আকাই তোরি’র আত্মপ্রকাশ সংখ্যার প্রচ্ছদ। (প্রকাশকাল : ১ জুলাই, ১৯১৮)
জাপানি শব্দ ‘আকাই তোরি’র অর্থ লাল পাখি আর এই নামেই ১৯১৮ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত জাপানের রাজধানী টোকিওতে প্রকাশিত হয়েছিল এক শিশু-কিশোর সাহিত্যপত্রিকা। ‘আকাই তোরি’ জাপানের শিশু-সাহিত্য ও সঙ্গীতের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কারণ এই পত্রিকা যেমন দোশিনসুগি ও জিগোবাংগাকো’র মতো সাহিত্য আন্দোলনের প্রবর্তক তেমনই শিশুতোষ গানের ক্ষেত্রে ‘দোয়ো’ ঘরানার জন্ম দিয়েছে।
আত্মপ্রকাশ ১ জুলাই, ১৯১৮-তে, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মেইকিচি সুজুকি’র হাত ধরে। ১৯৩৬ পর্যন্ত তাঁর তত্ত্বাবধানেই এই পত্রিকা প্রকাশিত হলেও পরবর্তী সময়ে হাত বদল হয়ে নাকায়ামা তাইচি’র প্রকাশনীর অধীনে চলে যায়।
১৮৬৭-তে জাপানে পশ্চিমা দেশ থেকে শিল্পী ও সাহিত্যিকদের নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়। পশ্চিমা দুনিয়ার জন্য জাপানে হয় অবারিত দ্বার। মেইজি রিস্টোরেশনের পর জাপানের সঙ্গীতচর্চার ক্ষেত্রেও ঘটে পরিবর্তন কারণ তাঁরা সঙ্গীতে আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষানবিসির জন্যে আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন পশ্চিমা দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের। এই পশ্চিমা শিল্পীরা তখন কিছু সহজ জাপানি শব্দ তাঁদের পাশ্চাত্য সুরে বসিয়ে শুরু করেন গান বাঁধা। আর একই সময়ে জাপানি সুরকাররা শুরু করেন শিশুতোষ গানের নির্মাণ। যার শব্দ জাপানি হলেও সুর ছিল পাশ্চাত্যের। গানগুলোকে বলা হত ‘শোকা’। ১৯১৮ নাগাদ জাপানের গায়ক ও সুরকাররা সংঘবদ্ধভাবে শুরু করলেন শিশুদের গাওয়ার উপযোগী কিছু গান বাঁধতে; যা রীতিমতো পর্যবসিত হল এক আন্দোলনেই The Red Bird Movement বা লাল পাখি আন্দোলন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ তৈরি হওয়া প্রত্যেকটি গানই ‘আকাই তোরি’তে প্রকাশিত হয়েছে, যে গানগুলোকেই আমরা জাপানি শব্দ ‘দোয়ো’ নামে জানি।
শিশুতোষ গানের পাশাপাশি রুনোসুকে আকুতোগাওয়া কিংবা নিমি নানকিচি’র শিশু-কিশোরদের জন্যে লেখা ছোটগল্পও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সম্পাদক মেইকিচি সুজুকিও কলম ধরেছেন সামুরাইদের বীরত্বের গাথা তাঁর সময়ের ছোটদের হাতে পৌঁছে দিতে। ১৯২৫ এ মার্ক টোয়েইন-এর ‘দ্য প্রিন্স এন্ড দ্য পউপার’-এর অনুবাদও এই পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। সেই সময়ে জাপানের প্রায় সমস্ত প্রান্ত থেকে স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোররা পত্রিকার জন্যে তাদের লেখা, আঁকা ইত্যাদি পাঠাত। মনোনয়ন সাপেক্ষে প্রকাশিতও হয়েছে।
১৯২৯ থেকে ১৯৩১ পর্যন্ত সাময়িকভাবে পত্রিকা বন্ধ থাকলেও ১৯৩২ থেকেই আবার নতুন উদ্যমে শুরু হয় পথচলা যদিও সেই শুরু ছিল নিভন্ত প্রদীপের জ্বলে ওঠা শিখার মতোই। ১৯৩৬-এ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় এই ‘লাল পাখি’র উড়ান।