অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাহমান ওয়াহিদ – গুচ্ছকবিতা

প্রতীতির ঘন নির্যাস

এই বিবর্ণ শহর ছেড়ে যেতে চাও যদি

বিদীর্ণ সবুজে

আগলে দাঁড়াবে না ব্যস্ত ছায়াপথ।

যেতে চাও যদি আরণ্যিক প্রাচীর পেরিয়ে

বিমূর্ত বন্ধনে

নির্লিপ্ত রুক্ষ শূন্যতা তোমাকে আটকাবে না।

মূলত কোনো হৃদয়েই জমা নেই উদ্বৃত্ত প্রেম

বাড়িয়েও নেই কোন মেঘল মন্থনী হাত।

মাছেদের সাঁতারি জল চোখের কার্নিশে যদি

স্থিত হয়, যদি ফিরে আসে ফের সেইসব

ধ্রুপদি বিশ্বাসের ছিন্ন প্রতিভাস—

পেতেও পারো হৃদি মুগ্ধতা, প্রতীতির ঘন নির্যাস।

তালপাখা ঘরে

আমার গন্তব্যগুলো বড় উল্টোমুখী।

চানখাঁরপুল যেতে চাইলে চলে আসি

দক্ষিণখানে। হিজলের ছায়া ছেড়ে

নীলখাম রোদে এলে

বেভুল জোছনাটা টেনে তোলে বাবুই ঘরে।

ধুলোয় লেপ্টে থাকা হৃদচিহ্ন চিরকুটে

কার যেন চোখজলে অস্ফূট লেখা—

আমারই নাম ধাম ধবল ঠিকানা—

কোথা সে?

বিভ্রমে দেখি তার কালো নদী মোহনা।

ভুল পায়ে হেঁটে হেঁটে

কত আর এদিক সেদিক?

না থাকুক শয্যা কুসুম খোলাপ্রেম বাহুডোর

যাব আমি ছিন্নপাতায় ঘেরা তালপাখা ঘরে

কতকাল ফিরিনি হায়, কতকাল কতকাল ধরে…।

বিড়াল সন্ধ্যা

অথচ এই ভালুক জ্বরে থ্যাতলানো ব্রাত্যজন

টুকরো মানুষের বেতাল যাপন যজ্ঞ, আর

দেব দিচ্ছির কর্পোরেট ভনিতা নিয়ে সংঘের

বিশেষ এলিট সভায় ঢের প্রশ্ন তোলা যেত।

মননে প্রোথিত ভ্রূণের জন্ম সম্ভাবনা নিয়ে

সঘন উচ্চারণের যে উচ্ছিষ্ট ভগ্নাংশ

তাতে কুশলী পায়ে হেঁটে আসা বিড়াল সন্ধ্যা

ফ্লোর পেতে পেতে অকুলেই খেই হারাল।

দ্বান্দ্বিক সমীকরণে চর্বিত এজেন্ডাটাই শেষতক

মোটা দাগে শক্ত জমিন পেয়ে যায়।

অথচ আমাদের হৃদি বলয় থেকে জন্মে যে

বোধের আকর— তাতে ব্যক্তিগত হাঁসফাঁসের

কোনো আবাসন মেলে না। থাকে শুধু রাতশেষের

বাজারি নকশা। থাকে ঘুমশয্যা পাল্টানোর

দূর নিয়ন্ত্রণ। আর থাকে শরীরে সেঁটে যাওয়া

বানভাসী ভালোবাসার আঠালো চুম্বন।

তরল বিশুদ্ধতা

রৌদ্র থেকে ছায়া সরিয়ে দীর্ঘ বিশ্রামে

যেতে চেয়েছিলে যখন

ছায়ারা হলদে জল হয়ে নেমে এসেছিল।

বৃক্ষরা বিষ কার্বনে ভিজে

শেকড়ের বীর্য থেকে টেনে এনেছে

নিঃশ্বাসের কোমল আধার।

তুমি বৃক্ষ নও। ঘেরাটোপ বৃত্ত নও।

তুমি বিশ্রামে যাবে কেন।

বৃক্ষের স্বভাবে তুমিও শেকড় থেকে

টেনে তোলো অরণ্য ছায়া

টেনে তোলো তরল বিশুদ্ধতার অমিয় অঙ্কুর।

 

ধুলো অক্ষরের চিঠি

শব্দ ঝড়ে নন্দিত কবিতার দয়িতা যে নারী

আকাশী শূন্যতায় ওড়ে তার বিনিসুতোর শাড়ি।

বলেছি তাহারে— এইভাবে

অনিকেত পাখির স্বভাবে

রেখো না শয্যা কোনো বিমূর্ত আঁধারে

আমি অরণ্যে যাব— তবু হৃদ আধারে

নির্জনতার অতিথি হব না।

স্পর্শী হাতের আঁচড়ে নীলাম্বরী খাম হব

তবু ধুলো অক্ষরের চিঠি হব না।

রাহমান ওয়াহিদ : জন্ম বগুড়ার কাহালু থানার পাইকড় গ্রামে। ১৯৫৬ সালের ১৭ জানুয়ারি। পরবর্তীকালে বাবার চাকরির সুবাদে পাবনার রেল জংশনের শহর ঈশ্বরদীতে যাওয়া। সেখানে বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির অভ্যেস। এখনও চলছে। মূলত কবিতায় পদচারণাই বেশি। পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, মুক্তগদ্য, শিশুতোষ গল্পও লিখছেন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বই ২০টি। এর মধ্যে ০৮টি কবিতাগ্রন্থ, ০৭টি শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ, ০১টি গল্পগ্রন্থ ও ০৪টি উপন্যাস।

বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাস (আতোর-আদুরি উপাখ্যান)-এর জন্য জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বগুড়া ইয়ূথ কয়্যার থেকে গুণীজন সম্মাননা পদক প্রাপ্ত— ২০১৯ সালে।

 

Read Previous

রূপান্তরের গল্পগাথায় কঠিন বাস্তবের আবরণে অতলান্ত বিষাদ

Read Next

রুদ্র সুশান্ত – যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *