অগোছাল স্বপ্ন
একটা ঘোর অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম, বড্ড অসহায় লাগছিল সেদিন এরপর থেকে। যতটুকু কাজ করার সুযোগ হয়েছে সব ছিল অগোছাল। আমার কলম থেকে কবিতা কিংবা গল্প হয়ে ওঠেনি আর, সেই স্মৃতিগুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে আসে। চোখের জল মোছা শেষ করে উঠতে পারিনি, আমার গল্পগুলো এতটা অগোছাল ছিল না। ফুলের বাগানের মতো সাজানো গোছানো পরিপাটি এক সম্পর্ক ছিল। যেখানে কোনো তিক্ততা কিংবা অভিমান ঠাঁই পায়নি একবিন্দুও। একটা সময় এই অসহায় মানুষটার পাশে কেউ একজন ছিল সারাদিনের ক্লান্তি কিংবা কষ্ট ছাপ অনায়াসে মুছে দিতে। ভাবিনি আবার নতুন করে কখনো নিজেকে শুরু করতে পারব। আমার হতাশা যখন তোমায় ছেড়ে যায় কারণ ছিল, তখন একটা মানুষ হঠাৎ আমার জীবনে এল হতাশাগুলো দূর করে দিল তার প্রবেশে আমার জীবনে একের পর এক সুখের দেখা নিয়ে। পরিচয়টা তার সাথে আমার কোনো এক ভাইভা বোর্ডে তার আর আমার জীবনের গল্পগুলো যখন একে একে মিলতে শুরু করল। একটা সময় বন্ধুত্বের সূচনা হলো। তারপর ভাবিনি এই বন্ধুত্ব এতটা দূর অব্ধি যেতে পারে। সেই মানুষটার উৎসাহে আজ আমি এতটা দূর আসতে পেরেছি, সেদিন তুমি আমার কষ্টের দিনগুলোতে পাশে থাকতে পারলে না, তাই তুমি নতুন সংসারে যেমন ভালো আছ আমি তার থেকেও ভালো আছি। এখন আমি গল্প কবিতার সব লিখতে পারি, তোমাকে পেয়ে আমি এখন খুব গোছাল। যে মানুষটা আমার কষ্টের সময়গুলো সঙ্গী হতে পারল না সে আর যাই হোক আমাকে মন থেকে চায়নি কখনো। আমি এখন এই মানুষটাকে নিয়ে প্রতিদিন স্বপ্ন সাজায়, তাকে নিয়ে নতুন করে উড়তে শেখে।
নারীর টানে
একটা সময় আমার দিন কাটত গ্রামীণ গন্ধ গায়ে মেখে, সকালের শুরুতে সতেজ নিঃশ্বাস যেন প্রাণ জুড়িয়ে যেত। সেই সময়ের স্কুল জীবনে ছিল না কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলের মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখা। ছাত্র হিসেবে কখন ফলাফল খারাপ ছিল না, বিদ্যালয়ের শিক্ষকের আমাকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। তারা আশা পূরণ করতে গিয়ে একটা সময় গ্রামছাড়া হলাম। ভর্তি হলাম শহরের কলেজ, পড়াশোনা চাপ বাড়তেই থাকল। বাড়ি যাওয়া বলতে বিশেষ দরকার কিংবা ঈদ ছাড়া সেই সুযোগ হয়ে উঠেনি। একটা সময় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে কর্মস্থলে যোগদান করলাম সেখানেই আমার সংসার গড়ে উঠল, মা-বাবাকে কত অনুরোধ করেছি আমাদের সাথে শহরে থাকার জন্য। কিন্তু তারা কখনো সেই গ্রামের মায়া ত্যাগ করেনি। তাই ঈদের ছুটি আমার কাছে যেন আকাশের চাঁদকে হাতে পাওয়ার মতোই মনে হতো। গ্রামে যাব দেখা হবে প্রিয় মানুষ আর প্রিয় মাটির সাথে। সন্তানদের যখন সে গ্রামের গল্প শোনাতাম তখন ওরা আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকত। পারলে ওরাও মনে হয় শহরের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামে এসে ঘাঁটি স্থাপন করত। কিন্তু বছরে এই কয়েকটা দিন এই যে দিনগুলো ওদেরকে সুযোগ করে দিই গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে মেশার। যে নারীর টানে আমি গ্রামে ফিরে আসি এই ঈদের দিনে ওরা যেন এই নারীর টান অনুভব করুক। এর থেকে বেশি আমি ওদের কাছ থেকে আর কিছু প্রত্যাশা করি না, একটা সময় আমি যখন বৃদ্ধের খাতায় নাম লেখাব তখন ওরা অন্তত আমাকে এই মাটিতে একটা দিনের জন্য হলেও ঘুরতে নিয়ে আসবে।
উঠতি সংসার
এই তো সবে নতুন জীবনে প্রবেশ হলো, কাকে কীভাবে মানিয়ে নিতে হয় তাও আবার তেমন জানা ছিল না। প্রতিটা পদক্ষেপে হাজারো কথা হজম করে গেছি, সেই মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে। তিনি যখন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেন, তার চোখে মুখে কখনো ক্লান্তিচিহ্নটুকু দেখিনি। সে মানুষটার সরলতা দেখে সংসারে ঘটে যাওয়া কষ্টের কথাগুলো বলার সুযোগ হয়নি। কারণ আমার কষ্টগুলো তাকে আরো যন্ত্রণা দেবে, আমি যেদিন থেকে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেছি একমাত্র সেই মানুষটাকে খুব আপন করে পেয়েছি। একটা ছোট ভুলের এত বড় শাস্তি আমাকে পেতে হয় আমাকে প্রতিদিন এই সংসারে প্রবেশের পর থেকে আমি জেনেছি। তারা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে পড়াশোনার সুযোগটুকু দেবে কিন্তু এখন তারা আমাকে বাইরে পর্যন্ত যেতে দেয় না। এখন আমি চার দেয়ালের মাঝে বন্দি এখন আমার কাছের মানুষ বলতে সেই মানুষটা আর আমার নোটবুক। তার কাছে আমার চাওয়ার কিছু নেই সারাদিনের পর সেই মানুষটা যখন আমার মাথায় হাত রেখে এই কষ্টগুলো সব জল হয়ে যায়। কখনো কখনো মনে হয়েছিল নিজেকে মৃত্যুর মুখে সমর্পণ করব, শুধু পারিনি মানুষটার জন্য। এই মানুষের কথা ভেবে আমি এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। সেদিন তার উপস্থিতিতে যখন আমার গায়ে হাত তোলা হয়েছিল। তখন এক কাপড়ে আমাকে সে ওই বাড়ি থেকে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল নতুন এক বাড়িতে। সে মানুষটা পারেনি আবার অপমান সহ্য করতে। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ বোধহয় সে, না হলে হয়তো আমার মৃতদেহ অনেকদিন আগেই বাপের বাড়িতে রেখে আসা হতো। এখন আমার সংসারের দুটো ফুটফুটে মেয়ে আছে তাদের আমি হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যাই। আমার সাহস ও প্রেরণা হচ্ছে সেই মানুষটি।
শুভ জিত দত্ত
শুভ জিত দত্তের জন্ম : ২ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সালে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার বণিকপাড়া গ্রামে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থপনা বিভাগে বিবিএ, এমবিএ। নিয়মিত লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ত্রিলোচন সাহিত্য ভুবন নামে সাহিত্য সংগঠনের সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
shuvojitdutta12@gmail.com