অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলিফা আফরিন -
মিনি

সাল ২০২২

শিফা বলল, এই রাস্তাটা বন্ধ কেন? কী সুন্দর দেখতে দূর থেকে। চল না একটু দেখে আসি!

রিমি জবাব দিল, না বাবা, থাক দরকার নেই। ১২ বছর আগে এই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাস্তাটা ভুতুড়ে। এই রাস্তা দিয়ে যে একবার গিয়েছে সে নাকি আর কখনো জীবিত ফেরেনি। চল বাড়িতে। তুই এখানে নতুন এসেছিস, তাই জানিস না।

রিমি শিফাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেল। ভারি বজ্জাত মেয়ে। যেটা করতে মানা করা হয় সেটা না করলে যেন তার শান্তি নেই। এখন নিশ্চিত এই রাস্তার ভূতটা কোথায় আছে সেটা খুঁজতে চাইবে। তাই তো কিছু বলতে না দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই মেয়ের কোনো বিশ্বাস নেই।

সাল ২০১০

শীতের ছুটিতে ঘুরতে বেরিয়েছে পাঁচ বন্ধু সাদাফ, রাহাত, তাসির, শুভ আর ইরফান। এমনিতেই পড়ালেখা, ভার্সিটি ক্লাসের জন্য বের হওয়া হয় না সবসময়। সকলেই স্টুডেন্ট। অনার্স ফাইনাল ইয়ার। খুব ভোরেই সবাই প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে বেরিয়ে পরেছে অজানা গন্তব্যে। ছুটি চলাকালীন গন্তব্যহীন হয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াতে চায় তারা।

তিনদিন পর

সন্ধ্যা ৭ : ৩০টা।

দুইপাশে ঘন জঙ্গলের মাঝখানে এক সুন্দর রাস্তায় ছুটে চলেছে গাড়ি। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে সাদাফ। আর গাড়িজুড়ে আনন্দ উল্লাসে মগ্ন হয়ে আছে বাকি বন্ধুরা। সাদাফ নিতান্তই একটু চুপচাপ স্বভাবের, আর প্রকৃতি প্রেমিক। তাই সে ড্রাইভ করতে করতে আশপাশটা ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। কী মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। দু’পাশে ঘন জঙ্গল আর জনশূন্য রাস্তা। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে কী স্নিগ্ধ লাগছে। সামনে কিছু একটা দেখে গাড়িতে ব্রেক কষল সাদাফ। হঠাৎ চলন্ত গাড়ি থেমে যাওয়ায় সবাই হাসি-ঠাট্টা থামিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল একটি মেয়ে একটি গাছের নিচে হাঁটুতে মুখ গুঁজে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। একসুরে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। এই জনশূন্য রাস্তায় মেয়েটা কোথা থেকে এল! এটাই ভাবছে সাদাফ। কিন্তু এভাবে একটা মেয়েকে রাস্তায় ফেলে চলে তো আর যাওয়া যায় না। এটা অন্তত সাদাফকে মানায় না। এসব ভেবেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে এগিয়ে যেতে লাগল সে। আর তার পেছন পেছন এল বাকি বন্ধুরাও। মেয়েটির সামনে এসে হাঁটু গেঁড়ে বসল সাদাফ। মৃদুস্বরে বলল, Excuse me, miss…।

মেয়েটি চুপ। কোনো জবাব এল না।

—হ্যালো মিস, আপনি ঠিক আছেন? আমি কি আপনার কোনো সাহায্য করতে পারি?

যথারীতি চুপ।

এবার সাদাফের রাগ হলো। এই মেয়ে কি কানে শুনতে পায় না নাকি, হ্যাঁ? সাদাফ নিজের মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে নিল। দুটো বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের রাগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে আবার সামনের দিকে তাকাল। আবারও নরমস্বরে বলল— মিস? আপনি ভয় পাবেন না। আপনার সমস্যাটা আমাকে বলুন। দেখুন এখানে কেউ নেই। আপনি একা একটা মেয়ে, আপনার এখানে থাকাটা খুবই বিপদজনক। আপনি কোথায় যাবেন আমাকে বলুন, কান্না করা বন্ধ করে উঠে আসুন, আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি, চলুন।

অন্তহীন নীরবতা!

