
অন্তরঙ্গ জিরাফের মতো হাওয়া
প্রত্যেকটা রাতকে আমার মাতাল নাবিকের
অসমাপ্ত গল্পের মতো মনে হয়,
আর সমুদ্রের ঢেউগুলো পাগলের প্রলাপ ;
এরি মধ্যে ঝিনুক কুড়ানোর দিন এসে যায়
তুমি ঝিনুক ছেড়ে ঢেউ কুড়াতে থাকো
যেখানে সি-গালের কামনার দিকে হাত বাড়ায়
সানন্দে ভেসে যাওয়া অচিনপুরের মেঘগুলো
অন্তরঙ্গ জিরাফের মতো হাওয়া, তুমি ফিরে যাচ্ছ
রক্ত-বেদনার পাশ দিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে ঘাম ঝরায়
যে রাখাল, তার কথা লতায় জড়িয়ে ইথারে ছড়ায়–
এখানে কাঠবিড়ালির অ্যাবোর্শনের ছায়া এসে
কাকের একাকিত্বের ভেতরে লুকিয়ে পড়ে, আর
জোছনার মৃদু গন্ধের সাথে জেগে ওঠে শিশিরের
আয়ুর সংলাপ, দীর্ঘ দীর্ঘ হতে থাকে অকূলের টান…
জঙ্গলের অধীর তৃষ্ণা
তুমি তো খড়কুটো দিয়ে বাসা বাঁধতে পারো,
যে বাসার চারদিকে দূর বনের সংগীত এসে
বুনে যায় অন্তঃনীল বেদনার ঘোর,
একদিন তুমিও দুলবে বসে ঘুম ঘুম চোখে
শরতে, বর্ষায় রিমঝিম আকালের সন্ধ্যায়–
আকাশ ও সমুদ্র তোমার উদাস ডানায় তুলে দেবে
যাদুর রুমাল, তুমি হবে সেই স্বর্গীয় পাখি, যে
তার নিজস্ব আলোয় দেখে নিতে পারে জঙ্গলের
অধীর তৃষ্ণা, পশু-পাখির চরম প্রস্থান…
ঘুমপাখিরা উড়ে আসছে
সজনে গাছে বসে থাকা হলুদ পাখিটি
আমার ভেঙে যাওয়া ঘুমগুলো জোড়া দিয়ে
মায়ের মুখ আঁকছে অন্তরঙ্গ ইথারে,
আমার মৃতলোক দূর থেকে দেখছে এসব,
আর ঝিরিঝিরি
বাতাসের কাছে জন্মদিনের মোমবাতিগুলো
নতজানু হয়ে
কোরালের শৈশবের দিকে হাত বাড়াচ্ছে,
ঘুমপাখিরা উড়ে আসছে
বাঁশপাতার চোরা পথ বেয়ে,
আমার দুঃস্বপ্নের মগডালে ঝুলে আছে
মায়ের আকাশ-মেশানো হাসি–
কালকেউটের অস্থির বিষ
শীতের চাদরসহ তুমি নেমে গেলে হাড়ের গভীরে, চাঁদরাতে,
আমার নিটোল অস্থি-মজ্জায় সাঁতার কেটে কেটে
নগ্ন দেহখানি ছুঁড়ে দিলে হৃদপিণ্ডের আলো-আঁধারির দেশে–
সেখানের খোলা হাওয়ায় রজনীর গুপ্ত গানের সুর ওড়ে,
তোমার দেহপাড় ছুঁয়ে গেছে কারো কোনো হারানো সুখ
সপ্রাণ মেঘের দেয়ালে টাঙানো তার সহজিয়া ছায়া–
রাত ও জোনাকির প্রেমের প্রজ্বলন একটি বিন্দুকে ঘিরে
জমে উঠতে থাকে, তুমি অস্থির হতে হতে প্রান্ত খোঁজ
তোমার সর্বসত্তায় জেগে ওঠে কালকেউটের অস্থির বিষ
কারো পদশব্দের আড়ালে কান পেতে থাকে সমুদ্রের
ঘনত্ব ও অন্ধকার, মীন ও মৃগয়ার দিকে গন্ধরাজ, আর
এই নিবিড় টান নিশব্দে সঞ্চারিত হতে থাকে নিঃসঙ্গ পথিকের
শুদ্ধ সত্তার গভীরে, জগতের অনন্ত লীলায়–
গহীনে বেঁকে যাচ্ছে জগৎ
স্বপ্নের ভেতরে কাঠকয়লা পুড়ছে, আর
সেই ঐন্দ্রজালিক ধোঁয়ার ভেতরে তুমি স্মিত হাসছো,
গহীনে বেঁকে যাচ্ছে জগৎ
মুছে যাওয়া স্মৃতির পাড় ধরে গুণ টেনে চলেছে
ধোঁয়ার কুণ্ডলী, কাদায় ডুবে আছে আমাদের সুখ
দিগন্তে ঝুম বৃষ্টির মায়া ; ছাই ও তোমার মুখ
সন্ধ্যা পেরিয়ে উড়ে যাচ্ছে আসমানে —
জীবন– এক আশ্চর্য নির্জন শহর
রাত নামলে বোঝা যায় ল্যাম্পপোস্টের
অতল গভীরে অদ্ভুত সব কান্নার শব্দ…
কামরুল ইসলাম : জন্ম কুষ্টিয়া জেলার ফিলিপনগর গ্রামে। পেশা : শিক্ষকতা ( অধ্যাপক, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য)। বর্তমানে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, দিনাজপুরে চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি একজন দ্বিভাষিক কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও ছোটগল্পকার। নব্বইয়ের দশকে চূড়ান্তভাবে কবিতার জগতে প্রবেশ। এ পর্যন্ত ১২টি কবিতার, ৫টি প্রবন্ধের ও ১টি ছোটগল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা দেশ-বিদেশের নানা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ২৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।