
শখ করে একখানা পান খেয়ে বাসে উঠেছিলাম। জানালা দিয়ে পানের পিক ফেলতে গিয়ে এক স্টাইলিশ সুন্দরী মেয়ের মাথার সিঁথি বরাবর পড়ে যায়।
মাথায় হাত দিয়ে সুন্দরী মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখি সিঁথি বেয়ে টুপটুপ করে পানের পিক তার নাকে মুখে পড়ছে। তা দেখে সুন্দরী রেগেমেগে আগুন হয়ে বাসের দরজার দিকে তেড়ে এল।
এদিকে তো ভয়ে আমার হাঁটু কাঁপছে। তাড়াহুড়ো করে পানি দিয়ে কুলি করে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে ফ্রেশ হয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে সিটে হেলান দিয়ে আরামসে চোখ বন্ধ ঘুমের ভং ধরলাম।
সামনের সিটেই এক ভদ্রমহিলা পান চিবুচ্ছিলেন। মেয়েটা এসে সরাসরি ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই বেয়াদ্দপ মহিলা, তুই আমার মাথায় পানের পিক ফেললি কেনো?
তা শুনে ভদ্রমহিলা মেয়েটার গালে ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বললেন, এই ডিস্কু মাইয়া, কাকে বেয়াদ্দপ মহিলা বলছিস? ঘোড়ার লেজের মতো চুল কালার করে চোখে সরষে ফুল দেখে উল্টাপাল্টা বকছিস কেন, নাকি গাঞ্জা টাঞ্জা কিছু খাস!
প্রতিউত্তরে মেয়েটা কিছু না বলে ডিরেক্ট মহিলাটার চুল ধরল। মহিলা তো ছেড়ে দেওয়ার লোক নন, উনিও মেয়েটার চুলের মুঠি ধরলেন।
এদিকে বাসে থাকা সকল লোকজন দুজনের চুল টানাটানির দৃশ্য আরামসে উপভোগ করছিল। মাঝখান থেকে ভদ্রমহিলার কোলে থাকা চার বছরের একটা বাচ্চা ওই ঝগড়া করতে আসা মেয়েটার গালে কামড় বসিয়ে দিল।
পরিস্থিতি তখন ভয়াবহ, তবুও কেউ থামাতে আসছে না। শেষমেশ আমিই দুজনের মাঝখানে ঢুকে থামাতে গেলে দুজনে আমার শার্ট ছিঁড়ে ফাতা ফাতা করে ফেলল।
মানবতার খাতিরে তবুও থেমে থাকতে পারলাম না। দুজনের একজনকে তো আগে থামাতে হবে। তাই মহিলাকে টেনে ধরেছিলাম। ওদিকে বাচ্চাটাকে একা পেয়ে কামড়ের প্রতিশোধ নিতে মেয়েটি কামড় দেওয়ার জন্য বাচ্চার দিকে এগোচ্ছে। যেই বাচ্চার গালে কামড় বসাতে গেল, ওমনি বাচ্চাটাকে টান দিয়ে সরিয়ে নিয়ে বাচ্চার গালের জায়গায় আমার গাল পেতে দিলাম। যার ফলাফল আমার গালে আটাশটি দাঁতের ছাপ পড়ে গেল।
এবার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে শুরু করল। মেয়েটি সরি বলে বারবার আমার হাত ধরে মাফ চাচ্ছিল। আমি তো বাপু নরম মনের মানুষ। নেগেটিভলি না নিয়ে পজেটিভলি নিয়ে ভাবলাম, কামড় দিয়েছে তাতে কী! সুন্দরী মেয়ের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়েছি এটাই অনেক। এটা ভেবে মাফ করে দিয়ে বললাম, ঠিক আছে।
তারপর মেয়েটি আমার হাত ধরে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করে ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিল, দরকার হলে কল দিতে।
ব্যস, এখন আমরা সাড়ে চার বছরের রিলেশনশিপে আছি!
আকিব শিকদার
জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানাধীন তারাপাশা গ্রামে, ০২ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে। প্রফেসর আলহাজ মো. ইয়াকুব আলী শিকদার ও মোছা. নূরুন্নাহার বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান। স্নাতক পড়েছেন শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। খণ্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু; বর্তমানে কর্মরত আছেন আইয়ূব-হেনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে।
কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল (২০১৪), দেশদ্রোহীর অগ্নিদগ্ধ মুখ (২০১৫), কৃষ্ণপক্ষে যে দেয় উষ্ণ চুম্বন (২০১৬), জ্বালাই মশাল মানবমনে (২০১৮), দৃষ্টি মেলো জন্মান্ধ চোখ (২০২৩) তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। দোলনা দোলার কাব্য (২০২১) তার শিশুতোষ কবিতার বই।
সাহিত্যচর্চায় উৎসাহস্বরূপ পেয়েছেন হো. সা. স. উদ্দীপনা সাহিত্য পদক, সমধারা সাহিত্য সম্মাননা, মেঠোপথ উদ্দীপনা পদক, পাপড়ি-করামত আলী সেরা লেখক সম্মাননা, উদ্দীপন সাহিত্য-সংস্কৃতি পদক, স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ গুণীজন সম্মাননা। লেখালেখির পাশাপাশি সঙ্গীত ও চিত্রাঙ্কন তার নেশা।