এবার সাদাফ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলো। সে এমনিতেই শর্টটেম্পার। অনেকটা রেগেই বলল— এই মেয়ে, কানে শুনতে পাও না নাকি, হ্যাঁ? নাকি সুন্দর করে বুঝিয়ে বলছি বলে গায়ে লাগছে না, কোনটা? প্রথমত কান্না থামাও আর তাকাও আমার দিকে। একই কথা যদি আরেকবার রিপিট করতে হয় তাহলে তোমাকে জাস্ট তুলে আছাড় দেব। ট্রাস্ট মি।

সাদাফ বেশ ভালোই রেগে গেছে। চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। চোখ খুলে মেয়েটির কোনো পরিবর্তন না দেখে আবারও রেগে গেল। বেশ জোরে রাগীস্বরে বলল, আমি জাস্ট আর একবার বলব। মাথা তুলে তাকাও। নাহলে আমি সত্যি সত্যি তোমাকে তুলে আছাড়…।

আর বলতে পারল না সাদাফ। সব রাগ হাওয়া হয়ে গেল নিমিষেই। এ যেন কোনো পরী! ভুল করে নেমে এসেছে পৃথিবীতে। আর হুট করে পথ হারিয়ে ফেলেছে বলে কাঁদছে। কী মায়াবী চোখ, কী মায়াবী মুখ। কিন্তু এত কেন কাঁদছে মেয়েটা? এত বেদনা কেন এই কণ্ঠে? কতইবা বয়স হবে, হুমমম এই ১৫, ১৬। বাচ্চা একটা মেয়ে। এ তো আস্ত এক মায়াময়ী নারী। একে কি কেউ কষ্ট দিতে পারে? না, পারে না। এই যে সাদাফের রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে গেল, এমন তো আগে হয়নি। বেশ মায়া হলো সাদাফের। এসব আকাশপাতাল ভেবে মেয়েটার মাথায় আলতো হাত রাখল সে। শীতল কণ্ঠে বলল, ভয় পেয়ো না। আমাকে বল কোথায় যাবে। আমি তোমায় পৌঁছে দিচ্ছি।

বোল ফুটল এবার— আমি যাব না।

দেখ, এখানে থাকাটা তোমার জন্য নিরাপদ নয়। চল, তোমাকে তোমার বাড়ি পৌঁছে দিই। এসো, উঠে এসো।

—আমি যাব না। এটা আমার এলাকা। এখানে আসা উচিত হয়নি। উহুমমম একদমই উচিত হয়নি… হা হা হা হা…।

—কী বলছ এসব! আর এভাবে হাসছ কেন? তোমার এলাকা মানে কী? কে তুমি?

—মিনি।

সোফায় বসে টিভিতে নিউজ দেখছে মাহিন। পুরো সোশ্যাল মিডিয়ায় একটাই নিউজ। বড় বড় অক্ষরে লেখা— ছুটিতে ঘুরতে গিয়ে একসাথে নিখোঁজ পাঁচ বন্ধু। এই নিয়ে এই রাস্তায় নিখোঁজের সংখ্যা ২১।

কী আছে এই রাস্তায় যে কেউ আর ফেরে না? নিখোঁজের কিছুদিন পরেই সবার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। এই রাস্তার রহস্যটা কী। কে মারছে এতগুলো মানুষকে? কেনইবা মারছে? যতজন পিবি অফিসার এই কেসটা ইনভেস্টিগেট করেছে, তারাও মারা পড়েছে। এবার কেসটা মাহিন হাতে নিয়েছে। সে ঐ রাস্তার রহস্য বের করেই ছাড়বে। আর কোনো নিষ্পাপ মানুষকে মরতে দেবে না সে। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সকলেই মাহিনের উপর যথেষ্ট আশাবাদী। কারণ মাহিন খুব বুদ্ধিমান একটা ছেলে। এখন অবধি সব কঠিন থেকে কঠিন কেসগুলো খুবই বিচক্ষণতার সঙ্গে সলভ করে সে। এই কেসটা ও খুব তাড়াতাড়ি সলভ করে ফেলবে। এই বিশ্বাস সকলের। তাই মাহিনকে পারতে হবে। আনমনেই এসব ভাবছিল। ছোট বোনের ডাকে ভাবনার ছেদ ঘটল।

—ভাইয়া, কফি।

—হুমম, দে।

—ভাইয়া?

—হুমম,কিছু বলবি?

—শুনলাম তুমি নাকি ঐ ভুতুড়ে রাস্তার কেসটা হাতে নিয়েছ?

—হুমম।

—কিন্তু কেন নিয়েছ?

