
পথ কাউকে মনে রাখে না
অসুস্থ ডানায়ও কিছু পাখি দ্রুততর হেঁটে যায়; তারা
জানে পথ কাউকে মনে রাখে না, ছিঁড়া-ফাঁড়া জীবনে
সে বয়ে বেড়ায় সমস্ত জীবনের দেনা, ক্ষতের ভেতর
জমিয়ে রাখে এই পৃথিবীর সমস্ত নীরবতা;
তবুও পথ কাউকে সাথী করে না, নিঃশব্দে পাড়ি দেয়
একাকী জীবন-স্রোতের প্রতিকূলে সে কেবল একা!
এ যেন সেই মানুষ, যে গুটিয়ে নিয়েছেন নিজের
অর্ধেক ছায়া, মৃত্যুর ভয়ও যাকে জাগাতে পারে না…
কারো উপর কোনো আক্রোশ নেই, নেই পথ ক্লান্তির
কোনো আড়ম্বর বেদনা, তবুও হাসপাতালের মর্গে মর্গে
সেও খুঁজে বেড়ায় জীবনের শ্বাপদ ঠিকানা…!
এখন বর্ণচোরারাই অনেক ভালো আছেন, সুদে-আসলে
বুঝে নিচ্ছেন ইঁদুর দৌড়ের জয়ন্তিকা, ধীরে ধীরে যে
কিশোরী রাত বুড়ি হয়, তারেও পরিহাসে আগুনমুখা,
অথচ একদিন সামুদ্রিক কাঁকড়ার মতোন সেও বিসর্জন
দেয় পথের সমস্ত দাবি, তবুও পথ তাকে মনে রাখে না
তবুও সবাই জীবনভর খোঁজেন সেই সোনার চাবি…!
জলপুরুষ
আমার দুই চোখে একটাই কবোষ্ণ নদী আছে
ঝরনার মতোন চপল, শব্দের মতো চঞ্চল;
দীঘির শান্ত জল তাকে খুউব খুউব হিংসে করে
যখন কলকল শব্দের ঢেউ তোলে জলপুরুষ,
রাংতার কাজল হয় দোভাষী প্রেম! তখনও
আমি চেয়ে দেখি দু’পাড়ের খামাখা ভাঙন
আমি চেয়ে দেখি মাথার উপর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত
আর ঝড়ো হাওয়ায় উড়িনো কিছুটা উন্মাদ জল!
এখানে কেউ মুদ্রিত বাতাস কিনতে আসে না
সকলেই হাঁসফাঁস করে, একবার বাঁচে…,
আর একবার মরে দুদণ্ডের অতিথি! তবুও
চেনা পথ স্বয়ং বারবার পথ আগলে দাঁড়ায়
চয়নিকা জীবন এসবের তোয়াক্কা করে না!
ভুল আর ভ্রান্তি একসাথে আমার ছায়াসঙ্গী হয়
তবুও আমরা কেউ থামাতে পারি না তাকে
তখনও যাযাবর সময়ের অনুষঙ্গী হয় অবুঝ হাত
জল শহরের ভাঙাপথ মাড়িয়ে চলতেই থাকে!
অপদেবতা
আজকাল রাতের সাথে কয়জনের কথা হয়?
বড়জোর অন্ধকারের সাথে সন্ধি হয়!
অতঃপর ভোর হওয়ার আগেই বিতাড়িত নদী
ফিরে এসে আরেকটি ভোরের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেয়!
অতঃপর সেও সন্তর্পণে মন্থর এগিয়ে যায়
কোনো এক মৃতনদী অথবা মৃত নারীর মতোন
অবশ্য এই যুগে কে আর দেবদাস হতে চায়?
অলীক আশ্বাসে যদি ভেঙে যায় দেবতার ঘুম
তবে সে কেমন দেবতা?
উপসর্গের পাঠ অনেক আগেই চুকিয়ে দিয়েছি
বড় সস্তায় বিকিয়ে দিয়েছি সভ্যতা
নইলে তুমি যতই পুজো দাও তারে… আমার
অর্ঘ্য থেকে রেহাই পাবে না কোনো অপদেবতা!
পাখির জোড়া ঠোঁট
পাখিরা খুটখুট করে করে ঠোকরে ঠোকরে খায়
জোড়া ঠোঁট… ঘুটঘুটে আঁধার অথবা অলৌকিক
আলোতে কখনও খায় একলা আবার কখনও হয়
জোট; তাবত পৃথিবীর সবাই জানে… ওরা কী খায়
আর কী কী ফেলে যায়… চোট আর গণভোট!
ওরা খায় নতুন-পুরাতন সব দাগ, সুসময়ের অগ্রভাগ;
তবু সূঁচালো কাল ওদেরও হিসাব কষে সকাল-বিকাল,
একদিন বিলুপ্ত হয় পৈশাচিক ধ্বনি..আজকে যার
সবে বৃহস্পতিবার আগামীকালই হতে পারে শনি!
তবুও আমরা খুব কমই মনে রাখি অর্জুনের ছাল,
হাঁটিহাঁটি পা পা করে বাড়-বাড়ন্ত দেখি করোনাকাল…
আবারও আসছে মহিয়সী শীত; কোকিল পাখির
জোড়া ঠোঁট আবারও গাইবে… লকলকে জিবের..
একদা আসন্ন বসন্তের আগমনী রাগসংগীত…!
কালের শেষে
অনেকদিন পর ব্রহ্মপুত্রের ওদিকে গিয়েছিলাম
ওখানে বেশ আছে নদী ও জীবন, কারো কোনো
অভিযোগ নেই, কেবল অভাব আছে…;
জোকস করেও বলার উপায় নেই ভালো আছি!
চঞ্চল শিশুর উচ্ছলতার স্থানটুকু দখল করে আছে
সমাহিত জল, দু’পাশেই মেকি সভ্যতার বাসন-
কুশন, এখানে রাত নামে না; শরীরে শরীর
ভিজে পুরনো শব্দের আলপনা, শিল্পীর মতোন
নগদ চোখ নেই আমার; তবুও তাকিয়ে দেখি
অস্তগামী সূর্যও সেখানে হলুদ জীবনের ঠিকাদার!
তবে এও মিথ্যে নয়, দু’বেলা ডাল-ভাতের জন্য
আগের মতোন এতো বেশি কাড়াকাড়ি নেই;
সংকোচিত জরায়ুর রূপান্তরিত নৈমিত্তিক চাহিদা
আছে, পিলে চমকে যাওয়ার মতো চুরি-ছিনতাই
এর ভয় আছে, তবুও একেবারে খারাপ নেই
শাসন ও সুশাসন; মুদ্রণ প্রমাদজনিত কিছু ভুল-
ত্রুটি যদি এড়িয়ে চলতে পারি…
তবে আর বলতে খুব একটা দ্বিধা নেই, আমিও
এখন ব্রহ্মপুত্রের মতোন বেশ ভালো আছি…!