ম্যাগাজিন: আবেগ
সম্পাদক: আশরাফ খান
প্রচ্ছদ: হাফিজ সুফিয়া
প্রকাশনায়: আবেগ পাঠচক্র, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশকাল: ডিসেম্বর,২০২১
মূল্য: ৫০ টাকা, পৃ: ৭১
আলোচনার শুরুতেই লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে একটু জেনে নিই। শিল্প-সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ে চলমান ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা ও মতামত ব্যক্ত করার মুদ্রিত বাহনকে বলা হয় লিটল ম্যাগাজিন। এ ম্যাগাজিন হবে অনিয়মিত ও অবানিজ্যিক। এটা একটা ছোটো সমমনা নব্য গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে যার চিন্তা-ভাবনা-দর্শন চলমান ধারা থেকে ভিন্ন এবং অভূতপূর্ব।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ছোট্ট মফস্বল শহর সিরাজগঞ্জ।এ শহরের টানাপোড়েনের জীবনের মাঝে যে একটা গোষ্ঠী শিল্প-সাহিত্যের চর্চাকে বাঁচিয়ে রেখেছে ‘আবেগ পাঠচক্র’ তার নাম। আমাদের আলোচ্য বিষয় আবেগ পাঠচক্রের মুখপত্র ‘আবেগ’ এর চতুর্থ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা।
ম্যাগাজিনটি দক্ষ হাতে যত্নের সাথে সম্পাদনা করেছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আশরাফ খান।তার সাথে আছেন আরও দুজন সাহিত্য অন্তপ্রাণ ব্যক্তিত্ব কবি ও সাহিত্যিক যাহিদ সুবহান এবং মীম মিজান। সবার উপরে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন সিরাজগঞ্জের প্রবীণ সাহিত্যিক এস.এম.এ হাফিজ।
এবার ম্যাগাজিনের ভেতরে ডুব দেয়া যাক। কভার পাতা উল্টিয়েই আমরা পাই বাংলাদেশের প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে নিয়ে কামরুল ইসলাম ঝড় ভাইয়ের লেখা নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ। এ প্রবন্ধে ঝড়- ভাই হাসান আজিজুল হককে নিয়ে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। তিনি হাসান আজিজুল হককে যেমন দেখেছেন তার সুন্দর শিল্পিত আলেখ্য প্রদান করেছেন। মাটিবর্তী মানুষের জীবনের শিল্পিত রুপকার, রাঢ়বঙ্গের সন্তান হাসান আজিজুল হকের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে এ সংখ্যায়। প্রাণবন্ত এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মীম মিজান। প্রয়াত লেখক হাসান আজিজুল হকের জীবন ও সাহিত্যের বিস্তারিত আলোচনা বিধৃত হয়েছে সাক্ষাৎকারটিতে।
কবিতা স্থান পেয়েছে অদ্বৈত মারুত, হাসনাইন হীরা, মোহাম্মদ জসিম, কাজী শোয়েব শাবাব, রনি বর্মণ, শফিক লিটন, সমতোষ রায়, বঙ্গ রাখাল, আহমেদ তানভীর, নুরন্নবী খান জুয়েল, আদিত্য আনাম, মারুফ আহমেদ নয়ন, শাকিব শাকিল, শৈবাল নূর, সাফওয়ান আমিন, হিম ঋতব্রত, ইয়ার খান, মুহাম্মাদ শাওয়াব প্রমুখ কবির। সবগুলো কবিতাই সুখপাঠ্য ও জীবন ঘনিষ্ঠ। মো. আলী কবির হায়দার, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল খালেক মন্টুর লেখা মুক্তিযুদ্ধ প্রবন্ধ পত্রিকাটিকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে।
লিটিল ম্যাগ ‘মানুষ’ সম্পাদক ও কবি শফিক সেলিমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যাহিদ সুবহান ও এস এম মুকুল আহমেদ। যা প্রতিটি লিটল ম্যাগ কর্মীর জন্য পাথেয়। বর্তমান বাংলা সাহিত্যের ভিন্নধারার লেখক আনিফ রুবেদের গল্প ম্যাগাজিনটিকে ওজনদার করেছে। আরও স্থান পেয়েছে সম্পাদক আশরাফ খানের দুটি অনুগল্প এবং যাহিদ সুবহানের একটি গল্প।
আলোচনা শেষে ম্যাগাজিনটির মূল্যায়নে বলা যায়, প্রচ্ছদ পাতাটি আরও স্পষ্ট হতে পারতো। বানানের ব্যাপারে সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ত্রুটিগুলো ব্যতীত এটিকে একটি সার্থক ম্যাগাজিন বলা যায়। বাংলা সাহিত্যের অগ্রযাত্রায় ম্যাগাজিনটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
ম্যাগাজিন: পাথার
সম্পাদক: নুরুল ইসলাম বাবুল
প্রচ্ছদ: প্রমা ও ফারহান
প্রকাশক: নাছির উদ্দিন আহমাদ
প্রকাশকাল: এপ্রিল-জুন, ২০২১
মুল্য: ১০০ টাকা ।
কবি ও শিশুসাহিত্যিক নুরুল ইসলাম বাবুল। তিনি বসবাস করেন পাবনার প্রত্যন্ত অঞ্চল পাথারের একটি অজগ্রামে। নিভৃত সেই শ্যামল পল্লির কোলেই চলে তার সাহিত্যযাপন। আন্তরিক দরদ দিয়ে তিনি সম্পাদনা করেন ছোটোদের কাগজ ‘হইচই’ এবং সাহিত্যের কাগজ ‘পাথার’।
আজকের আলোচ্য বিষয় ত্রৈমাসিক পাথারের সর্বশেষ সংখ্যা এপ্রিল-জুন, ২০২১। ত্রৈমাসিক হলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা দুরুহ হয়ে পড়ে। বর্তমানে পাথার মানবচর্চা কেন্দ্র নামে একটি সংগঠনের মুখপত্র হিসেবে ‘‘এসো মানুষ হই’’ স্লোগান নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে।
এবার মূল পত্রিকার আলোচনায় আসা যাক। পত্রিকাটি শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে আবদুল মান্নান সরকারের লেখা বৃহৎ উপন্যাস ‘জনকের’ ধারাবাহিক ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করছে। বাংলা থেকে ইংরেজি রুপান্তরের এ দুরুহ কাজটি করছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব জনাব সত্যব্রত সাহা। তার অনুবাদ প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য।
ম্যাগাজিনটিতে প্রকাশিত ড. সরকার আবদুল মান্নানের ‘শিশু শিক্ষায় শিল্প-সাহিত্য-সংগীত’, নজির আহমদের ‘বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন ও সাহিত্যকর্ম’, ড.সাইফুল্লা শামীমের ‘মুসলমানী বাংলার ইতিবৃত্ত’ প্রবন্ধগুলো বেশি ভালো লেগেছে। আরও প্রবন্ধ লিখেছেন ড. মিল্টন বিশ্বাস, ড. রশিদ জামান ও ড.সোহিনী ঘোষ।
প্রকাশিত গল্পগুলোর মধ্যে খন্দকার হাফিজ রেদুর লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প ‘অপেক্ষা’ সবার হৃদয়ে দাগ কাটবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে মোস্তফা তারিকুল আহসান ও নাছির উদ্দিন আহমাদের গল্প দুটিও সুখপাঠ্য।
এ সংখ্যার প্রকাশিত কবিতাগুলোর মধ্যে খালেদ হোসাইন, মিলু শামস ও শামসুল ইসলাম পলাশের কবিতা বেশি ভালো রেগেছে। আর ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে- ফকির খালেক, খন্দকার আশরাফুজ্জামান, গোবিন্দলাল হালদার, আতিকুর আপেল, আহমেদ টিকু, মোহাইনেুল হালিম, সাদিয়া পারভীন, সীবেন্দ্রনাথ দাস মঙ্গল, খান নুরুজ্জামান, আজমীর হোসেন, মোল্লা আলী আছগার, দুলাল নজরুল, অমিত কুমার কুন্ডু ও ইন্দু বিশ্বাসের।
প্রত্যন্ত একটা অঞ্চল থেকে এতো সুন্দর একটা পত্রিকা প্রকাশ নিঃসন্দেহে সাহিত্যের প্রতি সম্পাদকের দুর্বার প্রেম ও একনিষ্ঠতার পরিচায়ক। পত্রিকাটি নবীন ও আঞ্চলিক লেখক কবিদের বিকশিত হবার উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হোক। এর গতিপথ মর্সণ ও সুগম হোক।