—এটাই আমার জব। এটার জন্য টাকা দেয় সরকার আমায়, বুড়ি।

—তুমি জানো না ঐ রাস্তায় গেলে কেউ আর ফেরে না? তাও তুমি কেন কেসটা নিলে বলো? তোমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কী হবে? বলেই কেঁদে দিল।

বোনকে কাঁদতে দেখে নিজের বুকে জড়িয়ে নিল মাহিন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, আরে পাগলি কাঁদছিস কেন? তোর আমাকে এত ভীতু মনে হয়? তুইইতো বলিস আমি তোর ব্রেভ ভাইয়া। তাহলে এইভাবে কাঁদছিস কেন? আমার কিছু হবে না। আর ঐ রাস্তাটা মোটেও ভুতুড়ে না। ঐ মুখোশপরা ভূতকে আমি বের করছি খুব শীগ্রই। যা গিয়ে শুয়ে পড়। এই বলে বোনের কপালে চুমু দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।

এইদিকে ভাইয়ের যাওয়ার দিকে আনমনে তাকিয়ে থেকে মৃদুস্বরে বলল, আমি তোমাকে মারতে চাই না ভাইয়া। তুমি ছাড়া কেউ তো নেই আমার।

গাড়ি চালিয়ে সেই রহস্যময় রাস্তার ভেতরে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই কারও কান্নার শব্দে থেমে গেল মাহিন। কান্নার শব্দ অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। একসময় একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেকে দ্রুত পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। উল্টো দিকে ফিরে থাকায় মুখ স্পষ্ট নয়। মাহিন মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, এত রাতে এখানে একা দাঁড়িয়ে কী করছেন? আপনি জানেন এই রাস্তা আপনার জন্য কত বিপদজনক হতে পারে?

মেয়েটি ভয়ংকর আওয়াজে ভারি কণ্ঠে বলল, হ্যাঁ জানি তো। অনেক বিপদজনক এই রাস্তা। তোমার এখানে আসা একদম উচিত হয়নি।

—কে আ..আ..পনি।

মেয়েটি মাহিনের দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই চমকে উঠল সে। বিস্মিত কন্ঠে বলল— মিনি, তুই!

হঠাৎই ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ল মাহিন। আশপাশে তাকিয়ে দেখল এটা তারই রুম। এটা স্বপ্ন ছিল? কিন্তু এমন একটা স্বপ্ন কেন দেখল সে? মিনি… মিনি ঐ রাস্তায় কী করছিল? কী ভয়ংকর রূপ ছিল তার। বোনের এত মিষ্টি চেহারা এত কুৎসিত রূপে কেন দেখল? দেয়ালে লাগানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত ২টা বেজে ৪৫ মিনিট। এই সময়ের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। তাহলে কি এই স্বপ্নটা সত্যি হবে? মিনি… মিনি… আমার বোন এটা করতে পারে না। কী নিষ্পাপ চেহারা তার। গলা শুকিয়ে গিয়েছে। পানি খাওয়া দরকার। বেডসাইড টি টেবিল থেকে ওয়াটার পটটা হাতে নিয়ে পানি খেয়ে নিল। না আর ভাবতে পারছে না সে। এখন ঘুম দরকার। শান্তির ঘুম।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসল ব্রেকফাস্ট করার জন্য। খাবার মুখে দিতে যাবে তখনই খেয়াল করল মিনিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তাই ডাক দিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মাহিন। উদ্দেশ্য মিনির রুম। মিনির রুমের সামনে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখল সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখছে। মুচকি হাসল মাহিন। এতক্ষণ বোনকে দেখতে না পেয়ে যেন মন অস্থির হয়ে উঠেছিল। একটাই তো বোন তার। আর তো নেই কেউ বোন ছাড়া। রুমে ঢুকে বোনকে ডাক দেবে তখনই আয়নার দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেল। আয়নায় মিনির প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে না। এটা কীভাবে সম্ভব। তাহলে কি কাল রাতে তার দেখা স্বপ্নটাই ঠিক? মিনি মানুষ না? না না, এটা কীভাবে হয়। না এটা হয় না। মিনি বোন আমার। সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ডাক দিল মিনিকে। শান্তস্বরে বলল, মিনি? আজকে এতক্ষণ পর্যন্ত কী করছিস রুমে?

—তুমি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করছিলে। তাই ভাবলাম রুমটা একটু গুছিয়ে নিই। আমি আসছি। তুমি যাও।

—হুমম আয় জলদি।

মাথা কাজ করছে না মাহিনের। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা। সেটা হলো মিনি। কিছু ভালো লাগছে না তার। কোনোমতে খেয়ে বেরিয়ে গেল পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশে।

সন্ধ্যা ৭ : ৩০টা। 

মাহিন এখন সেই রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।মুলত মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কেসটার ইনভেস্টিগেট করার জন্যই এইখানে আসা। কিছু সময় পরেই কোনো মেয়েলি কন্ঠের কান্না ভেসে এল। কান্নার শব্দ অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যেতেই একটি মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। অবিকল সেই স্বপ্নের মতো দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। সেই সেম ভয়েসে কান্না। কেমন যেন বুকে ধক করে উঠল। এ সত্যিই মিনি নয় তো? না আমার বোন প্রেতাত্মা হতে পারে না। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। আনমনেই কাঁপা কাঁপা গলায় মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল, মি…নি।

হঠাৎ করেই কান্না বন্ধ হয়ে গেল। ঘুরে দাঁড়াল মিনি। একধ্যানে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে। এটা চায়নি মিনি। কখনোই চায়নি যে তার ভাই এই রূপে তাকে দেখুক। কান্নাভেজা গলায় বলল, তুমি এখানে কেন এসেছ ভাইয়া? আমি তো মানা করেছিলাম এই কেসটা ছেড়ে দাও। আমার তুমি ছাড়া কেউ নেই। তবুও কেন এসেছ তুমি?

মাহিন যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। অনুভূতিহীন হয়ে একধ্যানে সামনে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে সে। মাহিনকে চুপ থাকতে দেখে মিনি আবারও বলল, চুপ করে আছ কেন? তুমি জানো আম্মু আব্বু সেদিন মারা যায়নি। ওরা মেরে ফেলেছে আম্মু আব্বুকে। আমি কত বলেছি সবাইকে আমার আব্বুর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, কত আকুতিমিনুতি করেছি রাস্তা ফাঁকা করে দিতে, আব্বুকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে, ওরা দেয়নি। এই রাস্তায় নাকি কোনো এক ভিআইপি যাবে তাই। শেষপর্যন্ত আব্বু আর পারেনি। আম্মু আব্বুকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে হঠাৎ বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েছিল। তারপর হঠাৎ করেই নিচে নেতিয়ে পড়ে। মাত্র কিছু সময়ের ব্যবধানে আমরা এতিম গিয়েছিলাম ভাইয়া। তুমি দেশে ছিলে না। কী করব কিছু বুঝতে পারছিলাম না। নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছিল জানো ভাইয়া? কিছু একটা ভেবে আবারও সবার কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি। আমি আবার আম্মু আব্বুর কাছে আসছিলাম। ঠিক তখনই ঐ সো কল্ড ভিআইপি আসছিল। মানুষের ঘেঁষাঘেঁষি বেড়ে গেল। মাথাটা কেমন ঘুরছিল। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। আর যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি আশপাশে সবাই কেমন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কেউ কেউ আফসোস করছিল। হঠাৎ পেছনে ফিরে দেখি আমার ক্ষতবিক্ষত লাশ পড়ে আছে নিচে। আমি সবাইকে ডেকেছি। বারবার সবার সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলেছি আমি বেঁচে আছি। কিন্তু কেউ শোনেনি। এই রাস্তায় তোমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে ভাইয়া। মেরে ফেলেছে তোমার পুরো পরিবার কে। মেরে ফেলেছে।

মাহিন এখানো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো লাগছে। এই স্বপ্ন ভাঙছে না কেন? এই দুঃস্বপ্ন দেখতে ভালো লাগছে না।

টিভিতে আজ নিউজ চ্যানেলজুড়ে একটাই খবর। সেই রহস্যময় রাস্তার রহস্য খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশ পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সাহসী ও বিচক্ষণ অফিসার। অল্প সময়ে কঠিন থেকে কঠিনতম কেস খুবই চতুরতার সাথে সলত করত এই তরুণ। তার এই অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুলিশ ডিপার্টমেন্টজুড়ে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে সরকার এই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই রাস্তার রহস্য কি তবে আজীবন রহস্যই থেকে যাবে?

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

বোধনের আগেই নিরঞ্জন

Read Next

হিন্দি চলচ্চিত্র ও অবিবাহিতা মায়েদের মাতৃত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *