Sublime শব্দটার সঠিক অর্থ আমি জানি না। তবে ‘কাইজার’-এ নিশোর অভিনয় দেখে এই শব্দটাই মুখ থেকে বের হয়ে এল! তবে কাইজার কিন্তু নিশোর ওয়ান ম্যান শো না! এখানে প্রতিটা চরিত্রের অভিনয়ই ছিল পরিশীলিত। অভিনয়ের পাশাপাশি ডায়ালগও ছিল বুদ্ধিদীপ্ত ও হিউমারাস। একটা ক্রাইম থ্রিলার হলেও সারাক্ষণ চরিত্রগুলো শুধু অপরাধ আর অপরাধীদের নিয়ে কথা বলেনি। কথা বলেছে পপ কালচার নিয়ে, গেমস নিয়ে, ফাস্টফুড নিয়ে, এর ফলে স্ক্রিনপ্লেটার সাথে রিলেট করাটা সহজ হয়েছে।
কাইজার শুরু হয়েছে গতানুগতিকভাবেই। একটা ডাবল মার্ডারের ঘটনা নিয়ে। সময়ের সাথে সাথে নানারকম চরিত্র এসেছে, ঘটনা ডালপালা ছড়িয়েছে, একটা সময় মনে হচ্ছিলো ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে শেষপর্যন্ত সব নিখুঁতভাবেই জোড়া লাগানো হয়েছে।
কাহিনি অসম্পূর্ণ মনে হয়নি, অযথাই সিকুয়েলের জন্যে রেখে দেওয়া হয়নি, তাড়াহুড়ো করা হয়নি, মূল চরিত্র বাদেও বাদবাকি চরিত্রগুলোর বিল্ডআপে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি ওয়েব সিরিজ বলতে যেরকম, ঐখানে আরেকটু ভালো করা দরকার ছিল, বা এই জায়গায় গলদ রয়ে গেছে, ওরকম কিছু লাগেনি। সময় নিয়ে, যত্ন নিয়ে কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ক্রাইম স্টোরির পাশাপাশি কাইজারের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বগুলোও যথেষ্ট উপভোগ্য ছিল। কাইজার হল ডিবির ডিটেকটিভ, ডিভোর্সড, এক কন্যাসন্তানের পিতা। তার বউকে আবার বিয়ে করেছে তারই ছোটবেলার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু অম্লান। অম্লান চরিত্রের অভিনেতাকে চিনি না। তবে অভিনয় খুবই ভালো লেগেছে। অত্যন্ত ভদ্র, হাসি লেপটে থাকা মুখ, অথচ জটিলতায় ভরা জীবনের লেয়ারড চরিত্রে সপ্রতিভ ছিলেন। কাইজারকে তার মেয়ে বাবা বলে আবার অম্লানকে আব্বু বলে। এ নিয়ে তার মনের মধ্যে ক্ষোভ। মেয়েকে প্রতি সপ্তাহে দেখতে আসে, প্রাক্তন স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথেও দেখা হয়ে যায়। আপাত দৃষ্টিতে করা স্বাভাবিক আচরণের মধ্যে জন্ম নিতে থাকে তিক্ত অনুভূতি। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আরেক বন্ধু তন্ময়ের জন্মদিনের পার্টিতে এই তিনজনের মধ্যে তৈরি হওয়া টেনশনটা খুবই উদ্বেগময় ছিল। আরেকজনের অভিনয়ের কথা বলতে হয়। শতাব্দী ওয়াদুদের চরিত্রটা। তিনি বরাবরই ভালো অভিনেতা, তবে এবারে একজন জাত বদমাশ ও লম্পটের চরিত্রে যা অভিনয় করেছেন, দেখে যে কারও ইচ্ছে হবে শালাকে দু’ঘা বসিয়ে দিতে! ওহ, ব্যারিস্টার চরিত্রে ঠাণ্ডা মাথার ক্রিমিনাল ইমতিয়াজ বর্ষণও ছিলেন অসাধারণ!
ডিবির অফিসার হিসেবে এতদিন যেমন চরিত্র দেখে এসেছেন, কাইজার তার মধ্যে সবচেয়ে বাস্তবিক। সে সারাক্ষণ মুখ শক্ত করে ক্রাইম নিয়ে খটাখট করে না। সে গেমিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। তার আচরণ অনেক সময়ই অনুমানের অতীত। একটা স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন সেও চেয়েছিল, কিন্তু ধরে রাখতে পারেনি। এসব নিয়ে তার হতাশা, বিদ্বেষ, আর পলায়নপরতা ক্রাইম থ্রিলারের পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল ড্রামা দেখার আনন্দও দেবে। গত কয়েক বছরে যেসব বাংলা ওয়েব সিরিজ দেখেছি, তার মধ্যে কাইজারই সেরা, সন্দেহাতীতভাবে।
আপনার প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগবে শেষ করতে, কিন্তু সময়টা নষ্ট হয়েছে বলে মনে হবে না।
কাইজার দেখতে পাবেন হৈ চৈ-এ।
