অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
জুন ২৮, ২০২৫
১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জুন ২৮, ২০২৫
১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈয়দ নূরুল আলম -
নূতন প্রেমে ভোর

‘আসসালাতু খাইরুম মিনার নাউম।

ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম।’

পাশের মসজিদ থেকে আসা ফজরের আজানের ধ্বনি শুনে, রাব্বি বাংলা অর্থটা নিজে নিজে বলে। নামাজের আহবান শোনার পর রাব্বির মনটা পবিত্র ও নরম হয়ে ওঠে।

রাব্বি দৈনিক নতুন ভোর পত্রিকার সহকারী সম্পাদক। ওর ডিউটি ডে শিফটে। আজ ও ওর বন্ধু মনিরের নাইট শিফটের প্রক্সি দিচ্ছে। রাব্বি ভেবেছিল রাতজাগা ওর জন্য কষ্টকর হবে। আগে কখনো নাইট শিফট করেনি। কিন্তু কীভাবে রাতটা চলে গেল বুঝতে পারেনি।

মনির বলেছিল, কোনো কাজ নেই। অন্য স্টাফরা কাজ করবে। তুই শুধু দেখভাল করবি। তাছাড়া নেট আছে, টিভি আছে। দেখবি টেরই পাবি না। সময় কীভাবে চলে যায়।

রাব্বি অফিসে এসে নিউজ সেকশন, এডিটিং সেকশন, খেলাধুলা ও বিনোদন সেকশন ঘুরে আসে। সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। পত্রিকা অফিসে আসলে কেউ কাউকে তদারকি করে না। প্রয়োজনও পড়ে না। একজন কাজ শেষ করে তার ডান পাশের জনকে ধরিয়ে দেয়। সেজন আবার তার ডান পাশে দেয়। এভাবে এক সময় প্রেস থেকে পরিপূর্ণ আদলে কাগজ বের হয়ে আসে।

রাব্বি ফ্লাস্কে করে চা নিয়ে এসেছিল। চা খেতে খেতে টিভি অন করে। কোনো চ্যানেল পছন্দ হয় না। ইউটিউব ধরে। সেখানেও মন বসে না। অবশেষে ফেসবুকে ঢোকে। রাব্বি ফেসবুকে ততটা আসক্ত না। মাঝে মধ্যে ঢু মারে। মেসেনজার খুলতেই পরিচিত-অপরিচিত অনেককে অন লাইনে পেয়ে যায়।

‘হাই রানা। কেমন আছিস।’

‘ভালো। তুই?’

‘ভালো না। রাতে ডিউটি পড়েছে।’

‘এখন অফিসে?’

‘হ্যাঁ।’

‘কবিতা লেখা কি ছেড়ে দিলি? ফেসবুকে পোস্ট দেখি না।’

‘কমে গেছে। তোর খবর কী। কবে যেন লেখা দেখলাম।’

‘হ্যাঁ। দৈনিক সময়ে।’

‘পড়েছিলাম। ভালো হয়েছে।’

ইনবক্সে পুতুল নক করছে। ও একটা ভিডিও পাঠিয়েছে।

ভিডিওটা ওপেন করতে লজ্জা পাচ্ছে রাব্বি। এ মেয়েটা এমনই। যখন তখন এলোমেলো ভিডিও পাঠায়। রাব্বি বুঝতে পারে না। ওকে কেন এ সব পাঠায়।

এর মধ্যে মিলা, হাবিব, হাসনা এদের মেসেজও আসতে থাকে। রাব্বি একটা একটা করে সবার উত্তর দেয়।

‘তুমি বলেছিলে রাতে ফেসবুকে থাকো না। আজ?’

‘বিশেষ কারণে।’

‘কারণটা জানতে পারি?’

‘একজনের প্রক্সি দিচ্ছি।’

‘বউ জানে ফেসবুক নিয়ে আছ?’

‘আগল-ছাড়া পাখি বেঁধে রাখবে কীভাবে।’

‘স্বামীকে কোনো স্ত্রীই চায় না, আগল ছাড়া করতে। তোমাকে হয়তো ভয় পায়।’

‘হয়তো।’

‘আচ্ছা তোমার বউ যদি সারারাত কারও সঙ্গে চ্যাট করে, মেনে নেবে?’

