অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
জানুয়ারি ২২, ২০২৫
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জানুয়ারি ২২, ২০২৫
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহমিনা কোরাইশী -
আব্রু

মারুফার মুখের কথা লুফে নিয়ে কাজের বুয়া আছিরুন বলে, আমরা কি মানুষ খালাম্মা? বড়লোকেরা মানুষ জাতের মইধ্য পরে। আমরা তো এই জাতে পরি না। এই শহরে পানি কিনতেও পয়সা লাগে আর লজ্জা শরম কিনতেও পয়সা লাগে খালাম্মা। আমাগো গরিবের বাঁইচ্চা থাকাটাই বেশি। বস্তির এটা রুমের ভাড়াই কত! ভাড়া দিয়া থাকা খাওয়া পিন্দনের কাপড় কেমনে চলে?

বেগম সাহেব মারুফা বলে, তা বুঝলাম। কিন্তু ঐ এক রুমে স্বামী-স্ত্রী শ্বশুর-শাশুড়ি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে থাকো কী করে? বছরে বছরে এতগুলো বাচ্চাও পয়দা কর কীভাবে? তোমাদের আব্রু রক্ষা হয় কি ভবে?

আছিরুন মুচকি হাসে আর আঁচলের অগ্রভাগ দাঁতে কাটতে কাটতে বলে, কইলাম না খালাম্মা পয়সা ছাড়া পুতুলও রাও করে না। কী আর করবাম! শরমের কথা কই আপনার কাছে। ঐ যে মশারিডা ঐডাই আমাগো পর্দা। হেরা থাকে চৌকিতে আমরা থাকি মাডিতে আর মশারি টাঙ্গাই মশা থাইক্যা বাঁচি এর লগে আমাগো আব্রুর কাজটাও হয়। মারুফা ওর কথায় ধাতস্থ হতে জিহবা কাটে।

আছিরুন আবার বলে, ঢাকা শহরে কি কিছু ঢাকা আছে খালাম্মা? হগলই তো উদাম। গা গতর ঢ্যাইকা রখতে পয়সা লাগে। পয়সা পামু কই?

মারুফার চোখ ভিজে আসে। আছিরুনকে কাছে ডাকে হাতের মুঠোয় বেশ কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলে, ডোবা-নালার জলে ভাসায় দিবি না আব্রু। যা  আছিরুন যা, কিনে নে তোর আব্রু।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

মুদ্রিত দুঃখের ধারাপাতে

Read Next

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন, ৫ম সংখ্যা (অক্টোবর-২০২৩)

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *