অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৫, ২০২৪
১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৫, ২০২৪
১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোমান প্রধান -
জীবন তার প্রবল হাওর, গানে জীবন— বিরহী বাউল উকিল মুন্সী

জীবন তার প্রবল হাওর, গানে জীবন— বিরহী বাউল উকিল মুন্সী

নোমান প্রধান  

সাল ১৮৮৫। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন পাসের পর, প্রজাদের মনে অসন্তোষ দানা বাঁধে। নব্য ধনীরা পরগনার জমিদারি কিনেই ক্ষান্ত হয় না, প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়ে ইংরেজ সাহেবদের মন রক্ষার প্রতিযোগিতায়। শহরে বসে গায়ে হাওয়া লাগানো ফুলবাবুরা জমিদারী পেয়ে যাওয়ার পর, গাঁওগেরামে গোমস্তা-নায়েবদের অত্যাচারের খবর পর্যন্ত রাখত না। ইংরেজরা যেহেতু বাৎসরিক নির্দিষ্ট খাজনা নিয়ে নিত, আর আঞ্চলিক খাজনার ব্যাপারে মাথা ঘামাত না; সেই সুযোগ পুরোটাই লুফে নেয় দেশীয় শোষক শ্রেণি। সর্বস্তরে ছড়িয়ে পরে জনরোষ। বিশেষ প্রেক্ষাপটে জন্ম হয় বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র আইনের। একই বছর জন্মগ্রহণ করেন, হাজার বছরের নিটোল গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতি ও জনজীবনের মুখ পাত্র আব্দুল হক আকন্দ। বাংলার আকাশে উড়ে বেড়ানোর পাশাপাশি স্রোতের বিপরীতেও সাতার কেটেছেন তিনি। আজান দিয়েছেন, খুতবা পড়েছেন, ঢোল বাজিয়ে নিজের বাঁধা গানও গেয়েছেন তিনি। পৃথিবীতে সিনেমা আবির্ভাবের আগে জন্মানো মানুষটি ভাবতেও পারবেন কী করে, একদিন তার লেখা ও সুরের গানে মুখরিত হবে বাংলা সিনেমা! অত শত ভাবার মানুষও ছিলেন না তিনি। গেয়েছেন মনের আনন্দে, মানুষের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে। পেরেছিলেনও তিনি। পোশাকি নাম তার আব্দুল হক আকন্দ হলেও মানুষ ভালোবেসে তাকে ডেকেছে ‘উকিল মুন্সী’ নামে। উকিল মুন্সী নামটা অবশ্য মায়ের দেওয়া। ছেলের জন্মের পর মায়ের সাধ জাগল ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে ‘উকিল’ বানাবেন। আইনের হাতিয়ার নিয়ে ছেলে তার মানুষের অধিকারের কথা বলবে, ন্যায়ের জন্য লড়বে। সেই সাধ থেকেই আব্দুল হক আকন্দের মা ছেলেকে ‘উকিল’ নামে ডাকতেন। পরবর্তীকালে তিনি ওকালতি পেশাতে না জড়ালেও, মায়ের দেওয়া ডাক নামটা জড়িয়ে ছিলেন সারা জীবন। মানুষ তাকে আজও মনে রেখেছে মায়ের আহ্লাদের ডাক নামেই। মায়ের ‘উকিল’ বড় হয়ে, আল্লাহ রব্বুল আলামিনের বান্দাদের প্রার্থনার ঘর মসজিদে নিয়োজিত হন ইমাম হিসেবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে ঈমাম সাহেবকে লোকে মোল্লা, হুজুর বা মুন্সী নামেই ডাকে। নেত্রকোনা অঞ্চলে মুন্সী নামেই ডাকত। ছেলেবেলায় তার মায়ের দেওয়া ডাক নাম উকিলের পেছনে যোগ হলো ‘মুন্সী’। সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ আদায়ের পর আরেকটি সাধনায় মত্ত হতেন তিনি। কখনো একা, কখনো শিষ্যদের নিয়ে গানের আসর করতেন। বাড়ির উঠানে, নিজের লেখা ও সুরে গেয়ে তিনি জন্ম দিয়েছেন অসংখ্য লোক গান। আর তার এই সৃষ্টিশীল কর্ম নামের আগে যোগ করে দিয়েছে ‘বাউল’। বাউল উকিল মুন্সী এমন একটা নাম যা ব্যাক্তির নামের পাশাপাশি প্রকাশ করে স্বতন্ত্রতা, বৈচিত্র্যতা। বাংলার বিরহী বাউল উকিল মুন্সীর জীবনও হাওরের মতো নানান সাজে সেজেছে, মেতেছে মাতাল হাওয়ায়।

ইংরেজশাসিত গ্রাম বাংলার তৎকালীন সমাজে লোকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে জন্মসাল মনে রাখত না। খুব নিশ্চিত কোনো সূত্র ধরলেও দুই-চার-দশ বছর এদিক ওদিক সাধারণ ব্যাপার হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়। উকিল মুন্সীর ক্ষেত্রে ১৮৮৫ সালের ১১ জুন তারিখ পাওয়া যায়। হিসাবমতো সালটা অনেকাংশেই ঠিক বলে ধরে নেওয়া যায়। উকিল মুন্সী তার পিতা গোলাম রসূল আকন্দের প্রথম সন্তান। মাতার নাম উকিলেন্নেসা। বর্তমানের নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরি উপজেলার বোয়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলার এই প্রবাদপুরুষ। খালিয়াজুরির মাটি লোক স্বংস্কৃতির রসে সিক্ত। জারি সারি ভাটিয়ালি গীত যেমন প্রচলিত তেমনি নৌকাবাইচ, কুস্তির মতন লোকজ খেলাধুলাও বেশ জনপ্রিয়। বেশ সংস্কৃতি বিধৌত অঞ্চলেই উকিলের বেড়ে ওঠা। শৈশবের শুরুতেই উকিল মুন্সী তার পিতাকে হারান। ধনাঢ্য পরিবারে জন্মেও জীবন সংগ্রাম শুরু করতে হয় খুব অল্প বয়সে। উকিল মুন্সীর মামারা তার মায়ের বাবার বিয়ে দিলে উকিলের সংসারের প্রতি আর টান থাকে না। ছন্নছাড়া জীবনে তার সঙ্গী হয় গান। তিনি ঘাটুগানের দলে যোগ দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ভবঘুরের মতো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো উকিলের পৈত্রিক সম্পত্তিও ধীরে ধীরে বেহাত হতে থাকে। মায়ের নতুন সংসারে ব্রাত্য হয়ে ছিলেন কিছুদিন। সৎভাই জন্মানোর পর অনাদর অবহেলা বেড়ে গেলে ফের পৈতৃক ভিটায় ফিরে আসেন। তার আগে কিছুদিন ফুপুর সংসারেও থাকার চেষ্টা করেন। পরের ছেলেকে খুব বেশিদিন পোষণ করতে রাজি হননি ফুপুর স্বামী। দুর্ভাগ্যের সময়টা ফুপুও খুব বেশিদিন আগলে রাখতে পারেননি। উকিল ফিরে আসেন বেতাই নদীর তীরে, নিজের বাসভূমে। পরিবারবিহীন নিঃসঙ্গভাবে কাটানো সময়ে সাময়িক অভাব দূর করেন পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে। উকিলের বাকিটা সময় কেটে যেত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়ে আর পালাগান করে। ঘেটুগান শোনার নেশা ছিল তার। নিজেও গাইতে পারতেন ভালো। অল্প সময়েই মানুষের মন কেড়ে নেয় উকিলের দরদমাখা কণ্ঠ। হাওর অঞ্চলের মানুষের কণ্ঠ স্বাভাবিকভাবেই মিঠা হয়। তারা মুর্শিদি বা পালা গান ধরলে অন্য রকম আবহ সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে বিশেষ করে উকিল মুন্সীর কণ্ঠ ছিল অধিক চড়া। ধীরে ধীরে তার জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ হতে থাকে গান। বেশ পরে, একসময় পীরের কাছে মুরিদ হন তিনি। একসময় পীরের নির্দেশে পালা গান থেকে সরে যান। শৈশবেই তিনি কোরআন শিখেছিলেন, ধর্মীয় শিক্ষাও গ্রহণ করেন ভালোমতো। কিন্তু সেই শিক্ষাটা সমাপ্ত হয় আসলে তার পিতার মৃত্যুর আগেই নাকি তারপরের সময়ে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। অন্যান্য স্বচ্ছল মুসলমান পরিবারের ছেলেদের মতনই, বাংলার পাশাপাশি আরবি ও ফার্সি ভাষাও শিখেছিলেন তিনি। উকিল মুন্সীর শৈশব ইংরেজশাসিত অঞ্চলে ছিল সত্যি, তবে গ্রাম বাংলার স্বতন্ত্রতা, স্বনির্ভরতায় সেই অঞ্চল ছিল মহিমান্বিত। রশিদ উদ্দীন, জালাল খাঁ, চান খাঁ, আবেদ আলী, উমেদ আলী, চান মিয়া, গুল মাহমুদের অঞ্চলের গান বিধৌত অঞ্চলেই কেটেছিল উকিল মুন্সীর শৈশব-কৈশোর। মাতা-পিতাবিহীন অনাদর-অবহেলার ভবঘুরে জীবন খুব কম বয়সেই তার অন্তরে স্থায়ীভাবে ঠাই করে নেয় বিরহ। পরবর্তীকালে এই মহান শিল্পী পরিচিতি বাংলার বিরহী বাউল নামেও।

উকিল মুন্সীর জীবনজুড়ে গান ছিল যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি হলো তিনি ছিলেন দুর্দান্ত এক প্রেমিক পুরুষ। উকিল মুন্সীকে যারা চেনে, উকিল মুন্সীর গান যারা শোনেন তারা কম-বেশি ‘উকিলের মনচোর’কেও চেনেন। উকিলের মনচোরের নাম হামিদা খাতুন।

উকিল মুন্সী সোহাগ করে গান বেঁধেছিলেন—

ধেনু নদীর পশ্চিম পাড়ে, সোনার জালালপুর

সেইখানে বসত করে উকিলের মনচোর’।

জালালপুর গ্রামটি অবস্থিত মোহনগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে উকিল মুন্সীর এক চাচা থাকতেন। চাচার বাড়িতে কিছুদিনের জন্য আস্তানা গাড়ে উকিল মুন্সী। নিজের স্বভাবগুণে অল্প দিনেই জালালপুরের মানুষের প্রিয়মুখ হয়ে উঠে উকিল। এ বাড়ি ও বাড়ী, এদিকে সেদিক ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে উকিল একদিন দেখা পায় হামিদা খাতুনের। হামিদা খাতুনের পিতা লবু হোসেন ছিলেন গ্রামের সাধারণ দরিদ্র কৃষক। সে যাই হোক, তৎসময়ে উকিল ভিটেহীন, চাচার কাছে আশ্রিত ছিল ঠিক কিন্তু তিনি আকন্দ বাড়ির ছেলে। ভালোবাসা তো জাত-কুল-ঠাই মিলিয়ে হয় না। ভালোবাসার পাশাপাশি উন্মাদনাও সৃষ্টি হয় উকিল মুন্সীর মনে। সময়টা আনুমানিক, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিকে ১৯১৪-১৫ সালের দিকে অঞ্চলে হামিদা খাতুন ওরফে লাবুসের মা’কে নিয়ে উকিল মুন্সীর বাঁধা গান গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এক কান দুই কান হতে হতে প্রায় সবাই জেনে যায় উকিল মুন্সীর প্রাণের কথা, প্রণয়ের কথা। ওদিকে উকিল মুন্সীর চাচার কানে সেই খবর গেলে তিনি বেশ রাগান্বিত হন। বংশের সাথে অমন অসম সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি হন নাই তিনি। শুধু উকিলের চাচাই নন, কোনো আত্মীয়ই এই সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি হন না। চাচা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন উকিলকে। এমনকি জালালপুরে ধারে ঘেঁষতে না পারেন, সেই ব্যাবস্থাও করা হয়। তারপরের সময়টা উকিল কাটিয়েছেন বেশ এলোমেলো। বিরহ আরও জোরালো হলে এই গ্রাম ওই গ্রাম ঘুরে বেড়াতে থাকে মুন্সী। তৎসময় আরেকটি বড় দুঃসংবাদ পান উকিল, তার সহোদর আব্দুল মজিদ আকন্দ ইটনায় অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করে। উকিলের পাশে দাঁড়ানোর মতো আর কেউ রইল না। তখন তিনি বিচ্ছিন্নভাবে জৈনপুর, পাগলাজোর, শ্যামপুর ইত্যাদি এলাকায় বসবাস করেন কিছুদিন। চরম দুর্দিনে পতিত হলে তখনই মূলত তিনি ব্যাপকভাবে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রয় করতে থাকেন। আনুমানিক তিরিশ বছর বয়সে দরসে অবস্থান করেন তিনি। ইমামতি পেশায় নিয়োজিত হন। পাশাপাশি বাচ্চাদের আরবি পড়াতে শুরু করেন। সেই সময় নির্জনে অবস্থান করতেন আর গজল লিখতেন। একা জীবনে গজল গীতকে সঙ্গী করে সময় কাটাতে থাকেন। জানা যায়, মাঝরাতে তাহাজ্জুদ নামাজের পর কোরআন তেলাওয়াত করতেন আর স্বরচিত গজল গাইতেন। স্বাভাবিকভাবেই স্রষ্টার স্তুতির মাধ্যমেই নিজের বিরহ ভুলে থাকতে চাইতেন উকিল মুন্সী। কিন্তু অন্যদিকে হামিদা খাতুনের অবস্থাও কিন্তু বেগতিক। উকিল মুন্সীকে হারিয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়েন হামিদা খাতুন। কিছুতেই উকিলের সাথে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি। প্রায়ই কান্নাকাটি করতেন এবং উকিলকেই বিয়ে করবেন বলে গোঁ ধরে থাকায় শেষে হামিদা খাতুনের পিতা লবু হোসেন মেয়ের কাছে নতি স্বীকার করে। উকিলের কোনো আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতি ছাড়াই কলমা পড়িয়ে তার হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হন। কিন্তু চাইলেই তো সব হয়ে যায় না। ওদিকে মনে বিরহ নিয়ে উকিল মুন্সী লাপাত্তা। এদিক ওদিক উকিলের খোঁজ করতে থাকেন লবু হোসেন। অবশেষে উকিলের সন্ধান পেলে, উকিল মুন্সীর কোনো আত্মীয়ের উপস্থিতি ছাড়াই হামিদা খাতুনের সাথে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তৎসময় বিয়ের কথা গোপন রাখা হলেও পরে উকিল মুন্সীর চাচার বাড়ি অর্থাৎ কাজি বাড়ির মানুষ এই বিয়ে মেনে নেয়। জয় হয় প্রেমিক পুরুষ উকিল মুন্সী ও প্রেমময়ী হামিদা খাতুনের। পরবর্তীকালে শশুরালয়েই ঘর তুলে বেশ কয়েক বছর জালালপুরে বসবাস করেন উকিল মুন্সী। সেখানেই তার প্রথম সন্তান ও পুত্র আবদুস সাত্তার জন্মগ্রহণ করেন। আব্দুস সাত্তারও নিজ জীবনে গানকে ভালোবেসে, গান গেয়ে অনেক নাম করেন। বাউল আব্দুস সাত্তার হিসেবেই তিনি পরিচিত।

প্রয়াত লোকশিল্পী ও বাঁশরী বারী সিদ্দিকের কণ্ঠে সারা দেশে জনপ্রিয় হয়, ‘শুয়াচান পাখি’ গানটি। প্রশ্ন আছে কে এই শুয়াচান পাখি? কেউ বলে হামিদা খাতুন। কেউ বলে পীর মোজাফফর আহমেদ (রহ.)। উকিল মুন্সীর আত্মীয় ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে জানা যায়, পীরের বিরহেই তিনি গানটি রচনা করেছিলেন। শুধু শুয়াচান পাখি’ই নয়, পূবালী বাতাসে’র মতো অতি জনপ্রিয় গানও পীরের বিচ্ছেদেরই ফসল। সন্তানদের জন্মের কিছুদিন পর দরস হিসেবে কুটিয়ালি নামের এক গ্রামে যান। সেখানে গজল ও গান রচনা করতেন, গাইতেন। লোকমুখে ধীরে ধীরে তার নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আধ্যাত্মিক ভাব ধীরে ধীরে জাগ্রত হওয়ার কালে তিনি চলে যান হবিগঞ্জ জেলার রিচি নামক গ্রামে। সেখানে পীর মোজাফফর (রহ.)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তারপর থেকে শরিয়তী মতাদর্শে শুধু একতারা বাজিয়েই গান করেছেন। অনেকে বলেন, শুধু ঢোল বাজিয়েই গান করতেন উকিল মুন্সী।

পীরকে দারুণ ভালোবাসতেন উকিল মুন্সী। এমনকি মোজাফফর (রহ.) এর কাছ থেকে খেলাফতপ্রাপ্তিও ঘটে। উকিলের জীবনে যেমন গানের শিষ্য ছিল তেমনি আবার মুরিদও ছিল। পীরের সাথে শিষ্যের সম্পর্ক ছিল দারুণ ভাবের।

ওয়াহিদ সুজনের কল্যাণে, উকিল মুন্সী সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা বিষয় লোক সামনে এসেছে। পীর-শিষ্যের সম্পর্ক নিয়ে একটি ঘটনা উল্লেখ্য করা যায়। উকিল মুন্সীর মেয়ে রাজিয়া খাতুনের বরাত থেকে ঘটনাটি বয়ান করেছেন ওয়াহিদ সুজন, তার ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ বইয়ে।

“রাজিয়া খাতুনের কাছে ওয়াহিদ সুজনের প্রশ্ন ছিল, ‘উকিল পীরের মুরিদ হওয়ার পর শরিয়তের সাথে তার যোগাযোগ ছিল কেমন’?

সেই প্রশ্নের জবাবে রাজিয়া খাতুন ওয়াহিদ সুজনকে জানান, ‘বাবা আল্লাহওয়ালা মানুষ। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তার পীরের সাথে সম্পর্ক ছিল অন্যান্য ভক্তদের চেয়ে আলাদা। পীর সাহেব গান না করলেও গানের কারণে উকিলকে বেশি স্নেহ করতেন। একবার পীরের দরগায় ওরস ছিল। অসুস্থ থাকায় উকিল সেবার যেতে পারেন নাই। পীর সাহেব বেজায় রেগে গেলেন। ভক্তদের বললেন, উকিল মুন্সী আসলে তাকে ভিতরে ঢুকতে দিবা না। তার কারণে ওরসটাই নষ্ট হলো। কয়েকদিন পরে উকিল পীরের সাথে দেখা করতে গেলেন। ভিতরে ঢোকার আগেই গানে টান দিলেন উকিল, ‘নিদয়ার ধনরে…’। এই গান শুনে পীর বাইরে বের হয়ে এসে উকিলের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন। বাকি ভক্তরা অনুযোগ করে বলল, আপনি নিজেই বললেন আমরা যেন উকিলকে ভিতরে ঢুকত না দেই। আর আপনি নিজেই তপস্যা ভেঙে তারে নিয়ে যেতে এলেন। পীর সাহেব কিছুই বললেন না”।

পীরের শানে বেশ কিছু গান বেঁধেছিলেন উকিল মুন্সী। তারমধ্যে একটি—

সংবাদে কি অঙ্গ জুরায় সখি বিনা দরশনে

শিশিরে না ভিজে মাটি বিনা বরিষণে

যে যাহারে ভালোবাসে নয়নে নয়নেরই কোণে

তারে কি যায়রে ভুলে থাকতে জীবনে।

না দেখিয়া সংবাদ পাইলে দুঃখ দ্বিগুণ বায়

যেমন কাটা ঘায়ে লেবুর রসে ধরে তার গায়।

আরেকটি গান—

এসো হে কাঙালের বন্ধু তুমি দেখা দাও আসিয়া

আমার পুড়া অঙ্গ জুরাইতাম তোমার চান্দ মুখ দেখিয়া।

উকিল মুন্সী বাঁধা গানগুলোর অধিকাংশই বিচ্ছেদের ভাবে। প্রতিটা গানের নিগূঢ়েই লুকিয়ে আছে অন্য অর্থ। গানের সুর মনকে দোলা দেবে, ভাব জাগাবে মনের আকুতি আর গানের কথায় ভাবুক পাবে চিন্তার খোরাক। লোক ও বাউল গানের অন্যতম এই দিকগুলো উকিল মুন্সীর সব গানেই দারুণভাবে আছে।

ধীরে ধীরে কুলিয়াটি গ্রামে উকিল মুন্সীকে কেন্দ্র করে লোক শিল্পীদের আখড়া গড়ে ওঠে। গান সাধনার পাশাপাশি শিক্ষাদানের ব্যাপারটিও চলত। কুলিয়াটি গ্রাম থেকে উঠেছে অনেক বাউল শিল্পী যেমন হৃদয় সরকার, ধনাই খাঁ, আব্দুল জলিল, নুরুল ইসলাম, আবু চানসহ আরো অনেকে। গানের দলে উকিল মুন্সী ছিলেন নেতৃ স্থানীয়। সৃষ্টিতত্ত্ব, দেহত্তত্ব, গুরু-শিষ্য, নারী-পুরুষের প্রণয়সহ নানা বিষয়ে পালা গান রচনা করে গাইতেন তিনি। তবে তার বিচ্ছেদী বা বিরহের গান ছিল ভিন্ন মাত্রার।

বাউল শিল্পী হয়েও সামাজিক জীবনে তিনি ব্রাত্য ছিলেন না। গাঁওগেরমের মানুষ তাকে ভালোবাসত। শুধু গান শুনতেই নয়, ধর্মীয় বিষয় জানতেও তার কাছে ছুটে আসত মানুষ। মিলাদ, খতম, জানাজা সর্বত্রই তিনি ছিলেন উপস্থিত। মানুষ উকিল মুন্সী কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। কণ্ঠ চড়া ও মধুর ছিল বলে তিনি নামাজের ওয়াক্তে আজান দিলে দূর থেকেই লোকে শুনতে পেত। মোনাজাতেও তার কণ্ঠ ছিল দরাজ। গান ও ধর্মীয় জীবনের এমন দারুণ সমাহার বিরল। আর সব পরিচয়েই তিনি মানুষের প্রিয়মুখ। আজান, মোনাজাত, তেলাওয়াতের মতো তার গজল ও গানের কণ্ঠও ছিল জনপদের মানুষের নিকট খুউবই প্রিয়। মৃত্যুর পর, শেষ বিদায়ের জানাজা পরানোর জন্য অনেক বৃদ্ধ তাকে আগাম অনুরোধ করে যেতেন। এমনও শোনা যায়, গানের মাহফিল চলাকালীন ডাক আসায়, গান থামিয়ে জানাজা পড়াতে চলে গেছেন উকিল মুন্সী। দীর্ঘ জীবনে নানান রকম ঘটনার মধ্যে দিয়ে গেলেও, আচরণ ও কর্মগুণে উকিল পেয়েছিল তার জনপদের অকৃপণ ভালোবাসা ও সম্মান। সারা জীবন তার গানেরই মতো মাথা উঁচু করে ছিলেন উকিল মুন্সী।

দীর্ঘ জীবনে অসংখ্য জানা অজানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে বাহিত হয়েছে উকিল মুন্সীর জীবন যার সব জানা ও বলা সম্ভব হবে না। তবুও তার জীবনে টুকরো টুকরো কিছু ঘটনা আছে যেগুলো না বললেই নয়।

একবার, মসজিদে গান করা নিয়ে এক অতি উৎসাহী লোক থানায় অভিযোগ করে উকিলের বিরুদ্ধে। ঘটনার তদন্ত করতে আসে পুলিশ অফিসার। আসে লম্বা সুঠামদেহী সুদর্শন পুরুষ উকিল মুন্সীকে দেখে, মুখে তার সাদা লম্বা দাড়ি। যাকে বলা হতো রবীন্দ্রনাথের মতন সুন্দর। সব জেনে, গান শুনে শেষে নাকি সেই পুলিশ অফিসারটি উকিল মুন্সীর ভক্ত হয়ে যায়।

আরেকটি ঘটনা আছে আরও মজার। একবার নাকি কোন এক সূত্র ধরে উকিল গেলেন কলকাতায় গান গাইতে। গান গাইতে মানে গানের রেকর্ড করতে। কিন্তু চড়া কণ্ঠের অধিকারী উকিলের গান তো আর রেকর্ড হয় না। দরাজ কণ্ঠ চড়িয়ে তিনি গানে টান দিলেই নাকি রেকর্ড ফেটে যায়। শেষে গান রেকর্ডিং অসমাপ্ত রেখেই তাকে বাড়ি ফিরতে হয়।

উকিলের সাথে তার পীরের সম্পর্ক ছিল অতি মধুর। কিন্তু পীরের চির বিদায়ের ঘটনাটা খুবই হৃদয়বিদারক। লোকশ্রুতিতে জানা যায়, হঠাৎ ইন্তেকাল করেননি মোজাফফর (রহ.) । তখন পীরের মাথার কাছেই বসা ছিল উকিল মুন্সী। পীর সাহেব নিজ কণ্ঠে উকিলের লেখা— ‘আতর গোলাপ ছিটাইয়া শুইয়া রইলাম বিছানায়, বন্ধু তোমারি আশায়’ গানটি গেয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরেন। সেই চাদরে ঢাকা অবস্থাতেই তিনি দেহ ত্যাগ করেন। এই ঘটনা উকিলের প্রেমিক মনে বড় প্রভাব ফেলে। সেই বিরহেই উকিল পরে গান বেঁধেছিলেন—

পুবালি বাতাসে

বাদাম দেইখা চাইয়া থাকি আমার নি কেউ আসে রে

আষাঢ় মাইসা ভাসা পানি রে।

যেদিন হইতে নয়া পানি আইলো বাড়ির ঘাটে

অভাগিনীর মনে কত শত কথা উঠে রে

আষাঢ় মাইসা ভাসা পানি রে।

কত আসে কত যায় রে নায় নাওরির নৌকা

মায়ে ঝিয়ে বইনে বইনে হইতেছে যে দেখা রে

আষাঢ় মাইসা ভাসা পানি রে।

আমারে নিল না নাইওর পানি থাকতে তাজা

দিনের পথ আধলা যাইতাম রাস্তা হইতো সোজা রে

আষাঢ় মাইসা ভাসা পানি রে

কত লোকে যায় রে নাইওর এই না আষাঢ় মাসে

উকিল মুন্সী হইবে নাইওর কার্তিক মাসের শেষে রে

আষাঢ় মাইসা ভাসা পানি রে।

নারী ভাবের গানটির শেষ চরণে উকিলের মনের ভাব প্রবল হয়েছে। গ্রামে বধূদের বাবার বাড়ি নাইওর যাওয়ার আদর্শ সময় বর্ষার আষাঢ় মাস হলেও উকিল কার্তিকের শেষে নাইওর যেতে চায় কারণ সেই সময় তার প্রাণের পীর দেহ মোবারক ত্যাগ করেছিল।

ওয়াহিদ সুজনের ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ বইয়ে দুলাল কমান্ডারের বরাতে উকিলের জীবদ্দশার দুইটি সম্মানজনক ঘটনা জানা যায়। একটি হলো, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জনসমাবেশে গান পরিবেশন করেছিলেন উকিল মুন্সী। সত্যিই এই ঘটনা একজন বাঙালী শিল্পীর জন্য অতি বিরল। আরেক বাউল সম্রাট আব্দুল শাহ করিম একুশে পদক পাওয়ার পর জানিয়েছিল এরচেয়েও বড় প্রাপ্তি তিনি আগেই পেয়ে গেছেন। কী সেই প্রাপ্তি? তা হলো মওলানা ভাসানী এক জনসমাবেশে শাহ আব্দুল করিমকে বলেছিলেন শাহ করিম জনমানুষের শিল্পী।

দুলাল কমান্ডারের সূত্রে পাওয়া দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো, নেত্রকোনায় একবার মাওলানা মনজুর হকের জনসমাবেশ হয়। সেখানে হক সাহেব উকিল মুন্সীকে দিয়ে মোনাজাত করান।

বাংলার মাটিতে জন্মানো একটি মতবাদ বাউল। যুগে যুগে, কালে কালে নানান গুনীনের দর্শন, গীত, বাণীতে ধীরে ধীরে মহীরুহে পরিণত হয়েছে বাউল তত্ত্ব। কোথাও গুরুমুখী, কোথাও শুধু মরমি, কোনো অঞ্চলে সম্পূর্ণ জীবন দর্শনের চর্চাও করতে দেখা যায় বাউলদের। সিলেট অঞ্চলের যেমন সুফিবাদ আর বৈষ্ণব ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়, কুষ্টিয়ায় গুরুমুখিতা। বৃহত্তর হাওর অঞ্চলে তা পেয়েছে আরেকটু স্বতন্ত্রতা। তবে সহজিয়া ব্যাপারটা সবখানেই উপস্থিত। এই বাউল দর্শনকে ধর্ম স্থানীয় চিন্তা করে, দর্শন আর ধর্মের জগাখিচুড়ি রান্নার মতো কাজ উকিল মুন্সী করেননি। একটি দর্শনকে, একটি ভাবধারাকে, মরমি দৃষ্টিকোণ থেকে দারুণভাবে দেখতে পেরেছিলেন। সেই চর্চা করতে তার কোনো অসুবিধা হয়নি। সাধারণ মানুষকে কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যাসহ বোঝানোর মতো সক্ষমতাও তার ছিল।

গানকে ভালোবেসে ঠকেন নাই উকিল মুন্সী। জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি মনে প্রাণে আপাদমস্তক গানের মানুষ ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ ভারতে জন্মে পাকিস্তান আমল দেখেছেন, পেয়েছেন স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বারবার ইতিহাসের বাঁক বদল হয়েছে, বিশ্বযুদ্ধ হানা দিয়ে গেছে দুই দুইবার, ভূরাজনীতি আমূল বদলেছে বাংলায়, এসেছে প্রযুক্তিনির্ভর বদলের হাওয়া। এত এত বদল তার শিল্পীসত্তাকে কি আঘাত করতে পেরেছিল? মনে হয় না খুব একটা পেরেছিল। শুরু থেকেই তিনি সামাজিক স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতরে গেছেন। সামাজিক ধ্যান ধারণাকে যে খুব একটা পাত্তা দিতেন না তা তার জীবনের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যায়। গ্রাম অঞ্চলে বরাবরই কাঠমোল্লাদের বাড়াবাড়ি। আজ, একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে এসে একজন ইমাম সাহেব ঢোল বা একতারা নিয়ে গান করার সৎ সাহস দেখাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা যায়। আর সেই শতাব্দী আগে, উকিল মুন্সী কতটা সাহসী হলে নিজের মতো করে ধার্মিকতার পাশাপাশি গানের জীবন পরিচালিত করতে পেরেছিলেন তা বলাই বাহুল্য। শুধু গানের বেলায়ই নয়, হামিদা খাতুনকে যখন বিয়ে করে আনেন তখনো নিজের বংশ, আত্মীয়দের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে পেরেছিলেন তিনি সৎ সাহসেরই কারণে। উকিল মুন্সী ভেতরে ভেতরে নিশ্চয় বড় একজন প্রেমিক পুরুষ, নতুবা এমন সাহসের জোগান আসত কোথা থেকে। প্রেমিক হৃদয় তার অল্পেই ব্যাকুল হতো বলেই কি বেঁধেছিলেন একের পর এক মন মাতাল করা বিরহী গান? হয়তো। তার উত্তর জানার জন্য উকিল মুন্সী আজ আমাদের সামনে নেই কিন্তু তার কর্ম বিদ্যমান। বাংলার লোক সাহিত্য স্বংস্কৃতিকে দুহাতে সাজিয়েছেন হাজারো গান দিয়ে। সেই সব গানও তো আমরা লিপিবদ্ধ করতে পারি নাই। না জানি এই কীর্তিমানের কত গান হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে। সব ফিরিয়ে আনতে না পারলেও চেষ্টা করলে এখনো হয়তো অনেক গান লিপিবদ্ধ করা সম্ভব। বাঙালি ভাষা বীর। এই ভাষাই আমাদের মর্যাদা, আত্মসম্মান, ভালোবাসা। বাংলা ভাষাকে যারা সারা জীবন সমৃদ্ধ করে গেছেন কোন বিনিময় ছাড়াই, তাদের কি জাতি সম্মানিত করতে পেরেছে। আজও কত লোক শিল্পী রয়ে গেছেন অজানা, কত সৃষ্টি হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন; তার খবর কে রাখে!

ফিরে যাই উকিল মুন্সীর কথায়। এই মহান শিল্পীর শেষ জীবন খুব একটা ভালো যায়নি। বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়া পাকুর গাছকে জড়িয়ে ধরেছিল দুঃখের লতা। আনুমানিক ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ কিংবা ১৯৮০ সালে উকিল মুন্সীর মনের মানুষ, তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী পরলোক গমন করেন। জীবনসঙ্গিনীর প্রস্থানে তিনি ব্যাপক মনে কষ্টে ভুগেছিলেন তা আর বলের অপেক্ষা রাখে না। তার কিছুদিন পরেই, কোনো এক গানের অনুষ্ঠানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন উকিল মুন্সীর প্রথম সন্তান আব্দুস সাত্তার। ফিরে আসার কিছুদিন পর আবদুস সাত্তারও দেহ ত্যাগ করেন। অন্য বরাতে পাওয়া যায়, জ্বরের শরীরে নিয়ে গানের অনুষ্ঠানে গিয়ে, সেখানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাউল আবদুস সাত্তার। পরপর দুজন প্রাণাধিক প্রিয় স্বজন হারিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুব মুষড়ে পড়েন উকিল মুন্সী। তারপর মসজিদের ইমামতিও ছেড়ে দেন। শারীরিকভাবে অসুস্থতা ভর করতে থাকে। সেই সময়টায় সারাদিন ছেলের কবরের পাশেই বসে থাকতেন উকিল মুন্সী। তার কিছুদিন পর একদিন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে, স্বজন ভক্তদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আমাদের উকিল মুন্সী। তার সাধ ছিল, পীরের মতন কোনো এক কার্তিকের শেষে নাইওর হবেন শেষবারের মতো। তা হয়নি, হিম জমা পৌষে তিনি ছেড়ে যান মাটির পৃথিবী।

+ posts

নোমান প্রধান। মাতা, শিক্ষিকা নাছরিন বেগম এবং পিতা, কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোছলেহ উদ্দিনের কনিষ্ঠ সন্তান নোমান প্রধানের জন্ম নরসিংদী সদর উপজেলার বানিয়াছলে। শিক্ষা জীবনে, নরসিংদী জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রাক্ষ্মন্দী কে.কে.এম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষ করে কলেজের পাঠ নরসিংদী সরকারী কলেজে। পরবর্তীতে ঢাকাস্থ একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা হয়।

সাহিত্যচর্চা শুরু হয়, শিক্ষা জীবনের শেষ দিকে ব্লগে লেখার মাধ্যমে। পরবর্তীতে সাহিত্য পত্রিকায় লেখালেখির ও লোক স্বংকৃতির প্রচারণামূলক কাজের মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা চলতে থাকে। বর্তমানে কবিতা, গান, চিত্রনাট্য, ছোট গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস লেখার মাধ্যমে সাহিত্য চর্চা অব্যাহত আছে।

প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহঃ কাব্যগ্রন্থ- শ্রেষ্ঠাংশে (২০১৯), গদ্যগ্রন্থ- বহুরূপী মৃত্যু (২০২১)

Read Previous

জলছবির প্রতিচ্ছবি

Read Next

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন, ৪র্থ সংখ্যা (এপ্রিল-২০২৩)