মিলার এ কথার কী উত্তর দেবে রাব্বি বুঝতে পারে না।

‘শুভ সন্ধ্যা।’

‘শুভ সন্ধ্যা।’

‘কী করছ?’

‘এই তো অফিসে।’

‘কী করো?’

‘বসে আছি।’

‘তুমি কী করো?’

‘… করলাম।’

পিয়া যা বলল, তা মুখে আনা সম্ভব নয়।

‘কীভাবে?’

‘… দিয়ে।’

এবারও বলা যাবে না।

পিয়া মেয়েটা ঠোঁটকাটা। মুখে কিছু আটকায় না।

রাব্বি পারতপক্ষে পিয়াকে এড়িয়ে চলে। ছেলে হয়ে রাব্বির যে কথা বলার কথা, সে কথা পিয়া বলে। আর রাব্বি চুপচাপ শোনে।

এরপর আরও কিছু বলে বসতে পারে। তাই ভেবে, রাব্বি আর পিয়াকে সময় দেয় না।

রাব্বি ছুটে আবার রানার কাছে যায়।

আগের ধারাবাহিকতায় বলে, এখন কী লিখছিস?

‘একটা উপন্যাস নিয়ে ভাবছি। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।’

‘কাশি দিয়ে বের করে দে।’

‘সময় লাগবে।’

এবার হাসনার কাছে আসে। মহিলা একটু পাগল কিসিমের। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। এখনও বিয়ে হয়নি। বন্ধু হওয়ার দুদিনের মাথায় মেয়েটি রাব্বিকে বলে, আমার একটা বর খুঁজে দেন না। বিয়ে করার খুব ইচ্ছে। যেকোনো ছেলে হলেই হবে। এমনকি ডিভোর্সি হলেও হবে।

মেয়েটির কথায় করুণ আর্তি ছিল। তাই রাব্বি বলেছিল, দেখব। সেই থেকে মাঝে মধ্যেই রাব্বিকে নক করে। আর একবার শুরু করলে ছাড়তে চায় না।

মেয়েটি কেমন আছেন, লিখে অনেক সময় ওয়েট করছে। রাব্বি উত্তর করে।

‘ভালো।’

‘রাতে খেয়েছেন?’

‘হ্যাঁ।’

‘কী খেলেন?’

‘আটার রুটি, মাংস আর ডাল।’

‘আমিও রাতে রুটি খাই।’

‘ভালো।’

‘ডায়েট করি।’

‘ভালো।’

‘খালি ভালো ভালো করেন কেন?’

‘আচ্ছা।’

‘আচ্ছা কী? আমার বর খুঁজে দিলেন না। নাকি এবারও বলবেন, ভালো!’

‘কেউ প্রস্তাব আনলে ঠিকই বলব।’

‘আর না আনলে? আমার বিয়ে হবে না?’

‘আমি তা বলিনি।’

এ কথায় হাসনা বোধ হয় মনোক্ষুণ্ন হয়। ও পাশ থেকে আর কোনো প্রশ্ন আসে না।

রাব্বি দৌড়ে হাবিবের কাছে আসে।

‘ভাইয়া ব্যস্ত?’

‘একটু।’

‘আপনার সাথে দেখা করব। আপনার ফোন নম্বরটা দেবেন?’

‘আচ্ছা দেব। অফিসে এসো একদিন।’

‘আপনাকে আমার খুব পছন্দ।’

‘ধন্যবাদ।’

‘আপনার সাথে একদিন শোব।’

রাব্বি কোনো উত্তর না দিয়ে, হাবিবকে ব্লক করে দেয়।

এবার রাব্বি পুতুলের ভিডিওটা ওপেন করে। এক নজর দেখেই চমকে ওঠে। রুমে কেউ নেই। তবুও রাব্বি এদিক ওদিক তাকায়। কেউ দেখে ফেলল কী। ও সঙ্গে সঙ্গে ভিডিওটা রিমুভ করে ফেলে।

এতক্ষণে বুঝতে পারে মেয়েটি কেন তাকে এ ধরনের ভিডিও পাঠায়। পরিচয়ের শুরুর দিকে পুতুলের সঙ্গে রাব্বির একদিন এভাবে কথা হয়।

‘কবিতা পড়ো?’

‘পড়ি।’

‘পাঠাব?’

‘পাঠান।’

রাব্বি নিজের প্রোফাইল থেকে একটা কবিতা কপি করে পাঠিয়ে দেয়।

‘কেমন?’

‘ভালো।’

‘শুধু ভালো?’

‘খুব ভালো।’

‘তুমি অবসর সময় কী করো?’

‘গান শুনি।’

‘মুভি, ভিডিও দেখো না?’

‘কম।’

‘ভালো কিছু হলে আমাকে পাঠিও।’

এই ভালো কিছু পাঠাতে বলাতেই এর দুদিন পরই পুতুল এধরনের ভিডিও পাঠান শুরু করে।

রাব্বি ভাবে ভুলটা সে নিজেই করেছে। তাই এ মুহূর্তে পুতুলকে রাব্বি ব্লক করে না।

ও ভাবে আগে পুতুলের ভুলটা ভাঙাতে হবে।

রাব্বি পুতুলকে রেখে মিলার মেসেজ ওপেন করে। মিলা থেকে হাসনা। হাসনা থেকে রানা। আবার পুতুল। এভাবে ঘুরতে থাকে। একটুও দেরি করা যাবে না। তাহলে কেউ ছুটে যাবে বা কেউ ভাববে তার কাছ থেকে সরে গেছে। কাউকেই অসন্তুষ্ট করতে চায় না রাব্বি।

রাত জাগলে বারে বারে খেতে হয়, তাতে ক্লান্তি আসে না। এটা ভেবে মনিরা ছোট একটা টিফিন বক্সে রাব্বিকে নুডুলস করে দিয়েছে। রাব্বি আনতে চায়নি। বলেছিল ফ্লাক্সে চা দিয়েছ, এটাতেই হয়ে যাবে। কিন্তু মনিরা জোর করেছে। রাব্বি চামিচ দিয়ে নুডুলস খেতে খেতে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে।

এরমধ্যে নতুন একটা মেসেজ আসে, ‘ছে হাই টু ইউর নিউ ফেসবুক ফ্রেন্ড।’

রাব্বি মেসেজটা অপেন করে দেখে ওর ছবির পাশে অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ের ছবি। নাম নবনী। ছোট প্রোফাইল। স্টুডেন্ট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। লিভ ইন রাজশাহী। সিঙ্গেল।

রাব্বির কাছে প্রতিদিন অনেক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। কিন্তু রাব্বি প্রতিদিন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতে সময় পায় না। চার-পাঁচদিন পরপর একঝাক রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে। কোনো বাছবিচার নাই। ওর ধারণা একজন লোক আগ্রহ নিয়ে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, একসেপ্ট না করলে, তাকে অপমান করা হবে। তবে পাট খেতে আগাছা নিড়ানির মতো বন্ধু নিড়ায়, সেটা একসেপ্টের পর। দু একদিন কথা বলেই বুঝতে পারে বন্ধুটি কেমন। পছন্দ না হলে কাট।

নবনীকে হাই না বলে, রাব্বি লেখে শুভ সন্ধ্যা। কেমন আছ?

রাব্বির একটা বদঅভ্যাস আছে, ফেসবুকের সব বন্ধুকে প্রথম থেকেই তুমি বলা শুরু করে। ওর কথা, বন্ধু তো, তুমি বলতে দোষ কী।

বিদ্যুৎ গতিতে নবনীর কাছ থেকে উত্তর আসে, ভালো। আপনি?

‘আমিও ভালো। তুমি কী কর। কোথায় থাক?’

‘রাজশাহীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।’

‘ভালো। হোস্টেলে, না বাসায় থাক?’

‘বাসায়।’

‘বাসায় কে কে আছেন?’

‘বাবা, মা আর ছোট ভাই।’

‘আপনি কোথায় থাকেন?’

‘ঢাকায়।’

‘কী করেন?’

‘চাকরি। লেখালেখি।’

‘কী লেখেন? কবিতা?’

‘কবিতা, গল্প, কখনো উপন্যাস।’

‘ওমা তাই! আমি একজন লেখকের সাথে চ্যাট করছি, ভাবতেই ভালো লাগছে।’

‘তেমন লেখক না। টুকটাক লেখার চেষ্টা করি।’

‘ভাইয়া একটা রিকোয়েস্ট করব। কিছু মনে করবেন না তো?’

রাব্বি থেমে যায়। কোনো উত্তর করে না।

‘কী হলো ভাইয়া। কিছু বলছেন না যে?’

‘বলো। তবে টাকা চাওয়া ছাড়া, অন্য যে কোনো কিছু।’

নবনী বোধহয় ইলেক্ট্রিকের শক খেল। ও পাশ নীরব।

রাব্বির অভিজ্ঞতা হয়েছে, অধিকাংশ মেয়ে ফেসবুকে পরিচয় হতে না হতে, টাকা চায়। কেউ বলে, প্লিজ চার শ’ টাকার ফ্লেক্সি দেন, আবার কেউ বলে, বান্ধবীর জন্মদিনে গিফট দেব, এক হাজার টাকা ধার দেন। আবার কেউ কেউ বলে, আমার বাবুটার জন্মদিন। ওকে কিছু গিফট করবেন না? পাঁচ শ’ টাকা বিকাশ করে দেন। ওর গাড়ির খুব সখ। একটা গাড়ি কিনে দেব। হা বা না, এর জন্য অপেক্ষা না করে ফট ফট করে বিকাশ নম্বর পাঠিয়ে দেয়। আবার কেউ একটু এগিয়ে রঙিন রুমাল ঝুলিয়ে বলে, প্লিজ, এক হাজার টাকা দেন না। খুব দরকার। আমি আপনাকে সারপ্রাইজ দেব। একদিন এসে আপনার সাথে দেখা করব।

রাব্বি কখনও এসব ফাঁদে পা দেয়নি। ওর বিচ্ছিরি লাগে। তাই নবনী রিকোয়েস্ট কথাটা বলতেই নবনীকে রাব্বি পড়ে ফেলে। ওদিকে নবনীও বুঝতে পারে, এখানে সুবিধা হবে না। তাই ওপাশ থেকে চ্যাট আসা বন্ধ হয়ে যায়।

রাব্বি আরেকবার অফিসের বিভিন্ন সেকশন ঘুরে আসে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। যে যার মতো কাজ করছে। বারোটার আগে সব কাজ শেষ করে ম্যাটার প্রেসে তুলতে হবে। দু’টার মধ্যে পাঁচ হাজার কপি পত্রিকার ছাপার কাজ শেষ করতে হবে। গেটে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কতক্ষণে পত্রিকা নিয়ে ছুটবে শহরের এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

রাব্বি রুমে ফিরে এসে আবার ফেসবুক ওপেন করে। মোবাইলে ওয়াইফাই নেট কানেকশন পাওয়ার সঙ্গে সাথে টসটস করে চার পাঁচটা শব্দ হয়। এ শব্দটা রাব্বির খুব ভালো লাগে। মন ভালো হয়ে যাওয়ার ঘণ্টাধ্বনি। অনেক বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী প্রশ্ন করে, শুভেচ্ছা জানিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। মোবাইল ফোন স্ক্রিনেই নামগুলো পড়ে নেয় রাব্বি। এই বিশ মিনিটে পাঁচটা মেসেজ এসেছে। দুটো ছেলে, তিনটা মেয়ে। পাঁচজনের মধ্যে চারজনই রাব্বির বেশ পরিচিত। মাঝে মধ্যেই নক করে। মিতালি মেয়েটা অপরিচিত মনে হয়। আগে মেয়েটির সাথে কথা হয়েছে কিনা রাব্বি মনে করতে পারে না।

পরিচিত চারজনকে এটেন্ড করে, সবশেষে মিতালি নামের মেয়েটির মেসেজ ওপেন করে।

‘হাই, কেমন আছ?’

প্রথমেই তুমি। মেসেসটা পড়ে রাব্বি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। অন্যান্য মেয়েদেরকে রাব্বি প্রথমে তুমি বলে থাকে। কিন্তু কখনো কোনো মেয়ে তাকে প্রথম ডায়ালগেই তুমি বলেছে, এমনটি রাব্বি মনে করতে পারে না। রাব্বি ভাবে নিশ্চয় সাহসী মেয়ে।

রাব্বি স্বাভাবিকভাবে উত্তর করে, ‘ভালো। তুমি?’

‘কী করো?’

‘অফিসে।’

‘এত রাতে অফিস?’

‘পত্রিকা অফিস তো, রাত-বিরাত নেই।’

‘কষ্ট হয় না, বউকে ঘরে রেখে অফিস করতে? বেচারা একা একা ঘরে।’

রাব্বি আবার হোঁচট খায়। মেয়েটি সব জেনে বলছে, নাকি ঢিল ছুড়ছে?

‘তুমি কী করো? কোথায় থাক?’

‘বরিশাল থাকি। বিএম কলেজে অনার্স পড়ি।’

এ অবস্থায় রাব্বি দ্রুত মিতালির প্রোফাইলে ঘুরে আসে। হ্যাঁ, মেয়েটি ঠিকই বলেছে। বলার সাথে প্রোফাইলের মিল আছে।

‘তুমি কি বিবাহিত?’

‘হ্যাঁ’

রাব্বি বলতে পারত। অবিবাহিত। অনেকে অনেক কিছু গোপন করে মেয়েদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দেয়। কিন্তু রাব্বি এটা কখনো করে না। ও যার সাথেই চ্যাট করে না কেন, সব সময় সত্য কথা বলে।

‘বাবু আছে?’

‘না।’

‘কতদিন।’

এবার রাব্বি থমকে যায়। মেয়েটা প্রথম দিনই ব্যক্তিগত এতকিছু জানতে চাচ্ছে!

‘কী হলো। বললে না?’

‘প্রায় এক বছর।’

‘ঠিকমতো পারো তো?’

এবারও রাব্বি থমকে যায়। ভাবে মেসেজ থেকে সরে যাবে। ইঁচড়েপাকা মেয়ের সাথে কোনো কথা নেই।

‘আমি তোমার বন্ধু না? বন্ধুর সাথে সব শেয়ার করা যায়।’

মিতালি বোধ হয় রাব্বির মনোভাব বুঝতে পেরেছে। তাই ওপাশ থেকে মেসেজটা দ্রুত ছুটে আসে।

‘তুমি এসব কী প্রশ্ন করছ। পনেরো মিনিট পরিচয়ে এ ধরনের প্রশ্ন করা যায়?’

‘ঠিক আছে। আর বলব না। তয় তোমার বউ যে রাতে খেতে নুডুলস করে দিল, সেটা খেয়েছ? কেমন হয়েছে? বউকে জানাও।’

এবার রাব্বি ঠিকই গাবগাছ থেকে পড়ে। মিতালি মেয়েটা কে!

খুব সাবধানে চ্যাট করতে হবে, মেয়েটা ব্ল্যাকমেইলও করতে পারে। এটা ভেবে রাব্বি বলে, আধাঘণ্টা পরে কথা বলি। আমার একটা ফোন এসেছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
সৈয়দ নূরুল আলম

সৈয়দ নূরুল আলম গোপালগঞ্জ জেলায় কাশিয়ানি উপজেলার, চাপ্তা গ্রামে বেড়ে উঠেছেন। বাবা মরহুম সৈয়দ জহুর আলী, মা মরহুম জাহানারা বেগম। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ সব শাখায় লিখলেও নিজেকে তিনি গল্পকার পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। গল্প দিয়েই তিনি নব্বই দশকের শুরুতে লেখালেখির জগতে আসেন।

এখন গল্প-উপন্যাসই বেশি লিখছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষোল। তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘যুদ্ধের ছবি’, ‘ভালোবাসা(প্রা:) লিমিটেড’ ও  উপন্যাস-‘মেঘের মতো মেয়েরা’, ‘আগুনরঙা মেয়ে’, ‘জাহান ও পিতারমুখ’ বেশ পাঠকপ্রিয়তা পায়।

জাতীয় পর্যায়ে তিনি কবি জসিমউদ্ দীন  পুরস্কার, বিকাশ সাহিত্য পুরস্কার, অধিকোষ পুরস্কার, রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ প্রদত্ত সম্মাননা অর্জন করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক কর্মকর্তা। দু’ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া নীনাকে নিয়ে ঢাকা, মিরপুর-১০ এ থাকেন।

Read Previous

অনুপ্রাণন অন্তর্জাল- সম্পাদকীয় (৭ম সংখ্যা)

Read Next

শর্মী দে – যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *