অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অক্টোবর ১৮, ২০২৪
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তোফায়েল আহমদ -
যাত্রা অন্তহীন

এইসব ব্যস্ত মানুষের জীবন, কোলাহল, হই-হুল্লোড় আর নীরবতায় ঢাকা আচ্ছন্ন প্রহর, প্রবল যন্ত্রণা-বেদনার মুহূর্তে আমাদের অবুঝ বালিকার মতো হু হু করে কেঁদে ফেলা ছিল।

শোচনীয় পরাজয়, চাইলেই নতুন এক সকালের শপথে আমরা সিংহের গর্জন দিতে পারতাম, বেলাশেষে যেহেতু গায়ে টাটকা মিষ্টি রোদ্দুর মেখে নিয়েছি, সেহেতু আমরা কান্নাকাটি আর করব না, দেয়ালে দেয়ালে লিখে দেব— কান্না-টান্না করা নিষেধ, তারপরও কেউ কান্না করলে আমরা তাকে জেল-হাজত করব না, একমনে হেঁটে গিয়ে তুমি হোঁচট খেয়ে চিৎপটাং হবে তা আমরা টের পেয়েছিলাম শত বর্ষ পূর্বে, এই বর্ষে তুমি চোখে দেখছ সর্ষেফুল, নিজের করুণ ইতিহাসে বিচরণ করেছ আচ্ছামতো, চোখের জল বিসর্জন দিয়েছ ইচ্ছামতো, তোমার জন্য অন্ধত্বের দরজা হা করে আছে, কিছুকালের মধ্যে অন্ধ হয়ে যাবে তুমি, তখন সবাই তোমার করুণ ইতিহাসের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে উঠবে— হায় হতভাগা রে, ক্ষুধার অসহনীয় যন্ত্রণায় তোমার বত্রিশটা দাঁত করে উঠবে ঝকমক চকমক, এক টুকরো রুটির টানে অমাবস্যার নিশিতে ছুটবে তুমি, কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ করুণস্বরে বলবে— আহারে অসহায় মানুষ, একটি রুটির জন্য এত দৌড়ঝাঁপ, ব্যাঁটা হতচ্ছাড়া!

পূর্ণিমার রজনীতে নিয়ে যেও এসে আমায়, আমি তখন হব ‘ঝলসানো রুটি’, ঘুটঘুটে কালো মুখে তুমি তখন গতিহীন দৌড় যাবে, এই যে তোমার কাহিল পরিণতি, আমরাই শুধু এরজন্য দায়ী নই, বিশাল মানুষ -প্রজাতির ভিড়ে একমাত্র পাপী আমরাই নই, পাপ-পুণ্যের নীল খাতা ঘোলাটে করে ফেলেছে কে যেন, হয়তো আমাদেরই কেউ একজন, সন্ধান-অনুসন্ধান করে আমরা বের করব না কে সে?

তবে আমরা সতর্কতার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি জমিনের শেষ প্রান্তে দেব ছড়িয়ে, আমাদের অগোচরে যাতে কিছু অঘটন না হয়ে যায়।

—এই আচমকা কীসের ঘ্রাণ যেন হাওয়ায় ভেসে আসছে!

—আসুক, তাতে হয়েছে কী?

—হয়েছে তোমার মাথা।

—হা হা মাথামুণ্ডুই তো নেই।

—আছে কী তাহলে তোমার! শুনি?

—হাসি আর কান্না।

—ন্যকামোর তো অন্ত নেই।

—সর্বনাশ! আমাদের নোঙর করা নাওটি মাঝ দরিয়ায় এল কেমন করে হাবিব ভাই!? ভয়ংকর কোন পথের দিকে পা বাড়ায়েছি আমরা!

—সেটাই তো বেশ, ভয়ংকর পথ বড় ভালোবাসি আমি।

—উঁহু! ভালোবাসো না। ছাই বাসো!

—বললাম তো ভালোবাসি।

—ভালোবাসা কাকে বলে জানো তো?

—নাহ, তোকে জানি।

—এখানে থেমে পড়তে হবে আমাদের।

—থামাথামির কিছু নেই রে বোকা।

—থামুন! একশ গজ দূরে থাকুন।

—না, আমাদের যাত্রা এক নিঃশেষের পথে।

রানীগাঁও, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ থেকে

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

সম্পাদকীয়, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল অনুপ্রাণন ৬ষ্ঠ সংখ্যা

Read Next

আবু আফজাল সালেহ – যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *