
গাঙ ও দ্বীপ
সম্মিলিত লক্ষ্য ছিল শস্যগর্ভ দ্বীপ;
মাঝি ছিল মাল্লা ছিল শুরুও ছিল বেশ;
অভাবিত যদি-এর ঝড়ে উলটে হয়ে চিৎ
সন্নিকটে ভাসে তরি— ভাসছে অবশেষ
স্রোত
অলখ জোয়ারে ভাসে থইথই ভাপা পিঠা দিন;
স্মৃতিচারী পাকুড়ের পলাতকা সুরেলা দুপুর;
দাদুর দুচোখ— ছোঁয়া পশমি গোধুলি; স্বপ্নমাখা
পরীদের ডানাঘঁষা বসন্তের রাত, ভাসে সেও।
প্লাবিত পুকুরের ঢেউলাগা পদ্মফুলসম
বিশ্বাসের রংমাখা আমাদের স্বপ্ন থোকা থোকা
ঘুরে ঘুরে ভাসে দ্যাখো, তটঘেঁষা ঘোলা জলাবর্তে!
আর যতো ঝাঁকবদ্ধ প্রাণ অদ্ভুত মাছের মতো
ভেসে যায় স্রোতানুগ; প্রশ্নগুলো ভেসেছে আগেই!
আজীবন স্রোতসখা শ্যাওলাকচুরি— মাঝিদের
কাজকর্মে হতভম্ব, গদগদ ভেজাকণ্ঠে বলে—
‘হায় হায়! আমাদেরও পিছু ফেলে চলেছে কোথায়!
কোন্ সমুদ্রের টানে?’ স্রোত— পাওয়া মাঝিদের মুখে
কোনো কথা নেই। শুধু হাতের ইশারা, হয়তোবা
দৃশ্যাকুল- সুখকল্পনার মতো মিশে যায় দূরে…
মহা মাৎস্যন্যায়-ছোঁয়া জলধাঁধাজাত কুয়াশায়…
মন অথবা মোহনা
জানাশোনা দুটি নদী রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো ঘুমিয়ে পড়েছিল
মোহনারঙের এক জলজ ভূগোলে;
সবুজ বৃক্ষের বাতাসও ছিল;
কিন্তু পুরোনো এক মেঘের গানে ঘুম ভেঙে গেলে
একটি নদীর স্রোতের স্টার্টারে পাক জেগেছে আবার;
অবশ্য পার্শ্ববর্তী নদীটির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
আর একথা রটিয়ে দিতে—
বলাকার পাখায় উচ্চারিত শব্দ হাততালির ঢঙে ভেঙে ফেলছে আকাশ।
গন্তব্য
শিশুকালের মতো অক্সিজেনের বাগান পেছনে ফেলে এসে দেখি-
যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সে ঠিকানা আমার পকেটে ছিল নাকো।
এখানে মুথাঘাসের মতো ভিড় ইথারের স্রোতে ক্ষুব্ধতা রচলেও
এটাই সত্য যে সকলেরই বুকপকেটে ব্যক্তিগত শীতল আধুলি।
আর বিজ্ঞাপিত লাড্ডু হাতে ডাকে যে হাওয়া
তাকে ফেরাতো যে ঝড় তাকেও আজ চোখে পড়ে না।
কতিপয় সফল তালগাছ স্বপ্নের আকাশ ছুঁয়ে রেখে
গোড়ায় যে দায়হীনতার উৎসব রচেছে
তাতে দোয়েল বা কোকিলকে ডেকে আনা কি
ধূসরের ছায়াবাজি বলা যেতে পারে?
অথচ রাতের আড়ালে দর্শনের পুষ্পরাজি ফুটে উঠলে—
আহা, রাতের আড়াল বলে রঙিন বুদবুদে কেউ কেউ গলা ধুয়ে নেয়।
আর ভোরের আলোতে ডাস্টবিনে রাজসাক্ষী পরিহাসের মুখ!
বিড়ম্বিত কিষাণ
চলছি তখন থেকেই– মাথায় সোনালি বোঝা
চিনি-আতপের গন্ধে সুবাসিত ঘামের শরীর;
কে যেন পেছন হতে ডাক দেয়!
ফিরে দেখি কেউ নেই,
আমার মাড়ানো পথ মুছে দিচ্ছে
উচ্ছেদের চাররঙা হাত।
আজীবন হালচষা, চৌদ্দপুরুষের ক্ষেতে
আগাছা নিড়িয়ে রোপা সুগন্ধের শস্য,
আর চোখের সামনে
উপেনের ভিটেটুকু বেদখল আজ।
এলোমেলো এ আমাকে দূর হতে দেখে—
প্রত্যাবৃত্ত জমির ব্যাপারী হাত নেড়ে নেড়ে বলে-
‘আ রে ও ভাতিজা, দ্যাখো বাবা, দ্যাখো—
বন্দরের সমস্ত দোকান— ভরে গেছে
যতসব ভিনদেশি মালে—
প্যাকেটবন্দি আত্মীয়তা, হইহই গান,
ঘণ্টাচুক্তি ভালোবাসা আর
সেলস্ গার্লদের বুকখোলা আহ্বান
এইসবে সমস্ত বাজার সয়লাব!
পানির দামে বেইচা দিয়া মৌরসি সিন্দুক,
দলে দলে সবাই নিয়ে যাচ্ছে এসব।
আর তুমি, বাতিলবস্তা নিয়ে বাপু,
কেন শুধু শুধু পায়ে ঝরাও মাথার ঘাম?’
কোনদিকে যাবো আমি? আমি কি ফেরাবো পা?
নাকি ডাকবো মজলিস আক্রান্ত ভিটায়?
অথবা, বাজারের উজানে বস্তায় আগুন দিয়ে,
সোনালি আঁশের চাষি রহিমুদ্দির মতো
ছকবাঁধা দৈনিকের সকালের হেডলাইন হবো!