অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ১০, ২০২৫
২৭শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ১০, ২০২৫
২৭শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্বীপ সরকার -
দ্বীপ সরকারের একগুচ্ছ কবিতা

আমার একটা কথা খুঁজে পাচ্ছি না

একদা বেড়াতে গিয়ে রেখে এসেছিলাম একটা কথা
কথাটা রাখা হয়েছিলো একটা চোখের পরতে
ভাষাবিদরা আমাকে বলেছিলো কারো চোখে নাকি কথা রাখা যায়
আমি এই বিশ্বাসে রেখে এসেছিলাম

অথচ দীর্ঘ ভুলে থাকা- এই অনুপস্থিতি
কতবার কতকাল স্মৃতির সড়কে না হাঁটা

মন বলে সমুদ্রে যাই
মন বলে আকাশ দেখি দীর্ঘসময়
আমার সেই কথাটা খুঁজে পাই না
কথাটা রেখেছিলাম কোনো সুন্দরীর চোখের খাঁজে

এক বৃষ্টির বিকেলে- সেই সুন্দরী আমার পানে চায়
আমিও ফের চকিত চাহনিতে দেখে ফেলি তার চোখ
আহা! কি সুন্দর করে কথারা তর তর করে নামছে পৃথিবীতে
আয়নার মতো কথারা স্পষ্ট হয়
আমি খুঁজে পাই হারিয়ে যাওয়া কথাদের হাত-পা এবং শরীর

 

বোকা তিমির ও নিরেট কবি

নিরেট বোকা বলেই এমনটা ঘটে
যা দেবার নয় তাও দিয়ে ফেলি
কিছুটা চেনা-জানা থাকা উচিত

যা নেবার নয় তা নেই
আঁচল মেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি দিলে
আমি তা চোখের ভেতর নদী করে জমিয়ে রাখি
এমন বদস্বভাব কবে যাবে আমার?

কিছু নিতে চাইলে আকাশ ধরো মেলে
অতো বড় সীমাহীন আকাশ কেমনে বলো নেই
অতঃপর বৃষ্টি দিতে চায়
আমার বৃষ্টিতে ভেজার নেশা আছে বহুকালের
আমি পুরুষ; পকেটে নেই ভর্তি করে

আমি নিরেট বোকাসোকা লোক
আকাশ না নিয়ে বৃষ্টি নেই
সমুদ্রে না গুঁজিয়ে পকেটে রাখি গুঁজে

আমার মতো তিমিরও বোকা
সমুদ্রে না গিয়ে পকেটে আসে

আমি এমনটি নই

প্রতিশোধের মতো করে প্রতিশোধ নাও
ব্লাউজ বা পেটিকোট খুলে
নিজেকে উদোম করে নয়

কেউ কেউ খুব চায়
পৃথিবীতে নাকি এরচে’ আর কিছু নাই
আমি একটু ভিন্নরকম
জলে তিমির আসলে তিমির না ধরে স্রোত ধরি
অথবা ব্যাঙ ধরে বলি এটাই তিমির
আমি এমনই বোকা মাপের লোক

প্রতিশোধ নিতে চাইলে
আমাকে পেরেক মারো, চাবুক মারো
ওভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বলবে
‘প্রতিশোধ নাও’
আমি এমনটি নই

উঠোন ও আমার ভেতরকার সম্পর্ক

উঠোনের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক
সকলেই জানে এটা
বারান্দায় রোদ বলে যে আলো আসে যায়
ছায়া বলে যে ক্ষীণ আঁধার যায় আসে
সে-ও জানে আমাদের সম্পর্ক বিষয় আশয়

উঠোনে রোদ বা ছায়া- যাই আসুক
আমাকে কঠিন করে আগলে ধরে থাকে
আমি নাকি শিশুর মতো- নরম আলু থালু শরীর

আমার মুখাবয়বে রোদ সহ্য হয় না
ছায়া হলে কণ্ঠ মিলিয়ে গান ধরে উঠোনের বেড়াল
বৃষ্টি হলে জড়িয়ে ধরে জানলার কারটেন

এমন গভীর সম্পর্ক আমার বউটা জানলে
সে-ও রাগ করে না

ক্যাফেটেরিয়া ও দুর্লভ প্রেমিকা

ক্যাফেটেরিয়া থেকে খানিকটা মেদহীন ছায়া আসে
কতটা বেলজ্জা ছায়া
আমার প্রেমিকার বুকে এসে পড়ে
চুমু থেকে দূরে যায় ঠোঁট
দূরে যেতে যেতে আকাশের ছাই

আমার নিম্নবর্গীয় কর্মচারিরা জেনে ফেলেছে
লজ্জা পায় প্রেমিকার আধুনিক চোখ
কে বা কারা ভোরে এসে দেখে ফেলেছে
আমার প্রেমিকার ঠোঁটে নিশ্চুপ মেঘ
মেঘবন্দী আকাশের নিদাঘ ও বৃষ্টি

ওকে বলতে গিয়ে থেমে যাই
প্রেমিকা বোঝে সব
বুকের ওপর থেকে সরে যায় ঘাসফুল হাত

আমার গ্রামের পশ্চিমাকাশে বাড়ে বৃষ্টির কদর
ও জানতো- আমি বেহায়া পুরুষ
ঘুমখেকো অন্ধকারও চিনতো আমাকে

প্রেমিকার বুক থেকে আমার হাত সরে না
ঠোঁট থেকে পিছলে পড়ে শরম ও লজ্জা

 

Print Friendly, PDF & Email
দ্বীপ সরকার

Read Previous

বিনয় কর্মকারের গুচ্ছ কবিতা

Read Next

এলিজা খাতুনের গুচ্ছ কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *