অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিঃশব্দ আহমেদ -
নিঃশব্দ আহমেদের গুচ্ছ কবিতা

না, কোনো অপেক্ষা

তারপর আমরা কথা দিলাম৷ অলক্ষে একটি বিকেল পেরিয়ে ছাইরাঙা সন্ধ্যে
নিমেষেই আবৃত করে এই আঁধার, নীড় সন্ধানী পাখি চোখে একেকটি ভোরের নামে প্রার্থনা৷

দীর্ঘ আরাধনা শেষে এমনো কোনো প্রাপ্তি
যাতে সন্তুষ্টি অর্জনের মতো এক আনন্দ
শোকরিয়া বলে বলে যেমন প্রকাশিত অফুরান হর্ষ
এমনো এক আনন্দ, নিমেষেই দুঃখে হারালো৷

মানুষে মানুষে ঠিক প্রভেদ থাকে, থাকে আরো আগ্রহ অনাগ্রহ- মানুষ মানুষকে ভেবে যেমন ভুলে যায় নিজ নাম, তবু মানুষের কাছেই রেখে গেছি অপেক্ষা
এমনো এক মানুষ, সমস্তটা নিয়ে বসে থাকে উন্মুখ৷

এমনো মানুষবেশে, খোঁজে দিশার স্থির চোখ
নিষ্পলক তাকিয়ে একটা পথ, যেখানে মেলেছি ক্লান্ত আমার পা, কেউ থাকেনি অমনো একাগ্রতায় দাঁড়িয়ে পথপাশে, রাখেনি হাত কবজি ছুঁয়ে পরমাদরে৷

মরে যাচ্ছে সবুজ বন

সুপ্রভাত, হে আমার প্রিয়তমা
শান্ত একটা ভোরের হাওয়া ঝাপটায় আমি জানলাম হেমন্ত এলো, উঠে বসো আর জানালার কাছে উপভোগ করো সম্ভাবনার আগামী৷

বেরোলাম, রাস্তাগুলো যেন ডুবে যাচ্ছে ক্রমে
হাহাকার সব লেগে মেঘের গায়
আর আমি যেন কাঁদলাম
কারো অনুপস্থিতি জুড়ে ভেতর যেন কখনো মরে যায়
আর এভাবে মরে যেতে দেখি শীতের সবুজ বন৷

আর আমি দেখলাম, শূন্যতা
মরুর বুক জুড়ে সবুজ ভাবনার মতো দেখতে থাকি তোমার অবুঝ মুখ, খলখল হাসিতে যেন বসন্ত
মৃতনদীতে জাগলে সাড়া, তবে তো ঘুচে যায় কারো কারো দৈন্যতা৷

ভালো থেকো, হে আমার প্রিয়তমা
ফসফরাসের বিকিরণ যেন নাচতে থাক অবয়ব রেখায়
একদিন এই হেমন্ত দিনে, মাটির সোঁদা গন্ধবুকে নিঃশব্দ হবে আড়াল, দেখে দেখে তোমার হাসি৷

নীল সব উড়ে যায়, আমার শোকসভায়

এই ভোরে নীল সব উড়ে উড়ে যাচ্ছে
কুহেলিয়ার বুক ছুঁয়ে বঙ্গোপসাগরে
কোথাও জমাট হয়ে যাবে বুঝি সব নীল
নীলাভ আকাশ তলে বসবে একদিন শোকসভা৷

অদূরে ঘনীভূত মেঘে বৃষ্টিদল আর চোখজল
একাকার হয়ে ভেসে যাচ্ছে নদী আর কাতর বুক
হায়! দুটি পাখি ঠোঁটে জড়িয়ে ঠোঁট, কি আনন্দে লাফায়
বিষ ছড়ানো পথে কান্না হয়ে বুকে বাজে পাখি সমাচার৷

যদি পাখি, ডেকে অমনো সুরে জড়াতাম গলায়
একবার মধুমাসে দুপুর সঙ্গম ঝরে গেলে কাঁঠালপাতা
হায় ঝড়োহাওয়া, নিপতিত হতাম ছেড়ে প্রাণ
এই ভেবে কতোবার স্থির চোখে দুপুর বয়সী রোদ৷

গাঢ় আঁধার গিলে নিচ্ছে দিনের রোশনাই
ভয় হয় খুউব ভয়; বিপর্যস্ত
কে তুমি এতোটা জমাও ক্লেদ, ছল ছল চোখ
আমিও যে অসহায় আজ, হে আমার! দূরবাসী মুখ৷

নশ্বর,
বিশিষ্টটুকুও আর থাকবে না একদিন আর তাই এখানে আনন্দ নেই—কতেক সন্তাপ, আছে কেবল ভুবন বিলাসি গান, যদি এই প্রান্তর ছুঁয়ে নেওয়া যেতো বিভাবরী বাতাস—কলরোল থেকে কিছু মুখ এসে শুনিয়ে যাবে বেঁচে থাকার দায়, এখানে মানুষ বাঁচে, হাড়মজ্জা ক্ষয়ে,
নাতিশীতোষ্ণতা বিধানে ওই যে সুরম্য ঘর, ফুটপাত—

সব ভেঙে পড়ে চিরাচরিত এ আকাশ, মৃত্তিকার ভাঁজ থেকে জন্ম নেওয়া বিটপ সারি—আর এই রূপ জৌলুস সম্ভার—কালের বয়ানে লুপ্ত সব শৌর্যবীর্যের ডাক
অথচ মানুষের ভেতরেই রেখে গেছে চোখ, নিয়ত বাস৷

মানুষের ভেতর চাষ ছিলো বোধ, মানবিকতা কিংবা প্রেম, আপ্লুত কতেক অনুভূতি রেখে গেছে অমরত্বের কালজয়ী স্মারক, পদস্খলন দেখে দেখে এখানে জমাটবদ্ধ ক্লান্তি, বিষণ্ন সন্ধ্যাকাশ৷ ভেঙে পড়ার সুর৷

লুটে যাবে বলে এই শরীর, উৎসুক চোখ- অতঃপর
কেমন আকুলতা রেখে গেছে পথ, সম্মিলনের স্রোত৷

না, হয়ে ওঠেনি আর—ছেড়ে গেছে রেখে এই আমায়
দূরগামী সব স্টিমার৷

Read Previous

ক্ষমা মাহমুদ-এর গুচ্ছ কবিতা

Read Next

রুদ্র সাহাদাৎ-এর গুচ্ছ কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *