অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পাদক -
সম্পাদকীয়, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল অনুপ্রাণন ৬ষ্ঠ সংখ্যা

প্রকাশিত হলো শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল অনুপ্রাণন ৬ষ্ঠ সংখ্যা। এর পূর্বের সংখ্যা অর্থাৎ ৫ম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল গত অক্টোবর ২০২৩-এ। ৫ম সংখ্যা প্রকাশের সময় থেকে ৬ষ্ঠ সংখ্যাটি প্রকাশে এতটা দেরি হওয়ার জন্য আমরা দুঃখিত। অপ্রত্যাশিত দেরির একটা কারণ হতে পারে— এবারের ৬ষ্ঠ সংখ্যায় লেখার সংখ্যা ৫ম সংখ্যার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এতগুলো লেখা বাছাই, সম্পাদনা ও অলংকরণ করার কাজে সময়টা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা দীর্ঘ হয়েছে।

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল অনুপ্রাণন ৬ষ্ঠ সংখ্যায় ১৯টি বিভাগে মোট ১৬৫টি লেখা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রিয় লেখাটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আশা করি পাঠকদের বেগ পেতে হবে না। এই সময়ে শিল্প-সাহিত্যের জগতে আমরা হারিয়েছি কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, কবি আসাদ চৌধুরী, ভাষাসৈনিক ড. জসীমউদ্দিন আহমেদ এবং অকালে চলে যাওয়া শিল্প-সাহিত্য জগতের বহু গুণের অধিকারী কবি, গল্পকার, ছোটকাগজ সম্পাদক, অভিনেতা, নাট্যনির্মাতা তারেক মাহমুদ। তাদের স্মরণ করে লেখা হয়েছে মননশীল নিবন্ধ।

স্মৃতিচারণ বিভাগে আছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যার বর্ণনায় পিতা বীর কিশোর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণে বীরত্বপূর্ণ গেরিলা যুদ্ধের ৪টি অপারেশনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে গেরিলা যুদ্ধের প্রামাণিক আখ্যান। একথা ঠিক, মুক্তিযুদ্ধে যারা সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা প্রত্যেকে ছিলেন অকুতোভয় সৈনিক। তাদের প্রতি আমাদের রয়েছে অপরিসীম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাবোধ। সত্যের সাধক অর্থনীতির অধ্যাপক সনৎকুমার সাহার মেধার ফলে অর্থনীতির পাশাপাশি উচ্চ মানসম্পন্ন সাহিত্য রচনাও তিনি করেছেন।

অনুপ্রাণন অন্তর্জাল ষষ্ঠ সংখ্যার প্রবন্ধ বিভাগ এবারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে বিভাগটি তুলনামূলক সমৃদ্ধ বলে আমাদের মনে হচ্ছে।

বিভাগটিতে রয়েছে শামসুর রাহমানের ছড়া, গ্রাম বাংলার লোকগান, আবুবকর সিদ্দিকের জীবন ও সাহিত্যের আঙিনা, আন্তন চেখভের ছোটগল্প, রফিক আজাদের চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া, কালের কবিয়াল তারাশঙ্কর, মান্টো-গালিবের দাস্তান, গল্পকার শহীদুল জহিরের গল্পে জাদুবাস্তবতার কুহকবিভ্রম, কবি শাহীন খন্দকারকে নিয়ে আলোচনা; কবিতায় যিনি আমাদের সামনে শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়িয়ে যান, বাংলা কবিতার ছন্দ এবং কবি মাহমুদ কামালকে নিয়ে গভীর আলোচনা।

অনুবাদ বিভাগে রয়েছে হাজেরা নাজিবের লেখা হিন্দি চলচ্চিত্র ও অবিবাহিতা মায়েদের মাতৃত্ব, লুইস এলিজাবেথ গ্লিক-এর দুটি কবিতা এবং পলা হারমন-এর তিনটি ফ্লাশ ফিকশন। একুশে বইমেলা যে একটি পর্যটন ও ভ্রমণকাহিনীর বিষয় হতে পারে সেটা পাওয়া যাচ্ছে আদিমা মজুমদারের লেখায়। মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ শিরোনামের গুরুত্বপূর্ণ বইটি নিয়ে আলোচনা করেছেন মো. রায়হান পারভেজ। আমাদের জাতীয় জীবনে বইটির গুরুত্ব অপরিসীম বলেই মনে করি। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ভ্রমণকাহিনীতে রয়েছে মঈনুস সুলতানের মরক্কোর দুর্গম এক পর্বতের পথ-প্রান্তরের কাহিনী।

অনুপ্রাণন অন্তর্জালের ৬ষ্ঠ সংখ্যার প্রতিটি বিভাগই অত্যন্ত সমৃদ্ধ। রয়েছে এই সময়ের পাঠকপ্রিয় লেখকদের লেখা ছড়া, একক কবিতা, যুগল কবিতা, গুচ্ছকবিতা, দীর্ঘ কবিতা, অণুগল্প, ছোটগল্প, বড়গল্প ও মুক্তগদ্য। যে বিভাগগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন স্বাদ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বেশ কতোগুলো লেখা। তাই এই বিভাগগুলোতে বিচরণ করলে প্রত্যেক পাঠক নিমিষেই পেয়ে যাবেন তার পছন্দের ছড়া, গল্প অথবা কবিতা।

অনুপ্রাণন অন্তর্জালের ছয়টি সংখ্যা প্রস্তুতির পরিক্রমায় আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি, দেশে অসংখ্য প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাপূর্ণ লেখক রয়েছেন। যারা সাহিত্যের বিভিন্ন সৃজনশীল ও মননশীল বিভাগে বেশ মানসম্পন্ন লেখা রচনা করছেন। কিন্তু সেই তুলনায় প্রিন্ট মিডিয়া, প্রিন্ট লিটল ম্যাগাজিন ও অন্তর্জালের ম্যাগাজিনগুলোর সংখ্যা অপ্রতুল বলে মনে হচ্ছে। এখনো লেখকেরা প্রিন্ট পত্রিকায় লেখা ছাপা হোক এটাই প্রত্যাশা করেন এবং অগ্রাধিকারে রাখেন। কিন্তু ক্রমেই বারোয়ারি লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রিন্ট সাহিত্যপত্রিকার সংখ্যা কমে আসছে। কোনো কোনো প্রিন্ট পত্রিকা বিশেষ বিষয়ভিত্তিক লেখা প্রকাশ করার দিকেই ঝুঁকছে।

আমাদের দেশে কতজন সাহিত্যের পাঠক আছেন? এই সংখ্যা বাড়ছে নাকি কমছে! এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা অথবা তর্ক বিতর্ক চলছে। সাধারণত স্কুল বা কলেজপড়ুয়া কিশোরের ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্যের পাঠ শুরু হয়। কিন্তু এই সময়টাতে এক একজন কিশোরের পাঠ্যবইয়ের বোঝা যেমন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে প্রতিযোগিতা। সারা বিশ্বের চিত্রও অভিন্ন নয় কিন্তু তারপরও বিদেশের পড়ুয়া ছাত্ররা কীভাবে কখন সাহিত্যপাঠের জন্য তাদের সময় বের করছে এই নিয়ে আমাদের অনুসন্ধান করা দরকার। দেশের শিশু-কিশোরেরা অধিকাংশ সময়েই সস্তা বিনোদনের জন্য মোবাইল ফোনে ঝুঁকে থাকে, বুঁদ হয়ে থাকে। এসব অভিযোগ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে; কিন্তু এর প্রতিকার কী?

আমাদের মনে হয়, দেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রজীবনে টাইম-ম্যানেজমেন্ট ও মাল্টি টাস্কিং-এর মতো বিষয়গুলোর শিক্ষা প্রয়োজন রয়েছে। বোধকরি এসব বিষয় শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলে পাঠ্যবইয়ের বাইরে সাহিত্য পাঠ অথবা নানাবিধ জ্ঞানার্জনের জন্য পাঠের নিমিত্তে সময় বের করা এবং সময়ের যথার্থ ব্যবহার ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

বোধনের আগেই নিরঞ্জন

Read Next

হিন্দি চলচ্চিত্র ও অবিবাহিতা মায়েদের মাতৃত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *