অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ১, ২০২৪
১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ১, ২০২৪
১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেরদৌস জান্নাতুল -
ফেরদৌস জান্নাতুল -গুচ্ছকবিতা

দুরবিন চোখ

অক্টোপাসে জাপটে ধরে নখ; নখের হৃৎপিণ্ড

নখরে বেঁচে ফেরা জীবন, শ্বাস চায় ঊর্ধ্বাকাশে—

আহা দুরবিন চোখ,

আকাশে দৃষ্টি ছোঁয়াতে গিয়ে

নীলিমাই খেয়ে নিলে!

বিষাক্ত লালা

এই যে শিলায় শিলায় খসে যাওয়া বৃষ্টির পৃষ্ঠ,

সেই পৃষ্ঠেই শুনি প্রচণ্ড আকুতি।

মূক হয়ে বসে থাকা রাতের চোয়াল বেয়ে ওঠানামা করা গিরগিটি,

শোনাতে চায় স্মিত এক ইতিহাস

যার লালায় কেউ হাতড়ে ফেরে রং

রঙের পর্দা, রংমাখা অভিনয়।

সন্ধান

পেছনে কাতরায় দিশাহীন ন্যাংটো বোধ,

কাঁধ কচলায় মস্ত হা-ওয়ালা পৃথিবী

রক্তচোখে কেবলি নেশা

ছুটে চলে আর খুঁটে মরে,

আমি হা করে চোখ বুজে কেবলি শুঁকি।

সমর্পণ

অবশেষে চলে গেল

গ্রহণ শেষের সূর্যের মতো

বনের পাখিরা জানিয়ে গেল

আষাঢ় শেষের বার্তা—

হৃদসংক্রান্তির দক্ষিণ দুয়ার খুলে।

ঘরের কোণে টিকটিকি সংসার পেতেছে

ঘনিষ্ঠ হয়ে আসা উইপোকাদের দল—

বুক পেতে থাকে মৃত্যুর অপেক্ষায়;

অবশেষে চলে যায়, বুনে রায় দেয়ালচিত্র

ফাঁকা ঘরে আলো খেলে যায়

মেলে যায় প্রজাপতির ডানা।

আনন্দ ও একটি বটবৃক্ষ

ভাঁটফুল খুঁজতে খুঁজতে

একটি চিহ্নের সাথে পরিচয় হলো,

অনন্ত পথযাত্রার পদচিহ্ন।

আরও গভীরে গিয়ে দেখা গেল

রং বঞ্চিত এক জগৎ

আদি, করুণ যার ইতিহাস।

জগৎ মায়া,

জীর্ণ দশা কাটানোর উপায়

এই নখপলিশে নেই—

ঠোঁটের ভাঁজে চাপা পড়া কথারা,

মুক্তি খোঁজে তাই

বটবৃক্ষের ছায়াতলে বসে।

ফাঁকা পড়ে থাকে গল্পের বৈঠক

নিঃশব্দতার সাথে চলা

অহর্নিশ, ছদ্মবেশী সেজে—

এক গল্পের পৃথিবীর খোঁজে

দৌড়

দৌড় একটি শিল্প

দৌড় একটি রোগের নামও বটে

আহা দৌড়!

ঘোড় দৌড়, ক্ষীপ্র ক্ষীপ্র বাজ দৌড়

দৌড় শব্দে ঘুম ভাঙে হামেশাই

স্বপ্নে দৌড় দিয়ে দেখি

হাওয়ার তাঁবুতে দোল খায় বুনো শালিক

ঘুম ভেঙে দেখি

অখোলা ঘরের কলিং সৌন্দর্যে শোভা পায়

ছাইরঙা বকের পালক।

পাখিমন

মেঘমন ম্রিয়মাণ নয়,

দেখি শস্যবনের পাখিরা কেমন করে ঘরে ফেরে। ভাবি,

গৃহস্থ ঘননীল ধাঁধায় কী করে বাধা পরে পাখিমন।

ধনুক

তাকিয়ে দেখি, ধূপবাতি নিভে যায়

ইঙ্গিতের ছল বোঝে না আর মানুষ

দেবতা লজ্জায় নিস্ফলা ফুঁ দিলে

বনের পাখিরা এই ঘরে, অচেনা সত্তার ফিতা কাটে।

বিলবোর্ড

এই পথে যেতে যেতে ঐ পথে তাকাই

স্বচ্ছ চোখে সাধ এসে কড়া নাড়ে—

ঘোরের ফানুস ওড়া প্রান্তরে।

মানুষ একটি সাধের নৌকো

গলুইজুড়ে যার বাহারি আলপনা,

ছায়া ছড়ায় জলের শরীরে।

বিলবোর্ডে বিল নেই, নদী নেই, খাল নেই

নয়নাভিরাম সবুজের মূর্ছনা নেই

আছে কেবল বাবলার আঠা।

মঞ্চ

কাজল গলে গেল,

অতঃপর চোখটি ফাঁকা হলে দৃষ্টি মঞ্চ পেল।

কাচরঙা বদ্ধ ঠোঁট দুটি কথা হারালে

আমাদের কণ্ঠকুটুম গুটি পায়ে অবরোধে এল।

ঘন বিজলির রাত

বেসুরো ব্যাঙ ডাকা খোলা মাঠ

বৃষ্টির লাগামহীন দৃষ্টি অবরোধ তাঁবুতে।

 

Read Previous

ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ি 

Read Next

লর্ড ডানসানি’র সাতটি উপকথা

One Comment

  • খুব ভালো লাগলো কবিতাগুলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *