপনি তো চমৎকার মানুষ।

লুনা আবারও চমকে ওঠে এবং বুঝতে পারে— মধু রাফিনকে ইঙ্গিত করেছে।

একরাতে লুনা মধুর সাথে প্রায় দুই ঘণ্টা মোবাইলে গল্প করে গভীর রাত অব্ধি। সেই রাতে লুনা জানতে চায়— মিতালি কে? মধু প্রথমে এভয়েড করে যেতে চায়। পরে লুনা চেপে ধরে। বলে যে না বললে আর কোনোদিন মধুকে ফোন করবে না। পরে মধু বলে— এই একমাত্র নারীকেই সে ভালোবেসেছিল জীবনে। আর কাউকে সে কোনোদিন এমন করে ভালো বাসতে পারবে না।

সেই সপ্তম শ্রেণি থেকে মিতালিকে সে ভালোবাসে। মিতালিও বাসত। তার বাবা যে স্কুলের দপ্তরি, মিতালির বাবা সেই স্কুলের অংক শিক্ষক। তারপরও মিতালি কথা দিয়েছিল যদি পড়ালেখা করে আমি স্কুল বা কলেজের মাস্টার মশাই অইতে পারি, মিতালি তার বাবারে বুঝাইয়া বলবে। যেভাবে হউক সে আমার লগে সংসার করবে। কিন্তু বাবা মইরা যাবার পর তো আর আমার লেখাপড়া অইল না। চার বচ্ছর আগে মিতালির বিয়া অইছে। খুব সুন্দর ফুটফুটে একটা মাইয়া অইছে তার। অর স্বামী সরকারি কলেজে ইংরেজি পড়ায়। যেই সময়ই আয় আমারে কয়— মধু একটা বিয়া করো। সংসারী অও। আমি হাসি আর কই— ভোলা (কুকুর) আর মিলন (বাছুর)রে লইয়াই আমার সুখের সংসার। আর কেওরে আমার লাগব না। ঠিক সেদিন ও লুনার চোখে জল এসেছিল বুকভরা অভিমানে। পরমুহূর্তেই লুনার মনে হয়— কেন এই অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে? এর উৎস কোথায়? সেই রাতে লুনা মধুকে বলে— তোমার সংসারে আমাকে একদিন দাওয়াত দেবে না মধু? মধু বলে, আসেন না লুনা আপা। আমি নিজ আতে রাইন্দা খাওয়ামু।

লুনা বলে, একটা শর্ত আছে।

মধু জিজ্ঞেস করে— কী শর্ত?

লুনা বলে— আমাকে বন্ধু ভাবতে হবে আর লুনা তুমি করে বলতে হবে।

মধু বলে— আচ্ছা, তাই হইব। কবে আসপা?

১০.

একদিন খুব সকালে উঠে লাল পাড়ের গাঢ় ছাই রঙের শাড়ি, লাল লিপস্টিক, লাল টিপ আর হাতভর্তি লাল চুড়ি পরে সকাল দশটায় সাভারের বাসে চেপে বসে লুনা। সাভার পৌঁছাতে বেলা সাড়ে বারোটা বেজে যায়। লুনা সরাসরি মধুর চায়ের দোকানে চলে যায়। মধু লুনাকে দেখে বলে— দেবী আপনে আগে কইবেন না?

লুনা হেসে বলে— সারপ্রাইজ।

মধু গিয়ে লুনার জন্য একশ’ গোলাপ কিনে নিয়ে আসে। লুনা হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলে।

মধু দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যায়। গিয়ে দেখে ছনের চালা করা মাটির ঘর মধুর। কিন্তু মেঝে ইট সিমেন্ট দিয়ে পাকা করা। আছে মাটির চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডার। লুনা বলে— আমার জন্য মাটির চুলায় রান্না করবে মধু।

প্রতিউত্তর আসে— জো হুকুম দেবী।

লুনা গিয়ে বুক শেলফ ঘাটাঘাটি করে। হঠাৎ দেখতে পায় একটা ডায়েরি। উল্টেপাল্টে দেখে লুনা নিশ্চিত হয়— ওটা মধুর কবিতা লেখার ডায়েরি।

রান্না শেষ করে মধু পাটি বিছিয়ে লুনাকে খেতে ডাকে।

থালা-বাটি সবই মাটির। লুনা দেখে ঘণ্টা দুয়ের ভেতর মধু শুঁটকি দিয়ে বেগুন, ডিম ভুনা, ডাল, আবার চিংড়ি দিয়ে ধুন্দল রান্না করেছে। কোনোটাতেই মসলার আধিক্য নেই। পেটভরে খেয়ে লুনা বলে, আমি একটু ঘুমাই, মধু। তোমার বিছানা দেখাও।

এর ভেতর ভোলা ঘেউঘেউ করে ওঠে। মধু বলে, এ কোন অসভ্যতা ভোলা? মেহমান আইছে, দেখস না?

আবার মিলন হাম্বা করে ডাক দিয়ে ওঠে।

মধু বলে, আইতাছি বাবা! তরে পানি দেওন অয় নাই।

ঘণ্টাখানেক ঘুম দিয়ে উঠে লুনা বলে— মধু, চা খাওয়াবে না?

মধু বলে, হ খাওয়ামু। ইকটু সময় দেও, দেবী।

চা খেয়ে বের হওয়ার আগে বলে— মধু, আমি যদি কিছু চাই দেবে?

মধু বলে— আমার থাকলে অবশ্যই দিমু।

লুনা বলে— তোমার কবিতার ডায়েরিটা আমাকে দাও। পড়ে ফেরত দেব।

মধু খুব লজ্জা পেয়ে বলে— সব্বনাশ! অইটা দেইখা ফালাইছ! আরে, এগুলি কোনো লেখা! তুমি কত শিক্ষিত মানুষ! অবশ্য আমার প্রফেসর বন্ধু বলছে ভালো লেখা অইছে। সে বলছে বই প্রকাশ করণ যায় কিনা দ্যাকবে। ঠিক আছে নেও। ফোন নাম্বার তো আছেই। তুমি পড়া শ্যাষ কইরা ফেরত দিয়া দেবা।

সেদিন ঢাকা ফেরার আগে মধু লুনাকে তুরাগ নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। দুজনে একটু নির্জনে অনেকক্ষণ বসে থাকে। মধু হঠাৎ বলে— দেবী, একটা কথা কই?

লুনা তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। মধু বলে— তুমি যা পারবে না, তা করতে যাইও না দেবী। জীবনরে খুব তুচ্ছ ভাইবো না, আর টাকা-পয়সারে অনেক বেশিকিছু ভাইবো না। আমার ভয় করে তুমি না নিজেরে মাইরা ফালাইয়া এক ফানুস অইয়া যাও!

হঠাৎই লুনা মধুর হাত ধরে বলে— আমাকে জীবনের দীক্ষা দেবে? শেখাবে যাপনের মন্ত্র? আমাকে তোমার করে নেবে?

মধু বলে— সম্রাট, সাম্রাজ্য সব ফেলে চা-ওয়ালার কাছে কী পাইলা?

লুনা বলে, যা কোথাও পাইনি। মাটির উষ্ণতা আর প্রকৃতির বিশালতা, জীবনের মূলমন্ত্র— সৌন্দর্য।

মধু বলে— পাগলী!

ধরা গলায় প্রতি উত্তর আসে— হতে পারি তোমাকে পেলে, মধু।

১১.

জিন্স-শার্ট পরা একেবারে ছেড়ে দিয়েছে লুনা। বরং তাঁতের চিকন পাড়ের শাড়ি, মাটির গহনা আর কাচের চুড়ি পরে আজকাল। চোখ লেপ্টে কাজল পরে। কপালে টিপ পরে। প্রায় সময়ই লিপস্টিক পরে না। বন্ধুরা বলে— কী রে, তুই তো কোনো কবির বাগদত্তা না, একজন কোটিপতির বাগদত্তা।

লুনা বলে, আমি নিজেই যখন জীবনের সন্ধান পেয়েছি, তখন নিজের পরিচয়েই সর্বেসর্বা। কার বাগদত্তা সেটা বড় প্রশ্ন না।

রাফিন একাউন্টিংয়ে মাস্টার্স ও ফাইনান্সে পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করেই দেশে এসেছে। পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরবে তাই। বিয়ের আর দেড় মাস বাকি।

এর মধ্যে লুনাকে নিয়ে মুভি দেখেছে, রেঁস্তোরায় খেতে গিয়েছে কিন্তু লুনা যেন কেমন এবসেন্ট মাইন্ড। রাফিন জিজ্ঞেস করেছে— লুনা, এনিথিং রঙ?

লুনা শুধু শুকনো হাসি হেসেছে। সেদিন লুনার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা করতে গিয়ে রাফিন অবাক হয়— তুমি এগুলো কী পরেছ? তুমি শাড়ি পরবে আমাকে বলবে আমি তোমাকে আধা লাখ টাকার জামদানি শাড়ি কিনে দেব।

লুনা বলেছে— রাফিন, বিত্তের মুখোশে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই না। আমাকে জীবন যাপন করতে দাও। আমি তোমার সভ্যতার কলের পুতুল হতে পারব না। তোমার কিছু ভাবার হলে এখনো ভাবতে পারো।

রাফিন বলে— আচ্ছা, বাদ দাও। এসব নিয়ে পরে কথা হবে। আমি পনেরোদিনের জন্য আমেরিকায় যাচ্ছি। তোমাকে যেন ফোন দিলে পাই। সাবধানে থেকো।

১২.

মধুর কবিতা যত পড়ে ততই ডুবে যেতে থাকে লুনা। এক কবিতায় লিখেছে—

মায়ের গায়ে গরম ভাতের গন্ধ থাকে

আমি কখনো মাকে দেখিনি

গরম ভাতের গন্ধে আমি মা’কে খুঁজি।

আরেক কবিতায় লিখেছে—

তুমি আমার বারোমাসি সোনালি দুঃখ

আমার আরাধ্য অন্ধকার।

কবিতা নিয়ে কথা বলার জন্য ফোন দেয় লুনা ফোন ধরেই মধু বলে— জ্বর, দেবী।

লুনা বলে, আমি আসছি।

মধু বলে, পাগলামি কইরো না দেবী।

লুনা বাসায় বলে যায়, বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছে থিসিসের কাজে। রাতে ওখানে থাকবে।

মধুর বাড়ি গিয়ে দেখে— মধু ভোলাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আর মিলন মধুর গাল, ঘাড়, গলা সব চেটে দিচ্ছে। লুনা স্যুপ নিয়ে গিয়েছিল। মাটির সানকিতে করে মধুকে খাইয়ে দেয়। বাবা যেমন ছোট মেয়ের দুহাতে গাল ধরে, তেমনি ধরে বলে— তুমি আমাকে ভালোবাসো কেন? কী পাইলা আমার কাছে?

লুনা বলে— অনাড়ম্বর, সুন্দর জীবন। তোমার জীবনে দানবিকতা, ইতরতা নেই।

সে রাতে মধুর বুকে লুনা নিশ্চিত সুখের গভীর ঘুম ঘুমিয়েছে।

১৩.

পরদিন বিকেল নাগাদ লুনা বাসায় ফেরে। সন্ধ্যায় রাফিনের ফোন আসে। রাফিন সরাসরি জিজ্ঞেস করে—

লুনা, তুমি কই ছিলা? তোমার ফোন বন্ধ ছিল কেন?

লুনা বলে— বান্ধবীর বাসায় ছিলাম। চার্জার নিয়ে যাইনি।

রাফিন বলে— তোমার বান্ধবীর বাসা কী সাভার বিরুলিয়ায়? তুমি ঠিক হয়ে যাও। এসেই আমাদের বিয়ে। কার্ড ছাপতে দেওয়া শেষ।

লুনার সাথে কথা শেষ করে রাফিন তার বাবাকে ফোন দেয়। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে আ. রাজ্জাক জিজ্ঞেস করেন— কী সাভার বিরুলিয়ায়? চায়ের দোকান? তুই কী কস এসব! বিয়া ভাইঙা দেই? দ্যাশে সুন্দরী মাইয়ার অভাব!

রাফিন বলে, না। ওকে আমার মতো হতে হবে। হতেই হবে। তোমাকে যা বলছি ড্যাড তাই করো।

১৪.

চার-পাঁচদিন পর লুনা ফোন দেয় মধুকে। কিন্তু ফোন শুধু বলে— এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। লুনা ভাবে আগামীকাল গিয়ে বিয়ের কার্ড আর কবিতার ডায়েরি দিয়ে আসবে।

লুনা পরদিন চলে যায় মধুর বাড়িতে। কিন্তু হায়! কোথায় মধুর এত সুন্দর বাড়ি! কোথায় ভোলা, কোথায় মিলন!

লুনা দ্রুত যায় চায়ের দোকানে। গিয়ে দেখে চায়ের দোকানও উধাও। সেই মধুর সহযোগী ছেলেটা ডাক দিত— এই মসলা, চা। গরম গরম মসলা চা। রঙ চা৷ দুধ চা! হঠাৎ ছেলেটাকে দেখে একপাশে মলিন মুখে বসে আছে।

লুনা জিজ্ঞেস করে, মধু কই?

ছেলেটা বলে, পরশু দিন রাইতের পর ভাইরে আর কেও দ্যাহে নাই। একটা ট্রাক দ্যাকছে দুয়েকজন লোক। হেরাও কিছু কয় না মুখ খুইল্লা।

লুনা আবার যায় মধুর বাড়ি। চারপাশে যেন ডাক শোনে ভোলার, মিলনের আর তার কেবলই মনে হয় মধু এখনই দেবী বলে ডেকে উঠবে।

ঘরের মেঝেতে লুনা শুয়ে পড়ল। উপুড় হয়ে সে মাটির অনন্ত প্রবাহিত ডাক শুনতে চাইল অথবা মধুর পদধ্বনি। লুনার মনে পড়তে থাকে— তুমি আমার বারোমাসি সোনালি দুঃখ।

নুসরাত সুলতানা

নুসরাত সুলতানা দ্বিতীয় দশকের কবি ও কথাসাহিত্যিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে সিভিলিয়ান স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ, কবিতা— ছায়া সহিস (২০১৯), গহিন গাঙের ঢেউ (২০২০)। পত্রকাব্য— পায়রার পায়ে আকাশের ঠিকানায় (২০২১)। গল্পগ্রন্থ— মৌতাত (২০২২)। মহাকালের রুদ্রধ্বনি— কবিতা (২০২২) নাচের শহর রূপেশ্বরী— গল্প (২০২৪), চান্দ উটলে গাঙ পোয়াতি অয়— কবিতা (২০২৪)।

নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, লিটলম্যাগ ও ওয়েবম্যাগে।

 

Print Friendly, PDF & Email
নুসরাত সুলতানা

নামঃ নুসরাত সুলতানা।
পিতাঃ শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা আবুয়াল ইসলাম খান(মৃত)
মাতাঃ শিক্ষিকা মোসাঃখালেদা বেগম(মৃত)
বর্তমান ঠিকানঃ স্বামী ও একমাত্র পুত্র সন্তান নিয়ে বর্তমানে মিরপুর সেনানিবাসে বসবাস করছেন।

পড়াশোনাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাঃ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মিলিটারী ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি তে সিভিলিয়ান ষ্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

লেখালেখিঃ
সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক সেই ছোট বেলা থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই লেখালেখি করতেন। মাঝখানে ছেড়ে দেন। গত ছয় বছর নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ। লেখালেখি - তাঁর আত্মার মুক্তি। গল্প, কবিতায় আঁকতে চান--

প্রেম,বিদ্রোহ, স্বপ্ন,স্মৃতি, জীবন,প্রকৃতি স..ব!!

প্রকাশিত গ্রন্থঃ

ছায়া সহিস (একক কাব্য গ্রন্থ) -২০১৯
গহিন গাঙের ঢেউ (একক কাব্য গ্রন্থ) -২০২০
পায়রার পায়ে আকাশের ঠিকানায়(পত্রকাব্য সংকলন) -২০২১
মৌতাত - (একক গল্পগ্রন্থ)  --২০২২
মহাকালের রুদ্রধ্বনি- (একক কাব্যগ্রন্থ)- ২০২২।।

এছাড়াও নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন লিটল ম্যাগ এবং ওয়েব ম্যাগে।

Read Previous

বোধনের আগেই নিরঞ্জন

Read Next

হিন্দি চলচ্চিত্র ও অবিবাহিতা মায়েদের মাতৃত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *