অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পূর্নব্রত ভট্টাচার্য্য -
মূল্যহীন ও মূল্যবান

মূল্যবান আর মূল্যহীন। কথা দুটো শুনতে সাধারণ হলেও, এর মর্মার্থ কিন্তু অনেক। আজ কোনো ব্যক্তি বা বস্তু তোমার কাছে অনেক দামি অনেক কাছের অনেক মূল্যবান। হয়তো এক সময় তাই তোমার কাছে হয়ে পড়বে অপ্রিয় অযত্নের অথবা মূল্যহীন। তাহলে আজ তোমার কাছে যা মূল্যবান, কাল তোমার কাছে তাই মূল্যহীন। কিন্তু কখনো কখনো এই রীতির রদবদলও হয়। কখনও কখনও এমন সময় আসে যখন তোমার জীবনে মূল্যহীন হয়ে পড়া কোনো জিনিস যা তোমার জীবনে কখনও হয়ে ওঠে মহামূল্যবান।

আজ এমনি এক মূল্যহীন থেকে মূল্যবান হয়ে ওঠার গল্প শোনাব। যেখানে ভালোবাসার মোহমায়ার এই খেলাতে হয়তো নিজেও খুঁজে পাবেন জীবনের কোনো ঠিক এমনি কিছু ফেলা আসা মূল্যবানের মূল্যহীন হয়ে পড়ার স্মৃতি।

তাহলে শুরু করা যাক। ওদিকে আবার অধীর বাবু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন, দেরি হয়ে যাচ্ছে ওনার।

অধীর বাবুর পুরো নাম অধীর রঞ্জন পাকড়াশী। তিনি শ্রীরামপুর ও চুঁচুড়া কোটের জাঁদরেল উকিল। দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে রাজত্ব করে চলেছেন এখানে। বলা যায়, ওনার কথায় ওই কোর্টপাড়া চত্বরে বাঘে গরুতে এক ঘটে জল খায়। এমনি বিক্রম তার।

ওনার নিজ বাসস্থান শ্রীরামপুরে। একদম গঙ্গার ধরে পৈতৃক ভিটা ওনার একদম পুব দক্ষিণ খোলা। সেখানে তিনি পরিবার অর্থাৎ স্ত্রী দুই ছেলে এক মেয়ে দুই বৌমা নাতি নাতনি; আর তিনজন চাকর ঠাকুর নিয়ে বসবাস করেন। অধীর বাবুর বাবা মা মারা গেছেন পনেরো বছর হয়ে গেল। বাড়িটা ওনার পূর্বপুরুষের আমলের হলেও রূপের দিক থেকে সেই বাড়িকে প্রবীণ বলা চলে না। কারণ অধীর বাবু ওই বাড়ির নিখুঁত পরিচর্যা করে সেই বাড়িকে রূপে গুণে এখনো একদম যুবক করে রেখেছেন!

দেখেছেন অধীর বাবুর ব্যাপারে বলতে গিয়ে ভুলেই গিয়ে ছিলাম যে ওনার দেরি হয়ে যাচ্ছে। উনি অপেক্ষা করছেন।

আজ অধীর বাবু অত্যন্ত এক জরুরি কাজে দুর্গাপুরে যাত্রা করছেন। কাজটি ওনার কাছে খুবই দরকারি ও মূল্যবান। তাই আজ সকাল সকাল অধীর বাবু বাড়ি মাথায় করেছেন। এখন ভোর পাঁচটা বাজে, অধীর বাবুকে সকাল দশটার মধ্যে পৌঁছতেই হবে হবে গন্তব্যে। বাড়ির সবাই ঘুম চোখে এসে হাজির হলেন অধীর বাবুকে বিদায় জানাতে। চাকর দুজন গাড়িতে ব্যাগ তুলতে ব্যস্ত ছিল। অধীর বাবু ড্রাইভার রাখেন না। নিজেই ড্রাইভ করতে ভালোবাসেন। আজও নিজেই ড্রাইভ করে যাবেন ওনার গন্তব্যে। চাকরদের মালপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলতে তুলতে পাঁচটা পনেরো বেজে গেল।

অধীর বাবু এবার মা দুর্গার নাম নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলেন। ঘড়িতে সময়টা ভালো করে দেখে নিলেন, তারপর মন দিলেন ড্রাইভিংয়ে। বৈদ্যবাটী চৌমাথা থেকে দিল্লি রোড ধরে উনি বর্ধমান হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছোটালেন। অনেক দিন পর কোর্টের কচকচি আর বাড়ির চার দেওয়ালের বন্দি পরিবেশ থেকে বাইরে বেরিয়ে তিনি ফুরফুরে মেজাজে চারিদিকের প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে লাগলেন। মাঝে মাঝে হাইওয়ের দুধারে দিগন্ত বিস্তৃত ধানখেত দেখে অধীর বাবুর মনপ্রাণ ভোরে গেল। গাড়ি চালাতে চালাতে নিজের মনেই গুনগুন করে গানও গাইতে লাগলেন তিনি। প্রকৃতির মাঝে এলে শত কঠিন মনের মানুষ ও যেন প্রাণ খোলা হয়ে পরে। যা আজ অধীর বাবুর মতোন কঠিন ও গম্ভীর মানুষের মুখেও গানের গুঞ্জন ফুটিয়ে তুলেছে।

অনেক সকালে বেরোনোর জন্য অধীর বাবুর কিছু খেয়ে আসা হয়নি। তখন উনি বর্ধমানের কিছু আগে শক্তিগড় ক্রস করছেন। ঘড়িতে বাজে ওই পৌনে আটটার মতো। অধীর বাবু ভাবলেন যে বর্ধমান তো চলেই এলো দশটার মধ্যে তিনি ভালোভাবে পৌঁছে যেতে পারবেন দুর্গাপুর। তাই এখন কিছু খেয়ে নিলে ভালো হতো। এই ভেবে তিনি একটা ধাবা সংলগ্ন জায়গায় রাস্তার ধরে গাড়িটা থামালেন। সাথে সাথে এক জন লোক ছুটে এলো অধীর বাবুর গাড়ির দিকে। দেখে মনে হলো হোটেলেরই লোক হবে। সেই লোকটি এসে অধীর বাবুকে বলল— আসুন বাবু, এই সামনে আমাদের হোটেল। রান্না সব হয়ে গেছে। সকালের নাস্তাটা আমাদের হোটেলে খেয়ে নিন।

অধীর বাবু সেই লোকটির দিকে একটু সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, বাঙালি হোটেল তো তোমাদের?

লোকটি একমুখ হেসে বলল, হ্যাঁ বাবু। একদম খাঁটি বাঙালি খাবারদাবার পাবেন আমাদের এই হোটেলে।

এরপর মুখস্থ সব খাবারের নামের ফিরিস্তি শুনিয়ে দিল লোকটি। সব শুনে অধীর বাবু গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেলেন হোটেলের সামনে। হোটেল মানে বড় ধাবা বলতে যা বোঝায়। মূলত ট্রাকওয়ালাদের জন্যই তৈরি হয়েছে এখানে এই ধাবাগুলো। সেই ধাবার সামনের খোলা চত্বরে একটা চৌকিতে বসে খাবারের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন অধীর বাবু। আর তার সাথে বসে বসে ধাবা সংলগ্ন পুরো জায়গাটাকে নজরবন্দি করতে থাকলেন তিনি। ধাবাটির পাশে একটা মোটর গ্যারেজ ছিল। সেখান থেকে ক্রমাগত গাড়ির আওয়াজ আসার জন্য অধীর বাবুর বড়ই বিরক্ত বোধ করছিলেন। খাবার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে একটু এগিয়ে গেলেন হোটেলের দিকে। আর এখান থেকেই আমাদের অধীর বাবুর আর আমাদের গল্পের মোর সম্পূর্ণ ঘুরে গেল অন্যদিকে।

কারণ অধীর বাবু উঠে হোটেলের কাছে যেতে না যেতেই ওনার চোখ পড়ে গেল পাশের সেই গ্যারেজের দিকে। আর সেই গ্যারেজ দিকে তাকিয়ে অধীর বাবু যেন থমকে গেলেন। অবাক ও বাকরুদ্ধ হয়ে তিনি এগিয়ে গেলেন সেই গ্যারেজের দিকে। গ্যারাজের ধুলো কালো ধোঁয়া এই সব কিছুকে উপেক্ষা করে। অদূরে একটা বন ঝোপের কাছে অনেক দিনের অবহেলা ও অযত্নে প্রায় ম্রিয়মাণ অবস্থায় দাঁড় করানো একটা ভগ্নপ্রায় স্কুটারের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন আমাদের অধীর বাবু। তারপর বেশ খানিকক্ষণ ধরে সেই স্কুটারটি ভালো করে দেখার পর পরম যত্নে হাত বোলালেন সেই স্কুটারটির উপর। মনে হলো যেন এই স্কুটারকে দেখার পর ওনার ফেলে আসা স্মৃতির কোনো এক পাতায় পৌঁছে গেছেন। তিনি স্কুটারটির চাবিটার জংধরা লকেটটা হাতে নিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে তা দিয়ে সের ধুলো মাখা লকেটটা মুছতে শুরু করলেন। মোছা শেষে দেখা গেল সেটা একটি গণেশ ঠাকুরের ছোট মূর্তি। চোখটা যেন ছলছল করে উঠলো অধীর বাবুর। তারপর অধীর বাবু যা করলেন তেমন কিছু হয়তো ওনার বিয়ে কেউ ধারণাই করতে পারতেন না। যদি না এখানে তার উল্লেখ থাকত। সেই লকেটটা দেখে অধীর বাবু স্কুটারটির নিচে ধুলো ভরা মাটিতে প্রায় বসে পড়লেন। আর নির্দ্বিধায় ওনার পরনের নতুন পাঞ্জাবিটার এক অংশ দিয়ে স্কুটারটির ধুলো জমে থাকা নম্বর প্লেটটির সব নোংরা ধুলো মুছতে শুরু করে দিলেন। খানিকক্ষণ ধরে মোছার পর অস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠল সেই নম্বর প্লেটের নম্বরটি। আর তারই সাথে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল অধীর বাবুর চোখের কোনায় জলের ধারা। আর না থাকতে পেরে অধীর বাবু একদমই বসে পড়লেন সেই ধুলোর মাঝে। ছোট ছেলেদের মতো জড়িয়ে ধরলেন সেই স্কুটারটিকে সস্নেহে। সাথে কাঁদতে থাকলেন তিনি অঝোর ধারায়। তখনি হোটেলের সেই লোকটা অধীর বাবুকে খুঁজতে খুঁজতে এসে হাজির হলো সেখানে। অধীর বাবুকে ওই অবস্থায় দেখে বলে উঠল— সে কী বাবু, আপনি এখানে এই নোংরার মধ্যে বসে আছেন কেন! খাবেন চলুন, আপনার খাবার দেওয়া হয়ে গেছে, বাবু।

লোকটির ডাকাডাকি শুনে অধীর বাবু যেন সংবিত ফিরে পেলেন। চোখের জল মুছে উঠে বসলেন। তারপর আবার সেই নিজের গাম্ভীর্যে ফিরে এলেন অধীর বাবু। ধুলোর উপর থেকে উঠে বসে গম্ভীর অথচ শান্ত গলায় তিনি বললেন। খাবার পরে হবে। এই গ্যারাজের মালিকের সাথে কথা বলতে চাই আমি তার ব্যবস্থা করো। ভালো বকশিস পাবে তুমি। সেই কথা শুনে লোকটিও বড় অবাক হলো অধীর বাবুর এই আচরণে। লোকটি নিয়ে গেলো অধীর বাবুকে সেই গ্যারেজে। কর্মচারীর মুখ থেকে জানা গেল যে মালিক এখন গ্যারেজে নেই। সেই এগারোটার পর আসেন তিনি। অধীর বাবু বললেন, না আমি এখনই দেখা করতে চাই ওনার সাথে। ডেকে পাঠাও অনেক ডেকে পাঠাও ওনাকে।

অধীর বাবুর কথা আপভাব ও উনি উকিল শুনে একজন কর্মচারী চলে গেল ওই গ্যারেজের মালিকের বাড়িতে। ওনাকে ডেকে আনতে। অধীর বাবুও বসে পড়লেন সেই গ্যারাজের একটি নোংরা চেয়ারে। আর হারিয়ে গেলেন তিরিশ বছর পেছনে ফেলে আসা স্বপ্ন স্মৃতির ভিড়ে।

তখন অধীর বাবু সবে কলেজে উঠেছেন। ওনার বাবা ছিলেন স্কুলমাস্টার। কোনো রকমে সংসার চলত তাদের। ওনার বাবা মা খুব ভালোবাসতেন অধীর বাবুকে। একদিন অধীর বাবুর সাইকেলটা খারাপ থাকার জন্য তিনি তার এক বন্ধুকে একদিন বলেন তার স্কুটারে করে ওনাকেও কলেজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার সেই বন্ধু তাকে নিয়ে তো যায় না, বরং বেশ অপমান ও ব্যঙ্গ-জনক কথা বলে। সেই কথা নিয়ে অধীর বাবুর মন বড়োই খারাপ ছিল। সেই কথা তিনি কাউকেও বলেননি। ঘটনা চক্রে অধীর বাবুর বাবা ঠিক সেইদিন যাচ্ছিলেন ওই রাস্তা দিয়ে। আর গোটা ব্যাপারটা নিজে প্রতক্ষ করেন। যেটা জানতেন না অধীর বাবু।

তারপরের দিনই অধীর বাবুর বাবা অফিসের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা তোলার জন্য আবেদন করেন। আর তার কয়েকদিন পরেই অধীর বাবু কলেজে যাওয়ার সময় ওনার বাবা তাকে ডেকে বলেন— কোথায় যাচ্ছ, বাবা অধীর?

অধীর বাবু বাবাকে জানান কলেজে যাচ্ছেন। তখন ওনার বাবা বলেন— না বাবা, আজ তো তুমি কলেজে যাবে না।

অধীর বাবু একটু মনে মনে সংশয় নিয়ে বলেন, কেন বাবা?

অধীর বাবুর বাবার উত্তরে বলে। কারণ তুমি আজ আমার সাথে একটু বেরোবে বাবা। এই বলে অধীর বাবুকে নিয়ে তিনি সোজা চলে যান একটা স্কুটারের শোরুমে। সেখানে ঢুকে অধীর বাবুকে জিজ্ঞাসা করেন— বল বাবা, অধীর কোন স্কুটারটা তোমার পছন্দ। কোনটা নিতে চাও তুমি?

অধীর বাবুর চোখে সেই সময় জল চলে আসে ছলছলে চোখে তিনি তাকিয়ে থাকেন বাবার দিকে। তখন ওনার বাবা বলেন, আমার ছেলেকে কেউ অপমান করবে সেটা আমি কি সহ্য করতে পারি বাবা! তুমি কাল থেকে স্কুটার নিয়েই কলেজে যাবে। আর কেউ তোমাকে অপমান করার সাহস পাবে না।

অধীর বাবু সেদিন সেই শোরুম এ দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন বাবাকে। আর সেদিন দুজনের চোখই ভোরে উঠেছিল জলে। ঠিক আজ যেমন এই স্কুটারটিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলেন অধীর বাবু। তারপর যখন অধীর বাবু বাড়িতে ফিরলেন সেই স্কুটার করে ওনার বাবাকে পেছনে বসিয়ে। বাড়িতে এসেই দেখেন যে ওনার মা আগে থেকেই হাসি শাহি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন হাতে বরণডালা নিয়ে। স্কুটার থেকে নেমে মাকে প্রণাম করলেন অধীর বাবু। মা বললেন— কীরে, এবার খুশি তো?

এই বলে গাড়িটাকে বরণ করে একটা গণেশ ঠাকুরের লকেট ঝুলিয়ে দিলেন স্কুটারের চাবিতে। আর বললেন এই গণেশ ঠাকুর তোমাকে সব সময় রক্ষা করবে সব বিপদ থেকে।

তারপর দশ বছর এই স্কুটারটাই ছিল অধীর বাবুর প্রাণ। এরপর ওনার বাবা মা গত হলে। আস্তে আস্তে ওনার কাজের পসার বাড়লে। তিনি একটা মারুতি এইট হান্ড্রেট গাড়ি কিনলেন কাজের সুবিধার জন্য। তারপর থেকে ওনার প্রিয় সেই স্কুটারের জায়গা হয় বাড়ির সিঁড়ির নিচে। এভাবে দিনের পরদিন পরে থাকার পর। রাখার জায়গার অভাবের জন্য একদিন লোহার দরে বিক্রি করে দেন তিনি তার সেই প্রিয় স্কুটারটিকে। তার মানে প্রিয় মূল্যবান জিনিসটি মূল্যহীন হয়ে যায় অধীর বাবুর কাছে।

হ্যাঁ, একদম ঠিক ধরেছেন। আজকের এই শক্তিগড়ের গ্যারেজের ভগ্নপ্রায় স্কুটারটাই হলো অধীর বাবুর বাবার কিনে দেওয়া সেই তিরিশ বছর আগের স্কুটারটি। তাহলে কী বুঝলেন। প্রাণের থেকেও প্রিয় স্কুটারটি অধীর বাবুর কাছে একসময় হয়ে যায় অযোগ্য। যে জিনিসটি পেয়ে তিনি অকল্পনীয় আনন্দ পেয়েছিলেন একসময়। ফেলেছিলেন নিজের চোখের জল। তাও এক সময় তা হয়ে যায় মূল্যহীন অধীর বাবুর কাছে। আবার সেই মূল্যহীন স্কুটারটি আজ এতো দিন পরে এসে ওনার কাছে আবার হয়ে ওঠে মূল্যবান। আবার ফিরে আসে সেই চোখের জল, যা এসে ছিল তিরিশ বছর আগে।

যখন অধীর বাবু অতীতের স্বপ্নের বিভোর এমন সময় ফিরে আসে সেই গ্যারেজের কর্মচারীটা। সাথে তার মালিককে নিয়ে। অধীর বাবুকে ডাকতে স্মৃতির পাতার ভিড় থেকে তিনি আবার ফিরে আসেন বাস্তবে। তারপর অধীর বাবু সেই গ্যারেজের মালিকের সাথে কিছু কথাবার্তা বলে চলে যান সেই ধাবাতে। ওনার খাবার শেষ হতে না হতেই গ্যারেজ মালিক এসে অধীর বাবুকে বলেন— স্যার, আপনার কাজ হয়ে গেছে।

এই বলে হাত দেখান একটা মালবাহী মোটর গাড়ির দিকে। আর সেই মালবাহী মোটর গাড়ির মধ্যে দেখা গেল সেই স্কুটারটিকে।

তারপর আর কী। অধীর বাবুর সেই মূল্যবান কাজ, যার জন্য তিনি সাতসকালে রওনা হয়েছিলেন দুর্গাপুরের পথে। সেই কাজ আজ হয়ে গেল ওনার কাছে মূল্যহীন। আর অধীর বাবু গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে চললেন নিজের বাড়ির দিকে। আর ওনার গাড়ির পেছন পেছন ফলো চলতে শুরু করল সেই স্কুটারসমেত মালবাহী মোটরগাড়িটা। আর এসে থামে সোজা অধীর বাবুর বাড়ির সামনে।

অবশেষে আজ অধীর বাবু খুঁজে পেলেন তার জীবনের মূল্যবান জিনিস। যা হারিয়ে গিয়েছিল ওনার স্মৃতির ভিড়ে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

বোধনের আগেই নিরঞ্জন

Read Next

হিন্দি চলচ্চিত্র ও অবিবাহিতা মায়েদের মাতৃত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *