অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মার্চ ২৯, ২০২৪
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
মার্চ ২৯, ২০২৪
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মোস্তফা হায়দার -
শিল্পের সুষমায় হেঁটে বেড়ানো রসদে বিশ্বজিৎ চৌধুরী’র ‘কবি ও রহস্যময়ী’র ঘোর

সাহিত্যের জায়গা খুবই মসৃণ। কিছু জায়গা রসালো, কিছু জায়গা তিক্ত আবার কিছু জায়গা ইতিহাস ও সময়ের দায় কাঁধে নিয়ে ঘুরেফিরে। শিল্পের সুষমায় হেঁটে বেড়ানোর রসদ হচ্ছে উপন্যাস। একটি উপন্যাস একটি জীবনকে বহন করে না, বেশ কয়েকটি জীবনের প্রবহমানতাকে ঘোরায়। একটি সময়কে সূত্র দেখায়। একটি জাতির ইতিহাসের মাধ্যম হয়। কখনও কখনও উপন্যাস হয়ে ওঠে একটি জাতির গোড়াপত্তন। তেমনি একটি ইতিহাস আশ্রিত রোমান্টিক উপন্যাস পাঠ করে হৃদ্যতায় দু-কলমের দ্বারস্থ হয়েছি।

উপন্যাসটির নামের রহস্যময়তার চেয়ে ভেতরের ক্লাসিক বর্ণনা গীতমালা যেনো গোবিন্দের নৃত্যের তালের মতো ভাবিয়েছে। তখন গোবিন্দের নাচের কাছে বহু নায়িকাও এ্যাডজাস্ট হতে বেসামাল হতো। কিন্তু, ‘কবি ও রহস্যময়ী ‘ একটি সফল ও সার্থক উপন্যাস। পাঠককে বসিয়ে রাখার মোয়া দিতে সক্ষম হয়েছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। নিজের সবটুকু দিতে চেষ্টায় কোনো কসুরতা পাঠে ধরা পড়েনি।

‘কবি ও রহস্যময়ী’ একটি নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাসই মনে হয়েছে আমার কাছে। কথার পিঠে কথা বলতে বলতে বিশ্বজিৎ রোমাঞ্চের প্লেটে বসে বিরহের এবং সত্যের দ্বারস্থ হতে চেয়েছেন। ছলনার আশ্রয় নিতে পারতেন, যথেষ্ট সুযোগ ছিল। মিথ্যা বয়ানের সুযোগও কম ছিল না। কিন্তু দায়বদ্ধতার খেরোখাতা খুলতে গিয়ে একটি ইতিহাসের কাছে পাঠককে নিয়ে গেছেন অবলীলায়। যেমনটি আমরা পাই খুশবন্ত সিং-এর ‘রোড টু পাকিস্তান’, কবি আল মাহমুদের ‘উপনিবেশ’ উপন্যাস এবং দীরাজ ভট্টাচার্য’র ‘যখন আমি পুলিশ ছিলাম’ বইটিতেও। পাঠক মাত্রই স্মৃতিকাতর এবং ধন্যবাদ প্রিয়। আবার কিছু পাঠকও লেখকের ভেতর বাহির তালাশে হাত বসায়। গ্রন্থের বহুরুপি কারখানায় বসে পাঠক খোঁজেন মনের খোরাক, রঙের রসদ এবং মনোবিলাসের জিজ্ঞাসা। কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরী নিজের সেরাটাই দিতে চেয়েছেন `কবি ও রহস্যময়ী’ উপন্যাসটিতে।

একজন কবি কখনও কখনও ভক্তের কাছে মহীরুহের আসন দখল করে নেয়। কেউ কেউ দেবতার আসনে বসিয়ে সৃষ্টির লীলা যাপন করে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম শব্দবাক্যের খেলার সাথে হারমোনিয়াম হাতে গানের যে সুর তুলতেন তাতে ভক্ত মাত্রই বিমুগ্ধতায় হৃদ্য হতো। সাথে যখন কবি হাত দেখে রেখার সূত্রাবলি জানান দিতেন তখনও কিছু ভক্তের উদয় হতো। গুরুও শিষ্যের আবদারে ম্রীয় হয়ে দিয়েই যেতেন। এই হস্তরেখা সূত্রাবলির সূত্র ধরেই ফজিলাতুন্নেসা আজ ইতিহাসের জায়গা দখল করে নিলেন কবির প্রেয়সী হয়ে।

যদিও তার পূর্বে ফজিলাতুন্নেসা তার মেধা ও মননের স্বাক্ষর বয়ে ঢাকা ভার্সিটির উচ্চশিক্ষার গণিতের প্রথম ছাত্রীর আসন নিয়ে বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে আজীবনের আসন নিলেও কবির প্রেমিকা হয়েই বেশি আলোচিত ছিল, আছে এবং থাকবে। পাঠক এ ঘোরের মোহে পড়ে আবিষ্কার করবে নিত্যনতুন টোন। যদিও একটি মেধার পূর্ণতা পায়নি। উচ্চশিক্ষার আঁচল ধরতে গিয়ে নিজের জীবনের অঙ্ক মেলাতে পারেনি ফজিলাতুন্নেসা। না পেরেছে প্রেমের শোকেসে ফোটাতে ফুল, না পেয়েছে ইচ্ছে শক্তির পূর্ণতা। অপরদিকে কবিকে করে রেখেছে ঘোরের বাসিন্দা। যে ঘোরের পালঙ্কে চড়ে আজও ইতিহাসের খোরাকে ঘুরছে কবি আর প্রেমিকা।

ফজিলাতুন্নেসা তার ভাগ্যরেখা দেখতে বললে কবি- বেশ মনোযোগ দিয়ে, কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে ফজিলতের কররেখা দেখতে শুরু করেছিলেন। প্রায় আধঘন্টা ধরে মস্তিস্করেখা, জীবনরেখা, হৃদয়রেখা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেখাগুলো ও একই সঙ্গে যোগচিহ্ন, ক্রিভূজ, চতুর্ভূজ মিলিয়ে মাউন্ট, শুক্র, শনি, রবি, বুধ, মঙ্গল ও চন্দ্রের অবস্থান দেখলেন। কিন্তু বারবার ডানে-বাঁয়ে মাথা দোলানোর ভঙ্গিতে বোঝাই যাচ্ছিল কিছুতেই সিদ্বান্ত নিতে পারছেন না। এক জটিল সমীকরণে কবি বুঝতে পেরেছিলেন- কবির প্রেমের অপূর্ণতা বসে আছে রাহুর প্লেটে। যদিও প্রেমে পড়লে পুরুষ বোকা হয়ে যায়। হেরে যাওয়া দেখলেও বিশ্বাস করতে চায় না। কবি নজরুলের এ বাস্তবচিত্র ফজিলতের হাতের রেখায় দেখতে পেয়ে কবি মেলাতে পারেননি অঙ্ক। যে অঙ্কে কবি হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন দৃঢ় প্রত্যয়ী।

একজন কবির জীবনে ঘটে যাওয়া এক প্রেমকাহিনির শরীর ছুঁয়ে লেখক যে উপন্যাসটি দাঁড় করালেন, তা নিশ্চিত কালজয়ী এক শিল্পের চর্চাও বটে। কবি ও রহস্যময়ী বইটিতে অনেকগুলো খণ্ড খণ্ড চরিত্রের যুগসূত্রের বাহুচড়ে লেখক সার্থকতার রূপ দেখাতে প্রাণান্তকর শ্রম জড়িয়েছেন। একজন মোতাহার হোসেন চৌধুরীর চরিত্রের মূল কাঠামোয় দাঁড়িয়ে একজন কবির পদযাত্রা বলা গেলেও শিল্পের সব কলা কিন্তু উপন্যাসটিতে আছে। একজন জাহানারা চৌধুরী ও ‘বর্ষাবাণী’ পত্রিকার কথাও উঠে এসেছে। ওখানেও নজরুলের সুরে বেজেছিল গানের বেহালা। হেসেছিল মানবপ্রেম।

একজন স্বপ্নবাজ মানুষই পারে অন্য অনেকের জীবনের গতি পরিবর্তন করাতে। যদিও ভাগ্যের চাকা অদৃশ্যের হাতের তালুতে থাকে বন্দি। একজন নলিনীমোহন স্যার সুন্দর জাতি গঠনে মননশীল রূপরেখার যে গ্রাফচিত্র এঁকেছেন সেখানে একজন নারীর বেড়ে উঠার পাশাপাশি একজন শিক্ষকের দায়িত্বের চমৎকার প্রণালি চোখে ধরা দিয়েছে। এরকম শিক্ষকগুলো আজ হারিয়ে গেছে চাপাবাজদের দৌরাত্বে। অথচ আপনার আপন সংসারের মতো এ রকম লোকগুলো সমাজের আয়না হয়ে নেপথ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। পেটে ভাত নেই। তবু তারা সুখের ছোঁয়ায় মানুষের পাঠশালায় গড়ে তোলে ভবিষ্যতের ইমারত। সাথে জাগ্রত হয় মুসলিম মেয়েদের উচ্চাশিক্ষা পাঠের প্রেরণা। কঠিন-সরল আর গরলের মাঠ চষে মুসলিম নারীও গণিতের মহাবিদ্যায় কপাল ঠুঁকে চুষে নেন জ্ঞানের ভাণ্ডার। আর সে যাত্রার সে মেধাবী ছাত্রীটাই হচ্ছে একটা জীবন্ত চরিত্র। যে চরিত্রের কাছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হেরেছে। হেরেছে এতদাঞ্চলের মহাবিদ্যালয়, হেরেছে কবির প্রেম। আর হারানো মানিকের রতন কুড়িয়ে গেঁথেছেন এক রহস্যময় যন্ত্রণার স্বপ্নকুটির। যে কুটিরে বসে ব্যর্থ প্রেমের আখ্যান ধরে একটি বাস্তবচিত্রের কাহিনির বিন্যাস। আর সেটি হলো কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরীর ‘কবি ও রহস্যময়ী’। একজন কুলসুমাকে আইডল মেনে একজন ফজিলতের পদযাত্রা। আর ফজিলতের হস্তরেখার গ্রাফচিত্র দেখে একজন কবির প্রেমের বাগান গড়ে ওঠাটা বিস্ময়ের না হলেও বিরহের তীর ছুঁয়েছে দুজনের হৃদয়।

প্রেমের কাছে সবাই অসহায়। কবি নজরুলও হাঁটু মুড়ে বসে ফজিলতকে জানালেন- `আপনাকে আমি ভালোবেসেছি, ফজিলত। ন্যায়-অন্যায় জানি না, শুধু এই ভালোবাসাটাই সত্য’ কবি হারতে বসেছে। কবির আবেগ এতোটাই অন্ধ করেছে যে, ভালোবাসায় আক্রান্ত হয়ে কবি মধ্যরাতের নির্জন বাসায় ফজিলতকে একা পেয়ে আবেগে আপ্লুত হতে হতে সব সত্তার কাছে যেনো হারতে বসলেন। মধ্যরাতের এ খেয়াঘাটের খাটের বসা থেকে ওঠেই কবি ফজিলতকে দৃঢ় গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিতে নিতে পুরুষ গন্ধের মাদকতার পিঠে চড়িয়ে অনেকটা নিঃস্ব করেই অনন্তকালের ভেলায় চড়িয়ে উদগ্রিব ঠোঁটের কাছে পৌছাঁতে না পৌছাঁতেই ফজিলত সম্বিত ফিরে পেয়ে এক ঝটকায় ভৎসনার বুলি আউড়িয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন। আর এ ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে ফজিলত হারান মটরমালাটা। গলা থেকে ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে। এ কণ্ঠহারের সঙ্গে ধুলায় মিশে গেছে ফজিলতের আত্মসম্মান। এ অনধিকার চর্চার বদৌলতে কবিও হারালেন তার আত্মসম্মান। অনধিকার চর্চা কাউকে প্রশ্রয় দিলেও আশ্রয় দেয় না। মটরমালার সম্মানহানির সাথে একজন প্রেমিকের সব ইচ্ছে মিশে গেছে মাটির বিছানায়। যে বিরহের সুর বেজে কবিকে করেছে নিঃস্ব আর একজন ভক্তপ্রেমিকার স্বপ্ন হযেছে চূর্ণবিচূর্ণ। উচ্চশিক্ষার কুলে এসে ফজিলত হারিয়েছে তার সব ইচ্ছে শক্তি। একটি স্বপ্নের হয়েছে পতন। একটি ইচ্ছের হয়েছে দেশান্তর। একটি জীবনের হয়েছে পশ্চদগমন। আর প্রেমিক পুরুষটি প্রেমের অন্তর্দাহে ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে শব্দবাক্যের মালা গেঁথে গেঁথে নিঃশেষ করেছে জীবনের বাকিটা সময়।

একজন কবি বা একজন পুরুষ কতটা অসহায়ত্বে থাকলে নিরবে অথবা সরবে প্রেমের কাঙাল হয়ে ওঠে। ফজিলতের কেনো? প্রশ্নের উত্তরে একজন কবি, একজন প্রেমিকের ব্যথার প্রকাশ পায ঠিক এভাবে- একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো কবির বুকের গভীর থেকে। কিছুটা উদাস হয়ে পড়লেন যেনো। নিচু স্বরে অনেকটা স্বগতোক্তির মতো বললেন, `কৃষ্ণনগরে আমার স্ত্রী-পুত্র আছে সত্যি, কিন্তু সংসার আমার নয়, ওটা গিরিবালা দেবীর’। কবি এ বিরহময় যন্ত্রণার ভয়ে নার্গিসের বাসর রাতে কাবিননামার স্বত্ব বুঝে পালালেন। নার্গিসকে করলেন পাণিগ্রহণহীন , স্বামীহারা। বিষাদের নির্মমতা কবিকে ছাড়ছে না।

আজ ফজিলতও কবিকে কষ্টের পোয়ালায় বসিয়ে জানান দিলেন প্রেমের অপর নাম নির্মমতা। আর ফজিলত স্কলারশিপ নিয়ে আড়াল হলেন আজীবনের পথে। বিলেতের শেষ প্রান্তে চলে গিয়ে কবিকে মটরমালার মতো রেখে গেছে কবির স্বপ্নের স্বদেশে। কবি বিরহের মালাকে সতেজ আর দ্রোহের বিছানায় রেখে ভেতরে সব যন্ত্রণার সাতকাহন এঁকে একের পর এক গেঁথে গেছে কাব্যমালা, গানের স্বরলিপি এবং অঞ্জলিপত্র। যে পত্রগুলো পাঠে পাঠক পায় প্রেমের স্বাদ, বিরহের নোনাজলের উষ্ণ আবেগ এবং থিতু হওয়া স্বপ্নের দায়। যে স্বপ্নের শোকেসে দুজনের অনেক রং ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

স্মৃতির মাল্যে আজো অম্লান এমন এক উপাখ্যানের চিত্রে বসে লেখক নতুন একটি ভিন্নধর্মী উপন্যাস আমাদের উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। সার্থকতার নতুন সমীকরণও বলা যায়। কাঁচা রং,আবেগি রং, কল্পনার রং এবং স্বপ্নের রঙে পাঠককে না টেনে সত্য এবং নিরেট প্রেমের শামিয়ানার নিচে এনে ছিটিয়ে দিয়েছেন কয়েকটি জীবন্ত কাহিনির খেরোখাতা। যে খাতায় দাঁড়িয়ে গেছে অনেক ইতিহাস।

একটি স্কলারশিপ নিতে একজন নারীকে কতোটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, কতো সমীকরণ মিলিয়ে অথবা পাশ কাটিয়ে নিতে হয়েছে ইচ্ছের দাবি। স্কলারশিপের তরি বেয়ে একজন নারী, একটি মেধার, একটি জীবনের এবং একটি স্বপ্নের আড়াল হতে হতে একজন প্রেমিকেরে করে গেছে নিঃস্ব। একজন মুসলমান মেয়ের বিলেত তথা সাহেবদের দেশে উচ্চশিক্ষার সহযোগিতায় নাসিরউদ্দীনকে বাঙালি মুসলমানরা হামলা করে আহত করে। যা আরেক বিস্ময়, আরেক ঘোর। প্রেমের বহুগামিতার অবদমন স্রোত নিয়ে কবিকে উদভ্রান্ত প্রেমের চরাচরে চেড়ে দিয়ে ফজলাতুন্নেসা হারিয়ে গেলেন জীবনের খোঁজে। যে জীবনের প্রান্তসীমায় আর পদচারণ ঘটবে না কোনো কবির অথবা নজরুলের। হয়তো ভেতরের চাপাকষ্টের ভার সইতে ফজিলত দূর-বহুদূরের মরীচিকায় গা ঢাকা দিয়ে প্রেমিক কবিকে দাঁড়ানোর পথ ছেড়ে দিলেনও বটে।

গণিতে একটি নারীর প্রথম উচ্চশিক্ষা। একটি মহাবিদ্যাপিঠের স্ব-নামের সুনাম বয়ে জাতির চূড়ায় পৌঁছে নিয়তির নির্মম প্রেমময় যন্ত্রণা অথবা হারানো বিস্ময়ের স্রোতে ভেসে একজন নারী আড়াল হলেন সবুজ প্রান্তের বাইরে গিয়ে। সারা জীবনের সব সমীকরণ মেলাতে মেলাতে এক হস্তরেখার দর্শন উপলব্দির মারপ্যাঁচে পড়ে শেষ জীবনে মিলেনি নিজের অঙ্ক। হেরে গেছে দুটো জীবনের প্রেমময় স্বপ্নের চাবি। রহস্যে ভাসছে দুটো জীবনের নতুন নতুন চিত্রাবলি।
যদিও প্রেমিক কবি উপন্যাসের নায়ক নজরুল বিরহকে ঘুরে দাঁড়ানোর পাথেয় মেনে নিয়ে লিখলেন- `এ মোর অহংকার’ কবিতা। কবির ভাষায়- ‘নাইবা নিলে ধরা আমায় ধরার আঙিনায়/ তোমায় জেনে গেলাম সুরের স্বয়ম্ভুর সভায়’। এরকম অহংকার কবি নজরুলের পক্ষেই সম্ভব ছিল। যদিও দীর্ঘ অপ্রাপ্তির বেদনাকে পুঁজি করে কবি ছুঁতে পেরেছেন অধরা মাধুরী। এমন চমৎকার শিল্পের কারুকাজে কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী গল্পের শেষ করলেন শেষ হইয়াও হইল না শেষ র মত করে। “মোতাহারের দুই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে হঠাৎ। পৌঢ় বয়সে মস্তিস্কে রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তন ঘটে,আবেগ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, হয়তো সে কারণেই মোতাহারের গণ্ড বেয়ে নামে অশ্রুধারা। বাইরে তখন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি”।

লেখক বইটির শেষে এসেও ঘোরের মোহে আবিষ্ট করে পাঠককে ছেড়ে দিয়েছেন বিস্ময় বা রহস্যের সীমানায়। এটাই লেখকের সার্থকতা। পুরো বইটিতে ইতিহাসের টানটান বর্ণনার পাশাপাশি চমৎকার গতিশীল বয়নশৈলির মাঠে পাঠককে বসিয়ে রেখে, পাঠ চুকে শেষ করতে লেখককের বাহাদুরিই প্রকাশ পেয়েছে। কোনো চটুলতার আশ্রয় বইটিতে ধরা পড়েনি। ধরা পড়েনি লেখকের কার্পণ্যতা। শব্দ-বাক্যের যুতসই মেলবন্ধন ঘটিয়ে এবং চরিত্রের উপস্থাপন শৈলির বাহাদুরি ঘটিয়েছেন লেখক।

Read Previous

প্রচারবিমুখ: বহুমাত্রিক জীবনালেখ্য

Read Next

আমার দিল্লি ভ্রমণ এক বিরল বিজয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *